somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হামহামে একদিন- সৌরভ আহাম্মেদ

০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকার বাইরে থাকার কারনে তেমন একটা ট্রিপ করা হয়ে ওঠে না “ভ্রমণ বাংলাদেশ”এর আয়োজনে নানা ট্রিপের ছবি দেখে আর বণর্না পড়ে আফসোসও হয় । নাফাখুম যাবার ইচ্ছে ছিল । কিন্তু হরতালের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। এরপর বসে থাকি পরবর্তী ইভেন্টের দিকে । সময় ও সুযোগ হয় হামহাম ইভেন্টে জয়েন করার ।

ইভেন্ট দেখে মনা ভাইকে ফোন দিয়ে যাবার ব্যাপারটা ফাইনাল করি। সব সময় চোখ রাখি ফেসবুকের ইভেন্টের দিকে । সময় ঘনিয়ে আসে, প্রস্তুতিও শেষ হয়। সকাল ৭টায় শরিয়তপুর থেকে ঢাকা আসি বাসে। এরপর ”ভ্রমণ বাংলাদেশ” এর অফিসে আড্ডা শেষ করে চলে যাই বাস স্ট্যান্ডে। নতুন কিছু মানুষের সাথে পরিচয় হয় । খুবই বন্ধুবৎসল তারা। দেখে বোঝার উপায় নেই আমি নতুন। রাত সাড়ে এগারোটার বাসে আমরা ২০জন রওনা দিলাম শ্রীমঙ্গলের উদ্দ্যেশে । পথে উজান-ভাটি রেস্টুরেন্টে বিরতিতে এককাপ চা শরীরটাকে চাঙ্গা করে তোলে। ভোর ৪টা শ্রীমঙ্গল পৌছাই ।

একটা হোটেলে চারটা রুম নিয়ে ফ্রেশ হই সবাই । গল্প করতে করতে দিনের আলো ফুটে ওঠে । সকালে নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ি রাজকান্দির লুকানো বনে। পথে ছোঁয়া পাই লাউয়াছড়া বনের। পাহাড়ি আকাঁবাকা পথ সাথে চা-বাগান মনটাকে ভরিয়ে তুলেছিল আনাবিল আনন্দে। জীবনের প্রথম চা-বাগান দেখার আনন্দ অনুভূতি ব্যক্ত করার মত না ।

পাঁচটা অটোরিকসাতে করে সকাল ৮টায় রওনা দিয়ে ১০টা নাগাদ পৌছাই কলাবন পাড়াতে । এরপর শুরু হয় রাজকান্দি রির্জাভ ফরেস্টে হাঁটা । দল সবার প্রথমে ছিলাম, প্রায় দেড় ঘন্টায় পৌছাই অপরুপ হামহাম ঝর্নাতে । হাম হাম কিংবা হামহাম বা চিতা ঝর্ণা, বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে কুরমা বন বিট এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত বা ঝরণা। চিৎকার করে উঠি ঝর্নাটাকে দেখে। যেমনটি ভেবেছিলাম তার চাইতেও অপরুপ। তেমন লোকজন না থাকায় আনন্দ উপভোগের মাত্রাটা বেড়ে যায়। ঝর্নাতে প্রায় ৩ ঘন্টার মত গোসল করি ।

নাহিয়ান ভাই বিদেশীদের পেয়ে খুশি তাদের সাথে ছবি তুললেন তিনি । এক জার্মান পযটককে নিয়ে গ্রুপের সবাই ছবি তুললাম । বললাম “ভ্রমণ বাংলাদেশ” এর ক্লাবের কথা শুনে খুশি হলেন তিনি । বললেন ভবিষতে সম্ভব হলে আমাদের সাথে যোগ দিবে কোন ইভেন্টে।
ঝর্না উপরে উঠি দলনেতা তাহসিন ভাই আসার আগে। তিনি পিছিয়ে পড়াদেরকে উৎসাহ দিয়ে নিয়ে আসছিলেন। দলের নামি-দামি খাদকের সমাহার । বিশাল ভুড়িওয়ালা হাসান ভাই, পলাশ ভাই, সদ্য বিবাহিত ভুড়িয়াল রুমি ভাইদের জন্য কষ্টকর ছিল দিনটি ।

পথে বৃস্টি পাইনি । ঝকঝকে রোদ পুরো পথে কষ্ট দিয়েছে । বৃষ্টি না থাকায় ঝর্নার উপরের অংশটা দেখেছি । বৃষ্টি থাকলে যেটা সম্ভব হত না । একে একে দলের সবাই চলে আসলো ঝর্নার নিচে । গোসল করলো মন ভরে । ছবি তোলা হল । দল থেকে দেয়া শুকনো খাবার খেয়ে কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করে নিলাম ।

এবার ফেরার পালা । আসার সময় তেমন বেশি না হলেও ফেরার সময় সবাই টের পেল অনেককেই জোঁকে ধরেছে । আমাকে মাত্র একটা জোঁক ধরে ছিল । মিতা আপুকে একটা বড় আকারের টাইগার জোঁক ধরতে যাচ্ছিল । আমি পেছন থেকে দেখে সেটা ফেলে দিয়েছিলাম বলে তিনি বেঁচে গেলেন সে যাত্রায় ।

পলাশ ভাই, নাহিয়ান ভাই সহ আরো কয়েকজনকে ধরেছিল জোঁক । কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি । শ্রীমঙ্গল ফিরে হোটেলে ফ্রেশ হতে যেয়ে তারা টের পায় তারা জোঁক আক্রান্ত । দুপুর তিনটায় ফেরা শুরু করি বিকল্প পথে । যাবার পথটি ছিল টিলা দিয়ে আর ফেরার পথে ঝিরি আর টিলার সমন্বয়ে। অটোরিকসাতে করে আবার যাত্রা শুরু হল শ্রীমঙ্গলের দিকে । সন্ধ্যাটা নেমে গেলে হুট করে । গা ছমছম করা রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম । ভয় হচ্ছিল কোন প্রানী না এসে পড়ে পথে ।

রাত সাড়ে ৮টায় পৌছালাম শ্রীমঙ্গলে । ফ্রেশ হয়ে চমৎকার রেস্টুরেন্ট কুটুমবাড়িতে খেলাম । মনা ভাই ঢাকা থেকে বলে রেখেছিল । তাই তারা গরম গরম খাবার পরিবেশন করলেন আমাদের জন্য । আড্ডাটা রেস্টুরেন্টে জমালাম রাত প্রায় ১২টা পযন্ত। এরপর চলে গেলাম বাস কাউন্টারে। রাত ১টায় বাস ছাড়লো ঢাকার উদ্দ্যেশে। আনন্দ আর মজার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলাম ।

পর্যটকরা অত্যন্ত দুর্গম পথ পাড়ি দেবার জন্য খাবার এবং প্লাস্টিকের পানীর বোতল সঙ্গে করে নিয়ে থাকেন এবং খাবারকে পানির স্পর্শ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রায়ই পলিথিন ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকরা প্রায়ই সেসব ব্যবহৃত জিনিস বহন করে আবার নিয়ে আসতে আগ্রহ দেখান না এবং যত্রতত্র ফেলে নোংরা করেন ঝর্নার নিকট-অঞ্চল। যা ঝরণা এমনকি জঙ্গলের সৌন্দর্য্যহানির পাশাপাশি পরিবেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর।

তাই পর্যটকদেরকে পঁচনশীল বর্জ্য পুতে ফেলা এবং অপচনশীল বর্জ্য সঙ্গে করে নিয়ে আসা কিংবা পুড়িয়ে ফেলা উচিত ।

যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকার গাবতলী, ফকিরেরপুল, সায়েদাবাদ থেকে সকাল হতে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের বাস যায় কমলগঞ্জ পর্যন্ত। এছাড়াও ট্রেনেও যেতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেটের ট্রেন ধরতে হবে। পথে শ্রীমঙ্গলে নেমে যেতে হবে। প্রয়োজন মনে করলে মাইক্রোবাসও ভাড়া নিতে পারেন। ট্রেনে গেলে খরচ কিছুটা কম হবে, আর বাস কিংবা মাইক্রোতে গেলে ভাড়া একটু বেশি পড়বে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি দুপুরে রওনা হয়ে সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল পৌঁছে সেখানে রাত কাটিয়ে হামহাম গেলে। এখানে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা থেকে নিচে ২৫০ টাকা পর্যন্ত হোটেল পাবেন। এছাড়া সড়ক ও জনপদ বিভাগ ও চা বাগানগুলোর প্রত্যেকেরই রেস্ট হাউজ আছে, একটু আগে থেকে কথা বলে এসব জায়গায় থাকতে পারলে ভ্রমণটা আরামদায়ক হবে। যাত্রাপথে উপজেলা সদর থেকে কুরমা সীমান্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পাকাই পাবেন। তবে এরপরের অংশের প্রায় পুরো রাস্তাই কাঁচা। এখানেই শেষ নয়, কলাবাগান নামের পাহাড়ি আদিবাসী এলাকা পেরিয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাহাড়ের উঁচু নিচু প্রায় ৫ ঘন্টার পথ হাঁটার পথ দেখা পাওয়া যাবে হামহামের। শ্রীমঙ্গলে রাত কাটিয়ে খুব সকাল অর্থাৎ ৬ টার মধ্যে বেড়িয়ে পড়তে হবে হামহাম এর উদ্দেশ্যে। কারন আপনাকে দিনে দিনেই ফিরে আসতে হবে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ভাড়ায় অনেক অটোরিকসা পাবেন। সেক্ষেত্রে হোটেল থেকেই অটোরিকসাঠিক করে নিতে পারেন। আসা-যাওয়ার ভাড়া পড়বে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×