somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: একটা নাম না জানা নদী,বাউল আর হারিয়ে যাওয়া বউ

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্প: একটা নাম না জানা নদী,বাউল আর হারিয়ে যাওয়া বউ
বউ বলল—ওই নদীতে আমি কখনোই গোসল করব না।
আমি মনে-মনে বিরক্ত হই।হাসিমুখে বলি-কি চমৎকার নদী,এর পানিতে গোসল করলে,মন ভাল হয়ে যাবে দেখো।
বউ পায়ের আঙুলে ভেজা বালি মাটিতে দাগ কাটছে।সেই দাগ কিসের ছবি ফুটিয়ে তুলছে বোঝা মুশকিল।বউকেই বুঝতে পারলাম না আজ অব্দি,তা এতো মাটিতে আঁকা অবহেলার দাগ।
নুনফিকিরি পিকনিক স্পটের গল্প আগে শুনেছিলাম।কিন্তু এই নদীর কথা বলেনি তো কেউ।
ছোট্ট নদী।শীর্ণ ধারা।নদীটার নাম কি নুনফিকিরি।আঁজলা ভরে পানি তুললাম।মুখে দিলাম।নোনা নয় তো!তবে কি জায়গাটার নামই নুনফিকিরি,নদীটার কোন নাম নেই।
বউ বলল—বেশ আমি গোসল করব।কিন্তু একটা শর্ত আছে।
--কি শর্ত।
--তুমি চোখ বন্ধ করে থাকবে।
--আমি তো ভাবছিলাম,দুজনে একসঙ্গে গোসল করব।
--বেশ তাহলে তুমিই গোসল কর,আমি চললাম।
--না,না,তুমিই গোসল কর,আমি চোখ বন্ধ করে থাকি।
--প্রমিস।
--প্রমিস।
বউ নেমে গেল হাঁটুজলে।আমি চোখ বন্ধ করলাম।
শীতের দুপুর।রোদে বেশ তেজ।বন্ধ চোখে তাপ পড়ছে।কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকা যায়।চোখ খুললাম।বউ কই?শীতের রোদে ঝিলমিল করে হাসছে
নদী।বউ নাই।
অবাক কান্ড।সকালে দুজনে অফিসের গাড়িতে উঠেছি।পিকনিক স্পটে সহকর্মীদের
সাথে নাশতা করেছি।সবাই যখন রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত,বউ বলল—চলো না,দুজনে
ঘুরে আসি।
--বেশ চলো,নতুন জায়গা ঘুরেফিরে দেখতেও ভাল লাগবে।
দুজনে গল্প করতে-করতে চলে এসেছি নদীর কাছে।নাম না জানা নদীর কাছে এসে বউয়ের ভাব পরিবর্তন।হঠাৎ বলল--ওই নদীতে আমি কখনোই গোসল করব না।
গোসল যদিবা করতে নামল,উধাও হয়ে গেল কোথায়?
আচমকা আমার মনে একটা ভয়,নদীতে চোরাবালি নাই তো? চোরাবালি একটু একটু করে তলিয়ে দিয়েছে তার স্নান-সম্ভাবনা। না,তা হতেই পারে না।তেমন কিছু হলে বউ আমার চিৎকার করত।আমি চোখ বন্ধ করে থাকলেও কান খোলা ছিল।
আমিও নামলাম নদীর পানিতে।ঠান্ডা পানি।গা শিরশির করে।নদী পার হতে গিয়ে পাজামা ভিজে গেল।বউয়ের শাড়িও ভিজেছে।মাঝেমধ্যে ও এমন অদভুত আচরণ করে,আমার ভয় হয়।আমি কি পাগল হবো নাকিরে?
বউয়ের আচমকা উধাও হয়ে যাওয়া,তেমন কিছু নয় তো?
নদীর ওপারে ঝোপজঙ্গলের আড়ালে বাড়িঘর।বউ কোন ঝোপে লুকোয়নি তো?
এই ঝোপে চোখ রাখি,ওই ঝোপে চোখ রাখি,বউ কোথাও নাই।
একটা ঝোপের আড়ালে গেরুয়া বসনের একজনকে দেখলাম।নদীতে
নেমে বউয়ের গেরুয়া বসন হয়ে গেল নাকি। হাঁটলাম সেই ঝোপের দিকে।এক বাউল একতারা হাতে টুংটাং করছে।বললাম—আমার বউকে দেখেছেন।
--নিজের বউয়ের ভয়ে জঙ্গলে ছুটে আসি গলা সাধতে,পরের বউকে দেখতে যাব কেন বাবা?
--বউকে আবার ভয় কিসের,আপনি বাউল,আপনি শিল্পী,আপনার তো ভয় থাকার কথা নয়।
ঘোড়ার আন্ডা বাউল,আমি হলাম পাঁচু মুদি।ভোর থেকে দোকানদারি করি।যখন
ফাঁক পাই গলা সাধি।বউয়ের তাতে আপত্তি।আমার মত হেঁড়ে গলা নাকি জগতে
কারো নাই।শেষমেষ ভদ্রলোকের চুক্তি,গলা সাধতে পাব,একমাত্র জঙ্গলে।
মাঝবয়সী লোক তার বাউল হওয়ার শখ নাই,শুধু মাত্র গলা সাধার ইচ্ছায়
বাউল সেজে জঙ্গলে বসে আছে।আর আমি কিনা বউয়ের খোঁজে ইতিউতি
ছুটছি।হাঁটলাম আবার পিকনিক স্পটের দিকে।
পিকনিক স্পটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে আছে সবাই।মেয়েরা রান্না করছে।কেউ তাস খেলছে।কেউ গল্প করছে।বউকে তো দেখছি না।
গাংগুলিদা বললেন—কি ব্যাপার,বউকে ফেলে পালিয়েছিলে কোথায়?
আমি অবাক।আমি তো পালাইনি।বউই তো পালিয়েছে।এর মধ্যে গাংগুলিদা টের পেয়ে গেল।অফিসে আমি তার ভুল শুধরেদিই,সে কি আমার ভুল ধরতে চাইছে জীবনে? আমতা-আমতা করে বললাম—কোথায় আবার পালাব,এই একটু নদীর কাছে গেছিলাম।
--নদী,ও নামে তোমার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি?
--ওই তো একটু দুরে আছে একটা,ওটার নাম গার্লফ্রেন্ড নাকি।
--ওহ,তাই বলো,আমরা ভাবলাম নতুন বউকে ছেড়ে এতক্ষণ,নিশ্চয় কোন পরকীয়া।বলে হো-হো করে হাসলেন গাংগুলিদা।মশকরা তার স্বভাব।
--ওই নদীতে চান করা যাবে তো?
--হুঁ-হুঁ খুব ভাল নদী,ঠান্ডা।
--আহা যেন কোন মেয়ের বিবরণ দিলে,খুব ভাল মেয়ে ঠান্ডা,রাতে উষ্ণ-প্রস্রবন
হয়ে যায়।
গাংগুলিদার রসিকতায় অন্য সহকরমীরা হেসেউঠল।আমার কেমন জানি রাগ হল।বললাম,যাদের ঘোড়া-খোঁড়া,মুখেই শুধু তুবড়ি ছোড়া।
গাংগুলিদা এবং তার বয়সী সহকর্মীরা থম মেরে গেলেও আমার বয়সীরা হো-হো করে হেসে উঠল।প্রসঙ্গ পালটাতে গাংগুলিদা বললেন—কই সব তোয়ালে টোয়ালে নিয়ে চল,ওখানে একটা নদী আছে,চল চান করে আসি।
সবই তো আছে,কিন্তু বউ কই?
পিকনিকে আসা মেয়ে-বউরা এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।কেউ শুয়ে,কেউ বসে।কোথাও ঝোপ,কোথাও ঝাড়।সবসময়,সবদিকে তাকানো যায় না।একটা ঝোপে
মনে হল বউয়ের মত কেউ একজন।আজকালকার মেয়েরা বিউটি-পারলারে গিয়ে
এমন সব চুল-কাটা আর বাঁধার স্টাইল শিখেছে,দুর থেকে সবাইকে নিজের বউ মনে হয়।
কাছে গিয়ে দেখি,সত্যিই বউ। তার পাশে বসে থাকা মেয়েটি আমাদের পিকনিক টিমের কেউ নয়।সে ব্লাউজ খুলে তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে।বউ তা মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখছে।
বুঝলাম বউ আমার সঙ্গে নদীতে গেছিল নাকি যায়নি সেটা বড় কথা নয়।সে উধাও হয়ে ওপারের বসতি থেকে মেয়েটিকে ধরে এনেছে এটাও বড় কিছু না।বড় কথা এটাই,আমি যেমন ওকে স্বপ্নের মাঝে ছোটাচ্ছি,সেও আমাকে ছোটাচ্ছে।একটা ছোট্ট
শিশু এসে আমাদের না হয় আর একটু ছোটাবে।
বউয়ের চোখে চোখ পড়ে গেল,সেখানে খুশির ঝিকিমিকি,যেমনটি দেখেছিলাম নদীর।





সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৪
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×