somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাইফুর রহমানের গল্প : মাটির মানুষ

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
সাইফুর রহমানের গল্প



গল্প: ১

সাইফুর রহমান গেলেন বাংলাদেশ ব্যাংক পরিদর্শনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হেড অফিস যে কত বড় তা আপনারা যারা ওখানে এখনো যাননি তারা কল্পনাও করতে পারবেন না। তো হাঁটতে হাঁটতে তিনি একটা রুমের ভেতরে ঢুকলেন। সুবিশাল মনোরম পরিবেশের রুমটি দেখে তিনি একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলেন এ রুমটি কার অধিনে? একজন ভদ্রলোক বললেন স্যার এটাতে আমি বসি। সাইফুর রহমান আরো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস তোমার কাজ কি? ভদ্রলোক বললেন স্যার আমি একজন ডাইরেক্টর (অথবা এ টাইপের কোন পোস্ট)।

সাইফুর রহমান ক্ষেপে গেলেন। রাগত স্বরে সবাইকে বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডাইরেক্টর কি এমন কাজ করেন যে তার রুম প্রধানমন্ত্রীর রুমের চেয়েও বড়। তার রুমে ক্যানো বড় বড় ৪টা এসি থাকবে? এই সুবিশাল, মনোরম, ব্যায়বহুল রুম তো তার প্রয়োজন নেই। রাস্ট্রের টাকা পয়সা এমন অপরিমিতভাবে খরচ করার অধিকার কারো নেই।

সবাইকে বললেন আমরা যদি রাস্ট্রের খরচ কমিয়ে না আনি তাহলে কে করবে??

গল্প: ২

সাইফুর রহমান সাহেবকে সিলেটে একটা সম্বর্ধনা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। তিনি তো যাবেন না। শত অনুরোধের পরে তিনি গেলেন সেখানে। প্রধান অথিতির বক্তব্যে তিনি ডায়াসে দাঁড়িয়ে বললেন। "আমি সাধারনত সম্বর্ধনা টম্বর্ধনা নেই না। কারন এ ধরনের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হলো যাকে সম্বর্ধনা দেয়া হয় তার স্তুতি গাওয়া হয়। তার নামে অতিরিক্ত প্রসংশা করা হয় এবং সবশেষে কিছু দাবী দাওয়া উত্থাপন করা হয়। তারপর প্রশংসিত ব্যাক্তিকে সেইসব দাবী দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিতে হয় তা তার সাধ্যের ভেতরে থাকুক বা না থাকুক।

সবাই কেমন জানি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কথা এক বিন্দুও মিথ্যা নয়। তারপর সবাইকে বললেন দাবী দাওয়া আপনারা আপনাদের জনপ্রতিনিী হিসেবে অবশ্য আমার কাছে উত্থাপন করবেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু সজন্য আমাকে সম্বর্ধনা দিতে হবে না।

সাইফুর রহমানের শুদ্ধভাষা বিড়ম্বনা

সাইফুর রহমান অত্যন্ত অনন্য উপায়ে শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন। এমনরূপ শুদ্ধ বাংলাদেশে সম্ভবত আর কেউ বলেন না। সাধু ও চলিত ভাষার এক অপূর্ব মিশ্রন। আপনার যতোই মন খারাপ থাকুক না ক্যানো তার শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা শুনলে আপনি হাসতে বাধ্য হবেন। আমাদের কাছে এটা ছিলো যাদুকরী ভাষা। সাইফুর রহমান জানতেন তার ভাষা দূর্বলতার বিষয়ে। কিন্তু খুব গুরুত্ব দিতেন না, কারন তার হাতে হাজারো কাজ। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সাস্টেইনেবল করার জন্য এ মানুষটি নিরন্তর কাজ করে গেছেন। তাই দেখা যায় বিএনপি যখনি বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে তখনি বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ব, বেড়েছে রপ্তানী আয়, শেয়ার বাজার হয়েছে মুখর, মানুষের আয় বেড়েছে, গরীব দুঃখী মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে এবং সর্বোপরি সরকারেও ছিলো তৃপ্তি।

আমরা সাইফুর রহমানের বক্তব্য টিভিতে কিংবা সরাসরি দেখার সুযোগ মিস করতাম না কখনোই। টিভিতে সাইফুর রহমানকে দেখালে, মেসের সবাইকে ডাকা হতো। তারপর উনার মুখে আমদিগকে, তোমাদিগকে ইত্যাদি সাধু-চলিতের মিশ্রনে কথা শুনে মজাপেতাম। তারপর মেসে সাধু চলিতের মিশ্রনে কথা বলার একটা রেওয়াজ তৈরি হয়ে গেলো।

জন্মভূমির প্রতি অনন্য ভালোবাসা

বাংলাদেশের এতো বড় মাপের একজন ব্যাক্তি এতো নিরহংকারী ছিলেন তা ভাবতেই অবাক হয়ে যাই। সাইফুর রহমান ছিলেন নিরহংকারী এক মাটির মানুষ। মাটির মানুষ বলতে আসলেই যা বোঝায় তিনি তাই ছিলেন। সত্য বলতে কখনো লজ্জা পেতেননা। সত্য যতই তিতা হোক না কেনো তিনি তা অবলীলায় বলতে পারতেন। আমি এই মানুষটাকে যখন প্রথম সরাসরি দেখি তখন তার মুখে একটা অমলিন হাসি ছিলো। সেই অমলিন হাসির মানুষটাকে আমি কোনদিনও ভুলতে পারিনি, ভুলবোনা।

বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার। সিলেটের মাটি ও মানুষের নেতা। আপামর জনগনের হৃদয়ের মনি সাইফুর রহমান শেষ জিবনে মৃত্যুর কথা খুবই স্মরণ করতেন। মৃত্যুর ঠিক পূর্ব দিনে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন " আমার জীবনে চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। সবই পেয়েছি, মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, সম্মান পেয়েছি, রাস্ট্রের গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পেয়েছি, দেশ বিদেশে যশ-খ্যাতি পেয়েছি। একজন মানুষের জিবনে এর চেয়ে বেশী কি আর চওয়া পাওয়ার থাকতে পারে? এখন শুধু মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে একটাই চাওয়া বাবা শাহজালালের দেশ সিলেটে জন্মেছি এই সুরমা নদীর তীরে সিলেটের পূন্যভূমিতেই যেন মরন হয়।"

আমি অবাক হয়ে যাই একজন মানুষ তার জন্মভূমির ব্যাপারে কতটা অবসেসড হলে এমন প্রার্থনা করতে পারে! কতটা ভালোবাসা থাকলে এমন করে বলতে পারে "এ মাটিতেই যেনো মরতে চাই।" সাদামাটা মহৎ হৃদয় এম সাইফুর রহমানের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে স্মরন করছি এই নিরহংকারী মানুষটাকে। আজ মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোআ করি আল্লাহ যেন আপনাকে কবুল করে নেন। জান্নাতুল ফেরদাউসে যেন আপনাকে জায়গা করেন। আমিন।


[অফ টপিক: লিখতে লিখতে শেষে কেন জানি চোখটা ভিজে গেলো জানিনা। সব মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। সাইফুর রহমানের মতো আমিও প্রার্থনা করি শাহজালালের পূন্য ভুমিতেই যেন আমার শহীদি মরন হয়।]
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪
২০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×