somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিচার (একটি মিনি গল্প)

২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে শুক্রবার আসল । আজ বিচার বসবে । এবার আর কোন ছাড় দেওয়া হবে না । সাদেক পেয়েছে কি ? বার বার চুরি করবে আর কোন বিচার হবে না তা তো হয় না। গ্রীষ্মের দাবদাহে সারাদিন জ্বলে প্রকৃতি মাত্রই ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে । তবুও আশেপাশের দুই চার গ্রাম থেকে বিচার দেখার জন্য মানুষজন ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে । তাদের দেখলে মনে হয় প্রকৃতি এখনো ঠাণ্ডা হয় নি , বরং নতুন উত্তাপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে । এই রকম চুরি এর আগেও হয়েছে , কিন্তু জনমনে এতটা আক্রোশ ছিল না । আশেপাশের গ্রাম থেকে জড়ো হওয়া মানুষজন পাঁচ সাতজন করে বিভিন্ন জায়গায় জটলা হয়ে বসে আছে । তাদের সবার মুখেই আজ চুরির বিচার ছাড়া অন্য কোন আলোচনা নেই । মানুষজন বেশী দেখে স্কুল মাঠে বিচারের আয়োজন করা হয়েছে । ডেকোরেটরের কাছ থেকে প্লাস্টিকের চেয়ারও আনা হয়েছে । সেগুলো গোল করে সাজানো হয়েছে । পুর্বপাশের চেয়ারগুলোর সামনে একটি টেবিল রাখা আছে, তার উপর পান সুপারি আর দুইটা হাতপাখা। চেয়ারের চারপাশ জুড়ে খড় বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে দর্শকদের বসার জন্য । সাদেক স্কুলের বারান্দার খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর মাঝে মাঝে পান চিবুচ্ছে । মাগরিবের নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত সবাই অপেক্ষা করছে, নামাজ শেষ হলেই বিচার কার্য শুরু হবে। একটু সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই সবাই যার যার আসনে বসে পড়ল। এলাকার গণ্যমান্য ও বয়স্ক ব্যক্তিরা চেয়ারে বসেছে আর সাধারণ দর্শকরা বসেছে খড়ের উপর । সাদেককে বৈঠকের মাঝখানে আনা হল। তার মধ্যে কোন চিন্তার লেশ মাত্র নেই । তাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ পর সে বিরহের কবিতা পাঠ করার জন্য মঞ্চে উঠবে । গম্ভীর , নিশ্চিন্ত । বিচারকদের মধ্য থেকে একজন উপস্থিত জনতাকে সাদেকের বিরুদ্ধে যার যার অভিযোগ পেশ করতে বললেন । একেকজন যখন অভিযোগ
পেশ করছিল তখন প্রচণ্ড উত্তেজনায় তাদের মুখ থেকে কথার সাথে থুথুর ছিটে বের হয়ে আসছিল, তাদের রক্তিম চোখগুলো দেখে মনে হচ্ছিল ওগুলো এখনি অক্ষিকোটর থেকে বের হয়ে মাটিতে আছড়ে পড়বে। কেউ বলল সাদেক তার টাকা চুরি করেছে , আবার কেউ বলল গরু বাছুর নিয়েছে । এবার সাদেককে জিজ্ঞাসা করা হল এগুলো সত্যি কিনা । সে অকপটে তার সকল অপরাধ স্বীকার করল । বিচারক দের মধ্য থেকে সবার বাম পাশের ব্যক্তি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হুংকার দিয়ে বলল তিনি এবার এমন বিচার করবেন যেন এই কাজ করার আর কোন সাহস না পায় কেউ কোন দিন। সাদেক বিচারকের মুখের উপর বলে ফেলল সে এইবারের বিচার মানবে না । চারিদিকে হইচই শুরু হয়ে গেল। বসে থাকা লোকজন উঠে দাঁড়াল । চেয়ারের সামনের টেবিলটাতে প্রচণ্ড শব্দে সজোরে কয়েকটি চপেটাঘাত হল । উত্তপ্ত পরিস্থিতি দেখে সে বলল বিচার মানবে তবে একটা শর্ত আছে , বিচার করতে হবে এমন একজন ব্যক্তির যিনি জীবনে কোন পাপ করেন নি আর ঐসব ব্যক্তিরা বিচার করতে পারবে না , যারা এমন কোন অপরাধের অপরাধী যেটার বিচার কেউ না জানার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে এখনো হয় নি । স্বয়ং নিজে কোন না কোন অপরাধের আসামী হয়ে কেউ তার বিচার করতে পারবে না , সাদেক জোরালো কণ্ঠে একদমে সব বলে ফেলল। চারিদিকে আবার গুঞ্জন শুরু হল । অনেকের চোখ চকচক করছে । সাদেকের এই প্রস্তাবে সমাজের কাছে ভাল মানুষ হওয়ার সুযোগ তাদেরকে পেয়ে বসেছে । বিচারকগন পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছেন । কেউ মুখ খুলছেন না । দর্শকরাও নীরব । হঠাৎ দর্শকসারী থেকে একজন ভিড় ঠেলে সামনে চলে এসে বলল আমি এই বিচার করব , আপনারা সবাই জানেন আমি কেমন ! আমাকে কেউ কোন দিন খারাপ কিছু করতে দেখেছেন বা শুনেছেন ? তার কথা শেষ হতে না হতেই এক মহিলা বলে উঠলো তার কাছে সে ওয়ারিশের সম্পত্তি পায়। সম্পর্কে তারা ভাইবোন । বোনের দাবি তাকে জোরপূর্বক খারাপ জমিটা দেওয়া হয়েছে । এক কথা দুই কথায় নতুন করে জমি নিয়ে হট্টগোল বেঁধে গেল। মহিলা আজ ই এই ভরা মজলিশে বিচার চায় । জমি না নিয়ে সে শ্বশুরবাড়ি যাবে না । অবস্থা বেগতিক দেখে এবার বিচারকদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে আলাদা করে একটু দূরে জমি নিয়ে বিচার বসানো হল। সাদেকের বিচারের অগ্রগতি না দেখে এর বাদীরা নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে । এমন সময় খড়ের উপর বসে থাকা মাঝবয়সী একজন বলে উঠল সাদেকের বিচার সে করতে পারবে । সবাই লোকটির দিকে তাকিয়ে তার সাথে সম্মতি জানাল। সে আসলেই ভাল মানুষ । তার সম্পর্কে উপস্থিত জনতার মধ্য থেকে খারাপ বলার মত কেউ নেই । সে সাদেকের বিচারের রায়ও দিয়ে ফেলল। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে বাঁধ সাধল এক বোবা ব্যক্তি । সে ইশারা দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছে আজ থেকে অনেকদিন আগে এই ভালমানুষ বিচারক একটা কুকুরকে বিনা কারণে মেরে পা ভেঙ্গে দিয়েছিল । এই ঘটনা সেই বোবা ব্যক্তি বাদে আর কেউ দেখেনি। চারিদিকে আবার নতুন করে হট্টগোল শুরু হল । আজ যেহেতু বিচার বসেছেই তাই সকল অপরাধেরই বিচার হওয়া উচিত । আবারো বিচারকদের কয়েকজন নতুন এই বিচার নিয়ে আলাদা হয়ে গেলেন । এভাবে রাত ১২টা পর্যন্ত চলতে থাকল একের পর এক বিচার। শেষে সাদেকের বিচার করার জন্য আর কোন বিচারক অবশিষ্ট রইল না । সাদেকের বিচার না হলেও অন্য বিচারের ঠিকই রায় হল, ওইসব বিচারের বিবাদীদের সাদেকের মত অদ্ভুত কিন্তু যৌক্তিক কোন শর্ত ছিল না ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×