somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেরা: চতুর্থ পর্ব

০৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব

ট্রেন চলছে শামসুর রাহমানের কবিতার মত। ট্রেনের বাড়ি কই? ট্রেনের কোন বাড়ি নেই, ছুটে চলার জন্যই তার জন্ম। কিন্তু মানুষের বাড়ি থাকে। ছুটতে ছুটতে মানুষকে তার ঘরে ফিরতে হয়। সব পাখি ঘরে ফেরে, এ জীবন ফুরায় সব লেনদেন! সবাইকে একদিন ফিরতে হয়, এই যে গত সাত বছর আমি বরইবাড়িতে ফিরি না। ভেবেছিলাম কখনই ফিরবো না। আজ ফিরছি। কিন্তু সত্যি কি জীবনের সব লেনদেন ফুরিয়ে যায়? আমার সাথে হেনার তো লেনদেনই হল না।

একদিন বিকেলে কবির দৌড়াতে দৌড়াতে আসলো। চোখমুখ দেখে বুঝে গেলাম কোথাও সমস্যা হয়েছে। দেরি না করে বেরিয়ে গেলাম, সোজা বেলপুকুর পাড়। আমার স্মৃতিতে খুব পরিস্কার গাঁথা আছে সেই দিনটা। তখন গ্রীষ্মকাল, বিকেল হবার আগের মুহুর্ত। কাঠফাটা তপ্ত রোদে হেনা দাঁড়িয়ে আছে, সাথে সুপ্তি। পুরো মুখ টকটকে লাল হয়ে আছে, দু’চোখ বেয়ে অনর্গল গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা। আমাকে দেখে সেই কান্নায় নতুন মাত্রা যোগ হয়ে সে আছড়ে পড়লো ঘাটের সিড়িতে।
সুপ্তি কাছে এগিয়ে এসে বলল, ‘ভাই ওকে থামান। কাঁদতে কাঁদতে মারাই যাবে!’

আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কি হলো! হেনার পাশে বসে, মাথায় হাত দিয়েছি কেবল। ও আমার বুকি ঝাপিয়ে পড়ে বলল, ‘আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারি না। তুমি আমাকে বাঁচাও। আমি অন্য কারো ঘরে যাব না’।
আমি অস্থির হয়ে বলি, ‘কিসের ঘর, কার ঘর? আমিতো আছি তোমার পাশে’।
সুপ্তি বলল, ‘চাচা ওর বিয়ে ঠিক করেছে, ছেলেরা কাল দেখতে এসেছিল। আজ সকলে জানিয়েছে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করতে’।
হেনা আমার দিকে অসহায় চেয়ে আছে। হঠাৎ করে আমার স্বাভাবিক পৃথিবীতে যেন ঝড় বেয়ে যাচ্ছে। সেই মাতাল হাওয়া এসেছে এতদিনের স্বপ্ন, তীলে তীলে গড়া পরিকল্পনাগুলোকে লন্ডভন্ড করে দিতে। মাস্টার্স পরীক্ষা তখন দুই মাস বাকি। আমি পুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে আমার অথই জীবনের তল খুঁজছি। হেনা চিৎকার দিয়ে বলল, ‘কিছু বলছো না কেন?’
‘কিছু হবে না। ধৈর্য ধর। আমিতো আছি!’ আমি অনেক শক্ত করে ওকে ধরি।
‘তুমিতো জানো আব্বা আর সংসার টানতে পারছে না। আমাকে তার বোঝা মনে হয়।আগামী শুক্রবার আব্বা যাবে ছেলের বাড়ি দেখতে সেখানেই দিন তারিখ ঠিক করে আসবে’।
সুপ্তি নির্লিপ্ত ভাবে যোগ করে, ‘ছেলে সরকারী ইঞ্জিনিয়ার। অনেক টাকা-পয়সা ওয়ালা। আর হেনাকে দেখে এত পছন্দ হয়েছে যে চাচাকে বলে দিয়েছে বিয়ের সব ব্যয় তার। এমন দুর্দিনে চাচা এই সুযোগ ছাড়বে না’।

আমি দিশেহারা হয়ে যাই, ছটফট করি। আমার বাবা-মা কিছুতেই লেখাপড়া শেষ করার আগে আমার বিয়ে দিবে না। মাকে বোঝানো যাবে কিন্তু বাবাকে কিছুতেই বোঝানো যাবে না। কবির দাড়িয়ে শুনছে সবকিছু। চরম আক্রোশে বলে উঠলো, ‘ছেলের ঠিকানা দাও, দুইটা ঠ্যাং ভেঙ্গে দিয়ে আসি। কিভাবে বরইবাড়ি বিয়া করতে আসে দেখব’

পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×