somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৪

০৬ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৪


পুরাতন হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমি: হিমালয় থেকে সমভূমিতে পতিত বিভিন্ন জলধারা ও নদ-নদী কর্তৃক পর্বত থেকে বাহিত পলি পর্বতের পাদদেশে অবক্ষেপণের ফলে সুষম ঢালবিশিষ্ট এই পাদদেশীয় সমভূমি গঠিত হয়েছে। হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমির একটি অংশ বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোণ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে সম্প্রসারিত হয়েছে যা প্রায় সমগ্র দিনাজপুর অঞ্চলে বিস্তৃত। মোট আয়তন প্রায় ৩,৮৭০ বর্গকিলোমিটার। এই অঞ্চলটি হিমালয়ের পাদদেশীয় বালুকারাশি এবং নুড়ি দ্বারা আচ্ছাদিত। পাদদেশীয় সঞ্চয়সমুহ নবীন প্লাইসটোসিন অথবা প্রবীন হলোসিন সময়কালের মতো পুরানো, তবে মধুপুর কর্দম থেকে নবীন। এই ভূমিরূপের নিষ্কাশন প্রণালী বিনুনি প্রকৃতির এবং একাধিক অগভীর, প্রশস্ত, মসৃণ কিন্তু অনিয়মিত আকৃতির শৈলশিরাবিশিষ্ট। এ সমস্ত শৈলশিরা অসংখ্য প্রশস্ত কিন্তু অগভীর নদীখাত দ্বারা বিভক্ত যেগুলো ঘন ঘন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত ও আবার পুনর্যোজিত হয়েছে। যখন এ অঞ্চলটি ধীরে ধীরে উত্থিত হতে শুরু করে তখন থেকেই তিস্তা নদী অঞ্চলটি পরিত্যাগ করে। এলাকাটি উঁচু হয়ে ওঠার কারণেই এখানকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীগুলো বর্তমানে সমভূমির নিচে প্রায় ৬ মিটার পর্যন্ত গভীর খাদ সৃষ্টি করে প্রবাহিত হচ্ছে (উত্তর থেকে দক্ষিণে এই পরিমাপ ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে)। পাদদেশীয় সমভূমি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে সুষমভাবে ঢালু হয়ে গিয়েছে। ঢালের উত্তর প্রান্ত সমুদ্র সমতল থেকে গড়ে ৯৬ মিটার উঁচু এবং দক্ষিণ প্রান্ত ৩৩ মিটার। দেশের উত্তর-পশ্চিম কোণে সমগ্র ঠাকুরগাঁও জেলা এবং পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ এই ভূ-প্রাকৃতিক এককের অন্তর্ভুক্ত। এই সমভূমির অধিকাংশ স্থানই বন্যায় প্লাবিত হয় না।

তিস্তা প্লাবনভূমি: পশ্চিমে হিমালয়ের পাদদেশীয় সমভূমি এবং পূর্বদিকে উত্তর দক্ষিণে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি বৃহৎ ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল। দক্ষিণে বগুড়া জেলার শেরপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত এই ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল প্রাচীন তিস্তা নদীগঠিত একটি প্লাবনভূমি। মোট আয়তন প্রায় ১৫,২৮৩ বর্গকিলোমিটার। এ অঞ্চলের অধিকাংশ ভূমিই বর্ষা মৌসুমে অগভীরভাবে প্লাবিত হয় তবে ঘাঘট নদী বরাবর একটি অগভীর নিন্মভূমির (Depression) অবস্থান রয়েছে যেখানে বন্যার গভীরতা মাঝারি ধরনের হয়ে থাকে। তিস্তা, ধরলা, এবং দুধকুমার এই তিনটি বৃহৎ নদী তিস্তা প্লাবনভূমিকে ছেদ করেছে। এই নদীত্রয়ের বিধৌত প্লাবনভূমি ছয় কিলোমিটারের চেয়ে কম প্রশস্ত। প্রাচীন পুণ্ড্র ভুক্তির অন্তর্গত এই অঞ্চলটি প্রাচীনকালে আরও নিন্মভূমি ছিল। পলির জন্য মৃত্তিকা ছিল খুবই উর্বরা। এখানে প্রচুর ফসল উৎপনড়ব হতো বলে প্রাচীনকালের মধ্যভাগ থেকেই লোকবসতি ঘন হয়ে উঠে; পুণ্ড্রনগরের নিকটবর্তী উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ছিল তাদের খাদ্যশস্যের যোগানদার। প্রাগৈতিহাসিক যুগে এখানে জনবসতির প্রমাণ পাওয়া না গেলেও ঐতিহাসিক যুগের প্রথম থেকেই এখানে লোকবসতি ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমিঃ ১৭৮৭ সালে ব্রহ্মপুত্র মধুপুর গড়ের পূর্ব পার্শ্ব থেকে গতি পরিবর্তন করে পশ্চিম পার্শ্ব দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। ব্রহ্মপুত্র নদের এই নতুন গতিপথ যমুনা নামে অভিহিত হতে থাকে। বাহাদুরাবাদ এবং ভৈরবের মধ্যবর্তী ব্রহ্মপুত্রের পুরাতন প্রবাহ ব্রহ্মপুত্র নামে খুবই সংকীর্ণ একটি ধারায় পরিণত হয়। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্লাবনভূমি গারো পাহাড়ের দক্ষিণ পশ্চিম কোণ থেকে আরম্ভ হয়ে মধুপুর গড়ের পূর্ব প্রান্ত দিয়ে নিবে মেঘনা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত।নিন্মভূমি অঞ্চলসমূহ সাধারণত এক মিটারের অধিক গভীরতায় প্লাবিত হয়। কিন্তু শৈলশিরাসমূহ কেবল বর্ষার সময় অগভীরভাবে প্লাবিত হয়ে থাকে। মোট আয়তন প্রায় ৯,৪৩১ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে প্লাবিত হলেও পূর্বে এরূপ প্লাবিত হতো না। হাজার বছর পূর্বেও এ অঞ্চল মধুপুর টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলায় লালমাটি অঞ্চলের পাদদেশ হিসেবে উচ্চভূমি ছিল। বিভিনড়ব সময়ে ভূমিকম্পের কারণে এই অঞ্চলের অনেক অবনমন হয়েছে। সভ্যতার আদিলগ্ন থেকেই এখানে মানববসতি ছিল- ওয়ারী বটেশ্বর তার প্রমাণ। এ অঞ্চলটি প্রাচীন বঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

যমুনা (নবীন ব্রহ্মপুত্র) প্লাবনভূমিঃ
১৭৮৭ সালে ব্রহ্মপুত্রে প্রবল বন্যায় নদীটি তার পুরাতন গতিপথ পরিবর্তন করে দক্ষিণমুখী ঝিনাই ও কোনাই নদী বরাবর প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং প্রশস্ত ও বিনুনি (braided) বৈশিষ্ট্যসম্পনড়ব যমুনা নামে পরিচিত হয়। ব্রহ্মপুত্রের এই গতি পরিবর্তন প্রক্রিয়া ১৮৩০ সাল নাগাদ সম্পন্ন হয়। বরেন্দ্রভূমি ও মধুপুর গড় এই দুটি প্লাইস্টোসিন চত্বরের উত্থানের ফলে মধ্যবর্তী অঞ্চলে যে প্রশস্ত উপত্যকার (rift valley) সৃষ্টি হয়েছিল তার মধ্য দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের নতুন প্রবাহ সংলগ্ন ভূ- প্রাকৃতিক অঞ্চলকে যমুনা প্লাবনভূমির অন্তর্ভুক্ত করেছে।

যমুনা ও ধলেশ্বরী মিলিতভাবে যমুনা ধলেশ্বরী প্লাবনভূমি নামে একটি উপশ্রেণী গঠন করেছে। এই উপশ্রেণীর দক্ষিণাংশ একসময় গাঙ্গের প্লাবনভূমির অংশ ছিল। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং গঙ্গার প্রবাহ বরাবর বহু সংখ্যক দিয়ারা ও চর গড়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের অন্য যে কোনো নদীর চেয়ে যমুনা নদীতে চরের সংখ্যা অত্যধিক এবং বাংলাদেশে প্রবেশের পর থেকে ধলেশ্বরী নদী পর্যন্ত উভয় তীর প্রচুর সংখ্যক দিয়ারার উপস্থিতি দ্বারা বিভক্ত। চর এবং দিয়ারার মৃত্তিকা ও ভূমিরূপে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এ সকল পরিবৃদ্ধির সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম উত্থানের মধ্যকার পার্থক্য প্রায় ৫ কিলোমিটারের মতো। কিছু কিছু শৈলশিরা অগভীরভাবে প্লাবিত হলেও অধিকাংশ শৈলশিরা এবং প্লাবনভূমি অববাহিকাসমূহ বর্ষা মৌসুমে প্রায় চার মাসাধিককাল (মধ্য জুন থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত) ০.৯১ মিটারেরও অধিক গভীরতায় প্লাবিত হয়ে প্রচুর পলি সঞ্চয় করে। এই অঞ্চলটিও পুণ্ড্রভুক্তির অন্তর্গত ছিল বলে জানা যায়।

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×