somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেক্সিকান ভিসা ইন্টারভিউ!

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৫ই জুন ২০১৫ সকাল, মেক্সিকান এম্বাসি, দিল্লি। তিন তলা একটি বিল্ডিং, সম্ভবত আবাসিক হিসেবে কেউ এটি তৈরি করেছিলেন যা ভাড়া নিয়ে এম্বাসির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইন্টারভিউ-এর ১ ঘন্টা আগেই এসে হাজির হয়ে গেছি। আমার সাথে আমার ভারতীয় এক ডাক্তার বন্ধু ছিল। ঠিক সকাল ৯টায় প্রার্থীদের ভেতরে প্রবেশ শুরু হল। বাংলাদেশ থেকে তেমন একটা মেক্সিকোতে যাওয়া আসা নেই, নিতান্ত কাজ না থাকলে কেউ ওমুখো হতে চায় না। যাইহোক, এম্বাসিতে কোন ধরণের ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র নিয়ে প্রবেশ নিষেধ, দেখলাম কেউ কেউ মোবাইল ফোন অফ করে বাইরে গার্ডের কাছে জমা রাখছে। যারা কাঁধ ব্যাগ বা সমজাতীয ব্যাগ নিয়ে এসেছেন তাদের ভয়টা আরো বেশি কারন সেগুলো রাখার জন্য রাস্তার পাশে একটি তাক বসানো হয়েছে যেটি কোন ভদ্রলোক চাইলেই পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নিজের করে নিতে পারবেন। অবশ্য পরে বুঝেছিলাম মোবাইল ফোন ফাইলের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতো। সিকিউরিটি চেকিং নেই বললেই চলে।

প্রথমেই ঝামেলা বাঁধলো, এপয়েন্টমেন্ট ইমেইল প্রিন্ট করে সাথে নিয়ে আসতে ভুলে গেছি। অবশেষে গার্ড ভেতর থেকে কনফার্ম হয়ে আমাকে ঢুকতে দিল। ছোট্ট একটা অঙ্গিনা পেরিয়ে কয়েকটি সিঁড়ি পার হয়ে অবশেষে আমাদের মাঝারি ধরনের একটা কক্ষে বসতে দেওয়া হলো, এটাই ইন্টারভিউ রুম। কক্ষে জনা বিশেকের মত লোকজন রয়েছে। একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য আমার মেক্সিকোর ভিসার প্রয়োজন পড়েছিলো। অধঘন্টার মতন অপেক্ষা শেষ প্রথমে কাগজপত্রের জন্য ডাকা শুরু হলো। প্রথমেই আমার ডাক পড়ল। বাংলাদেশ থেকে আসায় আমি কাগজপত্র প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নিয়ে এসেছিলাম। আগেই কয়েকজনের কাছে শুনেছিলাম ওয়েবসাইট রিকয়ারমেন্ট না থাকা সত্ত্বেও তাদের কাছে জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং স্টুডেন্ট হলে বাবার সেলারি স্লিপ ও ট্যাক্স পেমেন্টের ফটোকপি চাওয়া হয়েছিল। তাই রিস্ক না নিয়ে আমি আমার জীবনের ও আমার বাবার অর্ধেক জীবনের সমস্ত কাগজপত্র নোটারি করে নিয়ে গিয়েছিলাম। কাগজপত্র চেকিং শেষ আরো ২০/২৫ মিনিট অপেক্ষা শেষে আমাকে ছবি ও আঙ্গলের ছাপ নেওয়ার জন্য ডাকা হল। এরপর মূল ইন্টারভিউ-এর জন্য একই দিন বিকেল ৩টায় আসতে বলা হল। মেজাজটা তখনই বিগড়ে গেল। একেতে সাথে মোবাইল ফোন নেই, তার উপর আমার হোটেল এম্বাসি থেকে অনেক দূরে। মাঝের সময়টুকুযে হোটেলে কাটিয়ে দেব সে উপায়ও নেই। অগ্যতা আমি আর আমার বন্ধু মিলে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরেফিরে সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।

ঠিক বিকেল ৩টায় পুনরায় এম্বাসিতে প্রবেশ করলাম। এবার আর গার্ড এর চেকিং ও কোন প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হলো না। সকালবেলা যেমন আমার ডাক প্রথমেই পরেছিলো এবার ঠিক উল্টোটা ঘটলো। একজন করে ডাকা হচ্ছে, তিনি ছোট একটি কক্ষে প্রবেশ করছেন এবং কিছুক্ষণ পর বের হয়ে আসছে। সবার শেষ আমাদের ডাক পড়ল। এর পূর্বে যারা গিয়েছিলো তাদের প্রায় সকলের ভিসা রিজেক্ট করে দেওয়ায় মনে মনে শঙ্কিত ছিলাম। এখানে বলে নেওয়া ভালো ভিসা ফি ২৩৫৮ রুপি এবং ঠিক এক্সাক্ট এমাউন্টই পে করতে হয়। কোন ধরনের ভাংতির সিস্টেম নাই। ভিসা এপ্রোভ না হলে ভিসা ফি নেওয়াই হয় না। ইন্টারভিউ রুমে বেশ চটপটে একজন মেক্সিকান ভদ্রমহিলা বসা ছিলেন। ফরমাল গ্রিটিংস শেষে আমার ইন্টারভিউ শুরু হল,

(আমার কাগজপত্রে চোখ বুলাতে বুলাতে)
ভদ্রমহিলাঃ আপনার নাম কি? মেক্সিকোতে কেন যাবেন? আপনি কি করেন?
আমিঃ নাম বলে কনফারেন্সর কথা উল্লেখ করলাম। কি করি, কোথায় করি বললাম।
ভদ্রমহিলাঃ আপনি একাই যাচ্ছেন নাকি আপনার সাথে আরো কেউ যাচ্ছে? পৃথিবীর এতো দেশ থাকতে কনফারেন্স মেক্সিকোতেই কেন?
আমিঃ আমার ভারতীয় বন্ধুটির কথা বললাম। প্রথমে ভেবে পাচ্ছিলাম না পরের প্রশ্নের কি জবাব দেব পরে বললাম, এই কনফারেন্সগুলো অ্যারেঞ্জই করা হয় পার্টিসিপেন্টদের যাতায়াত সুবিধা ও বাজেট রিডিউস করার জন্য। ইউরোপ ও আমিরিকার দেশগুলো থেকে সহজেই যাতায়াত করা যায় এবং ওয়েদারেরও একটি ব্যাপার রয়েছে। এশিয়ার দেশগুলোতে এই সময়টায় অত্যাধিক গরম থাকে যার সাথে কনফারেন্সের বেশিরভাগ পার্টিসিপেন্ট পরিচিত নয়। সবশেষে, কনফারেন্স প্রতি বছরই আলাদা আলাদা দেশে হয়, যে দেশ বিডের সময় ভালো প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করে সাধারণত তাদেরই সিলেক্ট করা হয়।
(অন্য আরেকজন এম্বাসিরই ভারতীয় ভদ্রলোক তখন আমার পাসপোর্টের পূর্বের ভিসাগুলোতে চোখ বুলাচ্ছিলেন।)
ভদ্রমহিলাঃ আপনার স্পন্সর কে এবং তারা কেন আপনাকে স্পন্সর করছে?
আমিঃ উত্তর দিলাম।
ভদ্রমহিলাঃ একই কাজে এরপূর্বে কোথাও গিয়েছিলেন?
আমিঃ হ্যাঁ এবং দেশের নামগুলো বললাম। বলার সময় ইউরোপের দেশের উপর বেশি জোড় দিয়েছিলাম।
ভদ্রমহিলাঃ অপনাকে ধন্যবাদ।
আমিঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।

ভারতীয় যে ভদ্রলোক আমার পাসপোর্টের ভিসা চেক করছিলেন তিনি এবার আমাকে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে একটি ফোন নম্বর ধরিয়ে দিয়ে আমাকে পরের দিন বিকেল চারটায় ফোন করতে বললেন। সাধারনত ভিসা এপ্রোভ হলে পেমেন্ট নিয়ে পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হয় এবং পরেরদিন পাসপোর্ট কালেক্ট করতে বলা হয় ও ভিসা রিজেক্ট হলে পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে সাথে সাথেই বলে দেওয়া হয় “ইউর ভিসা ইজ ডিনাইড” (Of course with no f***ing reason)। পরেরদিন যথা সময়ে ফোন করলাম ওপাশ থেকে বলা হল আমাকে আরো কিছু ডকুমেন্টস নিয়ে আসতে হবে। একই কাগজপত্র দিয়ে অবশ্য আমার ডাক্তার বন্ধুটির ভিসা এপ্রোভ হয়ে গিয়েছিল। হয়ত সে ডাক্তারি পেশার সাথে আছে বলেই! দুদিন পর ডকুমেন্টস স্ক্যান কপি নিয়ে হাজির হওয়ার পর আবার নতুন করে বলা হলো, আমাকে মেইন হার্ডকপি নিয়ে আসতে হবে! যদিও এরপূর্বে আমি মেক্সিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের ডিরেক্টর জেনারেলের সাইন করা একটি লেটার জমা দিয়েছিলাম। পরে অবশ্য আর মেক্সিকোর ভিসার প্রয়োজন পরেনি, তিনদিন পর বাংলাদেশে ফিরে ইউএস ভিসার জন্য এপ্লাই করেছিলাম এবং সেটা নিয়েই কনফারেন্স যোগদান করেছিলাম (ইউএস ভিসা থাকলে মেক্সিকোতে প্রবেশের জন্য আলাদা করে মেক্সিকান ভিসার প্রয়োজন পরে না)।

লেসন লার্ন্ড: পরে শুনেছিলাম দিল্লির মেক্সিকো এম্বাসির কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা রয়েছেন, ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে নাকি সবই ঠিক হয়ে যায়। এছাড়া দীনেশ কুমার নামে একজন গার্ড রয়েছেন, ৩ থেকে ৪ হাজার রুপি পেলে তিনিও নাকি তড়িৎকর্মা!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৫৮
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×