somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৪৯

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আদি বাংলার ইতিহাস
(প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৪৯


ভয়ের উপাদান
নবোপলীয় ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ধর্মে ভয়ের উপাদান। তাদের ভয় শুধু অসুস্থতা ও মৃত্যু নিয়েই ছিল না, বরং বিপদ, শুষ্কতা, ঝড় এবং মৃত মানুষ, যে প্রাণী সে হত্যা করেছে তাদের আত্মা সম্পর্কেও ভয় ছিল। খারাপ প্রভাব ব্যতীত প্রত্যেক দুর্ভোগ, অকৃতকার্যতা তাদেরকে অভিভূত করত। এসব থেকে মুক্তির জন্য তারা যাদুক্রিয়ার সাহায্য নিত। আদিবাসীরা অশুভ শক্তিকে তুষ্ট করার জন্য প্রচুর আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। যেমন- ভয়ংকর নদী সাঁতরে পাড়ি দেয়ার আগে নদীর তীরে কিছু অনুষ্ঠানাদি পালন করত। বৃষ্টির জন্য, ফসলের জন্য, রোগমুক্তির জন্য, যুদ্ধবিগ্রহে জয়লাভের জন্য, বিবাহ ও মৃত্যুতে অশুভ আত্মাকে খুশি করার জন্য তারা আচার-অনুষ্ঠান পালন করত।১১৯

নবোপলীয় মানুষের প্রাক-যৌক্তিক মন
নবোপলীয় মানুষ প্রাক-যৌক্তিক স্তরে বাস করত। তারা সচেতন ও অচেতন বস্তুর মধ্যে কোন পার্থক্য করত না। একটি শিশু আগুনে পুড়ে গেলে তারা মনে করত কেউ তাকে যাদু করেছে। ফলে, যতক্ষণ না অপরাধীকে পাওয়া যাবে, ততক্ষণ পিতামাতার স্বস্তি ছিল না। কোনো কোনো উপজাতি স্বাভাবিক মৃত্যুর ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করত। জন্ম সম্বন্ধেও তাদের ধারণা ছিল তেমনি। নর-নারীর মিলনের ফলে নারীগর্ভে সন্তানের আবির্ভাব ঘটে, এ কথা কোনো কোনো আদিবাসী বিশ্বাস করত না। তারা বিশ্বাস করত, স্ত্রীর শরীরের মধ্যে কোনো আত্মা প্রবেশ না করলে সে গর্ভবতী হয় না।১২০ তারা ঋতুগুলোর পরিবর্তন সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করত। তারা মনে করত কৃষিকর্মের প্রক্রিয়া মূলত ঋতুভিত্তিক। এজন্য ঋতু নির্ধারক হিসেবে সূর্যকে দেবতা হিসেবে পূজা করা হতো। তারা প্রকৃতি, গাছপালা, বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত এমনকি বন্য-পাখিকে দেবতার আসনে বসাত।

কুসংস্কার ও যাদুবিদ্যা
দেবতার অভিশাপ নিয়ে তারা অত্যন্ত ভীত ছিল। তারা মনে করত দেবতার অসন্তুষ্টি হলে নানাবিধ বিপদ দেখা দেবে, আর দেবতা সন্তুষ্ট হলে সময়মতো বৃষ্টি হবে, ফসল বপন সম্ভব হবে, সময়মতো ফসল ঘরে উঠবে, সমাজে থাকবে সুখশান্তি। তাই অদৃশ্য শক্তির আশির্বাদ পাওয়ার আশায় ভজন, উপাসনা ও মিনতি করা হতো। এগুলো করতে গিয়ে নানান কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ত। ফলে কুসংস্কার ধর্মের অংশে পরিণত হয়। এর পাশাপাশি বিপদ থেকে রক্ষা পেতে যাদুবিদ্যায় নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তারা সাবালকত্ব প্রাপ্তি, বিবাহ, রোগ, মৃত্যু বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে যাদুকরের শরণাপনড়ব হতো। সাধারণ লোকদের ধারণা দেয়া হতো যাদুকররা দেবতাদের বংশধর। এ কারণে তারা অনেক সময় সমাজের নেতৃত্ব দিত।

ধর্মযাজক শ্রেণীর সৃষ্টি
কুসংস্কার, যাদুবিদ্যা প্রবেশের ফলে ধর্মের জটিলতা দেখা দেয়। পূজাপার্বণ, আচার-অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় এগুলো ঠিকভাবে পালন ও পরিচালনার জন্য একশ্রেণীর ধর্মযাজকের আবির্ভাব হয়।১২১ কৃষকের উদ্বৃত্ত ফসলের ভাগ দিয়ে এই ধর্মযাজক শ্রেণীর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হয়।১২২ নানা দুর্যোগের দোহাই দিয়ে তারাও যাদুকরদের মতো তাদের উপর মানুষের নির্ভশীলতা বাড়িয়ে তোলে। নতুন নতুন দেবতা, উপাসনালয় গড়ে তোলে। অচিরেই তারা শক্তিশালী, বিত্তবান শ্রেণীতে পরিণত হয়। রাজশক্তি, অভিজাত সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় এরাও সমাজের উচ্চ শ্রেণীভুক্ত হয়, কখনো কখনো ক্ষমতার অংশীদার হয়।১২৩ জন্ম-মৃত্যু উভয় অবস্থাতেই ধর্মযাজকের কর্মকাণ্ড ছিল। বিশেষ করে মৃতদেহ সৎকারের সময় যাজকের অনেক আচার-অনুষ্ঠান ছিল। মৃতদেহ কবর দেয়া বা পুড়িয়ে ফেলার প্রচলন ছিল।

১১৯. P. Niyogi: Buddhism in Ancient Bengal.
১২০. V. Gordon Childe: Man Makes Himself.
১২১ D.E. Sopher: The Geography of Religion.
১২২ নবেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য: প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষ।
১২৩ ড: আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও মো: আবদুল কুদ্দুস শিকদার- সভ্যতার ইতিহাস (প্রবন্ধ)।
পৃষ্ঠা ৯০.
১২৩ ড: আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন ও মো: আবদুল কুদ্দুস শিকদার- সভ্যতার ইতপৃষ্ঠা ৯০.িহাস (প্রবন্ধ)

আগামী পর্বেঃ তামার আবিষ্কার, বাংলাদেশে প্রাগৈতিহাসিক অনুসন্ধান।

আদি বাংলার ইতিহাস (প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ১২০৫ খ্রিষ্টাব্দ) পর্ব ৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×