somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

মার্গারেট উল্কঃ একজন প্রবীণ খাদ্য পরীক্ষক

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মার্গারেট উল্ক (Margot Wölk বা Margot Woelk) দুনিয়াতে বেঁচে থাকা সব চেয়ে প্রবীণ একজন খাদ্য পরীক্ষক (Food Tester)। বর্তমানে তার বয়স ৯৭ বছর এবং তিনি জার্মানীর বার্লিন শহরে এখন বাস করেন। আজ আমি আপনাদের এই প্রবীণ খাদ্য পরীক্ষকের গল্প শুনাবো।

১৯৪২ সালে তিনি জার্মানীর হিটলারের খাবার পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন, তবে এই চাকুরী যে তিনি নিজে ইচ্ছা করে নিয়েছিলেন তা নয়, অনেকটা জোর করেই তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। জার্মান চ্যন্সেলর হিটলার এবং তার প্রেয়সী ইভা তাদের নিত্য বা দৈনিক খাবার/খাদ্য খেয়ে পরীক্ষা করার জন্য যে পনরজন মহিলা কর্মী নিয়োগ করেন মার্গারেট তাদের মধ্যে একজন। খাবারের স্বাদ কেমন তা জানা এই পরীক্ষকদের কাজ ছিল না! এই পরীক্ষকদের কাজ ছিল খাবারে বিষ মেশানো আছে কি না তা নিজে খেয়ে পরীক্ষা করা! কাজের নমুনা বুঝে নিন, ভাবুন কি কঠিন পরীক্ষায় তারা নিয়োজিত ছিলেন!


দীর্ঘ দিনের মৌনতা ভেঙ্গে মার্গারেট গত বছর তিনি হিটলারের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা এক ব্রিষ্টিশ সাংবাদিকে বলেন এবং এর পর তাকে নিয়ে সারা দুনিয়ার মানুষের মধ্যে আড়লোন সৃষ্টি হয়। তিনিই উক্ত পনরজন খাদ্য পরীক্ষকের মধ্যে একমাত্র জীবিত সদস্যা!


চ্যান্সেলর হিটলার এবং প্রেয়সী ইভা খাদ্যরসিক ছিলেন। তবে তাদের ভয় ছিল যে, খাদ্য কেহ বিষ মিশিয়ে তাদের মেরে ফেলতে পারে। এই ভয়েই তারা তাদের জন্য রান্না করা খাবার তাদের সামনে আনা হলে তা আগে এই সব রান্না পরীক্ষকদের খাইয়ে টেষ্ট করা হত, পয়েজন আছে কি না বা এই খাবার খেয়ে তারা মারা পড়বে কি না! মার্গারেট জানান, আগত খাবার খাবারের আগেও কাঁদতে (তার ভাষায় ‘কুকুর কান্না’) হত এবং খাবার খেয়েও কাঁদতে হত (বেঁচে যাবার আনন্দের কান্না শেষেরটা)। খাবার খেয়ে এই পরীক্ষকদের ঘন্টা খানেক দাঁড় করিয়ে রাখা হত, খাবারের বিক্রিয়া কি তা জানার জন্য, এবং পরীক্ষা সফল হলেই হিটলার, ইভা ও তার সঙ্গীরা ওই সব খেত।


আগের দিনের রাজা বাদশার অনেক কাহিনী শোনা যেত যে, তারা খাবার গ্রহনের আগে তা বিড়াল বা অন্য কোন প্রানী দিয়ে খাবার টেষ্ট করিয়ে নিত, তাতে কোন বিষ আছে কি না তা দেখার জন্য। সম্ভবত হিটলারই মানুষ দিয়ে এই কাজ করিয়ে নিতেন! শুধু এই মার্গারেট নন, এই কাজে অনেক তরুণীকে তিনি নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং মার্গারেট জানান, অনেক তরুণীর কান্নার শব্দ তিনি শুনেছিলেন।


তবে হিটলারের খাবারের গল্প অনেক কম জানা গেলেও মার্গারেট থেকে জানা যায়, হিটলার যুদ্ধ শুরুর আগে খোলা মাঠেই সৈনিকদের সাথে নানান ধরনের তাজা ফলমূল খেতেন। এস্পারাগাস ছিল তার পছন্দের একটা খাবার, ক্যাপ্সিকাম তিনি পছন্দ করতেন।


যাই হোক, প্রায় তিন বছর মার্গারেট হিটলারের অফিসে এই কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন এবং হিটলারের পতনের সময় তিনি অন্য একটা অফিসে থাকায় বোমার আঘাত থেকে প্রানে বেঁচে পালিয়ে যান। রাশিয়া জার্মানী দখল করে নিলে তিনি বুড়োর বেশ ধারন করে বার্লিনে কোনমতে জীবন ধারন করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, রাশিয়ার সৈন্যদের হাতে তিনি ধরা পড়ে যান এবং ১৪ দিন তিনি রাশিয়ার সৈন্যদের দ্বারা ধর্ষিত হন। এই রাশিয়ার সৈন্যদের ধর্ষনের ঘটনা তার জীবনে এক বিভীষিকাময় অধ্যায়, যা ভুলে থাকা প্রায় অসম্ভব।

খাদ্য পরীক্ষক মার্গারেট একবার বিবাহ বা লিভ টুগেদার করেছিলেন বলে জানা যায়, স্বামী বা সংগী যুদ্ধের সময় প্রায় ছয় বছর নিখোঁজ ছিলেন এবং পরে দেখা হলেও আর একসাথে থাকেন নাই। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন, বয়স পঞ্চাশের কিছু আগে তিনি একজন মেয়ে সন্তান কামনা করছিলেন কিন্তু তার সেই আশা আর পূর্ন হয় নাই। ৯৭ বছর বয়সে এসে তিনি ভাবেন, এখন যদি তার একজন মেয়ে থাকত তবে তার বয়স ৫০ হত!


বার্লিনে এখন তিনি একাকি জীবন যাপন করেন এবং মাঝে মাঝে সেই কঠিন দিন গুলোর কথা মনে করেন। বিশেষত খাবার টেষ্ট করার আগে ও পরের কান্না তার এখনো কানে বাজে, প্রতিবেলা খেয়ে মরে যাবার কান্না এবং আবার সেই খাবার খেয়ে বেঁচে থাকার কান্না!

তথ্য সুত্রঃ ডেইলী মেইল অনলাইন, উইকিপিডিয়া এবং অন্যান্ন অনলাইন নিউজ
ছবিঃ ডেইলী মেইল ও নেট থেকে

(গল্প ও রান্না'তে এক যোগে প্রকাশিত)
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×