somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবিন্দ্রনীয় মৃত্যু!

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মানবী ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেল। হাঁতে তুলে নিল নীল রঙ্গা ডায়েরিটা। পাতা উল্টিয়ে চোখে পড়লো ঝকঝকে কিছু অক্ষরের গাঁথুনি।শুধু দুটা শব্দ প্রথম পাতাকে আলোকিত করে আছে।

'হেমনলিনী নাথ'

কিছুটা কৌতূহল আর আশ্চর্যান্বিত হয়ে মানবী পড়তে শুরু করল-

'খেলাঘর বাঁধতে লেগেছি... '
একটি চিঠির অপেক্ষায় আছি। কাল পুরোটা রাত চোখের পাতা এক হয়নি! অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে অপেক্ষায় আছি সেই কাঙ্খিত চিঠির।জানি শীঘ্রই অপেক্ষার অবসান হবে।
৩রা ফাল্গুন, হেম।

‘সেদিন চৈত্র মাস... তোমার চোখে দেখেছিলেম আমার সর্বনাশ...’
জানি, এই চোখের কোনের কাজলে তোমার যত অভিযোগ। সর্বনাশের বীজ যে সেখানেই বুনে রাখা! সেই কাজলে তুমি ডুবে সাঁতরাও! বিদেশ বিভূঁইয়ে বসে ভাবছ আমাকেই জানি। চিন্তা কর না,আমিও শুধু তোমাতেই আছি, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা আমায় সাঝেনা। তোমার কাব্যে, গল্পে, সুরে যেমন আমি লেগে আছি, ঠিক তেমনি আমার সমস্ত সত্ত্বা জুড়ে শুধু তুমিই আছো, তুমি তুমি তুমি!
১৮ই চৈত্র, হেম।

‘ওগো অকরুণ... কি মায়া জানো? মিলন ছলে বিরহ আনো...’
আজ একটি বিশেষ দিন। তাই চুপটি করে বাবাকে লুকিয়ে ঘরে সিঁদুর পড়ে বসে আছি। সুন্দর করে সেজেগুজে তাকিয়ে আছি তোমার ছবির দিকে! তুমি দেখছ তো আমায়? আচ্ছা, আমার চোখে লুকিয়ে থাকা স্বচ্ছ জল গুলো চোখে পড়ে তোমার নাকি শুধু কাজলেই মগ্ন তুমি? শুনছো? কবে আসবে? কবে সবার সামনে তোমাকে আমার করে নিতে পারবো? লুকিয়ে লুকিয়ে করা সংসারের যে বড্ড কষ্ট, সেটা বোঝনা তুমি?এই, শোন, শুভ জন্মদিন।
২৫শে বৈশাখ, হেম।



মানবী ডায়েরি বন্ধ করলো। অম্বর দত্তের সাথে কথা বলা জরুরী, খুব জরুরী।

-আসবো?
-আসুন আসুন, বসুন।
- কিছু প্রশ্ন ছিল, এই অবস্থায় এত কিছু জিজ্ঞেস করতে খারাপ লাগছে, তবুও করতে বাধ্য আমি, করতে পারি?
- অবশ্যই।
- বিফর দ্যাট,য়্যুড ইউ মাইন্ড ইফ আই স্মোক?
অন্যসময় হলে অম্বর বাবুর হয়ত বিরক্তি হত নিজের মেয়ের বয়সী মেয়ের হাঁতে সিগারেট দেখতে, কিন্তু এই মুহূর্তে অসম্ভব ব্যক্তিত্বসম্পন্ন আর বুদ্ধিমতি মেয়েটির হাঁতে সিগারেটটা বেশ মানিয়ে গেছে। অবশ্য বিরক্ত না হবার আরও কারন থাকতে পারে, এই মুহূর্তে এই মেয়েটিকে তাঁর ঠিক অনামিকার মত লাগছে, বড্ড আপন, যাদের সব ভুল ক্ষমা করা যায়!
-য়্যুড ইউ মাইন্ড মিঃ দত্ত?
-নো নো, নট অ্যাট অল। প্রসিড।
-থ্যাংকস। যা বলছিলাম। হেমনলিনী নামের কারও সাথে আপনার জানাশোনা আছে? হেমনলিনী নাথ?
-জী না। নেই।
- অনামিকা দত্তের সাথে এরকম কারও পরিচয় আছে?
-আমি যতদূর জানি নেই। ওর সাথে বাইরের খুব কম মানুষেরই পরিচয় আছে, বন্ধু বান্ধবও নেই বললেই চলে। হাঁতে গোনা যারা আছে তাঁদের সবাইকেই আমি চিনি। ও সবসময় নিজের মধ্যে থাকতেই পছন্দ করতো। ওর জগত ছিল ওর বই, ওর গান, কবিতা, আর মুগ্ধ।
- মুগ্ধ?
-হুম, মুগ্ধ বসু। আমার ভাবী জামাই। লাস্ট মান্থে ওদের এঙ্গেইজমেন্ট হয়েছে। দে ওয়্যার ক্লাসমেইট।
- উনি কি দেশের বাইরে থাকেন? বা আপনি এমন কাউকে জানেন যিনি দেশের বাইরে থাকেন অনামিকার পরিচিত?
- নাহ। মুগ্ধ দেশেই থাকে, ওর ডিটেইলস আমি আপনাকে জানিয়ে দেব। আর এমন কেউ আমার জানা শোনার মধ্যে বিদেশে নেই যে অনুর পরিচিত।
-ওকে মিঃ দত্ত। আমি আজ উঠি। অনামিকার ডায়েরিটা সাথে করে নিয়ে যাচ্ছি। কাল মিঃ মুগ্ধের সাথে কিছু কথা বলব। আসি।
- আসুন। ... আচ্ছা আমার মেয়েটাকে পাওয়া যাবে তো?
-অবশ্যই, চিন্তা করবেন না। গুড নাইট।

মানবী ডায়েরি খুলে বসে আছে। মাথাটা অসম্ভব ব্যাথা করছে! এই এক সমস্যা! যেদিন বেশী সিগারেটের ধোঁয়া চলে যায় ভেতরে সেদিন মাথাটা ঝিম ঝিম করতে থাকে! চেষ্ঠা করেও নেশাটা যাচ্ছে না। সেই ছেলেবেলা থেকে দাপট নিয়ে বেড়ে ওঠা, ছেলেদের সবকিছুতে টক্কর দেয়া, এসব করতে করতে কবে যে ছেলেদের এই বাজে অভ্যাসটা পেয়ে বসলো! চাইলেও ছাড়া যায়না, এমন অভ্যাস। পাফ করে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে মানবী পড়তে লাগলো-

‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল...’

জানো? আজ কি হয়েছে? ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরবো, ঠিক তখন তোমার কাব্যের সব বিরহ যাতনা গুলো মনেহয় মেঘকে বিষণ্ণ করে দিল, আর মেঘের সেকি কান্না! চোখ মুখ ফুলিয়ে গর্জন করে করে কান্না।ব্যাগের ভেতর ছাতা রেখে আমি ভান করছি অসহায় হবার, আর ভেতরে ভেতরে আমার সমস্ত অংশ কেঁপে উঠছে বৃষ্টির নাচনের সাথে! কি যে আনন্দ! এমন সময় দেখি কোন এক বুদ্ধু হাঁতে এই এতগুলো কদম ফুল নিয়ে দাড়িয়ে আছে, আমার জন্য! চোখ বন্ধ কর, হুম, দেখো, বৃষ্টির মাঝে, থই থই পানিতে হাঁটু গেড়ে হাঁতে সোনালি গোলাকার আগুন নিয়ে আমাকে কোন অচেনা বালক, এই তোমার আমিকে বলছে ‘ভালবাসি’! হাহাহা, কি হিংসে হচ্ছে তো? হুম, তাই কর, দূরে থেকে পুড়তে থাকো, কাছে না আসার শাস্তি।
১৩ই শ্রাবণ, হেম।

‘বুকের ভেতর বাজে... সুখের মতন ব্যথা...’
এই কথাটার মানে আমি কখনই বুঝিনি! ব্যথা কি করে সুখময় হয়? বা সুখ কি করে ব্যথা দিতে পারে? আজ বুঝি! কারও প্রতি তীব্র আকর্ষণে যে সুখ, তোমার থেকে হারিয়ে যাবার ঠিক সেই সম পরিমাণ ব্যথা! শোন, আজ আমার সুখের মতন ব্যথা! একটু ছুঁয়ে দেখবে?
২রা আশ্বিন, হেম।


‘ইন্টেরেস্টীং! ডায়েরীর যত গভীরে যাচ্ছে, তত বেশী পাজেল! অ্যান্ড মানবী লাভস পাজেলস! হেম, অনামিকা, বিলেতি বাবু, মুগ্ধ!'
ভাবতে ভাবতেই মানবী ঘুমিয়ে পড়লো।

শেষ পর্ব আসছে, শীঘ্রই।

উৎসর্গঃ কিছু বছর আগে, যখন আমার বয়সী মেয়েরা আশে পাশের সুন্দর ছেলে দেখতে ব্যস্ত বা তাঁদের সাথে প্রেম করতে ব্যস্ত, তখন আমি রবীন্দ্রনাথ বলতে পাগল। তখন মনে হত আমার থেকে বেশী কেউ ভক্ত নয় ওনার! ব্লগে এসে দেখি আমার থেকেও বড় এক রবীন্দ্র পাগলী আছেন, এই লেখাটা তাঁর জন্য। যাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনীয় অনুভূতি গুলো, আর সেই অনুভূতি গুলো কি করে কম কথায় প্রকাশ করি? তাই লেখাটা একটু বড়, হোক না। সেই বাড়তি আবেগ গুলো শায়মা আপির জন্য তুলে রাখলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৩৯
৪১টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×