somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে দিন আমি মায়ের সমান হবো

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিরকাল যুদ্ধটা অসমই থেকে গেলো । আমার মায়ের সাথে আমার বয়সের ব্যবধান পাক্কা দুই দশক ! কি করে পারবো আমি ? তর্ক বাধলেই নিশ্চিত হার । মামণি আমার চেয়ে বয়সে বড় , জ্ঞানে বড় , অভিজ্ঞতায় বড় ।বড্ড হতাশা আর কষ্ট নিয়ে বার বার মেপে দেখতাম ছোটবেলায় , "আম্মু তো আমার চেয়ে হাতে পায়েও বড় !" কত্ত কত্ত দিন মামণি ফাকি দিয়ে আমাকে ভাত খাইয়েছে । " আর এক গ্রাস খেলেই তুমি ঊতুউউউউউউউ বড় হবে।" আর আমিও "আমার মাথা মাকে ছাড়িয়ে ছাঁদ ফুড়ে আকাশ স্পর্শ " করার মত বড় হওয়ার , লড়াই এ জিতে যাওয়ার অলৌকিক স্বপ্নে বিভোর হয়ে গোগ্রাসে গিলেছি গ্রাসের পর গ্রাস । আমাকে যে মায়ের সমান হতেই হবে !

আমার নানাভাই ছিলেন শিক্ষক। মুজতবা আলীর "পন্ডিত মশাই" এর মতন তাঁর বেতনও কোনদিন কুকুরের তিন ঠ্যাং এর চেয়ে বেশি হওয়ার সুযোগ পায়নি। ভাই বোনের আধিক্যের সংসারে টিপে টিপে পয়সা গুণে দিন চললেও মা হয়ত খারাপ ছিলেন না । একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই আপাদমস্তক সৎ , গুণী , পর শ্রদ্ধেয় মানুষটি বিশাল এক অপরাধ করে ফেলেছিলেন। তার পুত্র ও কন্যাদের তিনি মুক্তিযুদ্ধে সামিল করেছিলেন, যারা যুদ্ধে যাবার মত বড় হয়েছিলো তাদের , যারা যুদ্ধে যাবার মত বড় হয়নি তাদেরকেও ।

ফলস্বরুপ তাকে ও তাঁর সাথে পাওয়া পরিবারের অন্য পুত্র সন্তানদের হত্যা করা হয় নির্মম ভাবে ।জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়িঘর। লুট হয়ে যায় রাজাকারদের হাতে ভিটেমাটিটুকুও। যুদ্ধ পরবর্তী একটি বিধ্বস্ত দেশে আয়হীন, উপায়হীন নানীমা ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে কি ভাবে বেঁচেছিলেন, ভাবলে শিউরে উঠি বারেবার। মাত্র ১৭ বছর বয়সে পিতাকে হারাতে কেমন লাগে ? কেমন লাগে ঘর বাড়ি হারিয়ে উদবাস্তু হতে ?

আমি কোন দিন জানবো না । আমি জানবো না অবলম্বনহীন জীবন সংগ্রামের কথা । আমি জানবো না শূন্য থেকে শুরু করার কথা । আমি জানবো না মাসের পর মাস জীবন হাতে করে পালিয়ে বেড়াতে কেমন লাগে । আমি জানবো না , প্রতি মুহুর্তে ধর্ষিতা হওয়ার আতংক কেমন। আমি জানবো না , চোখের সামনে প্রিয়তম ভাইয়ের লাশ পড়ে থাকলে মানুষ কিভাবে বেঁচে থাকে। আমি জানবো না , একজন মুক্তিযোদ্ধার কন্যা বছরের পর বছর কেন অপেক্ষা করে , বাবাকে পাওয়া যাবে । অথবা পাওয়া যাবে তাঁর কবরের সন্ধান ।

আমি হয়ত কোনদিনই পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারবো না , যেই দেশকে স্বাধীন করতে গিয়ে মামনিকে পিতার রক্তে দাম শুধতে হয়েছে, তিলে তিলে বেঁচে থাকার অসহনীয় কষ্ট পেরুতে হয়েছে সেই দেশটাকে মাত্র ৩৭ বছরের মাথায় আবার পরাধীন হতে দেখলে তাঁর কেমন লাগে। আমি হয়ত কোনদিনই লিখে বর্ননা করতে পারবো না পিতার খুনীর গাড়িতে দেশের পতাকা উড়তে দেখলে আমার মা কেমন কষ্টে , ঘৃণায় , ক্ষোভে তড়পাতে থাকেন । কোনদিনই বলে বুঝাতে পারবো না , সেই হাহাকার আর কান্নার দৃশ্য ।

তবে , একটি ব্যাপারে আমি নিশ্চিত । সময়ের নিষ্ঠুরতম পরিক্রমায় একদিন আমার বাবাও বিদায় নেবেন । যাকে শত্রুর বুলেট, পেতে রাখা ফাঁদ আর পাক সেনাদের উদ্ধত বেয়োনেট কেড়ে নিতে পারেনি , সময় নামক এক অনিবার্য শত্রুর হাত একদিন তাকে গুম করে দেবে তার কন্যার জীবন থেকে ।

রক্তহিম করা অশ্রুর উল্লাসে আমি আছি সেই দিনের অপেক্ষায় , যে দিন আমিও আমার মায়ের সমান হবো ।
৫২টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×