গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়, যে খাবার এনে দিবে সেই পাবে) দিয়ে বের হতে পারলেই খুশি। কাকরাইল, বিজয়নগর, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল এলাকার অনেক হোটেলে খেয়েছি গত ১২ বছরে, ইদানিং নয়াপল্টনে একটা ভালরান্নার গরীব হোটেল পাইছি, এখানেই খাই। যে কোন দুই পদের ভর্তা, পাতলা ডাল দিয়ে ৬০/৬৫ টাকা দিয়েও খেয়ে উঠা যায়, এখানে খুব ভাল গরুর গোস্তও পাওয়া যায়, মাঝে মাঝে খাই, আবার এদের একটা মুগ ডাল ভুনা রান্না হয় সেটাও আমার পছন্দ, তবে এদের মাছ রান্না মুখে দেয়া যায় না! ওরা আমাকে ভাল চিনে, সম্পর্ক এমন হয়েছে যে, টাকা না থাকলেও বাকীতে খেয়ে আসতে পারবো বলে মনে করি।
আজ খেতে বসেছি, আমার সামনে এক যুবকও বসেছে। আমার কিছু বলার দরকার নেই, ওরাই নিয়ে আসে, আমার পছন্দ করতে হয় বা বলতে হয় কি খাব, আর জানতে হয় কি কি আছে! বিপরীতে বসা যুবক ভাইটিকে দেখলাম ভাতের কথা বলে বলল বেগুন ভর্তা দিতে, ওরা তাই দিলো। যুবক ভাইটি এই এক ভর্তা দিয়ে খেতে লাগলো, আর এক প্লেট ভাত দিতে বলল। আমিও তখন ডাল ভর্তা দিয়ে শুরু করছি, ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, আর কি কি দিবে। আমি আরেক পদের ভর্তার কথা বলে খেতে লাগলাম। যুবক ভাইটা একই বেগুন ভর্তা দিয়ে দুই প্লেট ভাত খেয়ে উঠে গেল। আমিও দুই পদের ভর্তা দিয়ে খেয়ে উঠে গেলাম। ঘটনা খুব সাধারন, এমন প্রায় দেখে থাকবেন আপনারা।
কিন্তু আসল কথা হচ্ছে, এই যুবকের সামনে বসে আমি মাছ গোস্ত কিছুই বলতে পারছিলাম না, আমার বার বার মনে হচ্ছিলো, এর সামনে মাছ গোস্ত খাওয়া যদিও সহজ ছিলো কিন্তু বিবেকের কাছে আমি বাঁধা ছিলাম, আমার বিবেক আমাকে বার বার বাঁধা দিচ্ছিলো, এটা অন্যায় হবে। এদিকে অন্য মনে চিন্তা করছিলাম, তাকেও অফার করি, যুবকের চেহারা দেখে সেটাও সাহসে কুলায় নাই। যাই হোক ওর বিল ছিলো ৩৫টাকা, আমার হয়েছিল ৪৫টাকা!
গল্প ২।
ভাত খাবার পরে অহেতুক চা পানেও আমার অভ্যাস আছে, দুনিয়ার সব বিশ্রী অভ্যাসের একটা। এখানেও আমি একটা নিদিষ্ট দোকানে যাই, দোকানের পিছনে বসার ব্যবস্থা আমাকে টানে, বেঞ্চে বসে মোবাইল টেপা যায়! রামগতির যে ছেলেটা চা বানায় সে আমার টেষ্ট বুঝে গেছে, বলতে হয় না, চিনি ছাড়া কন্ডেন্সমিল্ক দিয়ে কড়া করে ভরে চা বানিয়ে দেয়, দাম ১০টাকা! কেনা কাটায় আমার অভ্যাস এক দোকান সিলেক্ট করে সেখানেই যাওয়া, অনেক দোকান থাকলেও যাই না, যেখানে সামান্য সন্মান পাই সেখানেই বার বার যাই!
এই দোকানে এসে দেখি সেই চা বানানো ছেলের সাথে আরেক যুবকের বিরাট ঝগড়া। সেই যুবকটা বলছে ফ্রীজে সব কোক/ফান্টা কেন, আমাদের দেশীয় মজো নাই কেন? এই ঝগড়া দেখে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। এই যুবকটা বার বার বলছিলো, দোকানে কোন ই/স্রা/য়ে/লী/ই/ন্ডি/য়া/র প্রোডাক্ট রাখবি না! সব দেশি মালামাল বিক্রি করবি, নাইলে এলাকায় দোকান করতে দিবো না, যেন আশির দশকের কোন মাস্তান!
হ্যাঁ, আসল কথা হচ্ছে, দোকানপাটে আজকাল এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, যারা বিদেশী পণ্য কিনতে চাইছে না, সব কিছুতেই দেশী প্রোডাক্ট খুঁজে, দোকানে পাশের দেশের প্রোডাক্ট পেলে বলা চলে রাগ করেই ফেলছে! বার বার মনে হচ্ছিলো, এই দেশ একদিন এগিয়ে যাবেই, এই যুবক তরুণেরা এখন কিছুটা বুঝতে পারছে, পুরা বুঝে গেলেই হয়ে যাবে! আমরা বুড়োরা একটা অপেক্ষা করি, হয়ত দেখে যেতে পারবো নুতন বাংলাদেশ!
নয়াপল্টন ৭ই মে ২০২৪ইং (গল্প দুটোর নাম দিতে চাইছিলাম, পারি নাই, চিন্তায় কুলালো না! হত্যভাগ্য লেখক বলেই হয়ত।)