somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ কি ভাবে দানব হয় ( পোস্টে সংশ্লিষ্ট ভিডিওটি দুর্বলচিত্তদের দেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৯:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি বলেছেন,
"কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর !"


এত সহজে মানবের চরিত্র সম্পর্কে এ অমোঘ সত্য মনে হয় আর কেউ বলতে পারেন নাই। সত্যিই মানুষের মাঝেই বসবাস করে মানুষ ও দানব- দুই রুপ। আমরা অনেকেই ভাবতে ভালোবাসি, আজকে যারা খারাপ তাদের মনে হয় জন্মই খারাপ! ওদের রক্তের দোষ ইত্যাদি। আপাত ভালো মানুষেরা কোন খারাপ কাজ সহজে করতে চায় না বা করে না। সত্যিটা এর চেয়ে অলীক হওয়া সম্ভবই না!

আমাদের সো কলড ভালো মানুষেরা অবশ্যই সব রকমের খারাপ কাজ করতে পারবে আর তার জন্য কিছু ক্রাইটেরিয়া বা শর্ত পূরণ হলেই চলবে। যেমন- কোন মা স্বাভাবিক অবস্থায় নিজের শিশুকে খুন করবে না। কিন্তু ইদানিং পত্রিকায় অহরহ শিশু হত্যায় মায়েদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলছে । আবার, ১৯৭১ এ কেউই বিশ্বাস করতে পারে নাই, তার ছাত্র কিংবা প্রতিবেশী ঘাতক হয়ে খুন করতে আসবে। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যা, নারী ধর্ষণ , লুটপাট - এসবই হয়েছে পরিচিতদের হাত ধরে। নাহ, এরা কেউ আদিম- অসভ্য- গুহা যুগের মানুষ ছিলো না। কিন্তু, এরা তাহলে দানবে পরিণত হলো কেন?

আগেই বলেছি, মানুষ থেকে দেবতা কিংবা মানুষ থেকে দানব মানুষই হয়। গরু ছাগল হয় না। এর কারণ হলো মানুষেরই একমাত্র চিন্তাশক্তি আছে যা ব্যবহার করে মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে আর নেওয়া সিদ্ধান্ত বদলাতেও পারে। এর পিছনে কতগুলো শক্তিশালী নিয়ামক কাজ করে । আর এই নিয়ামক গুলোর সমষ্টিই হলো দানব তৈরী কারখানা।

দানব কেন?
দানব কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তু থেকে হয় না। তাই কথায় বলে, " যেই যায় লংকায় , সেই হয় রাবণ।" অর্থাৎ আমরা প্রত্যেকেই রাবণ বা দানবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আমাদের বুকের ভিতরে নিয়ে ঘুরি আর সেই সুপ্ত সম্ভাবনাকে সফল করার পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হচ্ছে "ক্ষমতা" , উল্লেখিত উদাহরণ অনুযায়ী 'লংকার রাজসিঙ্ঘাসন'। কিন্ত, শুধু সিংহ আসনের মতন একটা ক্ষমতার চেয়ার পেলেই কি মানুষ দানব হয়ে উঠে?

না। এর সাথে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বা সিস্টেম থাকতে হয় যা একজন মানুষকে নিরবিচ্ছিন্ন এবং বাধাহীন ক্ষমতার প্রয়োগ করার পরিবেশ তৈরী করে দেয়। অর্থাৎ, স্বৈরাচারী ক্ষমতার প্রভাবে সেই মানুষটি দানব হয়ঃ
১। মানুষকে মানসিক ভাবে কষ্ট দেয়।
২। মানুষকে শারীরিক ভাবে আহত করে।
৩। মানুষকে মারাত্মক আঘাত করে ( মেরে ফেলে বা আদর্শগত ভাবে )
৪। মানবিকতার বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম অপরাধ করে।

কেন করে এমন? এর সবটাই স্রেফ ক্ষমতা আর ক্ষমতার অপব্যবহার। আমরা ভাবি এ বুঝি অজ্ঞানতা, কিংবা ধর্মের জোশ কিংবা সম্পদের লোভ! নাহ, কোনটাই নয়। এ স্রেফ এবং কেবলই মাত্র ক্ষমতার প্রভাব!
তাই আমরা জানি, "পাওয়ার করাপ্টস এন্ড এবসোলুট পাওয়ার করাপ্টস এবসোলুটলি"। অধুনা ছাত্র লীগের যে অকল্পনীয় অত্যাচার দেখছি, এর আগে হাওয়া ভবনের দোর্দন্ড প্রতাপ কিংবা ১৯৭১ সালে জামাত, আল বদর , আল শামস, রাজাকারদের যে বিভৎস হত্যা, ধর্ষণ, লুট আমরা দেখেছি - এই সবই "এবসোলুট পাওয়ার" এর দোষ। ক্ষমতা আসলেই এবসোলুট থাকার দরকার নেই, দানব হতে হলে সেই মানুষ গুলোকে স্রেফ এই কল্পনা বা ঘোরের ভিতরে থাকলেই চলবে যে তারা ধরা ছোঁইয়ার বাইরের কেউ! যেইটা বাংলাদেশের সকল রাজনীতিবিদ মনে করেন (ইহকালে) আর জামাত শিবির মনে করে (পরকালে)।

ঠিক কি দায়ী এই দানব সৃষ্টির জন্য?
১। প্রথমেই বলেছি , মানুষের ভিতরেই বাস করে অসুর। সুতরাং একটা মানুষের চিন্তা, ভাবনা, বিশ্বাস, আদর্শ এই সব মিলে যেই মনটা তৈরী হয়, সেই মন।
২। আশেপাশের চাপ বা পরিবেশ - এমন কোন ঘটনা যা হঠাৎ ঘটে ( ২৫শে মার্চের গণহত্যা) কিংবা এমন কিছু যা প্রতিদিন ঘটে ( ক্ষুধা, দারিদ্র)
৩। সমাজ বা রাষ্ট্র/ পৃথিবীর সিস্টেম - এর সাথে মানুষের অর্থনৈতিক , সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও আইনগত সত্ত্বা/ জীবন জড়িত। দেশের পলিটিকো-ইকোনমিক-সোশিও কালচারাল এবং লিগাল সিস্টেম যখন ক্রমাগত একটা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের উপর দানবীয় চাপ সৃষ্টি করে বা দানব হতে উৎসাহিত করে, তখনই মানুষ দানব হয়ে উঠে। এই একটা মাত্র কারণেই বাংলাদেশের সাধারণ সহজ সরল মানুষ ইদানিং দুর্নীতিবাজ টাউট হয়ে উঠেছে।

কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা ধীরে ধীরে দানব হয়ে উঠি? একদিনে নিশ্চয়ই না। রিসার্চ বলে, আমরা খুব ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পৈশাচিক হয়ে উঠি। ( যাইটাকে আমরা বলি ব্রেইন ওয়াশ)। এর সাথে নিম্নোক্ত ৭টি প্রক্রিয়া আমাদের দানব হতে সাহায্য করেঃ
১। না জেনে, না বুঝে, অবচেতন ভাবে ১ম ছোট ধাপে পা দেওয়া।
২। 'আমি বা আমরা' বাদে বাকি সবাইকে 'মানুষ' এর সমান না ভাবা।
উদাহরণ - রাজাকারদের দ্বারা বাঙ্গালীকে হিন্দু, কাফের, ইতর ভাবা।
৩। অপরিচিতি বা পরিচয় আড়ালের সুযোগ
উদাহরণ- বাংলা ব্লগে নিকের আড়াল, কিংবা ক্যাডার হয়ে মিছিলে মিশে যেতে পারা।
৪। ব্যক্তির দায়বদ্ধতা হ্রাস বা অন্যের উপর দায় চাপানোর সুযোগ
উদাহরণ- মাল্টিনিকের আড়ালে রিভার্স খেলার সুযোগ
৫। কর্তা / কর্তৃপক্ষের প্রতি 'বস ইজ অলওয়েজ রাইট' বা অন্ধ আনুগত্য
উদাহরণ- আল্লাহর নামে জামাত যা বলবে তাই বিশ্বাস করা
৬। প্রশ্নহীন ভাবে গোষ্ঠী বা দলের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো
উদাহরণ- জামাত ঠেকাতে গিয়ে জামাতের নারীদের ধর্ষণের ইচ্ছাপ্রকাশ
৭। পৈশাচিক/ দানব আচরণের প্রতি উদাস থাকা/ নিষ্ক্রিয় থাকা
উদাহরণ- কি হবে প্রতিবাদ করে বলে চুপ করে অন্যায় সহ্য করা।

সুতরাং, দানব হতে হলে কোন 'বিশেষ বংশে' জন্ম নেওয়া লাগে না, কোন 'রক্তের দোষ' লাগে না - শুধুই উপরের সোশাল- সাইকোলজিকাল প্রসেস গুলো লাগে। তাই দানব কে? কেন? কি ভাবে - বুঝতে হলে আমাদের বুঝতে হবে- দানবত্ব কোন ব্যক্তি নির্ভর এক্সিডেন্ট নয় - এটি একটি সমাজ ও পরিবেশ নির্ভর মৃদু ও ধীরগতির বিষ প্রয়োগ প্রক্রিয়া। ধর্মীয় দাঙ্গা, জাতিগত বিদ্বেষ, পাহাড়ী - বাঙ্গালী শত্রুতা সবটাই বিষক্রিয়া।

তাহলে এই দানব রুখে দিতে উপায় কি?
আশাবাদী হওয়ার মতন ব্যাপার হইলো যেই পরিবেশ ও সাইকো-সোশাল প্রক্রিয়া অথবা চাপ কিছু মানুষকে ধীরে ধীরে দানব করে তুলে- সেই একই চাপ কিছু মানুষকে দেবতা বা নায়ক হতে সাহায্য করে।
যেমন ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ এ এই বাংলাদেশে অনেকেই পাকিস্তানীর পা চেটে খান বাহাদুর হয়েছে , আর কেউ হয়েছে সংগ্রামী নেতা। ২৫শে মার্চের পর কেউ হয়েছে মুসলমান রাজাকার , কেউ হয়েছে মুসলমান মুক্তিযোদ্ধা। অর্থাৎ, মানুষ দেবতা কিংবা দানব হয়ে উঠে তার নিজস্ব কল্পনা ও সিদ্ধান্ত দ্বারা। সিদ্ধান্তই আসল- সিদ্ধান্তই সব! পুরোটাই!

আমাদের সামাজিক দেবতারা (যেমন গান্ধীজি, মাদার তেরেসা কিংবা মান্ডেলা) বড় বেশি অসাধারণ, আমরা ওঁদের মত হতে পারি না। আমাদের কল্পনার দেবতারা ( যেমন - ফেরেস্তা, দুর্গা, জিউস ) সব কিংবা ধর্মীয় নায়কেরা ( মুহম্মদ , মূসা কিংবা বুদ্ধ) অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন - আমরা তাঁদের মত হতে পারি না। আমরা বরং স্মরনীয়, বরণীয় , অনুকরণীয় নায়ক বলতে আমাদের আশে পাশের সাধারণ মানুষ গুলোকেই বেছে নেই! তারা দেবতা না হোক, তাদের কাজ গুলো হোক দৈবিক, নায়কোচিত , বীরত্বের। ডুবুরী চাঁন মিয়া হোক আমাদের দেবতা- এই দানব প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিরোধ।

দুর্বল চিত্তদের নিচের ভিডিওটি দেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ !

১৫টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×