বালক বহু জ্বলিয়া, পুড়িয়া, আকুল নিবিড় রাত্রী জাগিয়া, অকারণে ক্রন্দন করিয়া চোখের পানিতে(আই মিন জলে) বালিশ ভিজাইয়া এবং আর থাকিতে না পারিয়া বিবাহ করিয়া ফেলিল। তাহার মাস্কুলার. বডিতে. যেন হৃদপিন্ড সংযোজিত হইল। কাননে কুসুম ফুটিল, পাখি গান. গাহিল, বায়ু নিরন্তর বহিয়া চলিল, নদীজলে প্লাবন আসিয়া বন্যা বহাইয়া দিল। তাহার প্রাণ কহিল, "আমি পাইলাম, উহারে পাইলাম"।
বহু রীতি মানি, লজ্জা ত্যাগ করিয়া সে বাসর ঘরে প্রবেশ করিল। বধু. বালিকা, পুটলির মত বসিয়া আছে। বালকের মনমে ওউর. এক লাড্ডু ফুটা! কি মিষ্টি, কি কিউট, কি নিস্পাপ!
সে বলিল,
"জীবনে জীবন প্রথম মিলন,
সে সুখের কোথা তুলা নাই।
এস, সব ভুলে আজি আঁখি তুলে
শুধু দুহু দোহা মুখ চাই।
মরমে মরমে শরমে ভরমে
জোড়া লাগিয়াছে এক ঠাই।"
বালক বিরাট ভূমিকা করিয়া বালিকার কাছে গেল। বালিকা চেরি পরিয়া, চন্দনচর্চিত মুখে করুণ ভাব আনিয়া চুপ করিয়া থাকিল। কিন্তু বালকের খায়েশ মিটে নাই। কারণ তাহার মুখে কেউ ললিপপ ধরাইয়া দেয় নাই। সে আবার উত্তেজিত( ভাইসাব জারা সামালকে, সব সময় এক চিন্তা করা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকারক) হইয়া কহিল,
"যেন এক মোহে ভুলে আছি দোহে,
যেন এক ফুলে মধু খাই।
জনম অবধি বিরহে দগধি
এ পরান হয়ে ছিল ছাই-
তোমার অপার প্রেম পারাবার,
জুড়াইতে আমি এনু তাই।"
আহ এতো কষ্ট! আমারই চক্ষে পানি আসিয়া গেল। বালিকা, তবুও কি তোমার প্রাণ, পরান গলিবে না? তুমি কি খালেদা জিয়া হইয়া গিয়াছ? জাঙ্গুয়া খানের ডাক যেমন তাহার কানে যাইত না ক্ষমতা পাওয়ার পর?
বালক আবার শান্ত হইল। সে কহিল,
"বলো একবার, 'আমিও তোমার,
তোমা ছাড়া কারে নাহি চাই।'"
একবার ক' বালিকা, একবার, তাহাতেই তপ্ত মরু জলে ভরিয়া যাইবে, শীতকালে নিমগাছে পাতা গজাইবে!
কিন্তু এ কী! বালিকাবাসর হইতে কোথায় পালায়? কোথায়? বালক থাকিতে না পারিয়া বলিল,
"ওঠ কেন, ওকি, কোথা যাও সখী?"
বালিকা সরোদনে কহিল, "আইমার কাছে শুতে যাই"
যাচ্ছলে! যাহ বাবা, সব প্লান মৃত্তিকায় মাটিস্মাত হইল। বালক গান ধরিল, "এতো কষ্ট কষ্ট লাগে কেন অন্তরে"!
বালক মনে মনে ভেড়া মারিয়া ঘুমাইয়া পড়িল সেই রাতে। আকাশে কত রঙ! আহা! বালক স্বপ্নে রামধনু দেখিল! সকালে ঘুম থাকিয়া উঠিয়া আবৃতি করিল, সরোদনে, "যে বৃষ্ট ঝরেছে অকালে!"
২.
দুইদিন পর
বালিকা ক্রন্দন করিতেছে। তাই দেখিয়া বালক কি স্থির থাকিতে পারে? তাহার হৃদয় তো আর পাথর নহে।
"কেন সখী, কোণে কাঁদিছ বসিয়া
চোখে কেন জল পড়ে?
উষা কি তাহার শুকতারা-হারা,
তাই কি শিশির ঝরে?
বসন্ত কি নাই, বনলক্ষ্মী তাই
কাঁদিছে আকুল স্বরে?
উদাসিনী স্মৃতি কাঁদিছে কি বসি
আশার সমাধি-'পরে?
খ'সে-পড়া তারা করিছে কি শোক
নীল আকাশের তরে?
কী লাগি কাঁদিছ?
*কনে। "পুষি মেনিটিরে
ফেলিয়া এসেছি ঘরে"!!!
বসন্ত কি শেষ হইয়া আসিল নাকি? নাকি শুকতারা খসিয়া পড়িল নাকি বর্ষা শেষ হইল ময়ুরনাচা অরণ্যে? বাতাস কি আজ করে নাই চুম্বন বালিকার কেশ? পাখি কি গায় নাই সকালে, তাহার তরে?
তবে কেন মানসীর চোখে জল? কেন? কেন? কেন?
নাহ, ঐ সব কিছু না। সে তাহার আদরের পুষি মেনিটার তরে চোখের শিশির ত্যাগ করিতেছে!
৩
দুপুর বেলা। বাতাস আম, জাম, বট বৃক্ষে স্নেহের পরশ বুলাইয়া দিতেছে। কিন্তু বালকের কপালে হাত দিবার কারো ইচ্ছা নাই। সে উদাস হইয়া মানসীকে ঢুন্ডিয়া বেড়াইতেছে। কোথা পাই তারে? কাহা হো তুম? শুন রাহা হে না তু, রো রাহা হুন মেয়?
না, বউ তার অন্দরের বাগানে। বালকের মনে আবার প্রেম জাগিয়া উঠিল। সে ছুটিয়া গেল। তার পরের হিস্টিরি রবি ঠাকুরের জনাবেই শুনুন।
""কী করিছ বনে শ্যামল শয়নে
আলো করে বসে তরুমূল?
কোমল কপোলে যেন নানা ছলে
উড়ে এসে পড়ে এলোচুল।
পদতল দিয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া
বহে যায় নদী কুল্কুল।
সারা দিনমান শুনি সেই গান
তাই বুঝি আঁখি ঢুলুঢুল।
আঁচল ভরিয়া মরমে মরিয়া
পড়ে আছে বুঝি ঝুরো ফুল?
বুঝি মুখ কার মনে পড়ে, আর
মালা গাঁথিবার হয় ভুল?
কার কথা বলি, বায়ু পড়ে ঢলি,
কানে দুলাইয়া যায় দুল?
গুন গুন ছলে কার নাম বলে
চঞ্চল যত অলিকুল?
কানন নিরালা, আঁখি হাসি-ঢালা,
মন সুখস্মৃতি-সমাকুল-
কী করিছ বনে কুঞ্জভবনে?"
*কনে। "খেতেছি বসিয়া টোপাকুল।"
মাইরালা!বালক এতো কথা বলে! তার মুখে কেউ চুরুট ধরাইয়া দাও!
নাহ, বালকের আর চলিতেছে না। তাহাকে কিছু একটা করিতেই হইবে। অবুঝ বালিকা! তাহার নিকট বারবার হারিয়া যাইতেছে। এ আর সহ্য করা যাইতে পারে কাহাতক?
সে আবার কহিল-
"আসিয়াছি কাছে মনে যাহা আছে
বলিবার চাহি সমুদয়।
আপনার ভার বহিবার আর
পারে না ব্যাকুল এ হৃদয়।
আজি মোর মন কী জানি কেমন,
বসন্ত আজি মধুময়,
আজি প্রাণ খুলে মালতীমুকুলে
বায়ু করে যায় অনুনয়।
যেন আঁখি দুটি মোর পানে ফুটি
আশাভরা দু'টি কথা কয়,
ও হৃদয় টুটে যেন প্রেম উঠে
নিয়ে আধো-লাজ আধো-ভয়।
তোমার লাগিয়া পরান জাগিয়া
দিবসরজনী সারা হয়,
কোন্ কাজে তব দিবে তার সব
তারি লাগি যেন চেয়ে রয়।
জগত ছানিয়া কী দিব আনিয়া
জীবন যৌবন করি ক্ষয়?
তোমা তরে, সখী, বলো করিব কী?"
*কনে। "আরো কুল পাড়ো গোটা ছয়।"
ধরনী, ফাক হও। ইতনা বাড়া অপমান! বালক কতো কিছুই না করিতে পারে! তাহা রাখিয়া কুল। কেন, বলিতে পারিত না "আনিয়া দাও চন্দ্র?" কিংবা কী হইত যদি বলিত সিংহের দুধ খাইব? বালক কি আনিতে পারিত না, মঙ্গল থেকে লাল জল? অথবা নাটর থেকে বনলতা সেনের কানের দুল?
তা না চেয়ে কিনা কুল। সামান্য কুল! তাও হাইব্রিড কুল না। টোপা কুল। টক! বালক লজ্জায় মরিয়া গেল যেন।
তাই তো তার তখুনি মরার সাধ জাগিল। তাহার ইচ্ছা হইল, "মরি, ইহাতেই যদি ভালবাসা প্রমাণ হয়!"
দেখি, এবার ঠাকুর বাবাজি কী করেন!
"বর।
তবে যাই সখী, নিরাশাকাতর
শূন্য জীবন নিয়ে।
আমি চলে গেলে এক ফোটা জল
পড়িবে কি আঁখি দিয়ে?
বসন্ত বায়ু মায়ানিস্বাসে
বিরহে জ্বালাবে হিয়ে?
ঘুমন্তপ্রায় আকাঙ্খা যত
পরানে উঠিবে জিয়ে?
বিষাদিনী বসি বিজন বিপিনে
কী করিবে তুমি প্রিয়ে?
বিরহের বেলা, কেমনে কাটিবে?"
*কনে। "দেব পুতুলের বিয়ে।"
পুতুল! রক্ত মাংসে প্রাণ ভরে না, টয় লাগিবে! থুড়ি! কি যা তা ভাবিতেছি! কিন্তু শেষমেষ বালক মারাত্মক একখান জিনিস আবিষ্কার করিল। কী?
তাহা হইল, "পাশের বাড়ির মেয়ে অনু, সুন্দরী। কিন্তু কবিতা বোঝে না"
ঈশ্বর! এই বালিকার হৃদয়ে সামান্য ভালবাসা দাও, আমিন। উহারে জ্ঞান দাও প্রভু, উহারে ক্ষমা কর।
মূল কবিতা-নববঙ্গদম্পতির প্রেমালাপ-
কাব্য-মানসী
3rd October, 2015
12.54 am
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৩২