somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেরা (শেষ পর্ব).... এই ব্লগে আমার ১০ বছর হয়ে গেল!

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব

ট্রেন এসে থেমেছে বরইবাড়ি স্টেশনে, রাত ভোর হতে চলল। লোকজন ঊর্ধ্বশ্বাসে নামছে। কারন এখানে ট্রেন বেশিক্ষন দাঁড়ায় না। প্লাটফর্মে পা দিতেই বেশ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ল। সাত বছর আগের ফাকা প্লাটফর্মে এখন শেড হয়েছে। জীর্ণ হাসান ভাইয়ের পান-সিগারেটের দোকান আজ দালান হয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটা দোকান ছিল, এখন রীতিমত স্টেশন বাজার! চারপাশটা ভাল করে দেখে নেবার অনেক সময় আছে। অফিস থেকে ১০ দিনের ছুটি নিয়েছি। সবার আগে এখন বাড়ি যেতে হবে।

মায়ের চিঠি পেয়ে ফিরছি। আমার মা, তসলিমা বেগম। বরইবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। এই সাতটি বছর শুধু মায়ের সাথে যোগাযোগ ছিল। নিয়মিত চিঠি লিখতাম। আমি কি করি, কোথায় থাকি, প্রতিদিন কি কি খাই। সবকিছু মার জানা চাই। কিন্তু মা নিজের কথা বলেন না। বরইবাড়ির কথা বলেন না। আমার বন্ধুদের কথা বলেন না। প্রথম প্রথম পাগলের মত করতাম, হেনার কথা জানতে চাইতাম। কিন্তু মা কিছু বলেন না।
শুধু একদিন বললেন, ‘জেনে রাখো, সে সুখেই সংসার করছে’। আর কিছু বলেন না।
আমি বলি, ‘মা আমাকে দেখতে ইচ্ছা করে না’! মা কিছু বলেন না। বাবার কথা বলেন না। আমি বলি, ‘মা আমার কি কখনই ফেরা হবে না’!
‘তোমার বাবা এক কঠিন শর্ত দিয়েছে আমাকে। যেদিন তার মান ভাঙ্গবে, সেদিন এসো’।
মায়ের চিঠি পেয়েই রওনা দিয়েছি। মা লিখেছেন, ‘চলে এস রাশেদ। তোমার অপেক্ষার দিন শেষ। এবার ফেরার পালা। তোমার বাবা তাই বলেছেন’।

রিক্সা করে বাড়ি ফিরছি, সাথে একটি কাপড়ের ব্যাগ রিক্সার পাটাতনে। মায়ের জন্য শাড়ি-চাদর, বাবার জন্য পায়জামা-পাঞ্জাবী। সেই পুরোনো রাস্তা, ডানে স্কুলের মাঠ, একটু এগিয়ে বামে বেলপুকুরের পাড়; অন্ধকারে কিছু দেখি না। রাস্তা অতিক্রম করা দু একজন ট্রেনের যাত্রী, কেউ আমায় চিনছে না। রিক্সার টুনটান শব্দে কখন বাড়িতে এসে নেমেছি মনে নেই, দরজার নক করলাম দুই বার। বুকের ভিতর দুরু দুরু করছে। এই আমার জন্মস্থান, এই সেই বাড়ি। আমার শৈশব, কৌশোর, যৌবন। দরজা খুলতে কেউ আসছে, আমি পায়ের শব্দ পাই। বাবার জন্য অপেক্ষায় আছি।
কিন্ত মা ডাক দিলেন, কে এত রাতে?
আমার গলার স্বর ভারি হয়ে এসেছে, চোখ ভর্তি পানি। কোন কথা মুখ দিয়ে বেরুতে চাইছে না।
মা আবার বলল, কে?
তবে কি বাবা! আমি আর ভাবতে পারি না।
আমার গাল বয়ে গড়িয়ে পড়ছে লোনা জল। বাষ্পরুদ্ধ গলায় অস্ফূট আওয়াজ বের হল,
‘মা, আমি রাশেদ’।


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×