somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিপ্টা'স গাইড টু বইমেলা ২০১৪

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিউজফিডে বহু লোভনীয় মোহনীয় বইয়ের হাতছানি থাকা সত্ত্বেও এবারের বইমেলায় খুব সম্ভবত আমার যাওয়া হচ্ছে না। কারণ আর কিছুই না- গেল বছরে ছোট ভাইয়ের ওয়াসওয়াসায় বাজেট ডিঙিয়েছিলাম- ডিঙানো মানে একেবারে আ জায়ান্ট লিপ ফর দ্যা ম্যানকাইন্ড কিসিমের। আর আমার মতো খাইষ্ঠা কঞ্জুসের পক্ষে এটা আজ অবদি হজম হচ্ছে না। অ্যামাউন্টটা অবশ্যই আমি আপনাদের বলব না, কারণ ওটা হয়ত অনেকেরই হঠা‌‌‌ৎ বই কেনার শখ জাগলে যত ব্যয় করেন, তারও অনেক কম। পিডিএফ পড়াও আমার জন্য পোষায় না, চোখ আর ঘাড়ের ব্যথার কারণে জুম করেও পড়ে জুত পাই না। বইগুলোর অর্ধেকও আমি শেষ করতে পারিনি। তার পেছনে বহু দিন যাবৎ বই পড়ার অভ্যাস জলাঞ্জলি দিয়ে বসে আছি। অনেকগুলো মোটা মোটা বই বুক শেলফ থেকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। তাই আমার স্বজাতি যারা যারা আছেন, তাদের জন্য সাজাচ্ছি এবারের...

"কিপ্টা'স গাইড টু বইমেলা ২০১৪"

১) প্রথমেই টাকাটা হাতে নেবার পর চলে যান হকারের কাছে বা ফুটপাথে ম্যাগাজিন বিক্রেতার কাছে। গিয়ে ভালো ভালো পত্রিকার সর্বশেষ ঈদসংখ্যাগুলো কিনে নেন। সমসাময়িক অনেক বড় বড় লেখকের মেলা আসন্ন উপন্যাস সস্তায় হাতে চলে আসতে পারে আপনার।

২) এবার নোটপ্যাড বা খাতা নিয়ে মেলায় যান। ওতে অনেকগুলো কলামের ছক কাটেন- বইয়ের নাম, লেখকের নাম, বইয়ে লেখা দাম, প্রয়োজন হলে ক্যাটাগরি ইত্যাদি। পুরো মেলা ঘুরে পছন্দনীয় বইগুলো দেখে দেখে জরিপ চালান। এবার এক জায়গায় বসে ঠাণ্ডা মাথায় সবগুলোর ২৫% অফ হিসাব করে করে বাজেট অনুযায়ী বই ডিসকার্ড করতে থাকেন। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ। এই স্টেপ পালন করতে গিয়ে একজনের কাছে সাংবাদিক আখ্যা পেয়েছিলাম...

৩) যদি মনে হয়- অনেক তো হালকে-ফুলকে বই পড়া হল, এবার নাহয় বিশ্বসাহিত্যের ক্লাসিকগুলো কিনি- তাহলে রাশিয়ান ক্লাসিকগুলোর অনুবাদ দিয়ে শুরু করতে পারেন। কারণটা কী- সোভিয়েত ইউনিয়নের 'রাদুগা' নামের প্রকাশনী ছিল, যেটা রাশিয়ার বইগুলোই বাংলায় অনুবাদ করত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার পর রাদুগাও বিলুপ্ত হয়, তাই অনুবাদ বইগুলোরও আর কপিরাইটের কেউ থাকে না। তাই দামও কম। দেখবেন কোন অনুবাদকের নাম নাই। শুধু একজন সম্পাদকের নাম- যার কাজ খুব সম্ভবত বইয়ের একটা ভূমিকা লিখে দেয়া- রাশিয়া মহান দেশ, লেখক মহান লেখক ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রকাশনীতে একই বইয়ের একই অনুবাদ পেতে পারেন। অনুবাদের কোয়ালিটি অবশ্যই প্রশ্নাতীত। এর মধ্যে যে প্রকাশনীরটা সবচেয়ে সস্তা সেটা কিনতে পারেন, তবে সস্তা বইয়ে খারাপ প্রিন্ট অথবা বানান ভুলের অত্যাচার সহ্য করতে হতে পারে।

৪) অনেকের যদি আমার মতো অনেকদিন বই পড়ার অভ্যাস না থাকে তাহলে হঠাৎ মেলায় গিয়ে সিরিয়াস বই কেনা শুরু করলে সেগুলো হজম করতে কষ্ট হতে পারে। তাই যেটা করতে পারেন, কয়েকটা হাওয়াই-মিঠাই টাইপ বইয়ের সাথে সিরিয়াস বইয়ের কম্বো করে কিনতে পারেন। পড়ার সময় হাওয়াই-মিঠাই দিয়ে স্টার্টার, সিরিয়াস দিয়ে মেইন ডিশ।

৫) অনুবাদ বই (বিশেষত থ্রিলার বা জনপ্রিয় সাহিত্যের জন্য যেসব) কেনার ক্ষেত্রে বইটা পড়েছে এমন কারও কাছ থেকে মতামত নিলে ভালো হয় বা ভালো মতো উল্টেপাল্টে দেখে নিতে হবে। অনেকেই কলোনিয়াল মনোভাব লালন করেন। ডেভিড ডিশটিং-ডিশটিংম্যান জাতীয় নাম দেখলেই বই কিনে নিতে চান। তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, জী ভাই, বিদেশি লেখকরাও খারাপ লেখা লিখে। আবার দেশি অনুবাদকও অতি জঘন্য অনুবাদ করে। তাই বুঝে শুনে কেনা উচিত। আর ইংলিশ বই পড়ার অভ্যাস থাকলে নীলক্ষেতে যেগুলোর পেপারব্যাক কিনতে পাওয়া যায়, মেলায় সেগুলোর হার্ডব্যাক কেনার লোভ সামলানো উচিৎ বলেই কিপ্টা হিসেবে মনে করি।

৬) হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবালের বই আমার সচরাচর কেনা হয় না। কারণ কারও না কারও কাছ থেকে ধার পাওয়া যেতে পারে... তবে শখ করে কালেকশন জাতীয় কেনা যায়।

৭) পুং-কিপ্টাদের গার্লফ্রেন্ড বা ফ্রেন্ড নিয়ে মেলায় বই কিনতে না যাওয়াটাই ভালো। ফ্রেন্ডরা গরম পকেটের খবর পেয়ে গেলে বই কেনা আর হয়েছে! গার্লফ্রেন্ডও ঘ্যানঘ্যান করে বই কেনা শিকে্য় তুলবে। গার্লফ্রেন্ডকে কাল যাবো, পরশু যাবো করতে করতে ১৪ তারিখ ডেট ফেলেন। ঐদিন রাস্তার জ্যামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আর সন্ধ্যা হওয়া মানেই হবুশাশুড়ি বারবার ফোন দিয়ে ঘরে ফেরার ডাক দিবে। আবার ভীড়ভাট্টার চোটে কোন ফুচকার দোকানে বসা যাবে না। ভালো রেস্টোর‍্যান্টে জায়গা নাও পেতে পারেন। কোন স্টলেও হয়ত ঢোকা যাবে না। কতগুলো টাকা বেঁচে যাবে ভেবে দেখেছেন? তারপরও গার্লফ্রেন্ড ঘ্যানঘ্যান প্যাঁনপ্যাঁন করলে মুখ বন্ধ করতে হাওয়াই-মিঠাই কিনে দিয়েন... স্ত্রী-কিপ্টারা ১৪ তারিখ অ্যাভয়েড করেন।

তাইলে সেই কথাই থাকল। হ্যাপি বই কিনিং। আর বেশি বই কিনার প্ল্যান থাকলে বড় স্কুল ব্যাগ নিতে ভুলবেন না।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×