somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেরা: দ্বিতীয় পর্ব

১৩ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব পড়ুন......

আমার সাথে বরইবাড়ির কোন সংযোগ রইল না। যখন চলে আসলাম,তার কিছুদিন আগে কবিরের বাবা মোবাইল কিনেছে। তাদের বাড়িতে টিভির এন্টেনা ছাড়াও ছোট্ট একটি নতুন এন্টেনা আমরা আবিস্কার করেছিলাম। পাড়ায় নতুন কিছু এলে আমার তা জানা চাই সবার আগে। মহী আর আমি গেলাম কবিরদের বাসায়। পাড়ার সবচেয়ে ধনী লোকের বাসা হলেও কবির আমাদের বন্ধু হওয়ায় সেখানে অবাধ যাতায়ত ছিল। কবির কে বললাম জিনিসটা দেখাতে। নোকিয়া ব্রান্ডের মোবাইল, বাটনগুলোতে টিপ দিলে স্ক্রিনে নীল আলো জ্বলে ওঠে। কি অদ্ভুদ অনুভূতি, এই ছোট মেশিনে করে কথা ভেসে আসে দুর-দুরান্ত থেকে। ভাবা যায়! কবির বলে, আব্বার ব্যবসার জন্য কিনেছে আর ছোট মামাও দুবাই থেকে ফোন দেয় আম্মার সাথে কথা বলার জন্য। আমরা কবিরের কাছে থেকে খবর পাই, ঢাকায় সবার হাতে হাতে ফোন। মোবাইল ছাড়া নাকি চলাই দায়!

আজ সাত বছর পর আমার নিজের পকেটে ফোন আছে। কিন্তু গুনে গুনে ৩৯টি নাম্বার। তার ভিতর বরইবাড়ির নাম্বার একটিও নেই।এতদিনে মহী বা কবিরদেরও নিশ্চয়ই মোবাইল নাম্বার আছে। মাঝে মাঝে ভাবি ওরা কি কখনও আমার সাথে যোগাযোগ করতে চায় নি। কিভাবে ভুলে গেল এতগুলো স্মৃতি!


[ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]

বেলপুকুর পাড় ছিল আমাদের আড্ডাখানা। পুকুরের দুই দিকে ঝোপঝাড় আর দুই দিকে শান বাধানো ঘাট। রেলস্টেশন থেকে সোজা চলে আসা রাস্তার ধারে যে ঘাট সেটিতে আমরা কখনই বসতাম না। পাড়ার মুরুব্বিদের চোখে পড়ার ভয়ে, যারা সিগারেট খাই তাদের ভয়তো আরও বেশি। আর ঝোপের পাশের ঘাটে আমরা ছাড়া কেউ বসতো না। রায়হান একবার বুদ্ধি বের করলো এই ঘাট তথা আমাদের সাম্রাজ্য একবারে দখলে নেবার। কারন মাঝে মাঝে বেলা, হেনা, সু্প্তিরা আসতো; সেখানে বসতো। ওরা প্রয়োজনের চেয়ে আমাদের জব্দ করার জন্যই বেশি ব্যস্ত ছিল। না হলে ঠিক ঘড়ি ধরে কেন আমাদের আড্ডার সময়েই আসতে হবে?

আমরা লর্ড রায়হান ক্লাইভের বুদ্ধি শুনি, সাম্রাজ্য দখলের নীল নকশা। মহী নিতান্তই ভদ্র ছেলে কোন ঝামেলায় জড়াতে চায় না। আমি আর কবির, রায়হানের পরিকল্পনা শোনার জন্য অস্থির হয়ে থাকি।
চারপাশে কয়েকটি ব্যঙ্গ, ঝোপে লুকিয়ে থাকা পোকা ও সাপ, পুকুরের পানিতে মাছ ছাড়া আর কেউ না থাকলেও রায়হান ফিসফিস করে বলে, তোরা কি উত্তর পাড়ের ঝোপে একটা সাপ দেখেছিস?
মহী বলে, হুম। প্রায়ইতো পুকুরে দেখি নামতে। আবার উঠে যায় ওইদিকে। সেই ভয়েই তো ওই ঝোপে কেউ যায় না।
সবার দিকে তাকিয়ে রায়হান বলে, তোরাও কি সেই ঢোড়া সাপকে ভয় পাস?
আমি আর কবির পৌরুষ্যত্বের উপর এই চরম অপমাননাকর কথা শুনে চুপ থাকতে পারি না, আমরা কেন ভয় পাব? আজোবতো! মহী উসখুশ করে।
এমন প্রত্যাশিত উত্তরই তো রায়হান চায়। রায়হানের চোখ খুশিতে চিকচিক করে আর মুখ টিপে হাসে।
তারপর তিন দিন বেলপুকুরের ঝোপের ঘাটে তিনফুট লম্বা একটি সাপ পড়ে থাকতে দেখা গেল। পাড়ার সবাই জানলো যে ওই ঘাটে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। খবরটি বিশ্বাস না হওয়ার দুরন্ত হেনা নিজ চোখে দেখে গেছে। সুপ্তি আর বেলা সাহস করে দেখতেও আসে নাই। এগুলো দুরন্ত ছেলেবেলার কথা।

আরও তিন ঘন্টার পথ বাকি। ট্রেন চলে এসেছে গদাইপুর। অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছে এই স্টেশনে। নলান্দা এক্সপ্রেসের সাথে ক্রসিং হবার কথা। একটা জিনিস অবাক লাগতো আমার। ক্রসিংয়ে যে ট্রেনটি পরে আসে, যাত্রী নিয়ে সেই ট্রেনটিই আগে চলে যায়। আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা ট্রেনটি যায় তার পরে। কখনও জানা হয় নি কেন এমনটি হয়!

তৃতীয় পর্ব এখানে
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৩
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×