প্রশ্নটা তুলেছিলেন হার্ভার্ডের শিক্ষক রিচার্ড ক্যাশ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় নাৎসি বিজ্ঞানীরা বন্দীদের উপর নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে ছিলো । তাতে প্রচুর মানুষ মারা পড়ে । ক্যাশের প্রশ্ন ছিলো , আমরা কি ডাটা গুলো ব্যবহার করবো কি না?
নিঃসন্দেহে ক্লাস ছিলো দ্বিধাবিভক্ত । নৈতিকতার প্রশ্নে আমরা সকলেই ভীষণ ভাবে নাড়া খেয়েছিলাম। যারা বন্দীদের মৃত, ক্ষত বিক্ষত ও বিকৃত লাশ গুলো দেখেছেন তাদের কারো পক্ষেই এই রকম কিছু থেকে পাওয়া "সাইন্স" ব্যবহারের ইচ্ছা হবে না । কিন্তু অনেকেই যা বলেছেন, ক্যাশ নিজেও একমত তাদের সাথে, " যারা মরে গেছেন তাদেরকে তো ফেরানো যাবে না । যারা করেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত, হচ্ছে , হবে। কিন্তু প্রাপ্ত তথ্য যিদি মানবের কল্যাণে জ্ঞান হিসেবে ব্যবহৃত না হয় , যদি ধ্বংস করে ফেলা হয় তো কার কি লাভ?"
কথায় যুক্তি আছে কিন্তু আমার মন তাও সায় দিতে পারে না । ভীষণ খচ খচ করে ভিতরে । আমার ভয়টা ছিলো , ' আমরা যদি এই আচরণকে সাইন্টিফিক ডাটা ব্যবহারের যুক্তি দিয়ে সামান্যতম মাহাত্ম্য দান করি, তাহলে আবারও কি একই ধরনের "চয়েস" আমাদের সামনে উপস্থিত হবে কিনা!' আমার ধারনা হবে। আজকের ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক্স, স্পেস সাইন্স, ওয়ার টেকনোলজি, বায়ো টেরর - নানান রুপ ও মুখোশ নিয়ে এই একই দৈত্য আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে। তবে আজকের পোস্ট ভবিষ্যতের ভয় নিয়ে নয় বরং অতীতের ঘটে যাওয়া " তথাকথিত বিজ্ঞান" নিয়ে । ---------------------
আলফ্রেড কিনসেকে আধুনিক সেক্সোলজির জনক বলা হয়। তাঁর গবেষণার মাধ্যমেই নাকি এই ট্যাবু বিষয়টিতে বিপ্লব ঘটেছিলো। তাঁর অবদান নিয়ে ছবিও হয়েছে হলিঊডে। কিনসে
উইকিতে পাওয়া তথ্যে জানা যায় তার বর্নাঢ্য জীবন নিয়ে আলফ্রেড কিনসে কিন্তু এর বাইরেও তাকে নিয়ে বিতর্কের কমতি নেই । ১৯৯৮ সালে প্রচারিত বৃটিশ টিভি চ্যানেল ফোর ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয় কিভাবে কিনসে শুধু ব্যবহারই নয়, রীতিমত টাকা পয়সা ও উৎসাহ দিয়েছেন তার অধীনে কাজ করা " সাইন্টিফিক" পেডোফাইলদের। কিনসে রিসার্চ সেন্টার স্বীকার না করলেও একজন নারীর সাক্ষাৎকার আমাদের জানায় কি ভাবে কিনসে টাকা পয়সা ও " ডাটা রেকর্ড করা ও কোয়েশ্চেনেয়ার পাঠিয়ে" উৎসাহ দিয়েছিলেন এস্টারের ( ছদ্মনাম ) দাদা ও বাবাকে এস্টারের শিশু বয়স ( ৩-৪ বছর) থেকে তার উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষন চালিয়ে যেতে । দুই পর্বের আরেকটি ডকুমেন্টারিতে আমরা দেখি কি ভাবে কিনসে ও তার কলিগরা তাদের নিজেদের রেকর্ড অনুসারে " শিশু নির্যাতনকারী পেডোফাইল" ই শুধু নয় প্রায় ৩১৭ থেকে ২০৩৫ শিশুকে ব্যবহার করেছে তাদের তথাকথিত " শিশুদের যৌনতা" রিসার্চে ।
তো কারা ছিলো কিনসের স্যাম্পল ?
১। পেডোফাইল ( একজন নাৎসী পেডোফাইল ও আছে যে শত শত শিশু নির্যাতন ও অন্তত একটি হত্যার সাথে জড়িত)
২। জেলের বন্দী ক্রিমিনাল পুরুষ
৩। যৌণকর্মী নারী
৪। এমন পুরুষ ও নারী যারা ৩৫০ প্রশ্নের একটি সার্ভে কোয়েশ্চেনিয়ার পূরণ করতে রাজি ছিলো যা পুরোপুরি তাদের সেক্স জীবনের উপর । মনে রাখবেন সময়টা ১৯৩০ , ১৯৪০ যখন স্বাভাবিক ভদ্র মানুষেরা সেক্স নিয়ে কথা বলতেন না ।
৫। অসংখ্য শিশু যাদের বয়স ২ মাস বয়স থেকে শুরু করে ১৩/১৪/১৫ ছিলো । কল্পনা করুন, ২ মাস বয়সী , ৪ বছর বয়সী শিশুর উপরে সেক্সুয়াল এক্সপেরিমেন্ট চালানো হয়েছে ।
কিনসের এই সব স্যাম্পল নারী পুরুষের ভিতরে যারা রিসার্চে সাহায্য করেছেন তারা শিশু ও বিভিন্ন পশুপাখিদের সাথে সেক্স করেছেন। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক করেছেন। আলফ্রেড কিনসে নিজেও সমকামী ও অন্যান্য প্রকার সেক্স করে দেখেছেন ( ইন দা নেম অফ সাইন্স) ও কলিগদের করতে বলেছেন এবং ঘড়ি ধরে তা রেকর্ড করতে বলেছেন।
এই ধরনের অদ্ভুত ও স্বাভাবিক ও গরিষ্ঠ সমাজের অংশ নয় ধরনের স্যাম্পলের কাছ থেকে কিনসে কি জানতে পেরেছেন ও আমাদের জানিয়েছেন?
১। বহুগামিতা স্বাভাবিক
২। শিশুরা জন্ম থেকেই যৌন অনুভূতিসম্পন্ন ও শিশুরা যৌনতা পছন্দ করে ।
৩। এডাল্টরা শিশুদের সাথে যৌন কর্ম করে শিশুদের যৌনজীবন বিকশিত করতে সাহায্য করতে পারে।
৪। যৌনতা শিশুদের খুব একটা ক্ষতি করে না সুতরাং পেডোফাইল ব্যাপারটা অত ক্ষতিকর নয়।
এই জ্ঞান নিয়ে কিনসে কি করেছেন?
১। সেক্স অফেনডার বা যৌন নির্যাতনকারীদের শাস্তি কমিয়েছেন (আইন)
২। শিশুদেরকে যৌন নির্যাতন / ধর্ষন কারীদের শাস্তি কমিয়ে দিয়েছেন।
৩। পর্ণ ইন্ডাস্ট্রিকে বিশাল হাতিয়ার দিয়েছেন , " ইহা কাউকে ক্ষতি করে না" ।
৪। এবরশনকে "নিরাপদ" আখ্যা দিয়ে এবরশনকে লিগাল করার আন্দোলনে ঘি জুগিয়েছেন।
৫। তার "তুলনাহীন" জ্ঞান যা তিনি আহোরন করেছেন শিশুদের ধর্ষনকারীদের পার্সোনাল ডায়রী থেকে , সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে রকফেলার ফাউন্ডেশনের সাথে হাত মিলিয়ে আমেরিকার " সেক্স এডুকেশন" ভিডিও বানিয়েছেন।
এই সেক্স রিসার্চার কিনসের অবদান কি?
১। সেক্স অফেন্ডার বা যৌন অপরাধের অভিযুক্তরা ৩-৫ বছর জেল খেটে বেরিয়ে এসে আমাদের শিশুদের আবার ধর্ষন করতে পেরেছে ।
২। শিশুদের যৌন পণ্য বানিয়েছে ।
৩। যে সব শিশু নিজেদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে তাদের জীবনকে আরো বেশি দুঃসহ , মূল্যহীন ও অপমানিত করেছে।
৪। আজকের কর্পোরেট আমেরিকায় সেক্স যেভাবে যত্র তত্র ডাল ভাতের থেকেও সস্তা , অতি ব্যবহৃত ও বিকৃত হয়ে উঠেছে , তার পুরো ক্রেডিট কিনসের ।
--------------------------
কথা শুরু হয়েছিলো রিসার্চের এথিকাল সাইড নিয়ে । কিনসের পরে রিসার্চ মেথোডলজি , রিসার্চে এথিক্স নিশ্চিত করণ , রিসার্চের স্যাম্পলদের ক্ষতি না হয় তা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়া অবশ্যই এগিয়েছে । এখন চাইলেই কারো হাত -পা কেটে, পানিয়ে ডুবিয়ে মেরে, অক্সিজেন বন্ধ করে কিংবা চোখের ভিতর নিডল ঢুকিয়ে প্রোটিন খোঁজার নামে রিসার্চ করা যায় না । কিন্তু , সূক্ষ পথে গরীব দেশের মানুষ কিংবা নিজের দেশের অবুঝ সমাজকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রেখে ক্ষতিকর রিসার্চ কি হয় না? এখনো হয় বই কি। তবে মেথড ও এথিক্সের ক্ষেত্রে কিনসে পেডোফাইল ও শিশুদের টিস্যু পেপারের মতন ব্যবহার করেছেন সেইটা যদি আমি বাদও দেই, তারপরেও কিনসের রিসার্চ এর বিরুদ্ধে ভয়ংকর অভিযোগ আছে । রিসার্চ মেথডের কিছুই না মেনে মন গড়া ডাটাকে " সত্য " বলে চালিয়ে দেওয়া এই ম্যাজিশিয়ান কেবল হাজার হাজার শিশুর জীবন নষ্টই করেন নাই , মিথ্যাচারের পরকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। যেই ডাটা আগে থেকেই "স্কিউড" ( যাকে কিছুতেই মূল সমাজের প্রতিনিধি বলা তো যায়ই না বরং সমাজের স্খলিত ও অপরাধী অংশের দেওয়া তথ্যকে তিনি " সবার জন্য সত্য" বলে চালিয়ে দিয়েছেন।
তাই এই ধরনের তথাকথির রিসার্চ শুধু অন্যায়, অমানবিক ও অত্যাচারীই নয়, ভুল তথ্য ও ইনফারেন্সে ঠাঁসা । আলফ্রেড কেনসি, তার রিসার্চ সেন্টার ও রকফেলার ফাউন্ডেশনকে তাই বিচারের কাঠ গড়ায় দাঁড় করিয়ে কিনসে ইন্সটিটিউটের সমস্ত ডাটা পাবলিক করে দেওয়া উচিত । নাম ও ঠিকানা গোপন রেখে ডাটা পাবলিক করে দিলে নিঃসন্দেহে কনফিডেনশিয়ালিটি এক্টের লংঘন হয় না । কিন্তু তারপরেও কিনসের বন্ধু ও ইন্সটিটিউটের ঢাক ঢাক গুড় গুড় থেকে বুঝা যায় ঐ গর্তে আরো নাম না জানা সাপ রয়েছে নইলে ডাটা পুড়িয়ে ফেলার হুমকি কেন বার বার?
শত শত , হাজার হাজার শিশুর জীবন সেক্স এক্সপেরিমেন্টের নামে ধ্বংস করে দিয়ে কিনসের মত রিসার্চাররা আর কতকাল সোনার মেডেল গলায় ঝুলাবে আর আমাদেরকে ভুল আর মিথ্যা গিলিয়ে ঘুরে বেড়াবে?
---------------------
তথ্য সূত্র ঃ ইন্টারনেট
পরিশেষঃ ঘুরে ফিরে যত রকমের নোংরা ষড়যন্ত্রে কিছু অরগানাইজেশনের নাম ফিরে ফিরে আসে কেন?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




