উইকিপিডিয়া অনুসারে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বনু কুরাইজা কর্তৃক পুর্বে কৃত মদিনা সনদে অমুসলিমদের বিষয়গুলি ছিল নিম্নরুপ
১। The security of God is equal for all groups,
২। Non-Muslim members have the same political and cultural rights as Muslims. They have autonomy and freedom of religion.
৩। Non-Muslims take up arms against the enemy of the nation and share the cost of war. There is to be no treachery between the two.
৪। Non-Muslims are not obliged to take part in the Muslims' religious wars.
এখানে ৩ নম্বর পয়েন্ট অনুসারে বনু কুরাইজা বিশ্বাসঘাতকতা করবে না - এই মর্মে মুসলমানদের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল।
কিন্তু তারা আক্রমনকারী কুরাইশদের সাথে নেগোশিয়েশন আরম্ভ করে (সুত্র: Watt, Muhammad at Medina, p. 36-38)- যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সরাসরি ৩ নম্বর পয়েন্ট অনুযায়ী চুক্তির খেলাফ।
বনু কুরাইজার উদ্দেশ্য ছিল, আক্রমনকারী কুরাইশদেরকে মদিনা দখল করতে সাহায্য করা, মদিনা দখল হওয়ার পর মুসলমানদের সাথে কুরাইশরা কি করত সেইটা তো আর বলার দরকার নাই।
নবিজী যখন বুঝতে পারলেন যে বনু কুরায়জা চুক্তি ভংগ করতেছে, তখন লোক পাঠিয়ে বনু কুরায়জাকে নিবৃত করার চেষ্টাও করছেন (Watt, Encyclopaedia of Islam, "Kurayza, Banu".- উইকি সোর্স রেফারেন্স)
মদিনা শহরের তিন দিকে প্রাকৃতিক দেয়াল থাকায় (বনজংগল-পাহাড় ইত্যাদি) শুধুমাত্র উত্তর দিক থেকে আক্রমনের আশংকা ছিল, সেইজন্য উত্তর দিকে খন্দক তৈরি করা হয়। খন্দকের ভিতরের দিকে সাহাবিরা বিভিন্ন যায়গায় ক্যাম্প বসিয়ে পাহারা দিতেন, যাতে যখনই কেউ খন্দক অতিক্রমের চেষ্টা করবে তখনই প্রতিহত করা যায়।
উপরের ছবি অনুযায়ি, বনু কুরাইজার অবস্থান ছিল মদিনার পিছনে এমন এক যায়গায়, যে এরা পিছন থেকে মুসলমানের উপরে ঝাপিয়ে পড়তে পারত। তখন পরিখার বাইরের বিশাল বাহিনীর মোকাবেলায় নবিজী সব সৈন্য এনগেজ রাখতে পারতেন না, ফলে পরিখার প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে যেত এবং আলটিমেটলি যুদ্ধে পরাজয় ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
তখন অবরোধের ফলে মুসলমানদের অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল যে ক্ষুধার কষ্ট কিছুটা নিবারনের জন্য স্বয়ং নবিজী সহ সাহাবিরা পেটে পাথর বেঁধে রাখতেন, রাত্রিগুলি ছিল অত্যন্ত ঠান্ডা, শীতে সবার জমে যাওয়ার মত অবস্থা হত। ক্রমাগত আক্রমন ঠেকাতে ঠেকাতে ঠিক মত ঘুমাইতে না পারার কারণে সবাই দিনে দিনে দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলেন। (Lings, pp. 224–226.) এমনকি দিনের বেলা নামাজ পড়ারও সুযোগ হচ্ছিল না, রাত্রে যখন আক্রমনের তীব্রতা কম থাকত তখন সবাই নামাজ পড়ে নিতেন। (Peterson, Muhammad. Prophet of God, p. 123f.)
মুসলমানদের অবস্থা কতখানি সংগীন ছিল সেইটা সুরা-আল আজহাবে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বর্ননা করছেন :
"যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল উচ্চ ভূমি ও নিম্নভূমি থেকে এবং যখন তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল, প্রাণ কন্ঠাগত হয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা বিরূপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করছিলে।" - [আল আজহাব: ১০]
"সে সময়ে মুমিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হচ্ছিল।" [আল আজহাব: ১১]
সাহাবায়ে কেরাম যখন তাদের শক্তির সবটুকু খরচ করে ফেলছেন তখন গুজব রটানো হল বনু কুরাইজা মুসলমানদের ভিতর থেকে আক্রমন করবে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মিরজাফরি কতখানি ভয়াবহ হতে পারে তার ভুরি ভুরি নজির ইতিহাসে আছে।
খন্দকের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে বনু কুরাইজার শাস্তি অবধারিত হয়ে গিয়েছিল। তাদেরই চাহিদামতন তাদের পছন্দের বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এবং তাদের ধর্মগ্রন্থ তৌরাতের বিধান অনুযায়িই তাদের শাস্তি হয়েছিল।
নাস্তিক বিপ্লব০০৭ এর মত ভন্ডরা আজকে আমাদেরকে মানবতা শিখাইতে আসছে - এইটা খুবই হাস্যকর।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:০০