somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাইকেলের গল্প..... (সাবেক ও বর্তমান সাইকেল পাগলদের জন্য )

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১১ বিকাল ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রযুক্তি হয়তো অনেক দূর এগিয়েছে, মানুষ হয়তো এখন এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে বিমানে চেপে একদিনেই পাড়ি দেয় - ফেসবুক-টুইটারে আপডেট শেয়ার করে বন্ধুদের সাথে । কয়েক বছর পর, কে জানে, আপনি হয়তো এক গ্রহ থেকে আরেক গ্রহে যাবেন দ্রুতগতির নভোযানে চড়ে – কয়েক মিনিটের মধ্যেই!

কিন্তু বিজ্ঞানের এত এত সব চমকপ্রদ আর ব্যয়বহুল এসব অত্যাধুনিক যানবাহন – আমার মতো- কিংবা আপনার মতো- আমাদের মতো সাধারন মানুষদের হয়তো সারাজীবন পত্রিকার পাতায় পড়েই জীবন পার করে দিতে হবে, এমনকি জীবনেও হয়তো পা রাখা হবে না বিমানে, নভোযান তো দিবাস্বপ্ন!

আচ্ছা, স্বপ্ন নিয়েই যখন কথা উঠলো, সাহস করে আপনাকে একটা প্রশ্ন করে ফেলি। খুব ছোটবেলায় , এই মনে করেন,আপনি যখন হাফপ্যান্ট পড়ে বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতেন, আপনার স্বপ্নের যানবাহন কি ছিল?
অন্যদের কথা জানি না, আমার শৈশবের স্বপ্নের বাহন ছিল সাইকেল! দুই চাকার অতুলনীয় এই বাহনের সাথে সখ্যতা আমার অনেকদিনের। সেই বন্ধন আজও টিকে আছে!

আর তাই, সাইকেল নিয়ে আপনাদের সাথে কিছু তথ্য শেয়ার করলাম
( তথ্যসূত্রঃ গুগল মামা ও উইকিপিডিয়া দাদুভাই)

ইতিহাসের পাতা থেকেঃ
Baron Karl Von Drais নামের এক জার্মানকে বলা যেতে পারে বাই-সাইকেলের এর আবিষ্কারক। সর্বপ্রথম তিনিই সবার সামনে সাইকেল নিয়া আসেন। পৃথিবীর মানুষ ১৮৬৮সালে অবাক হয়ে দেখল আপাত অদ্ভুত এই বাহনটিকে!


এই সাইকেলটি সব থেকে পুরানো , বানানো হয়েছিল কাঠ দিয়ে!


প্রথম দিকে, এরকম অদ্ভুতদর্শন সাইকেল বানানো হতো!


এগুলা মানুষ কেমনে ব্যবহার করত কে জানে!


মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রথম দিককার সাইকেল গুলোতে কিন্তু এখনকার মতো চেইন ছিল না!

তবে চেইনযুক্ত সাইকেল প্রথম আমরা পাই , একজন অল্পশিক্ষিত কামারের কাছ থেকে । এবং এই সাধারন মানুষটিই প্রথম যে কিনা সাইকেল চালিয়ে একটা বাচ্চা মেয়েকে ধাক্কা দিয়েছিলেন। এবং সেবার পাঁচ সিলিং জরিমানা দিয়ে karkpatrick MacMillan নামের এই scotish ভদ্রলোক ১৮৪২সালে খবরের কাগজের শিরোনামও হয়েছিলেন !


১৮৬৮ তোলা এই ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন প্রথম চেইনআলা সাইকেল!



অনেকটা কম্পিউটরের মতোই, বিভিন্ন গবেষক আর বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত চেষ্টায়, আমরা পাই আজকের এই সাইকেল। তবে বাণিজ্যিকভাবে সাইকেল কারখানা স্থাপিত হয় ব্রিটেনে।


Thomas McCall এর এই “Coventry Model” এর উপর ভিত্তি করেই শুরু হয় সাইকেল এর বাণিজ্যিক অগ্রযাত্রা!

১৮৯০ সালকে বলা হয় সাইকেলের স্বর্ণযুগ


বিশ শতকের শেষের দিকে প্রচুর মানুষ সাইকেল ব্যবহার করা শুরু করে।


আর তখন থেকেই পণ্য পরিবহনের কাজে সাইকেলের ব্যবহার শুরু হয়। হকাররা বাংলাদেশের মতো প্রায় সব দেশেই এই সাইকেল দিয়াই আমার আপনার প্রিয় পত্রিকা বিলি করে!


এই যেমন , আমাদের উপমহাদেশে দুধ –শাক সবজি- কাঁচামাল পরিবহনে সাইকেল এর ব্যবহার লক্ষণীয় ।


একসময় কিন্তু বাংলাদেশে পাত্রপক্ষ যৌতুক হিসাবে এই সাইকেল দাবি করতো!



৭০ কিংবা ৮০ এর দশকের ছবিগুলোর গানে এরকম দৃশ্য ছিল প্রায় কমন!


এছাড়া প্রতি বছরই দেশে দেশে বাইসাইকেল প্রতিযোগিতা হয়। এর মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটা হল Tour of California, Grio d’italia, the TOUR de France, the Vuelta a Espana, the Vuelta a Portugula.


মানুষের পেশিশক্তি চালিত বাহন গুলোর মধ্যে, বাইসাইকেলকে ধরা হয় সব থেকে বেশি efficient , কেননা এর কার্যকারী ক্ষমতা শতকরা ৯৯ ভাগ! পৃথিবীর সব থেকে কম দূষণকারী গাড়িও যে পরিমাণ কার্বন ছাড়ে, সাইকেল ছাড়ে তার মাত্র ১০ ভাগের ১ ভাগ!


১৯ শতকের শেষের দিকে, বাইসাইকেলকে বিবেচনা করা হত নারী স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে.


সাইকেলকে তখনকার আধুনিক নারীরা দেখতেন “freedom machine” হিসাবে!



প্রথমদিকার একটি সাইকেলের অ্যাড

পুরো পৃথিবীর মোট সাইকেলের শতকরা ৬০ভাগ আসে চীন থেকে।
আর প্রতি বছর সাইকেল বিক্রি হয় প্রায় ১৩০ মিলিয়ন! ২০১১ সালে বিশ্ব জুড়ে এর বাজার ছিল প্রায় ৬১ বিলিয়ন ডলার!


আমি বুঝি না, বাংলাদেশ গাড়ি বানাইতে না পারুক, অন্তত সাইকেল বিক্রির দিকেও যদি নজর দিত, এতদিনে সহজেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারতো!



২০৫০ সাল নাগাদ, যদি তেলের মজুদ শেষ হয়ে যায়, তখন কি হবে?বিকল্প জ্বালানী না পেলে, শেষ পর্যন্ত কিন্তু সাইকেলই শেষ ভরসা!

গবেষণায় দেখা গেছে, সাইকেল দারিদ্র্য কমায় শতকরা ৩৫ ভাগ! কীভাবে? সরকার প্রতিবছর যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে সড়ক উন্নয়ন খাতে, তার কিছু দিয়ে যদি জনগণকে ভর্তুকি দিয়ে সাইকেল কিনে দিতে পারে- স্বল্প দূরত্ব এ পরিবহনের কাজে ব্যবহারের জন্য, হিসাব করে দেখুন তো কত টাকা সাশ্রয় হবে?


অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মোট অটোমোবাইলের প্রায় দ্বিগুণ সাইকেল আছে পৃথিবীতে!


সাইকেলপাগল হলে সময় পেলে দেখে ফেলতে পারেন সাইকেলকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই ছবিটি ।


BICYCLE THIEVES নামের এই ইতালীয় সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৪৮ সালে , imdb রেটিং অস্থির! মাত্র ৮.৫!


Breaking Away নামের ১০১ মিনিটের এই ছবিটি দেখুন, কথা দিচ্ছি, কমেডিনির্ভর এই মুভিটা আপনার মন ভালো করে দিবে!


দেখতে পারেন Beijing Bicycle , ড্রামানির্ভর ছবিটি পোলাপাইন সাইকেলচালকরা দেখে মজাই পাবে!


Quicksilver নামের আরেকটা মুভি আছে, সাইকেল নির্ভর রোমান্টিক ছবি, যদিও imdb রেটিং কম, মাত্র ৫.১

শুধু কিন্তু ফিল্মই না, সাইকেল নিয়ে রচিত হয়েছে, এমন কি কবিতা ও!


“Mulga Bill’s Bicycle” - সাইকেলের উপর এই কবিতার বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯৬ সালে!

বাংলাদেশে সাইকেলের বাজারঃ
সাইকেল এর পাইকারি মার্কেট আছে ঢাকার বংশালে , মডেল অনুযায়ী দাম ৪০০০-২৫০০০ টাকায় কিনতে পারবেন।

দেশে এখন যোগাযোগ আর যানজটের যে অবস্থা,


আপনি হাসিনা-খালেদা কে যতই গালমন্দ করেন, লাভ নাই।



তাই কিনে ফেলুন সাইকেল!আর যানজটকে বলুন বাই –বাই!



আর যারা মোটা শরীর নিয়া চিন্তায় অস্থির, তাদের জন্য সাইকেল থেকে ভালো আর কিছু হতে পারে না!

তার থেকেও বড় কথা, সাইকেল থেকে নিরাপদ আর কোন বাহন নাই, আপনি কাউকে মারবেন না, আপনিও মরবেন না!

আশা করি, বর্তমান সাইকেলচালকরা যেন আরামসে সাইকেল চালাতে পারে রাস্তায়...
আর প্রার্থনা করি, সাবেক সাইকেলচালকরা অবসর থেকে ফিরে আসুক!


বাইক বিষয়ক আমার আগের আরো পোস্টঃ

“বিডি সাইক্লিস্টস”, দেশের সব থেকে বড় সাইক্লিং কমিউনিটি

বাইসাইকেল রিভিউ পর্ব ১ >> merida warrior 550/560.
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১২ সকাল ৮:৩৮
২৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×