somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

বিচিত্র পেশাঃ ১৮

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(সামুতে বিচিত্র পেশা সিরিজটা লিখে আমি নিজে আনন্দ পাচ্ছি, বলতে পারছি আমাদের দেশের কিছু মানুষের বিচিত্র পেশার কথা। দরিদ্র দেশ, মানুষের পেশার ভিন্নতা কিছুটা অবাক করেই দেয়। তবে লেখায় কিছুটা গ্যাপ পড়ে যাচ্ছে বলে আমি দুঃখিত, তবুও আমার চেষ্টা চলবে।)

বিচিত্র পেশার আমার আজকের সহযাত্রীর নাম আজিজুর রহমান। বাড়ী শরীয়ত পুর। আমার দেখা সব চেয়ে ভদ্র জুস বিক্রেতা আপনাদের এই ঢাকা শহরে!


আজিজের সাথে আমার দেখা হয় প্রায়ই। ওর দোকান দেখলে আমি তাকিয়ে থাকি। খুব যত্ন করে সাজিয়েছে দোকান। বিশেষ করে ফলফলাদি যেভাবে সাজিয়ে রাখে তা দেখার বিষয় হয়ে উঠে। আমি অনেকদিন ধরে আজিজুলকে চোখে রাখলেও কথা বলা হয়ে উঠে নাই। আজ ব্যাংক থেকে কাজ সেরে ফুটপাতে হাঁটতেই আজিজুলের দোকানের দেখা পাই।

কাছে যেয়ে নাম জিজ্ঞেস করতেই তার নাম বলে এর পর জমিয়ে তুলি। এক গ্লাস পেঁপের জুস খেয়ে বিদায় নেই! আজিজুল কিছুতেই আমার কাছ থেকে জুসের টাকা নিবে না, একি মুস্কিলে পড়লাম, নিবেই না কিছুতে! যাই হোক তবুও পরে বিল দিয়েই আসছি, এত সাধারন এবং সহজ মানুষ কি এই দুনিয়া হয়! একটা মানুষের সাথে কিছুক্ষন আগে পরিচয় হল আর তাকে ফ্রি খাইয়ে দিল! আমি তাকে বললাম, এটা যদি তুমি করো তা হলে তো তোমার যে কোন ব্যবসাই লস করবে! হাসি মুখে তবুও আজিজুল বলে যাচ্ছিলো, আমি আপনাকে মন থেকে বড় ভাই বলে খাওয়ালাম। আমি শুধু অবাক হচ্ছিলাম!

যাই হোক, আজিজুলের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম। প্রায় ১৮ বছর যাবত সে চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে কাজ করেছে, বেতন শেষের দিকে পেত প্রায় ১৫ হাজার টাকা কিন্তু এই কাজে সে আর কিছুতেই মন বসাতে পারছিলো না। সকাল থেকে রাত ১২/১টা পর্যন্ত কাজ করে হাফিয়ে উঠছিলো সে। পরে সিদ্ধান্ত নিলো, এই শহরে নিজে কিছু একটা করবে। ফলে আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলে বের করলো, এমন একটা ফলের জুসের দোকান করলে মন্দ হবে না।

তবে ব্যবসায় নেমে এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে! এবং একবার হাসি মুখে বলেই ফেলল, মনে হচ্ছে আবার চাকুরীতেই ফিরে যেতে হবে! ফলের জুসের ব্যবসা তো মন্দ হবার কথা নয় বলতেই সে জানালো। না, মানুষ ভাল জিনিষ খেতে চায় কম। ফলের জুসের প্রতি বৃদ্ধদের আগ্রহ বেশী, যুবকরা কখনোই খেতে চায় না। এককাপ চা এবং একটা সিগারেট টান্তে যুবকরা বেশী পছন্দ করে কিন্তু সামান্য ১০ টাকার এক গ্লাস জুস পছন্দ করে না! আমি হাসি, হ্যাঁ, এটাই আমাদের এই সমাজের বাস্তবতা! আমরা বয়স না হলে কিছু নুঝি না! রোগে শোকে পড়লেই বুঝি, ভাল থাকা কত আনন্দ। অথচ সেই সময় থেকে আর ফিরে আসা যায় না!

আজিজুল জানালো। এই ব্যবসায় আসার সময় ভেবেছিলো, যদি প্রতি দিন ২০০ গ্লাস জুস বিক্রি করে তা হলেও প্রতিদিন ৪০০ টাকা আসবে। কিন্তু এই আশা দিনের পর দিন গুড়োবালি হচ্ছে। আমাকে বলল, দেখেন এমন গরম পড়ছে অথচ কাষ্টমার নেই।

আজিজুলের সাথে আরো অনেক কথা হয়েছে। ব্যবসাহিক কারবার নিয়ে আরো কথা বলেছি। আরো লোকারনে তাকে দোকান নিয়ে যাবার জন্য বলেছি। আজিজুল জানালো, যে সব জায়গাতে মানুষের ভীড় একটু বেশী, সেখানে ভ্যান থামালেই পুলিশ দিনে ২০০ টাকা চায়, এই টাকা দেয়াও কষ্টকর! (এর পর আর কিছুই আমার মুখ দিয়ে বের হচ্ছিলো না) এক জন মানুষ সারাদিন কষ্ট করে রোদ বৃষ্টিতে পুড়ে টাকা কামাই করবে, আর এক শ্রেনীর মানুষ এসে চাঁদা নিয়ে যাবে, এটা কেমন সভ্যতা! মাথায় কিছু ধরে না। আইন কানুন কোথায় থাকে জানতে ইচ্ছা হয়!

যাই হোক, আমি আজিজুলকে আরো সাহস দেই, ব্যবসা না ছেড়ে আরো কিছু দিন দেখতে বলি। একটা ভাল জায়গা খুঁজে একবার সেট হয়ে যেতে পারলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। কারন আজিজুলের আছে সততা, পরিশ্রমের মানষিকতা এবং সব চেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, সে কোন ক্ষতিকর কিছু দিচ্ছে না (ভেজাল নিয়েও কথা হয়েছে, আজিজুল বলেছে এটা সে কিছুতেই করবে না), ফলফলাদি সব কিছু নিজ হাতে কিনে, নিজের হাতেই কাষ্টমারদের বানিয়ে দিচ্ছে। সুতারাং আর কি চাই।

আমি আজিজুলের সাফল্য কামনা করি। আজিজুলরাই এই দেশ একদিন গড়ে দিবে।

(আজিজুলকে নিয়ে ফেবু স্ট্যাটাস, এখানে )


বিচিত্র পেশাঃ ১৭ (আমার দেখা একটা শারীরিক কষ্টের পেশা)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×