somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

বিচিত্র পেশাঃ ১৭ (আমার দেখা একটা শারীরিক কষ্টের পেশা)

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আজকের বিচিত্র পেশার নায়কের নাম মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম। ঢাকায় আছেন আজ অনেক বছর, গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইল জেলায়। গত ছয় বছর ধরে তিনি একটা কঠিন পেশায় আছেন। তার পেশা হচ্ছে, মাথায় করে ঢাকার নানা এলাকায় ফুলের ঝাড়ু বিক্রি করেন। থাকেন মীরপুরে এবং সেখান থেকেই এই ফুলের ঝাড়ু নিয়ে সকালে বের হন, বিকাল রাতে বাসায় ফিরে যান।


শরিফুল ইসলামের সাথে আমার দেখা চলন্ত বাসে, আমি মীরপুরে যাচ্ছিলাম। আজকাল বাসের পিছনে বসতে সবাই ভয় পেয়ে থাকেন, কখন কে আগুন ধরিয়ে দেয় বা বোমা মারে। আমিও সেই ভয়ে ছিলাম কিন্তু উপায়তো নেই, জায়গায় যেতেই হবে। কর্মের প্রয়োজনে আমাদের তো বের হতেই হয়। দেশের ক্ষমতায় কে থাকলো আর কে থাকলো না এতে আসলে আমাদের কিছুই যায় আসে না, গরীব মানুষ গুলোর অবশ্য এই বিষয়ে না ভাবলেও চলে। আমাদের কাজ হচ্ছে, নিরন্ত্রন বেঁচে থাকার চেষ্টা করা এবং আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি দিনের পর দিন।

যাই হোক, শরিফুল এবং আমি পাশাপাশি বসে ছিলাম, বাসে যাত্রী কম থাকায় শরিফুল তার মাথার বোঝা নিয়ে উঠতে পেরেছিল। তার মাথার বোঝার ওজন কম নয়, কথা প্রসঙ্গে জানলাম, দিনের শুরুতে এই বোঝা থাকে, প্রায় এক মনের কাছাকাছি, বিক্রি শেষে যত কমানো যায় মানে বিক্রি ভাল হলে বোঝা কমে, নতুবা ভারী বোঝা নিয়েই বাসায় ফিরে যেতে হয়।

শরিফুল প্রথমে আমার সাথে কথা বলতে চাইছিল না, নিজের পরিচয় এবং বন্ধু সুলভ আচরণে পরে সে আমাকে গ্রহন করেছিল। আমাদের কথা চলছিল। কথার ফাকে মাঝে মাঝে শরীফুল ভাইকে ঘাড়ে চাপ দিতে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, ঘাড়ে ব্যাথ্যা পাচ্ছেন। জবাবে তিনি জানালেন, হ্যাঁ, এত বড় বোঝা নিয়ে পাড়া মহল্লায় ঘুরে বেড়িয়ে বিক্রি করা অত্যান্ত কঠিন কাজ এবং আগে ঘাড়ে ব্যাথ্যা না করলেও এখন মাঝে মাঝেই ব্যাথ্যা করে।

এত কঠিন কাজে কি করে আসলেন, জবাবে জানালেন, প্রথম ঢাকা এসে কি করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না, হাতে টাকাও নেই। একদিন মীরপুরে এক লোকের দেখা পেলেন, তিনি এক ঝাড়ু ফ্যাক্টরীতে নিয়ে গেলেন। সেই থেকে শুরু। এই ফ্যাক্টরি ঝাড়ু গুলো বাকীতে দেয়, দিনের শেষ টাকা এবং বেছে যাওয়া ঝাড়ু গুলো ফেরত নেয়। দিনে লাভ কেমন হয়, জানতে চাইলে চুপ হয়ে পড়েন। আরো কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে জানালেন, এখন তেমন লাভ নেই বললেই চলে। তবে আগে দিনে চার/পাচ শত টাকা পেতেন।

সারা দিনে এত কষ্ট করে এত কম লাভের কথা শুনে আমি নানান পেশা নিয়ে আরো কথা বলছিলাম, কি করে একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতাও কম কষ্টে বেশি লাভ করছেন তা শরীফুল ভাইকে বুঝিয়ে বলছিলাম। আমার কেন যেন মনে হল, তিনি বুঝতে পারছিলেন কিন্তু জগতের এই নিয়মের কাছে ধরা পড়ে আছেন।

যাই হোক, কিছুটা হাসি ঠাট্টা করার জন্য, বিবাহের প্রসঙ্গে চলে আসি। শরীফুল ভাই জানালেন, তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। এক ছেলে এক মেয়ে। সন্তানাদি আর না বাড়ানোর অনুরোধ করে, বিবাহ নিয়ে আরো ফান করছিলাম। বললাম, দেখেন আর বিবাহ করবেন না! শরীফুল ভাই হেসে দিলেন। বললেন, আমাদের ফ্যাক্টরীর মালিক দুই বিয়ে করে এখন প্রায় ফকির হয়ে পড়ছেন। আমি আরো কৌতুহলী হলাম, ফ্যাক্টরীর মালিকের আরো বিস্তারিত জানতে চাইলাম। ২য় বিয়ে করার পর কি করে একজন মানুষ ফকির হয়! হা হা হা.।।

শরিফুল জানালেন, ২য় স্ত্রী তার টাকা দেখেই তাকে বিয়ে করেছিল। দিনের পর দিন শুধু টাকাই নিয়েছে এবং এক সময়ে তাকে ফেলে চলে গিয়েছিল। টাকা হারিয়ে ফ্যাক্টরীর মালিক, অনেকদিন অনেক কষ্টে ছিল। আমি হেসে ফেললাম। মনে মনে ভাবলাম, ২য় বিয়ে করা কখনোই উচিত নয়! হা হা হা।

যাই হোক, চলন্ত বাসে আমাদের সময় ভাল কাটছিল। শরীফুলের কাছে আমার কিছু কথা ছিল, সে যদি তার এই পেশা বদল করে অন্য কোন পেশায় বা রাস্তার ধারে কোন খাবার দোকান দিতে চায় তবে আমি বলে এসেছি আমি তার পুঁজি এবং যাবতীয় ব্যবস্থা করে দিব। রান্না বিষয়ক আমার আগ্রহের কথা জানিয়ে বললাম, সব পুঁজি এবং রান্নাও আমিই শিখিয়ে দেব। শরীফুল ভাইয়ের মোবাইল নং নিয়ে তাকে আমার সেট থেকে একটা মিস কল দিয়ে এই সব কথা বলে এসেছি।

এবার দেখা যাক!

তবে, আমার দেখা এটা একটা কষ্টকর পেশা। আপনার বিশ্বাস না হলে ঘরে আপনার ফুলের ঝাড়ু দেখুন, এমন শতাধিক ঝাড়ুর ওজন কেমন হতে পারে তা কল্পনা করুন।

বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র এই দেশের মানুষের পেশা।

(আপনাদের কাছে সরি, পোষ্টটা প্রথম বারে লিখে শেষ করতে পারি নাই। আর ছবি আপলোড করতে পেরেছিলাম ৮/১০ বার চেষ্টা করে। ফলে ছবি আপলোড হবার পর পোষ্ট প্রকাশ করে ফেলেছিলাম। আজকাল নেট এত স্লো যে, সাধারন কাজ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে, সেখানে সামুতে তো এটা কঠিন কাজ!)


বিচিত্র পেশাঃ ১৬ (দেলোয়ার হোসেন বয়াতী)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×