somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের কোলে রোদ—১৩ (ধারাবাহিক উপন্যাস)

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘের কোলে রোদ-১২
কিছুই ভাল লাগছে না রোমিলার।ইচ্ছে করছে ছুটে পালিয়ে যেতে।এই গ্রামের
বাতাসে দমবন্ধ হয়ে আসছে তার।ঠান্ডা মাথায়,শান্ত ভাবে নিজের ব্যগপত্র
গুছিয়ে নিল সে। চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে নিচে তলায় নামল। বারান্দা পার হল।
আঙিনায় পা রেখে বুক ভরে গেল সতেজ বাতাসে।
দু-দিন ধরে রোমিলার ভাব পরিবর্তন লক্ষ্য করছে অতসী। কিছু যেন ভাবছে।
দেখেও যেন অনেককিছু দেখছে না।অল্পতেই রেগে যাচ্ছে।সব কথার বাঁকা
উত্তর দিচ্ছে। খেতে বসে অন্যমনস্ক।আগে অল্প খেত,এখন খায় নামমাত্র।
বিরক্তিকর।
রোমিলাকে আঙিনায় নেমে দাঁড়াতে দেখে কলতলা থেকে ছুটে এল অতসী।
বলল,কি-রে ব্যগপত্র গুছিয়ে দাঁড়ালি যে?
---আমি চলি যাচ্ছি।
---চলে যাচ্ছিস মানে?কাউকে কিছু বলা নাই,কওয়া নাই,চলে যাবি বললেই
হল?
---আমি তোকে খবর দিয়ে এখানে আসিনি,তাই বলে যাওয়ার কোন কথা
নাই।
---তবে যে এতদিন বলছিলি,এই গ্রামের মানুষদের জন্যে তোর এন-জি-ও
অনেক কাজ করবে?
---তখন কি আর জানতাম আমার জন্যে এতগুলো দূর্ঘটনা ঘটবে?
---তোর জন্যে বলছিস কেন,তুই এখানে না এলেও ওই ঘটনাগুলো ঘটতো।
---না-রে আমার ভাগ্যটাই খারাপ,আমি যেখানেই যাই,সেখানেই দূর্ঘটনা
ঘটে।
---তোর মত বাস্তববাদী মেয়ের মুখে এমন অদৃষ্টবাদের কথা মানায় না।
---পরিস্থিতি আমাকে নিজের কাছেই বেমানান করে তুলেছে।বলতে-বলতে
চোখের পাতা ভিজে গেল রোমিলার। চোখ ভরে উঠছে অতসীরও।
দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেল। শাড়ির আঁচলে চোখ
মুছল।দেখল,তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অতসীর বাবা-মা।শিবু বলল,যাবেই
যখন যাও,তোমাকে আটকাবো না মা,তবে গনেশকে সঙ্গে নাও।
পেয়ারাগাছে বসে থাকা একটা কাক ডেকে উঠল কা-কা শব্দে।সেই
শব্দের অনুসরণ করে যেন এসে দাঁড়াল এক পাগলিনী।সে রোমিলার পায়ের
কাছে উপুড় হয়ে বলল,আমার ছেলেকে তুমি বাঁচাও মা।আমি জানি,তুমিই তাকে
বাঁচাতে পারো।
---পা ছাড়ুন,পা ছাড়ুন, ছি:,ছি: কি করছেন।কে আপনি,আপনার ছেলেই-বা কে?
---আমি এক রাক্ষুসি মা,আমি এক ডাইনি,তাই আল্লাহপাক আমার পেটে কোন
কাঁটা দেয়নি।পরের ছেলেকে নিজের ছেলে ভেবে কুকুর দিয়ে খাওয়ালাম।
বিলাপের সুরে বলল রাবেয়া।
---কি সব আবোল-তাবোল বলছেন,আপনার কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝছি,দয়া
করে পা ছাড়ুন,প্লিজ।
---উনি ওয়াশিমের মাসীমা।শিবু বলল।
---তাতে কি হয়েছে,আমি তো দারোগা-পুলিশ নই,জজ-ব্যরিস্টারও নই।দয়া করে
পা ছাড়ুন।
---মা,মা আমার,আমি ঠিক জানি,তুমিই আমার মা হবে,আমার কাছে খবর আছে
তুমিই আমার ছেলেকে বাঁচাবে।তাই তো তোমার কাছে ছুটে এলাম মা,যেমন করেই
হোক ওকে বাঁচাও।
---আপনি ভুল করছেন মাসীমা,আপনার কাছে যে খবরই থাক না কেন সেটা ভুল।
আপনার ছেলে মার্ডার করে ফেরার হবে আর আমি তাকে বাঁচাব,সেই শিক্ষা আমার
বাবা আমাকে দেয়নি।বরং শুনে রাখুন,আপনার ছেলের সন্ধান পেলে আমিই তাকে
পুলিশে দেব।মানবাধিকার কর্মী হিসেবে,তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেব,তাকে ফাঁসিতে
ঝুলিয়ে তবেই আমার শান্তি।
বলতে-বলতে নাকের পাটা কাঁপতে থাকল রোমিলার,ফরসা মুখে রাগে আগুন-আভা।

হি-হি হাসি ছড়িয়ে উঠে দাঁড়াল রাবেয়া।শান্ত স্বরে বলল,রাবেয়া বেওয়া আজ অব্দি
যা-যা বলেছে,কোনটাই মিথ্যে হয়নি,এটাও হবে না।
---আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে,আপনি অলৌকিক কোন ক্ষমতার অধিকারী।
অতসী বোধহয় আপনার কথাই বলছিল সেদিন,ওসব আমি বিশ্বাস করি না,
তাই আপনাকে আমার চ্যালেঞ্জ রইল।
শিবু,অতসী আর তার মা বিভিন্ন রকম ইশারা করে রোমিলাকে চুপ থাকার অনুরোধ
করল।রোমিলা সে সব দেখেও দেখল না।
---ঠিক আছে দেখে নেব কতদিন তোর চ্যালেনজ থাকে।
ক্ষণিকের মধ্যে গলার স্বর পাল্টে গেল রাবেয়ার।চোখেমুখে ফুটে উঠল অহংকারের
তেজ।দ্বীপ্ত ভঙ্গিতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল রাবেয়া।স্বচ্ছ দিঘির জলে রাজহাঁস
যেমন সাঁতার কাটে নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে,তেমনই তার নির্বিকার যাওয়া।
রোমিলা সেদিকে তাকিয়ে বলল,কই কাকু গনেশকে ডাকুন,আমাকে বাসস্ট্যান্ড
অব্দি দিয়ে আসুক।
(পরের কথা আগামী পর্বে।)



২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×