ফাঁসি স্থগিতের প্রতিবাদে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচীঃ-
* আগামীকাল সন্ধ্যায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর গণজাগরণ মঞ্চের মশাল মিছিল।
* সারাদেশে জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচী গণজাগরণ মঞ্চের।
একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে কসাই কাদেরের ফাঁসি কার্যকরের দাবীতে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচী।
আবারো স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর গণজাগরণ মঞ্চ।
ব্রেকিং নিউজ- কসাই কাদেরের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
মঙ্গলবার ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়।
* মঙ্গলবার রাত ৮টার সময় সাংবাদিকদের বলেন, “১২টা ১ মিনিটে মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হবে।”-ফরমান আলী, জ্যেষ্ঠ জেল সুপার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার।
* আসামিপক্ষের আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ সৈয়দ মাহমুদ হোসেন মঙ্গলবার রাতে কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড কার্যকর বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।
* ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবে গণজাগরণ মঞ্চ- ডাঃ ইমরান এইচ সরকার।
* কাদের মোল্লার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন গ্রহণ নিয়ে শুনানি আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি, সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর স্থগিত।
* রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কাদের মোল্লা- আইন প্রতিমন্ত্রী।
মিরপুরের কসাই নামে খ্যাত কাদের মোল্লা ওরফে কসাই কাদেরকে গত ০৫ ফেব্রুয়ারী/২০১৩ খ্রিঃ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। রায়ের প্রতিক্রিয়ার সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। সেই বিক্ষোভ থেকে সৃষ্টি হয় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর “গণজাগরণ মঞ্চ”। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বকে সমর্থন জানিয়ে সারাদেশে গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি হয় গণজাগরণ মঞ্চের দাবীর মুখে আপিলের সমান সুযোগ রেখে ১৭ ফেব্রুয়ারি/২০১৩ খ্রিঃ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) সংশোধন বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। আগে আইনে সরকারের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ ছিল না। গত ৩ মার্চ সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আর সাজা থেকে অব্যাহতি চেয়ে পরদিন আপিল করেন কাদের মোল্লার আইনজীবী। গত ১ এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু হয়। আসামি ও সরকার—উভয় পক্ষের দুটি আপিলের ওপর ৩৯ কার্যদিবস শুনানি শেষে ২৩ জুলাই আপিল বিভাগ রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। শুনানি শেষ হওয়ার ৫৪ দিনের মাথায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর/২০১৩ খ্রিঃ আপিল বিভাগ সাজা বাড়িয়ে ফাঁসির আদেশ দেয়।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এ রায় দেয়া হয় (৪:১ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে) এই রায়ে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডাদেশের পক্ষে ছিলেন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।শুধুমাত্র বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন।
* শীতকালীন অবকাশের আগে বৃহস্পতিবারই আপিল বিভাগের শেষ কার্যদিবস। এর মধ্যেই বিষয়টি নিস্পত্তি না হলে রায় কার্যকরের বিষয়টি আগামী বছর পর্যন্ত ঝুলে যেতে পারে বলে আদালতের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
* এই মামলার রিভিউ চলে না এটা স্পষ্ট। এই আবেদন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা- অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
* মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি আন্তর্জাতিক আইনে মৃত্যুদন্ড নির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি- স্টেফানি রক, জার্মান গবেষক।
নির্দিষ্টভাবে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ নেই-স্টেফানি রক
সংবিধানঃ-
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রিভিউয়ের বিরোধিতা করে সংবিধানের ৪৭(৩), ৪৭ক(১), ৪৭ক(২), ১০৫ অনুচ্ছেদ পড়ে শোনান।
* সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধে কোনো সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য বা অন্য কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংগঠন বা যুদ্ধবন্দীদের বিচারের কথা বলা হয়েছে।
* ৪৭ক(১) অনুযায়ী, যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৭(৩) দফার আইন প্রযোজ্য হয়, তার ক্ষেত্রে সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ, ৩৫ অনুচ্ছেদের ১ ও ৩ দফা এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীন অধিকারগুলো প্রযোজ্য হবে না।
* ৪৭ ক(২) এ বলা হয়েছে, কারো ক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৭(৩) অনুচ্ছেদের কোনো আইন প্রযোজ্য হলে সংবিধানের অধীন কোনো প্রতিকারের জন্য তিনি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারবেন না।
‘রিভিউ’ সম্পর্কে বলা আছে সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে। এতে বলা হয়, সংসদের যে কোনো আইনের বিধান সাপেক্ষে এবং আপিল বিভাগে প্রণীত যে কোনো বিধি বিধান সাপেক্ষে আপিল বিভাগের কোনো রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা ওই বিভাগের থাকবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, রায় পুনর্বিবেচনা একটি সাংবিধানিক অধিকার। এর মাধ্যমে সংবিধানের আলোকে প্রতিকার চাওয়া হয়। কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে যেহেতু ৪৭ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হয়েছে, তাই তিনি এই সাংবিধানিক প্রতিকার চাইতে পারেন না।
“এই আইন (আইসিটি অ্যাক্টে) সাংবিধানিক সুরক্ষার রয়েছে। যার ভিত্তিতে এ আইনের অধীনে দেওয়া কোনো আদেশ বা সাজা দেশের কোনো আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিতরা আপিলের সুযোগ পান আইসিটি আইন অনুসারেই। সেখানে রিভিউয়ের কথা বলা নাই।”
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,
“আমরা এখানে ট্রাইব্যুনালের কোনো রায়ের বিষয়ে রিভিউ নিয়ে আসিনি। মৃত্যুদণ্ডের যে সাজার বিরুদ্ধে আমরা এখানে এসেছি, সেই সাজা দিয়েছে আপিল বিভাগ। সুতরাং আপিল বিভাগের আদেশের বিষয়ে রিভিউ চলবে।”
এ সময় বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, আপিল আদালত কোনো দণ্ড দিলে সেটি আলাদা কোনো রায় নয়। এই রায় বিচারিক আদালতের রায়ের অঙ্গীভূত হবে।
জবাবে সুপ্রিম কোর্টের ৫৬ ডিএলআরের রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে রাজ্জাক বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপিল বিভাগ যতটুক সাজা দেবে- ততোটুকু কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে নিম্ন আদালতের বা ট্রাইব্যুনালের দেয়া সাজা থাকবে না।
“সুতরাং মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ। সুতরাং আপিল বিভাগের রায় নিয়ে রিভিউ হবে।”
এই যুক্তির জবাব দেন অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি বলেন, এখানে ‘রিভিউ’ হলে সুবিধা কে পাবেন? যিনি পাবেন তিনি তো আইসিটি অ্যাক্টে দণ্ডিত। রিভিউয়ের সুযোগ চূড়ান্তভাবে তার কাছেই যাবে। কিন্তু সাংবিধানিকভাবে তিনি তা করতে পারেন না।
রাজ্জাক বলেন, “ট্রাইব্যুনাল আইনে রিভিউ করা যাবে না সেটা কোথাও বলা নেই। এছাড়া সংবিধানের ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদে মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংবিধানের ৩১, ৩৫ ও ৪৪ অনুচ্ছেদের প্রযোজ্য নয় বলেও উল্লেখ রয়েছে। এই তিনটি অনুচ্ছেদকে সুনির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এখানে ১০৫ এর কথা উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং ১০৫ বলবৎ থাকবে।”
এ সময় বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, ১০৫ এর সুযোগ শর্তহীন নয়। এখানে শর্ত দেয়া হয়েছে।
বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, এর অন্তর্নিহিত ক্ষমতা সংবিধানের ঊর্ধ্বে নয়।
পরে ব্যারিস্টার রাজ্জাক সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার চান।
ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়, কোনো ব্যক্তির হাজিরা কিংবা কোনো দলিলপত্র উদ্ঘাটন বা দাখিল করার আদেশসহ আপিল বিভাগে বিচারাধীন যে কোনো মামলা বা বিষয়ে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচারের জন্য যেমন প্রয়োজন, তেমন নির্দেশ, আদেশ, ডিক্রি বা রিট এই বিভাগ জারি করতে পারবে।
জামায়াতে ইসলামীর হুমকিঃ-
তাদের নেতার ফাঁসি হলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু নিশ্চিত হবে।
মামলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ-
২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই জামায়াতের এই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০১১ সালের ১ নভেম্বর কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।
গতবছর ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি ঘটনায় তার বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।
দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে চলতি বছর ১৭ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। ০৫ ফেব্রুয়ারী কাদের মোল্লার উপস্থিতিতে রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল।
কসাই কাদেরের বিরুদ্ধে ৬ টি অভিযোগ আনা হয়েছিল।
১ নং অভিযোগঃ- (০৫ এপ্রিল/৭১)
মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যা,
২ নং অভিযোগঃ- (২৭ মার্চ/৭১)
কবি মেহেরুন্নেসার বাসায় ঢুকে তিনজনকে হত্যা,
৩ নং অভিযোগঃ-(২৯ মার্চ/৭১)
সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে জবাই, কেরানীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি ও গোলাম মোস্তফাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যাসহ শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা,
৪ নং অভিযোগঃ-(২৫ নভেম্বর/৭১)
মিরপুর আলোকদি গ্রামের ৩৪৪ জন নারী-পুরুষকে হত্যা,
৫ নং অভিযোগঃ- (২৪ এপ্রিল/৭১)
মিরপুরে হযরত আলী, তাঁর স্ত্রী, ছেলেমেয়েকে হত্যা এবং
৬ নং অভিযোগঃ-(২৬ মার্চ/৭১)
১১ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়।
এই অভিযোগে আপিল বিভাগে ফাঁসির রায় দেন মহামান্য বিচারপতি।
(কাদের কসাই বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতিত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনটিতে ১৫ বছর জেল ২টিতে যাবজ্জীবন কারাদন্ড। ২নং অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। পরে আপিল বিভাগে ২ নং অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হয়।)
* গণজাগরণ মঞ্চে হাতবোমা হামলা
* ফাঁসি কার্যকরের পরেই ঘরে ফিরব: ইমরান
* ‘বিজয়চিহ্ন’ দেখালেন কাদের মোল্লার স্ত্রীও।
* কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আদেশ কাল সকাল পর্যন্ত স্থগিত।
গণজাগরণ মঞ্চের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ।
হাতবোমা হামলার মধ্যেই শাহবাগে আবার অবস্থান।
তথ্যসূত্রঃ-
শুনানি মুলতবি, ঝুলে থাকল ফাঁসিG

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




