17
প্লাটফর্মে পায়চারী করছে গনেশ।তার অস্থিরতা দেখে কৌতুক
অনুভব করছে রোমিলা।মনে মনে হাসছে সে।
ট্রেনের সিগন্যাল হয়ে গেছে।মাইকে ঘোষণা দিয়েছে,এক নম্বর
প্লাটফর্মে ট্রেন এসে থামবে।এই সময়টুকুর জন্যে তর সইছে
না গনেশের।রোমিলাকে ট্রেনে উঠিয়ে সে যাবে উকিলের কাছে।
রোমিলা নিশ্চিত,ওয়াশিমের বিরুদ্ধে যে-ভাবে স্বাক্ষ্য-প্রমাণ তৈরী
হয়েছে তাতে তাকে কোন উকিলই বাঁচাতে পারবে না।গনেশকে
সে-কথা একাধিকবার বলেছে রোমিলা।গনেশ অনড়,শেষ চেষ্টা
করে দেখব।
রাস্তায় রোমিলা বলেছিল,তুমি উকিলের কাছে যাও গনেশ,এই
সামনেই স্টেশন,এইটুকু পথ আমি একাই যেতে পারব।
---না দিদি,দিদিকে আমি কথা দিয়েছি,আপনাকে ট্রেনে তুলে,
আমি অন্য কাজে যাব।
রোমিলা লক্ষ্য করছে,গনেশ তাকে ‘দিদি’ বলছে হেলাফেলার স্বরে।
ওয়াশিমের বিষয়টি নিয়ে ঈষা আর গনেশের সঙ্গে শুধু মতভেদই
নয়,বেশ দূরত্ব তৈরী হয়েছে রোমিলার।ঈষা তো এলই না।সুচেতার
জ্বর।তিনি স্টেশন অব্দি আসতে চেয়েছিলেন,রোমিলা নিষেধ করেছে।
একটা দিনের পরিচয়ে ভদ্রমহিলার প্রতি সম্র্ইম ও শ্রদ্ধা জন্মেছে
রোমিলার মনে।তিনি যেন দ্বীপবাসিনী এক নারী,ঢেউ গুনছেন সাগরের,
কখনও ভাসছেন,কখনও ডুবছেন।
স্টেশনে একটা সংবাদপত্র কিনেছে রোমিলা।ট্রেন পড়তে পড়তে সময়
কাটবে। সেটা ভাঁজ করে কোলের উপরেই রেখেছিল। এখন গনেশের
অস্থিরতা থেকে নিজের বিরক্তি ঢাকতে সেটাই চোখ রাখল।স্থানীয় একটা
খবরে চোখ আটকে গেল তার।
---গনেশ একটু এদিকে এসো তো?
গনেশ এল। বলল,বলুন।
---সোনারমাটি,কদমগাছি,আসনভাসা,এগুলো তো তোমাদের আশেপাশের
গ্রাম?
গনেশ মাথা নেড়ে বলল,হ্যাঁ, কেন বলুন তো?
---তোমাদের ওদিকে দেখছি যা-কিছু ঘটছে সবই কুকুর নিয়ে।আরিফ,
টগর বায়েন,রিজা,এদেরকে চেনো নাকি?
---চিনব না কেন,ইনারা হলেন আমাদের এলাকার ভাল মানুষ,পয়সা নিয়ে
মানুষ খুন করেন। তা তাঁরা এখন কাকে কামড়ালেন?
---না,ওরা কাউকে কামড়ায়নি,তবে ওদেরকে কুকুরে কামড়েছে,তাই
হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে,সেখানে নাকি সিরাম ইনজেকশন মিলছে না।
রিপোর্টারগুলোও হয়েছে তেম্নি,খবর না পেয়ে এই সব খবর ছাপছে!
গনেশ বিরক্তিভরা গলায় বলল,উনাদের প্রভু প্রল্হাদ-বাবু থাকতে উনাদের
চিন্তা কিসের,তিনি তো ইচ্ছা করলে উনাদের নারসিং হোমে রেখে বিদেশী
ইনজেকশন ব্ল্যাকে কিনে দিতে পারেন।
রোমিলা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল তার আগেই হুড়মুড় করে ট্রেন ঢুকে
পড়ল।সে বলল,মরুকগে,আচ্ছা ভাই আসি তাহলে,তোমাদের অহেতুক
কষ্ট দিয়েছে বলে খুব খারাপ লাগছে,ঈষাকে বলো,সে যেন তার এই
গোঁয়ার দিদিকে ক্ষমা করে দেয়।
গনেশ কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।এই সময়ে তার রোমিলা
নামের মেয়েটির সাথে কথা বলার চেয়ে উকিলের কাছে যাওয়া জরুরী।
সে পেছনফিরে, ঠিক আছে,ঠিক আছে বলব,আসবেন আবার।বলে স্টেশনের
গেটের দিকে হাঁটল।
(পরের কথা আগামী পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




