somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মীম (meme) , ধর্ম এবং সংস্ক ৃতি

১৯ শে মার্চ, ২০০৬ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মীম, শব্দের বয়স ত্রিশের কিছু বেশী, আমি নিজেও প্রথম শুনলাম দু বছর আগে। মীম অবশ্য যা বোঝায় তা মোটেই পুরোনো নয়, সত্যি বলতে কি মীমের ব্যখ্যা নিজেই একটা মীম, বইয়ে প্রথমবার পড়ে মনে হচ্ছিল এই মীমকে না ছড়ানো পর্যন্ত শান্তি নেই, আগে পরিচিতদেরকে বলেছি, এখন সম্ভব হলে ব্লগ পাঠকদের মধ্যে ছড়াব।

মীমের একটা কাছাকাছি শব্দ জিন (gene), এখন বহুল প্রচলিত, অনেকটা মীমের বায়োলজিকাল সমার্থক । তবে মীমের অর্থ পরিস্কার করার জন্য ভাইরাসের উদাহরন ব্যবহার করলে ব্যপারটা আরো সহজবোধ্য হবে। আমি সংক্ষেপে বলব, অনেকে আরও বিস্তারিত ভাবে বলতে পারবেন। আমরা কি কখনও ভেবে দেখেছি ভাইরাসের মতো ক্ষুদ্্র এবং তুলনামুলক ভাবে সরল বায়োলজিকাল ইউনিট কিভাবে আমাদের মতো জটিল, well equiped প্রানীকে সহজেই কাবু করে ফেলে, উত্তরটা জানতে হলে ভাইরাস কিভাবে কাজ করে জানতে হবে। ওহ আরেকটা ব্যাপার বায়োলজিকাল ভাইরাস আর কম্পিউটার ভাইরাসের স্ট্র্যাটেজি মোটামুটি একইরকম। এসব ভাইরাসের আক্রমনের দুটি স্তর, প্রথম স্তর হলো কোনো ভাবে host কোষে ঢুকে পড়া, কিন্তু ঢুকে পড়াটা অত সহজ নয়, কারন কোষের দেয়াল আছে, এবং দেয়ালের প্রোটিন বাইরের অচেনা জিনিসকে ঢুকতে দেবে না, অনেকটা প্রি-প্রোগ্রামড, আর এই প্রি-প্রোগ্রামড বলেই এর মধ্যে ভুলও আছে (কম্পিউটারের ক্ষেত্রে security hole) , যদি কোন ভাইরাসের কাছে এমন অন্য একটি প্রোটিন (অথবা কোড) থাকে যা এই ভুলকে সফলভাবে exploit করতে পারে তাহলেই কেল্লা ফতে, ভাইরাস কোষের ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেয়ে যাবে। সর্দির ভাইরাস থেকে শুরু করে বার্ড ফ্লু সবার টেকনিক মোটমুটি একই রকম। এরপর শুরু হয় আক্রমনের দ্্বিতীয় স্তর, আমাদের কোষের মধ্যে যথেষ্ট যন্ত্রপাতি আছে যারা ভাইরাস তৈরীর উপাদান গুলো উৎপাদন করতে পারে (কারণ ভাইরাসের মৌলিক উপাদান আর আমাদের শরীরের মৌলিক উপাদান একই), সহজ ভাষায় বলতে গেলে ভাইরাস এদেরকে এমনভাবে মোটিভেট করে যে এরা নিয়মিত কাজকর্ম ফেলে ভাইরাস তৈরী করা শুরু করে দেয়, এবং অল্পক্ষনেই শত শত ভাইরাস তৈরী হয়ে কোষের দেয়াল ভেঙ্গে বের হয়ে আসে, আর আশেপাশের কোষগুলোকে আক্রমন করে। যে ভাইরাস যত ভালোভাবে নিজেকে copy করতে পারে (বা যতটা স্বার্থপর), সে তত সফল। জিন (gene) যদিও আক্ষরিক অর্থে কাউকে আক্রমন কর েছ না, তবে সেও তার হোস্টকে (প্রানী নিজেই) ম্যানিপুলেট করে নিজের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য, আমি বিস্তারিততে যাব না আজকে। এখন মীমের প্রসঙ্গে ফিরে আসি, মীম ভাইরাস বা জিনের মতোই তবে এর হোস্ট হচ্ছে মন বা মস্তিষ্ক (শুধু মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়)। উদাহরণ দিলে পরিস্কার হবে, যেমন গুজব হলো এক ধরণের মীম। এই মীম ছড়াতে পারে এভাবে, আপনি হয়ত কোন শোবিজ স্টারের খুব খোজখবর রাখেন, আমি আপনাকে তার সম্পর্কে কিছু চটকদার খবর দিলাম, আপনি শুনে এতই মোহিত ( মীম প্রথম স্তর সফল ভাবে পার হলো), পরক্ষনেই বান্ধবীকে জানালেন, বাসা গিয়ে ভাই বোন কে জানালেন, রাতে চ্যাট করে জানালেন আরও বন্ধু বান্ধবকে (copy সফল), এবং আপনি যাদেরকে বলেছেন তারাও মোটামুটি একই ভাবে ছড়াতে লাগলো, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আরেকটা ব্লগীয় উদাহরণ, কয়েকদিন আগে অরূপ শাখামৃগ নিয়ে একটি বিশেষ ছবি সহ পোস্ট করার প্রস্তাব করল, আর যায় কোথা আমুদে লোকজন লুফে নিল প্রস্তাব, মীম-এ ইনফেকটেড কেউ কেউ লেখা ছাড়ল, বাকী ইনফেকটেডরা (আমার মতো) দিনে বহুবার লগ ইন করলো লেখা পড়ার জন্য। ফ্যাশন, ট্রেন্ড, গল্প, কবিতা, এমনকি ব্লগ, সবই এক বা একাধিক মীম। মীম নিজে ভালো বা খারাপ নয়, তবে হোস্টের ওপর এর প্রভাব ভালো, খারাপ হতে পারে। জিন বা ভাইরাসের মতো ডারউইনের সুত্র মীমের ওপরও প্রযোজ্য (survival of the fitest)। সবল মীম দুর্বল মীমকে হটিয়ে দেয় (পুরোনো ফ্যাশন আর চলেনা নতুন ফ্যাশন এলে)। যেসব মীম খুব ভালো ভাবে আমাদেরকে exploit করতে পেরেছে, এবং যাদের copy fidelity খুব ভালো, তারা যুগ যুগ টিকে যায় (যেমন রবীন্দ্র সাহিত্য)। আরো মীম আছে যারা এর চেয়েও বেশী দিন ধরে টিকে আছে, যেমন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস, ধর্ম। ধর্ম আমাদের চমৎকার কিছু দুর্বলতা খুজে বের করেছে (যেমন, মৃত্যু ভয়, অজানা ভবিষ্যতের আশংকা, আমার মনে আছে ছোটবেলায় পরীক্ষা বা ফলাফলের আগে সৃষ্টিকর্তার দরবারে মোনাজাত বেড়ে যেত), আবার এই দুর্বলতা গুলো প্রায় সার্বজনীন হওয়ায় copy fidelity খুব ভাল। ধর্মের মৌলিক ধারণা গু লো (মীম গুলো) এ জন্য বহুদিন ধরে টিকে আছে। তবে এই মীমগুলোর অনেক ভ্যারিয়ান্ট আছে , এবং প্রতিদ্্বন্দ্বী ভ্যারিয়ান্ট গুলো মুল ধারনার বাইরেও আরো অনেক কিছু যোগ করে, যেমন প্রাত্যাহিক উপাসনা, উৎসব স্রেফ মীমের survival নিশ্চিত করতে। মীম যদি কোন হোস্ট খুজে না পায়, তাহলে মীমের মৃত্যু হবে, মীম সংশ্লিষ্ট আইডিয়া সমেত। যেমন, গ্রীক দেব দেবীদের ধর্মিয় মীম, কেউ যেহেতু এই দেব দেবীদের বাস্তব অস্তিত্বে আর বিশ্বাস করে না, এই মীমেরও আর অস্তিত্ব নেই, আক্ষরিক অর্থেদেবরাজ জিউসের মৃত্যুও এই সাথেই হয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস ভিত্তিক মীমের এই একটা সমস্যা বিশ্বাসী না থাকলে মীম তার উপাদান সমেত (দেবতা, সৃষ্টিকর্তা, ...) মরে যেতে বাধ্য। ধর্মীয় মীম এজন্য যুক্তিবাদী খোজে না বরং খোজে অন্ধ বিশ্বাসী।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×