somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

বিচিত্র পেশাঃ ৫ (নুরু মিয়ার নেহারী রান্না)

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[অনেক দিন ধরে ভাবছি, বিচিত্র পেশা নিয়ে সামুতে একটা সিরিজ লিখবো। পথে ঘাটে হাঁটতে গেলে সাধারণত এই ধরনের পেশার মানুষের দেখা মিলে। এই বিচিত্র পেশার মানুষদের সাথে আমি কথা বলে আনন্দ পাই, তাদের ছবি তুলি মোবাইলে। ভাবছি এই মানুষ গুলোকে অনলাইনের পাতায় নিয়ে আসবো। তবে কিছু ভুল করছি, অনেকের নাম, মোবাইল বা ঠিকানা রাখা সম্ভব হলেও তা করতে পারি নাই।]

নুরু মিয়া কুমিল্লা থেকে জীবিকার টানে ছোট বেলায় পুরান ঢাকার লালবাগে আসেন এবং একটা ফুটপাতের দোকানে কাজ জুটিয়ে নেন। কাজ আর কি, বাসি প্লেট ধুয়ে রাখা, এখানে সেখানে খাবার পৌঁছে দেয়া, পানি টানা, দেয়া ইত্যাদি। দোকান মালিক ফুটপাতে চার চাক্কার ভ্যানে হালিম এবং নেহারী বিক্রি করতেন। রাতে রান্না ছাড়াতেন, সারা রাত রান্না হত এবং পরদিন গরম করে বেলা ২টা/৩টা থেকে বিক্রি শুরু হত। এভাবেই নুরু মিয়ার দিন চলছিল।


কালে কালে নুরু মিয়া বড় হলেন, কাজ শিখে গেলেন মানে বাজার করা, রান্না করা এবং সেই রান্না বিক্রি করার কাজটা ধরে ফেলতে পারলেন। এক সময়ে নুরু মিয়া সেই লাল বাগ এলাকাতেই একই রকমের ব্যবসা শুরু করলেন, যেহেতু সবাই তাকে চিনতো, বাকী পেতে ঝামেলা হল না, দিনে বিক্রি করে রাতে টাকা শোধ করতেন। কিছু দিন ভাল ছিলেন, ভাল চলছিল কিন্তু ভাগ্যে না থাকলে যা হয় আর কি! নুরু মিয়া লালবাগের এলাকায় ব্যবসায় চরম মাসুল দিলেন। ব্যবসা ভাল হল না, অনেক টাকা লস দিলেন, দেনা হয়ে পড়লেন, রান্না করা হালিম এবং নেহারী বাসায় ফেরত যেতে লাগল।


এর পর চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন, কিন্তু হাল ছাড়লেন না। নুতন জায়গায় এসে আবারো কম কম পুঁজিতে একই ব্যবসা শুরু করলেন। এবার উপওয়ালা চোখ তুলে তাকিয়েছেন এবং আর তাকে পিছে ফিরে তাকাতে হল না। এখন প্রতিদিন তার বিক্রি ১৫/২০ হাজার টাকার মত হচ্ছে, এলাকায় একটা সুনাম হয়েছে। প্রতিদিন তালতলা মার্কেটের গেইটের সামনে দোকান খুলেন দুপুরের দিকে রাত ১১/১২টায় দোকান বন্ধ করেন। নিজ ভাইদেরো একই দোকান দিয়ে বসিয়েছেন। হালিম বা নেহারী (গরুর পায়া দিয়ে রান্না) বা হালিম নেহারী মিক্স যে কাষ্টমার যা চান তাই বিক্রি করেন। নেহারী রান্নাটা জটিল এবং অনেক সময় ধরে রান্না হয় এবং বাসাতেই রান্না করেন এবং বিক্রির সময়ে শুধু নিচে সামান্য আগুন রাখেন যাতে কাষ্টমার গরম গরম খেয়ে শান্তি পায়।


শীত পড়লে ভাল বিক্রি হয় বলে জানালেন। সাধারণত এই নেহারী এই এলাকাতে আর কেহ বিক্রি করেন না, তিনিই একমাত্র আছেন বলে ভাল চলে আর স্বাদের কথা তো আসবেই। স্বাদ না হলে কি আর মানুষ খাবে। পুরা রান্না এবং মশলা পাতি তিনি নিজেই হিসাব করে দেন এবং এজন্য প্রতিদিন রান্নার রঙ ও স্বাদ একই থাকে। একটা নিদিষ্ট পরিমান রান্না করেন সেটা বিক্রি হলেই খুশি থাকেন। খাদ্যে ভেজালের কথা জিজ্ঞেস করতে তিনি জানান, এই একই হাড়ির খাবার আমি নিজেও খেয়ে থাকি, কাজেই ভেজাল কিছু ব্যবহার করি না।

মজার কোন ঘটনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, কিছু মেয়ে কাষ্টমার আছে যারা এসে এমন ঝাল চায় যে তাদের পোড়া গুড়া মরিচ ছিটিয়ে দিতে হয়, এতে এমন ঝাল হয় যে, দেখেই আমি বুঝতে পারি, খেলেই চোখে পানি আসবে অথচ এরা বলে কম ঝাল দিয়েছি!

স্ত্রী, ছেলে মেয়ে ভাই বোন নিয়ে সুখেই আছেন জানালেন। ছবি এবং নেটে প্রকাশের কথা জানিয়ে অনুমতি চাইতেই জানালেন, এই সব বুঝি না, কোন মতে কম দামী একটা মোবাইল চালাই, দেন!

পরিশ্রম সোভাগ্য নিয়ে আসে নুরু মিয়া এই সমাজের উদাহরণ। নুরু মিয়া ব্যবসায় আরো সাফল্য লাভ করবে বলে আমি মনে করি।

বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র এই দেশের মানুষ, কত কি বিচিত্র পেশা! তবে সবই জীবিকার টানে!


বিচিত্র পেশাঃ ৪
http://www.somewhereinblog.net/blog/udraji/30001299
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×