somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাইকেল চিকি‌তসক ! আমার গুরু আল-আমিন- লেখা- মো: শরীফুল ইসলাম

২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল-আমিন ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়টা একটু অন্যরকম এবং অনেক দিন আগের ঘটনা। ২০০৮ সালের মার্চ মাসের শেষের দিকের ঘটনা। আমি তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাইক্লিং করার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছি। প্ল্যান ছিল ২০০৭ সালের দিকে। তখন সঙ্গী ছিল প্রায় ৭/৮ জন। যতই দিন যায় সঙ্গীর সংখ্যাও একজন একজন করে কমতে থাকলো। কমতে কমতে আমি একা হয়ে গেলাম। ঠিক করলাম একাই বের হয়ে যাব। হঠাৎ একদিন এ্যালিফেন্ট রোড থেকে নীলক্ষেত যাওয়ার পথে মনা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। মনা ভাইকে সব খুলে বলতে তিনিও সঙ্গী হতে রাজি হয়ে গেলেন। ঠিক করলাম দুইজনে মিলেই এই ট্যুর দেব।

তখন সাইকেল সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানতাম না। মনা ভাই সাইকেল দেখে বললেন, কোন সমস্যা নাই এই সাইকেলেই চলবে। তবে যাওয়ার আগে সাইকেলটা সার্ভিসিং করিয়ে নিলে ভালো হয়। তাহলে রাস্তায় সমস্যায় পড়তে হবে না। ট্যুরে বের হওয়ার কয়েকদিন আগে মনা ভাই নিজের সাইকেলটা সার্ভিসিংয়ে দিয়ে দিলেন। আর আমাকে বলে দিলেন কিভাবে যেতে হবে। প্রথমে যেতে হবে ঝিগাতলা বাস স্ট্যান্ড সেখান থেকে বায়ের রাস্তা ধরে ভেতরে ঢুকে যেতে হবে। একটা তিন রাস্তার মোড় না আশা পর্যন্ত এগিয়ে যেতে হবে, তারপর একটা দোকান পাওয়া যাবে। যেখানে রিক্সা-সাইকেল ঠিক করানো হয়। সেখানে আল-আমিন নাম বললেই সবাই চিনবে।

মনা ভাইয়ের কথামতো গেলাম, কিন্তু আল-আমিনকে পেলাম না। পেলাম আল-আমিন এর বাবাকে। তাঁকে বললাম আমার সাইকেলটি সার্ভিসিং করাতে হবে। আমার সাইকেল দেখে তিনি উত্তর দিলেন, ‘এই সাইকেল আমি সার্ভিসিং করি না। কারণ এই সাইকেলগুলোর কাজ-কার্বার আমি ভালো বুঝি না। তবে আমার ছেলে এইসব ভালো জানে আপনি একটু অপেক্ষা করেন।’ আসলে তখন গিয়ার-ওয়ালা সাইকেল তেমন ছিলো না এবং এই সাইকেলগুলো দেখলে অনেক মিস্ত্রিই হাত দিতো না।

একটু অপেক্ষা করার পর ছোট-খাটো একটি ছেলে আসলো। দেখে বোঝার কোন উপায় নেই এই ছেলে আমার সাইকেল সার্ভিসিং করতে পারবে। মনা ভাইয়ের কথাতেই সাহস করে দিয়ে দিলাম সাইকেলটি। তখন আল-আমিন নিজেও আমার সাইকেলের মতোই একটি সাইকেল চালাতো। বিকালে গেলাম সাইকেল আনতে, চালিয়ে দেখলাম আগের চাইতে সাইকেল অনেক স্মুথ। সেই থেকেই আল-আমিনের কাছে যাওয়া শুরু।

তেঁতুলিয়া-টেকনাফ সাইকেল ভ্রমণের পর। আল-আমিনের সঙ্গে এক ধরনের ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো। অনেক সময় ছোটখাট কাজে আমার কাছে টাকাও নিতেন না। সেই ভ্রমণের পরেই শুরু হলো ৬৪ জেলা ভ্রমণের প্ল্যান। এর মাঝে একদিন আল-আমিন ভাই নিজেও সম্ভবত ৩৬ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে দিনাজপুর গিয়েছিলেন। আমি নিজেও ছোট ছোট সাইকেল ট্যুর দিতাম আলাপ-আলোচনা করতাম। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার প্ল্যান করলাম। আল-আমিন ভাই আমাকে একটা লাইট বানিয়ে সাইকেলের হেন্ডেলে ফিট করে দিয়েছিলেন।

৬৪ জেলা ট্যুরের আগে আল-আমিনের কাছে গেলাম সহযোগীতা চাওয়ার জন্য। বললাম, ‘এর আগে তো সব দিলাম ছোট ছোট ট্যুর, এখন তো অনেক বড় ট্যুর দেব। আপনি একটু সহযোগীতা করেন।’ শুনে বলে দিলেন, ‘কোন সমস্যা নাই। আমার পক্ষে যত সহযোগীতা করার প্রয়োজন আমি করবো।‘ সাইকেল ঠিক করার জন্য যা যা লাগবে তার একটা লিস্ট দিলেন। কিছু জিনিশ নিজে সঙ্গে থেকে দোকান থেকে কিনে দিলেন।

৬৪ ট্যুরে যাওয়ার আগে থেকে প্রায়ই তাঁর কাছে যেতাম সাইকেল ঠিক করা দেখার জন্য। তিনি নিজে হাতে ধরে শিখিয়েছেন, কিভাবে টিউব ফুটো হলে ঠিক করতে হবে, কিভাবে টায়ার খুলতে হবে। এই ধরনের অনেক কিছুই শিখেছি আল-আমিনের কাছ থেকে। বলা যায় সাইকেল ঠিক করার জন্য প্রাথমিক অনেক কিছুই শিখেছি আল-আমিনের কাছ থেকে। আরো ভাল করে বললে, আল-আমিন ভাই নিজের হাতে আমাকে শিখিয়েছেন। এখন আর আমার সাইকেল ঠিক করার জন্য কারো কাছে যেতে হয় না। যদি কোন বড় সমস্যায় পড়ি তখন হয়তো আল-আমিন ভাইয়ের কাছে যাই।

আমার কাছে আল-আমিন ভাই শুধু একজন সাইকেল মেকানিক না। তাঁর মর্যাদা আমার কাছে একজন প্রকৌশলীর সমান।

আমার অনেক গুরুদের মধ্যে আল-আমিন ভাইও আমার একজন গুরু।

জন্ম শুভ হোক আল-আমিন ভাই।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×