somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২১

২৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২১


প্রশস্ত এবং গভীর নদ-নদীসহ অসংখ্য নদী-নালায় বাংলাদেশ জালের মত ছেয়ে ছিল। আজও বাংলাদেশে সাত শতেরও অধিক নদ-নদী রয়েছে। বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহের নিন্মাঞ্চল, রংপুর, দিনাজপুরের নিন্মাঞ্চল এবং দক্ষিণ বাংলা নিন্মাঞ্চল জেগে ওঠে সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০/৪০০০ বছরের মধ্যেই। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা এবং মেঘনা নদী ও এদের শাখা নদী কর্তৃক বাহিত পলিমাটি দ্বারা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বদ্বীপ ২,৩১,৬১৬ বর্গকিলোমিটার দেশের ৮৬% শতাংশ ভূমিতে পলির গভীরতা ২ থেকে ১০ কিলোমিটার।২৮ হিমালয় পর্বতমালা থেকেই এই পলি ও বালি এসেছে। বাংলাদেশের ভূ-গঠন সম্পর্কে ইতিপূবে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।

নতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। এজন্য আবহাওয়া চরম উষ্ণতা বা শৈত্য থেকে মুক্ত। দেশের ঋতুবৈচিত্র্য অত্যন্ত লক্ষণীয়। মার্চের শেষ দিক থেকে গ্রীষ্মকাল আরম্ভ হয়ে মে মাস পর্যন্ত বহাল থাকে। কিন্তু জুন মাসে সাধারণত মৌসুমী বায়ুর প্রকোপে বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়। তখন উষ্ণতা অনেক কমে যায়, কিন্তু বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যায়। বর্ষাকাল জুন মাসে আরম্ভ হয়ে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। বর্ষায় এদেশে বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। বাংলাদেশে বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০০ মি.মি. থেকে ৪০০০ মি. মি. পর্যন্ত। সাধারণত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বাধিক। আসামের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে চেরাপুঞ্জির দূরত্ব মাত্র ৮০ মাইল। পৃথিবীর ভারি বৃষ্টিপাত অঞ্চলেই বাংলাদেশ অবস্থিত।২৯

অক্টোবর ও নভেম্বর দুই মাস শরতের শেষ এবং হেমন্তের আরম্ভ। এ সময়টা দেশের আবহাওয়া খুবই চমৎকার। বর্ষা চলে গেছে, আবার শীত তখনো আসেনি। আকাশ পরিষ্কার এবং মেঘমুক্ত। মেঘমুক্ত আকাশের রং গাঢ় নীল। চারিদিকে বৃষ্টিধৌত গাছপালায় সবুজের সমারোহ। মাঠে পাকা ধানের সোনালি রং সারাদেশে এক আনন্দ উৎসবের পরিবেশ।
কবির ভাষায়-

সদ্যস্নাত রাজকীয় পোষাকে সজ্জিত
অনিন্দ্যসুন্দরী রাজকুমারীর মত
শরতের শেষে দেখি বাংলার মুখ।


ডিসেম্বর-জানুয়ারি দুই মাস শীতকাল কিন্তু শীতের তীব্রতা নেই। ঘন কুয়াশা এবং হালকা বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। এদেশে বসন্তকাল অত্যন্ত স্বল্পস্থায়ী। মাসখানেক স্থায়ী হয়। গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালই কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী এবং এদেশের মানুষের জীবন-জীবিকা বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। পাঁচ হাজার বছরের মধ্যে দেশের জলবায়ু কিছু পরিবর্তন হয়েছে। গত দু’শত বছরের জলবায়ু চার্ট থেকে অনুমিত হয় যে, পূর্বে শীত ও বর্ষা দু’টোই আরো দীর্ঘস্থায়ী ছিল। ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বোধ হয় আরো বেগবান ও তীব্রতর ছিল। ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসে পশুসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। শুধু মানুষই মারা গিয়েছিল ২ লক্ষ। তখন দেশের সর্বমোট ৯০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ২ লক্ষেরও অধিক লোকের প্রাণহানি একটি মারাত্মক বিপর্যয়। তার পূর্বের জলোচ্ছ্বাস বা ঝড়ের কিছু কিছু খবর আমাদের কাছে পৌঁছেছে এবং অনুমান করা যায় পূর্বে আরো তীব্রভাবে ঝড়-ঝঞ্ঝা হতো। দেশের আবহাওয়াতে অস্থিতিশীল পরিবেশ ছিল।২৯

প্রচুর বৃষ্টি, আর্দ্র জলবায়ু এবং বর্ষায় পললায়ন হওয়ার ফলে ভূমি খুবই উর্বর ছিল। কিন্তু বিরাজমান জলবায়ুর জন্য দেশের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর ছিল না বলেই মনে হয়। তাছাড়া, এ বিষয়ে প্রাচীন যুগের অনেকের বর্ণনাতে সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ দেশের স্থানে স্থানে প্রচুর জলাবদ্ধতা, ঝোপ-জঙ্গলে পরিপূর্ণ ভূমি, প্রচুর বৃষ্টি ও কর্দমাক্ততা প্রাচীন বাংলার
জলবায়ুকে অস্বাস্থ্যকর করে থাকতে পারে। দেশে ঘন ঘন মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ ছিল। এজন্যই বোধহয় আর্যরা এদেশে উপনিবেশ স্থাপন করতে চায়নি। এমন কি আর্যদের পরেও বহু বছর পর্যন্ত বিদেশী আগন্তুকরা এদেশে স্থায়ীভাবে বাস করতে পছন্দ করেনি। কিন্তু উর্বরা ভূমির জন্য সহজলভ্য জীবিকা, পশু-পাখি ও মৎস্যের প্রাচুর্য জনগণকে খুবই প্রভাবিত ও উৎসাহিত করেছে এদেশে বাস করার জন্য। খ্রিষ্টপূর্ব চর্তু শতকেই বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠে। এদের মধ্যে পুণ্ড্রবর্ধন, তাম্রলিপ্তি, গঙ্গাবন্দর, কর্ণ-সুবর্ণ প্রভৃতি অঞ্চল ও শহর অন্যতম।৩০

প্রাকৃতিক গঠনে দেশের বিচ্ছিন্ন অবস্থা, যানবাহনের প্রতিকূলতা, মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে ছিল। শুধু মৌর্যদের সময়ে এবং পরে গুপ্তযুগে বাংলার বৃহত্তর অংশ তাদের শাসনাধীন ছিল বলে মগধের সংস্পর্শে আসে। কুষাণ ও সাতবাহনদের শাসনাধীন না থাকলেও তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সংযোগ ছিল। এ সময়ে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রভূত উন্নতি হয় এবং জনসংখ্যাও বোধহয় দ্রুত বাড়তে থাকে। জলবায়ুরও কিছু পরিবর্তন হয়। ৩১

২৯. এফ.এফ. মনিরুজ্জামান: উদ্ভিদ সম্পদ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।
৩০. ড: এম,এ, রহিম: বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস
৩১. ড: এস,এ, রফিকুল ইসলাম: প্রাচীন বাংলার সামাজিক ইতিহাস
আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ২০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×