somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রেকিং নিউজ- মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত রাজাকার আল-বদর নেতা মীর কাশেম আলীর ফাঁসির আদেশ।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী কুখ্যাত রাজাকার আল-বদর নেতা, চট্রগ্রামের বাঙ্গালী খান সাহেব নামে পরিচিত মীর কাশেম আলীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
একাত্তরে যার নেতৃত্বে চট্টগ্রামের নৃশংসতা চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল আলবদর রাজাকার ও আল শমস বাহিনী, স্বাধীন বাংলাদেশে যার যোগানো অর্থে জামায়াতে ইসলামী পেয়েছে শক্ত আর্থিক ভিত্তি, সেই মীর কাসেম আলীকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রোববার জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় দেন।
ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণঃ-
* রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে স্থাপিত এই নির্যাতন কেন্দ্রের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব ছিল মীর কাসেম আলীর। ওই সময় মীর কাসেম চট্টগ্রাম শহর শাখা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি, আলবদর বাহিনীর নেতা ও নির্দেশদাতা ছিলেন। নির্যাতন ও নির্মমতার মাত্রা এতটাই ছিল যে, তাঁকে ‘বাংলার খান সাহেব’ হিসেবেও অনেকে উল্লেখ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয়, ওই নির্যাতন ক্যাম্পে যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন এবং যাঁরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, সবকিছুর পেছনেই মীর কাসেম মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

* রায়ের অভিযোগ, দোষী সাব্যস্তকরণ ও শাস্তি—তিনটি অংশেই ডালিম হোটেলে নির্যাতনের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। নির্যাতনের আটটি অভিযোগে মীর কাসেম দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, যার প্রতিটিতে কারাদণ্ড সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাকি যে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, এই দুটিতেও ডালিম হোটেলে নির্যাতনের বিষয়টি ছিল।
* এ রায়ের মধ্য দিয়ে দায় মুক্তির সংস্কৃতির অবসান হচ্ছে।


আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং অপর দুই সদস্য বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম রায় ঘোষণার জন্য রোববার সকাল ১০টা ৫৫ মিনিটে এজলাসে আসেন। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রায় পড়া শুরুর আগে জনাকীর্ণ আদালতে প্রাথমিক বক্তব্য দেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের আলবদর কমান্ডার জামায়াতের শুরা সদস্য মীর কাসেম আলীর যুদ্ধাপরাধ মামলায় ৩৫১ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর তিনিই ১৩ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল -২ এর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ মামলার ৭ম রায় এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এর একাদশ রায়।
রায়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়াঃ-
“চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসীমসহ অন্যদের হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে ভসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মীর কাসেমকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া অপহরণ, আটক, নির্যাতনের অভিযোগে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।”-প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম।
জাতির দায়মুক্তির আরেকটি রায়: প্রসিকিউটর
এ রায়ের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে-আওয়ামী লীগ।
গণজাগরণ মঞ্চের সন্তুটি প্রকাশ।
‘এটা মিথ্যা ঘটনা, মিথ্যা সাক্ষী, ফরমায়েশি সাক্ষী। সত্য বিজয়ী হবে। মিথ্যা পরাজিত হবে। শিগগিরই, শিগগিরই।’-মীর কাশম আলী।
রায় শুনে মীর কাসেমের তির্যক মন্তব্য
১৪ টি অভিযোগের মধ্যে ১০ টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থৎ মজলিসে সুরার এই সদস্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আনা ১৪ অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়েছে। দুটি অভিযোগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২। আটটি অভিযোগে তাঁকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি চারটি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি
কাসেমের বিরুদ্ধে আনা ১৪টি অভিযোগের মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ, যার সবগুলোতেই অপহরণ করে নির্যাতনের বর্ণনা রয়েছে।
চট্রগ্রামে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জসিম উদ্দিনসহ পাঁচ জনকে অপহরণের পর হত্যার অভিযোগে ফাঁসি ও জাহাঙ্গীর সহ আরও দুজনকে হত্যা গুমের দায়ে আলাদাভাবে ফাঁসির রায় দেয়া হয়।
এছাড়া ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি বলে রায়ে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
মামলার কার্যক্রমঃ-
রাষ্ট্রপক্ষের দাখিল করা নথিপত্র অনুসারে, বর্তমানে ৬২ বছর বয়সী মীর কাসেমের পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়। তবে বাবার চাকরির সূত্রে তিনি ছোটবেলা থেকে চট্টগ্রামে থাকতেন। একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের (বর্তমান নাম ইসলামী ছাত্রশিবির) চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। ৭ নভেম্বর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘ নাম বদলে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে আত্মপ্রকাশ করে। মীর কাসেম ছিলেন ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ওই সময় থেকে তিনি জামায়াতের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে দলটির অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত করার উদ্যোগ নেন।
১৯৮০ সালে মীর কাসেম রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী নামের একটি বিদেশি বেসরকারি সংস্থার এ দেশীয় পরিচালক হন। ১৯৮৫ সাল থেকে তিনি জামায়াতের শূরা সদস্য। দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম জামায়াতের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। জামায়াতের অর্থের সবচেয়ে বড় জোগানদাতাও তিনি। এ ছাড়া তিনি দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের অন্যতম সদস্য।
২০১২ সালের ১৭ জুন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মীর কাসেমকে গ্রেপ্তার করে। গত বছরের ১৬ মে রাষ্ট্রপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল-১। পরে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ২৪ জন ও আসামিপক্ষে তিনজন সাক্ষ্য দেন। ২৩ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। গত ৪ মে দুই পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। আজ রায় ঘোষণা করলেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগ সমূহঃ-
অভিযোগ ১: একাত্তরের ৮ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী চাক্তাই সাম্পান ঘাট থেকে মো. ওমর-উল-ইসলাম চৌধুরীকে অপহরণ করে। তাকে কোতোয়ালি থানাধীন দোস্ত মোহম্মদ পাঞ্জাবি বিল্ডিংয়ে চামড়ার গুদামে টর্চার সেলে এবং পরে পাঁচলাইশ থানাধীন আসাদগঞ্জের সালমা মঞ্জিলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে ১২ নভেম্বর সকাল ১০টার দিকে একটি গাড়িতে করে তাকে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জোর করে সাদা কাগজে সই নিয়ে তার মামার কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
এই ঘটনায় কাসেমের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে যা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইন অনুযায়ী ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ও ২০(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ২: মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯ নভেম্বর দুপুর ২টার দিকে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও আলবদর বাহিনী লুতফর রহমান ফারুক ও সিরাজকে চাক্তাই এলাকার বকশিরহাটে জনৈক সৈয়দের বাড়ি থেকে অপহরণ করে। এরপর তাদের আন্দরকিল্লার মহামায়া হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়, যা সে সময়ডালিম হোটেল টর্চার সেল নামে পরিচিত ছিল এবং মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে পরিচালিত হতো। পরে লুতফর রহমান ফারুককে বাইরে নিয়ে গিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের কর্মীদের বাড়িগুলো চিহ্নিত করিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফারুককে আরো দুই-তিনদিন ডালিম হোটেলে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এরপর তাকে সার্কিট হাউজে নিয়ে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে তুলে দেয় আলবদর। সেখানেও তার উপর নির্যাতন চালানো হয় এবং চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পরে সেখান থেকে ছাড়া পান ফারুক।
এ ঘটনায় মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ও ২০(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৩: ওই বছর ২২ অথবা ২৩ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ডবলমুরিং থানাধীন কদমতলীতে তার বাসা থেকে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে অপহরণ করে আলবদর বাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লোকেরা। তাকে ডালিম হোটেলের নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে মীর কাসেমের উপস্থিতিতে নির্যাতন চালানো হয়। দেশ স্বাধীন হলে ১৬ ডিসেম্বর সকালে ডালিম হোটেল থেকে জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে তার আত্মীয় ও স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন।
এ ঘটনায় মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ও ২০(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৪: ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর গভীর রাতে মীর কাসেম আলীর উপস্থিতিতে ডবলমুরিং থানাধীন আজিজ কলোনি থেকে সাইফুদ্দিন খানকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে অন্যদের সঙ্গে তাকেও মারধর করা হয়। ডিসেম্বরের ২ অথবা ৩ তারিখে বন্দিদের চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়, সেখানে জেলারের মাধ্যমে সাইফুদ্দিনের স্ত্রী তার সঙ্গে দেখা করেন। স্বামীকে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। ১৬ ডিসেম্বর জেল থেকে ছাড়া পান সাইফুদ্দিন।
এ ঘটনায় মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ও ২০(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৫: ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে মীর কাসেম আলীর নির্দেশে রাজাকার কমান্ডার জালাল চৌধুরী ওরফে জালাল জল্লাল নন্দন কানন এলাকার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে থেকে আব্দুল জব্বার মেম্বারকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ১৭/১৮ দিন আটকে রেখে হাত ও চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় পানি খেতে চাইলে তাকে প্রসাব খেতে দেয়া হয়, এর ফলে তিনি অন্য খাবার খেতে পারতেন না। ১৩ ডিসেম্বর মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ও ২০(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৬: নভেম্বরের ২৮ তরিখ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মীর কাসেমের নির্দেশে পাকিস্তানী সেনাদের সহায়তায় আলবদর সদস্যরা হারুন-অর-রশিদকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে চোখ ও হাত বেঁধে তাকে নির্যাতন করা হয়। পরে মীর কাসেমের নির্দেশে তাকে চোখ-হাত বাঁধা অবস্থাতেই পাঁচলাইশের সালমা মঞ্জিলে আরেকটি নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর সালমা মঞ্জিল থেকেই তাকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ও ২০(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৭: একাত্তরের ২৭ নভেম্বর মাগরিবের নামাজের পরে মীর কাসেমের নির্দেশে ডবলমুরিং থানাধীন ১১১ উত্তর নলাপাড়া থেকে মো. সানাউল্লাহ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান ও ইলিয়াসকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা।
সেখানে তাদের আটকে রেখে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। মীর কাসেমের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ নির্যাতন কেন্দ্রে আটক থাকার সময় তারা আরো অনেককে আটক অবস্থায় দেখতে পান। এদের অনেককে আবার ডালিম হোটেল থেকে নিয়ে যেতে দেখেন তারা, এবং পরে শুনতে পান যে বদর বাহিনীর সদস্যরা তাদের মেরে ফেলেছে। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করার শর্তে মীর কাসেমের নির্দেশে ৬ ডিসেম্বর হাবিবুর রহমান এবং ৯ ডিসেম্বর মো. সানাউল্লাহ চৌধুরীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২)(এ)(জি)(এইচ), ৪(১), ৪(২) ও ২০(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৮: ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর রাত আড়াইটার দিকে মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা চাঁদগাঁও থানাধীন সাবহানঘাটা মহল্লা ঘেরাও করে নুরুল কুদ্দুস, মো নাসির, নুরুল হাসেমসহ আরো কয়েকজনকে অপহরণ করে এনএমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে যায়। পরে ভোর বেলায় ওই তিনজনসহ আরো অনেককে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনজনকে দশদিন আটক রেখে নির্যাতন করা হয় এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১৬ ডিসেম্বর তারা ছাড়া পান।
এ ঘটনায় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২) এর(এ)(জি)(এইচ), ৪(১) ও ৪(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ৯: মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ২৯ নভেম্বর ভোরে মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে চাঁদগাঁও থানাধীন নাজিরবাড়ি এলাকা থেকে পাঁচ চাচাতো ভাইসহ নুরুজ্জামানকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা। সেখানে তাদের আটকে রেখে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পরে তাদেরকে সেখান থেকে মুক্ত করা হয়।
এ ঘটনায় অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে মীর কাসেমের বিরুদ্ধে, যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২) এর (এ)(জি)(এইচ), ৪(১) ও ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১০: একাত্তরের ২৯ নভেম্বর ভোর ৫টার দিকে মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা নাজিরবাড়ি এলাকা ঘেরাও করে মো. জাকারিয়া, মো. সালাউদ্দিন ওরফে ছুট্টু মিয়া, ইস্কান্দর আলম চৌধুরী, মো. নাজিম উদ্দিনসহ আরো অনেককে অপহরণ করে এবং এনএমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে যায়। পরে তাদের সবাইকে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। বয়সে ছোট হওয়ায় নাজিমুদ্দিনকে পরদিন ছেড়ে দেওয়া হয়। সাত-আটদিন পর মো. জাকারিয়াকে, ১১ অথবা ১২ ডিসেম্বর মো. সালাউদ্দিন ওরফে ছুট্টু মিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সবশেষে ইস্কান্দর আলম চৌধুরী ১৬ ডিসেম্বর ছাড়া পান।
এ ঘটনায় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ১৯৭৩ সালের ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২) এর (এ)(জি)(এইচ), ৪(১) ও ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১১: ১৯৭১ সালে ঈদুল ফিতরের পরের যে কোনো একদিন মীর কাসেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোনো এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরো পাঁচজন অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২) এর(এ)(জি)(এইচ), ৪(১) ও ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১২: ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের কোনো একদিন মীর কাসেম আলীর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা হিন্দু অধ্যুষিত হাজারি লেনের ১৩৯ নম্বর বাড়ি থেকে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং ১১৪ নম্বর বাড়ি থেকে রঞ্জিত দাস ওরফে লাঠুকে ও টুনটু সেন ওরফে রাজুকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। পরদিন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ছেড়ে দেওয়া হলেও লাঠু ও রাজুকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হয়। এই তিনজনকে অপহরণের সময় আলবদর বাহিনী এবং পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যরা অনেক দোকানপাট লুট করে এবং অন্তত আড়াইশ বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এর ফলে অন্তত একশ’ হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়।
এ ঘটনায় আসামি মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২) এর(এ)(জি)(এইচ), ৪(১) ও ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১৩: নভেম্বরের কোনো একদিন আন্দরকিল্লার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার গোলাম মোস্তফা কাঞ্চনের বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন সুনীল কান্তি বর্ধন ওরফে দুলাল ও তার স্ত্রী, ছেলে ও একজন কিশোর গৃহকর্মী। পথে চাক্তাই সাম্পানঘাটে পৌঁছালে মীর কাসেমের নির্দেশে দুলালকে অপহরণ করে চাক্তাইয়ের দোস্ত মোহম্মদ পাঞ্জাবি বিল্ডিংয়ের নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত আরো অনেক সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় দুলালকে। পরে ১৪ ডিসেম্বর তাদের সবাইকে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর ডালিম হোটেল থেকে দুলালকে উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২) এর (এ)(জি)(এইচ), ৪(১) ও ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ ১৪: নভেম্বর মাসের শেষ দিকে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানধীন নাজির আহমেদ চৌধুরী রোডে এ জে এম নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে আ্শ্রয় নেন নাসিরুদ্দিন চৌধুরী। একদিন গভীর রাতে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে কয়েকজন আলবদর সদস্য ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। তারা নাসিরুদ্দীন চৌধুরীকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে যায় এবং সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। ১৬ ডিসেম্বর ডালিম হোটেল থেকে আরো এক-দেড়শ লোকের সঙ্গে নাসিরুদ্দীনকেও উদ্ধার স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় মীর কাসেমের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা ট্রাইবুনাল আইনের ৩(২) এর(এ)(জি)(এইচ), ৪(১) ও ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
গতবছরের ৫ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের এ ১৪টি ঘটনায় অভিযুক্ত করে মীর কাসেম আলীর বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। সাক্ষ্য, জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে চলতি বছর ৪ মে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

তথ্য সূত্রঃ- বিডি নিউজ২৪, প্রথম আলো।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪
৪২টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×