somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকার নগর পরিকল্পনাঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা

২৬ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোকালয় হিসেবে ঢাকা বেশ প্রাচীন। খ্রীষ্টিয় ৭ম শতকেও এর অবস্থিতি ছিল বলে জানা যায়। পৃথিবীর সব প্রাচীন জনপদের মত ঢাকাও অতীতে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছিল। মোগল আমল পযর্ন্ত একটা দীর্ঘ সময় ঢাকা কোনরকম পরিকল্পনা ছাড়াই গড়ে উঠেছিল। মোগল আমলে, ১৬০৮ সালে ঢাকা প্রাদেশিক রাজধানীর মযার্দা পায়। তবে এসময় কিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য ছাড়া ঢাকা শহরের সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানা যায় না। ব্রিটিশ আমলে বর্তমান ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ‘ঢাকা মিউনিসিপালিটি’ নামে যাত্রা শুরু করে ১৮৬৪ সালে। এর আগে ১৮২৩ সালে ঢাকার তৎকালীন কালেক্টর ওয়াল্টার সাহেবের অধীনে শহরের দেখভাল করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ঢাকার নবাবরা এসময় ঢাকার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তবে এসময় ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির কাজ ছিল মূলত রক্ষণাবেক্ষণমূলক। ঢাকার জন্য আধুনিক নগর পরিকল্পনা বিষয়ক প্রথম রিপোর্ট প্রণীত হয় ১৯১৭ সালে। বিখ্যাত স্কটিশ বিজ্ঞানী ও নগর পরিকল্পনাবিদ স্যার প্যাট্রিক গেডেস (জন্ম ১৮৫৪- মৃত্যু ১৯৩২) প্রণীত এ রিপোর্টে প্লাবনভূমির উপর অবস্থিত ঢাকা শহরের জন্য একটি সুসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পনার প্রস্তাব করা হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এ সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইংল্যান্ড জড়িয়ে পড়ায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হওয়ার কারণে ব্রিটিশ রাজ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আর অগ্রসর হয় নি।

পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর, পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার জন্য ১৯৫৯ সালে রাজউকের পূর্বসূরী ডিআইটির তত্ত্বাবধানে প্রথম মাস্টার প্ল্যান তৈরী করা হয়। এখানে উল্লেখ্য, টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫৩-র আওতায় ১৯৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা ডিআইটি, ঢাকার নগর পরিকল্পনার ইতিহাসে একটি মাইলফলক। সে সময় ঢাকার পাশাপাশি নারায়নগঞ্জের জন্যও মাস্টার প্ল্যান তৈরী করা হয়। প্রায় ৩ লাখ জনসংখ্যার জন্য প্রণীত ঢাকা মাস্টার প্ল্যান স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধির (১৯৭১-এর পরে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১২ লক্ষ) ফলে অনুপযোগী হয়ে পড়লেও এটা প্রায় ৪০ বছর ধরে ব্যবহৃত হয়! ১৯৭৯ সালে মহাপরিকল্পনাটির আসল মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পর ইউএনডিপি-র অর্থায়নে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান শাঙ্কল্যান্ড কক্স ‘ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড প্ল্যান’ নামে আরেকটি নতুন পরিকল্পনা তৈরী করেছিল, কিন্ত্ত কোন এক দুবোর্ধ্য কারণে সে পরিকল্পনা কখনো গৃহীত এবং বাস্তবায়ন হয় নি।

১৯৯৭ সালে সরকার ‘রাজউকে’র (ডিআইটির নাম ১৯৮৭ সালে পরিবর্তন করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা ‘রাজউক’ রাখা হয়) তত্ত্বাবধানে প্রণীত ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’ বা ডিএমডিপি অনুমোদন করে। এই পরিকল্পনার মেয়াদকাল ২০ বছর (১৯৯৫-২০১৫)। প্রায় ৩ বছর (১৯৯২-৯৫) সময় এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করে কঠিন ইংরেজীতে লেখা এ পরিকল্পনার রিপোর্টগুলো পড়লে প্রথমেই যেটা মনে হয় তা’হল, এতে প্রায় কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা মহানগরীর আবাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়া হয় নি। একটি শহরে উচচবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত তিন শ্রেণীর লোক থাকে। এই তিন শ্রেণীর লোক কোথায় থাকবে, তাদের কর্মস্থলে যাতায়াত কেমন হবে- এসব বিষয়ে দিক নির্দেশনা একটি মাস্টার প্ল্যানে থাকা অবশ্যই দরকার ছিল, যা এখানে নেই। ১৯৯২ সালে এই প্রজেক্ট যখন হাতে নেয়া হয়, তার আগে থেকেই গার্মেন্টস ঢাকার প্রধানতম অর্থনৈতিক শিল্প। দলে দলে গ্রাম থেকে নিম্নবিত্ত গার্মেন্টস শ্রমিকদের যে ঢল ঢাকায় আসছে; তারা কোথায় থাকবে, গার্মেন্টসগুলোতে কিভাবে যাবে, গার্মেন্টসগুলো কোথায় গড়ে উঠবে- তার কোন নির্দেশনা এ পরিকল্পনায় পাওয়া যায় না। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখি, ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে বস্তির পর বস্তি, গার্মেন্টস ও নানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। বর্তমানে রাজউকের মূল ভূমিকা হল বিভিন্ন এলাকায় প্লট উন্নয়ন করে সমাজের উচচবিত্তদের মাঝে বণ্টন করা- যা এটিকে উচচবিত্ত পদলেহনকারী একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। রাজউকের এই ভূমিকা টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫৩-এ বর্ণিত এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।

টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫৩ এর যে ধারায় ডিআইটি সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে ডিআইটিকে মূলত একটি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (development authority) হিসেবে গঠন করা হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে আইন সংশোধন করে এর উপর পরিকল্পনার (planning) ভার ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু সে অনুযায়ী এর প্রাতিষ্ঠানিক কোন পরিবর্তন আজও করা হ্য় নি!

একটি শহরে নগর কর্তৃপক্ষের হাতেই সাধারণত নগর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ভার নিয়োজিত থাকে। সেখানে রাজউকের মত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থাকতেই পারে। কিন্তু অতীতের মত বর্তমানেও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা মূলত রাজস্ব আদায় এবং রক্ষণাবেক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। মাত্র একজন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এবং দু’তিনজন সহকারী নিয়ে ডিসিসি-র নগর পরিকল্পনা বিভাগ গঠিত, বিশাল জনসংখ্যার একটি শহরের জন্য যা খুবই অপ্রতুল।

ফলে কোন প্রাতিষ্ঠানিক এবং কাঠামোগত সংস্কার ছাড়াই (পরিকল্পনার ক্ষেত্রে) ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনা প্রণয়ণ, উন্নয়ন এবং বিল্ডিং নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজউক একছত্র ক্ষমতার অধিকারী সংস্থা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এতগুলো দায়িত্ব একসাথে নিলেও রাজউক তার আগের মূল দায়িত্ব অর্থাৎ ভূমি বা প্লট উন্নয়নের দিকেই বেশী মনোযোগী। পরিকল্পনা প্রণয়ণ ও বাস্তবায়নের দিকটি উপেক্ষা রেখে প্লট উন্নয়ন এবং বিল্ডিং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে রাজউক বর্তমানে একটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

রাজঊক বা ডিআইটির সম্ভাব্য এ পরিণতির কথা উপলব্ধি করে স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৪’ পাস করা হয়েছিল, যেখানে ডিআইটিকে সরিয়ে ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র মত আরও অধিক পরিকল্পনা প্রণয়ণ ও বাস্তবায়নের ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্ত্ত রাজনৈতিক ডামাডোলে পড়ে এ অধ্যাদেশটি কালক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৮১ সালে শাঙ্কল্যান্ড কক্স ‘ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড প্ল্যান’-এর যে রিপোর্ট প্রকাশ করে তাতে ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনা ও উন্নয়নের জন্য দুটি পৃথক সংস্থা গঠনের সুপারিশ করা হয়। এর একটি ছিল ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’, যা ডিআইটিকে সরিয়ে ভূমি উন্নয়ন এবং নিয়ন্ত্রণ করবে। অন্যটি ছিল ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন প্ল্যানিং অথরিটি’- যার কাজ হবে পরিকল্পনা প্রণয়ণ, বাস্তবায়ন, নাগরিক সুবিধা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং ভূমি উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের কাজ তদারকি করা। কিন্ত্ত আগের পর্বেও বলেছি দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ রিপোর্ট কখনো গৃহীত হয় নি।

যে উদ্দেশ্য নিয়ে রাজউক গঠন করা হয়েছিল তা আজ মোটামুটিভাবে ব্যর্থ বলা যায়। এর সমাধানে ‘ঢাকা ইন্টিগ্রেটেড প্ল্যান’(১৯৮১)-এর রিপোর্টে ঢাকা মহানগরীর পরিকল্পনা (planning) ও উন্নয়নের (development) জন্য পৃথক দুটি কর্তৃপক্ষ গঠনের যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তা বিবেচনা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নতুন আর কোন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি না করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে মহানগরীর পরিকল্পনা এবং রাজউককে ডিসিসির তদারকিতে শুধু উন্নয়নের ভার দেয়া যেতে পারে। তবে, পরিকল্পনার ভার ডিসিসি-র কাছে ন্যস্ত করার আগে এর নগর পরিকল্পনা বিভাগকে অবশ্যই মহানগরীর চাহিদা অনুপাতে ঢেলে সাজাতে হবে; লোকবল ও সুযোগ-সুবিধা প্রচুর বাড়াতে হবে। একইভাবে, ঢাকা মহানগরীর বাইরের এলাকাগুলোতে (সাভার, গাজীপুরে) রাজউক পৌর কর্তৃপক্ষেগুলোর সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে পারে (বর্তমানে রাজউকের ক্ষমতা এখানেও একচেটিয়া)। এক্ষেত্রে, পৌরসভাগুলোতেও স্বয়ংসম্পূর্ণ নগর পরিকল্পনা বিভাগ গড়ে তোলা জরুরী।

আমরা দেখেছি স্বাধীনতার পর থেকেই মূলত ঢাকার জনসংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করে এবং তা এখনো ক্রমবর্ধমান। মানুষ ঢাকায় আসে কাজের জন্য, শিক্ষার জন্য, বাণিজ্যের জন্য, চিকিৎসার জন্য, এবং আরো নানাবিধ প্রয়োজনে। আমাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এমনই যে সচিবালয়ের সই ছাড়া কিছুই হয় না। তাই সই নেবার জন্য হলেও ঢাকায় অফিস খুলতে হয়। প্রশাসনের কারণে আমাদের অর্থনীতি, বাণিজ্যও ঢাকাকেন্দ্রিক। আমরা গার্মেন্টসগুলো তৈরী করতে দিয়েছি ঢাকায়। গ্রাম থেকে নদী ভাঙ্গা মানুষ তাই সেখানে কাজ করতে আসে, শহরে বস্তি গড়ে ওঠে। দেশের সব সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আমরা ঢাকায় তৈরী করে রেখেছি। আমাদের সংস্কৃতি, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঢাকাকেন্দ্রিক। আমাদের রাজনীতি ঢাকাকেন্দ্রিক। মোট কথা নীতি-নির্ধারকদের দূরদর্শিতার অভাবে বাংলাদেশের সবকিছুই ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গড়ে উঠেছে এবং দ্বিতীয় কোন শহর ঢাকার কাছাকাছি দাঁড়াতে পারে নি। এর ফলে ঢাকামুখী জনসংখ্যার যে চাপ তা কোনভাবেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং ঢাকার জন্য গৃহীত যে কোন নগর পরিকল্পনা তা যত সুষ্ঠুই হোক না কেন, ব্যহত হচ্ছে। নগর পরিকল্পনার পরিভাষায় একটি দেশে এককভাবে নানাবিধ কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে ওঠা একটি শহর যার ওপর পুরো দেশ নির্ভরশীল থাকে; ঢাকার মত এ ধরণের শহরগুলোকে বলা হয় প্রাইমেট সিটি। কোন দেশে প্রাইমেট শহরের অস্তিত্ব মূলত দেশটিতে উন্নয়নের অসাম্যই নির্দেশ করে এবং আমাদের মত জনসংখ্যাবহুল উন্নয়নশীল দেশে অব্যবস্থাপনার কারণে প্রাইমেট শহর সাধারণত বিপর্যয় ডেকে আনে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কি করতে হবে তা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। যত দ্রুত সম্ভব দেশের অন্যান্য শহরগুলিতে উন্নয়ন ঘটাতে হবে, ঢাকার উপর থেকে নির্ভরশীলতা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শহরগুলিতে স্থানান্তর করতে হবে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যেটা সহজেই করা যায় তা হল প্রশাসনকে রাজধানী থেকে সরিয়ে নেয়া। কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালা লামপুরের ওপর থেকে চাপ কমানোর জন্য পুত্রজায়ায় প্রশাসনিক কেন্দ্র স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা ভাল উদাহরণ হতে পারে, যেখানে ঢাকার অবস্থা কুয়ালা লামপুরের চাইতে অনেক শোচনীয়। তবে আমলাদের মর্জির ওপরই বোধহয় এটা অনেকাংশে নির্ভর করছে। তাই অনেক দিন থেকে ঢাকার ব্যাপারে এ ধরণের পদক্ষেপ নেবার কথা শোনা গেলেও, আজ পর্যন্ত তার কোন লক্ষণ দেখা যায় নি! অনেকে ক্যান্টনমেন্ট ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার কথা বলেন। আমি ক্যান্টনমেন্ট ঢাকায় রাখার পক্ষপাতী। কারণ ক্যান্টনমেন্ট আছে বলেই এ এলাকায় জনসংখ্যা ও স্থাপনার ঘনত্ব কম। ফলে আশেপাশের এলাকাগুলোর জন্য কিছুটা হলেও এটা একটু সহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি করছে। ক্যান্টনমেন্ট না থাকলে এ এলাকাটাও ঘিঞ্জি হয়ে পরিস্থিতি আরো শোচনীয় করে তুলত।

আজকাল টেকসই উন্নয়ন, টেকসই অর্থনীতি ইত্যাদি বাজারে খুব চালু শব্দ। টেকসই উন্নয়নের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংজ্ঞাটি সম্ভবত প্রদান করেছিল জাতিসংঘের বিশ্ব পরিবেশ ও উন্নয়ন কমিশন (World Commission on Environment and Development ), ‘ব্রান্টল্যান্ড কমিশন’ নামে যা বিখ্যাত। ১৯৮৭ সালে “Our Common Future” শীর্ষক রিপোর্টে তারা টেকসই উন্নয়নের যে সংজ্ঞা দিয়েছিল তা নিম্নরূপ-

Development that meets the needs of the present without compromising the ability of future generations to meet their own needs. [যে উন্নয়ন ভবিষ্যত প্রজন্মের চাহিদার সাথে আপোষ না করে বর্তমানের চাহিদাকে পূরণ করে]

‘টেকসই’ শব্দের মূল কথা এটাই- এমন কিছু করা যাবে না যা ভবিষ্যত প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। আমরা শুধু আমাদের বর্তমান চাহিদার কথা ভেবে যা খুশী করে চলবো, তা হবে না; ভবিষ্যত চাহিদার দিকে দৃষ্টি রেখে বর্তমানের চাহিদাকে পূরণ করতে হবে।

মূলত এ ধারণাকে পুঁজি করে আশির দশকের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নব্য নগরবাদ (New Urbanism) নামক নগর পরিকল্পনার নতুন ধারা সূচিত হয়। এখানে এর প্রেক্ষাপট একটু বর্ণনা করি। বিংশ শতকের গোড়ায় যান্ত্রিক-গাড়ী এবং মধ্যপ্রাচ্যে তেল আবিষ্কারের পর থেকে উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ শহর গড়ে উঠেছিল ছোট গাড়ী চলাচলকে কেন্দ্র করে- এজন্য এসব শহরকে অনেক সময় ‘অটোমোবাইল টাউন’ও বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরাজ্যীয় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা (Interstate Highway) তো এক বিশাল বিস্ময়, যা গড়ে উঠেছে এই ছোট গাড়ী চলাচলকে কেন্দ্র করেই। কর্মব্যস্ত শহরের বাইরে নিরিবিলি বসবাসের জন্য ব্যাপক হারে গড়ে উঠেছে অনেক শহরতলী (Urban Sprawl) যেগুলো উড়াল পথ (Elevated Way) এবং বড় বড় রাস্তার মাধ্যমে সংযুক্ত। মূল শহরকেও আবার আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ইত্যাদি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে (i.e. zoning) যেখানে কর্ম, বিনোদন, শিক্ষা ইত্যাদি প্রয়োজনে যেতে হলে গাড়ী ব্যবহার না করে উপায় নেই।

নব্য নগরবাদীরা বলছেন গাড়ী-কেন্দ্রিক এ শহরগুলো মোটেও টেকসই নয়। কারণ-

প্রথমত, জীবাশ্ম জ্বালানী নির্ভর গাড়ী পরিবেশ দূষণ করে; অধিক গাড়ী এবং অধিক দূরত্ব মানে অধিক দূষণ। তারা বলছেন, মানুষের চাহিদাগুলোকে যদি স্বল্প দূরত্বের মধ্যে মিটানো যায়, তবে গাড়ীর উপর এ নির্ভরতা ও পরিবেশ দূষণ অনেক কমানো যায়।

দ্বিতীয়ত, উড়াল পথ এবং বড় বড় রাস্তা নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে খরচ অনেক বেশী হয় এবং প্রচুর জায়গা লাগে। তুলনামূলকভাবে রেলপথ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে খরচ ও জায়গা কম লাগে এবং পরিবেশ দূষণও কম হয়।

তৃতীয়ত, অধিক শহরতলী সৃষ্টির ফলে কৃষিজমি ও খোলা জমি ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে যা উদ্বেগজনক। আমরা ইতিমধ্যেই সারা পৃথিবীতে খাদ্য সংকট দেখছি, ভবিষ্যতে তা আরো ভয়াবহ হতে পারে।

তাহলে, নব্য নগরবাদীদের ধারণা অনুযায়ী একটা টেকসই নগর কীরকম হতে পারে? এটা অঞ্চলভিত্তিক না হয়ে হবে সব কিছুর মিশ্রণ। মানুষ যেখানে থাকবে সেখানেই সে বিনোদনের জন্য হেঁটে হেঁটে কোন সিনেমায় যাবে, বা কোন কফি শপে, এমন কী কাজেও যেতে পারে। বাড়ীর নীচে বা কাছাকাছি দূরত্বে ছোট ছোট দোকান-পাট থাকবে যা তার দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করবে। এর ফলে গাড়ীর উপর তাকে নির্ভরশীল হতে হবে না। আর যদি কর্মস্থল দূরে থাকে বা দূরে কোথাও যেতে হয়, তবে রেল বা গণযোগাযোগ ব্যবস্থা থাকবে। মোট কথা, ছোট গাড়ীর উপর নির্ভরতা কমাতে হবে। আমাদের শহরগুলোতে যেখানে রাস্তাঘাট এমনিই কম, সেখানে ছোট গাড়ীর প্রভাব আরও ভয়াবহ। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরা যাক, একটা ছোট গাড়ীতে সবোর্চচ চার জন বসতে পারে এবং একটা বাসে চল্লিশ জন। বাসের লোকগুলোকে যদি গাড়ীতে পাঠানো হয়, তাহলে আমাদের সবর্নিম্ন দশটা ছোট গাড়ী লাগবে। চিন্তা করে দেখুন, দশটা গাড়ী রাস্তায় কত জায়গা নেবে আর কি পরিমাণ দূষণ হবে; সে তুলনায় সমপরিমাণ লোকের জন্য মাত্র একটা বাসের জায়গা আর দূষণ কি পরিমাণ হবে। আর রেলের তো কথাই নেই। যাত্রীও বেশী নিতে পারে, আবার যেহেতু ভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তাই রাস্তার উপরও কোন চাপ পড়ে না।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শহরে দেখা যায়, যার গাড়ী নেই, সে চাকরী পায় না। গণযোগাযোগ ব্যবস্থা তাই বৈষম্য কমাতেও সাহায্য করে। এছাড়া শহরগুলো মিশ্র এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠার ফলে জায়গার মূল্য কমে আসে। শুধু আবাসিক বা শুধু বাণিজ্য এরকম এলাকায় জায়গার দাম সবসময় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই থাকে। আর শহরতলী সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা না থাকায় শহরের বাইরে অবস্থিত কৃষি ও খোলা জমিগুলোও রক্ষা পায়।

নব্য নগরবাদীরা বর্তমানের ‘তথাকথিত আধুনিক’ শহরের পরিবর্তে যে ‘টেকসই নগরের’ কথা বলছেন তা থেকে আমাদের বাংলাদেশের শহরগুলো কিন্তু খুব বেশী দূরে নেই। ‘নব্য নগরবাদ’ ধারণা মূলত নস্টালজিক যা গাড়ী-পূর্ব যুগে আমাদের ফিরে যেতে বলে। ঢাকা শহরের মাত্র তিন শতাংশ লোক গাড়ী ব্যবহার করে, দেশের অন্যান্য শহরগুলোতে তো আরও কম। এছাড়া উন্নত বিশ্বের শহরগুলোতে গাড়ী-কেন্দ্রিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন হয়েছে আমাদের শহরগুলোতে তার কিছুই হয় নি। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠার ফলে আমাদের শহরগুলো মিশ্র একটা রূপ নিয়েছে। একটু অন্যভাবে যদি দেখি উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমরা এখনো মূলত সেই গাড়ী-পূর্ব যুগেই বসবাস করছি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলো আমরা হেঁটে ঘরের পাশের মুদি দোকান থেকেই কিনি। আমাদের অধিকাংশের প্রধান যানবাহন রিকশা যার কোন পরিবেশ দূষণ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের মত একটি পুঁজিবাদী দেশে যেখানে তেল ও গাড়ী কোম্পানীগুলোর পুঁজির জোর বেশী সেখানে ‘টেকসই নগরের’ ধারণা বাস্তবায়ন যেমন খুব কঠিন (ধীর গতিতে কিছু কাজ যদিও হচ্ছে), তেমনি বিস্ময়করভাবে আমাদের পশ্চাৎপদতা, আমাদের শহরগুলিতে এখনো গাড়ী-পূর্ব যুগের সেই আবহ ‘টেকসই নগর’ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদেরকে তাদের চাইতে অনেক এগিয়ে রেখেছে; ‘শাপে বর’ হিসেবেই যাকে বলা যায়। আমাদের এখন যা প্রয়োজন তা হলো- অপরিকল্পিতভাবে মিশ্র এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠা শহরগুলোয় একটু পরিকল্পনার ছোঁয়া আনা এবং তার জন্য সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন জরুরী। আমি চাইলাম আর দোকান দিয়ে দিলাম তা হবে না; বরং মানুষের চাহিদা আর পরিবেশের সাথে তা সংগত কিনা যাচাই করে অনুমতি দিতে হবে। আর যা কিছু সংগত নয়, তা উচ্ছেদ করতে হবে।

রিকশা যদিও পরিবেশ দূষণ করে না, কিন্তু এটি একটি অমানবিক বাহন। তাছাড়া রাস্তা সাধারণত অযান্ত্রিক বাহনের কথা চিন্তা করে বানানো হয় না। রিক্সার উপর নির্ভরতা কমিয়ে আমাদের ছোট ছোট দূরত্বে হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। তার জন্য পথচারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো এবং হাঁটাচলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যা এখন একেবারেই নেই। সরকার সম্প্রতি ঢাকার জন্য ২০ বছর ব্যাপ্তির ‘কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা’ (এসটিপি) হাতে নিয়েছেন যাতে পথচারীদের ব্যাপারটা অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করলেও বাজেটে এর জন্য বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। পরিকল্পনায় আরও নতুন যেসব উড়াল পথ তৈরীর প্রস্তাবনা আছে সেগুলোর ব্যাপারে আরো চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। কারণ প্রথমত এগুলো টেকসই অপশন নয়, এগুলো রাস্তায় ছোট গাড়ীকেই আরো বেশী প্রমোট করবে; দ্বিতীয়ত শুনেছি এর অধিকাংশ কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের চাপে করা করা হয়েছে। তাই প্রয়োজনে এ খাত থেকে অর্থ সরিয়ে পথচারীদের খাতে ব্যয় করা যেতে পারে।

আমাদের উড়াল পথের চেয়ে বেশী প্রয়োজন আমাদের গণযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা যার জন্য সাবওয়ে/স্কাই ট্রেনের কোন বিকল্প নেই (সাবওয়ে না স্কাইট্রেন এ বিতর্কে আমি যেতে চাই না; এসটিপিতে মনে হয় মেট্রো/সাবওয়ের কথা বলা হয়েছে)। বাস সার্ভিস, নেটওয়ার্ক এগুলোও আরো উন্নত করতে হবে যেন বেশী লোক এগুলো ব্যবহারে উৎসাহিত হয়। মোট কথা, বাধ্যতামূলকভাবে ছোট দূরত্বে হাঁটা এবং দূরপাল্লার দূরত্বে গণযোগাযোগ ব্যবস্থা ‘সবার জন্য চালু’ করতে যা যা করা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হলে ঢাকার পরিবেশ, যানজট ইত্যাদির অভাবনীয় উন্নতি হবে এ আশা করাই যায়।

পরিশেষে বলব ‘টেকসই নগর’-এর ধারণা পরিবেশের উন্নতির পাশাপাশি আমাদের শহরগুলোকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে । এ সুযোগকে কাজে লাগানো উচিত।


০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×