somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোয়েন্দা গল্প লেখা প্রসঙ্গে

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নবীন বা উঠতি অনেক লেখকেরই গোয়েন্দা গল্প/উপন্যাস লেখার প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। আমারও ছোটবেলা থেকে অনেক ইচ্ছা রহস্য গল্প লেখার। রহস্য গল্প লেখা নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু অবজার্ভেশন আছে। ব্যাপারটা এমন না যে, আমার অনেক রহস্য গল্প পড়ার অভিজ্ঞতা আছে। আমার ছোট্ট গণ্ডি থেকেই আমি কিছূ কথা শেয়ার করছি এই পোস্টে। সেগুলো যদি কারও উপকারে লাগে তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করব। আশা করি, আমার ধৃষ্টতাটুকু মার্জনা করবেন।

রহস্য গল্প লেখা আমার মতে পা থেকে মোজা খোলার মত। রহস্য গল্পের জন্য শুরুতেই দরকার একটা ক্রাইম। সেই ক্রাইম যত চমৎকার হবে, ক্রিমিনাল যত সৃজনশীল আর ধূর্ত হবে, গল্পের চমক ততই বাড়বে। রহস্য গল্প লেখা হল, সেই ক্রাইমের গল্পটাকে মোজা খোলার মত টান দিয়ে উল্টা করে ফেলা। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ডিসট্র্যাকশন। সেটা নিয়ে পরে আসছি।
ক্রাইম বা ক্রিমিনালের উপর ভিত্তি করে দুই রকম রহস্য গল্প দেখা যায়। একটা হল পাগলা, আরেকটা হল নরমাল।

পাগলা ক্রাইমগুলো হল মোটিভলেস বা মোটিভটা অ্যাবনর্মাল। ক্রিমিনাল এক্ষেত্রে হয় পাগল, তার কোন অবসেশন থাকে, অথবা সে কোন কাল্টের সদস্য হয়, অথবা সে গোয়েন্দার সাথে বুদ্ধির খেলা খেলছে। এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্রিমিনাল ক্রাইম সীনে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন সূত্র ফেলে যায় অথবা তার কোন সিগনেচার স্টাইল থাকে- হতে পারে কোন লেখা, নোট, ভিক্টিমের অঙ্গবিকৃতি ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা বা গল্পের নায়ককে দেখা যায় ফরেনসিক খুঁটিনাটির চেয়ে পাজলের মত সূত্রগুলো মেলাতে। হয়তবা দেখা যায় গল্পের নায়ক মনোবিজ্ঞানী। নায়কের কাজ হল ক্রিমিনালের ব্রেইনটাকে ম্যাপ করে ফেলা।

নরমাল ক্রাইমে মোটিভ বস্তুবাদী, বৈষয়িক। এখানে নায়ক ফরেনসিক খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করে, সাসপেক্টদের নিয়ে কাজ করে, মোটিভ খোঁজার চেষ্টা করে। নায়ক ক্রাইম সীনের উপাত্ত সংগ্রহ করে আর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যগুলো দিয়ে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে একটা আপাতঅদৃশ্য প্যাটার্ন আবিষ্কার করে আর গল্পের শেষে তা পাঠকের সামনে উম্মোচিত হয়।

Distraction (not destruction :-P) দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একে অনেকে "রেড হেরিং" নামেও ডাকে। ঊনবিংশ শতকের দিকে যারা শিয়াল শিকারের বিরোধী ছিলেন তারা রেড হেরিং নামের মাছটা ব্যবহার করতেন। এই মাছের গন্ধ অনেক তীব্র। তাই হাউন্ড দিয়ে শিয়াল শিকার করতে গেলে পথে রেড হেরিং মাছ দিয়ে রাখত বিরোধীরা, যেন গন্ধের চোটে হাউন্ডের ঘ্রাণশক্তি কাজ না করে।
লেখক কত চমৎকারভাবে রেড হেরিং ব্যবহার করতে পারছেন (পাঠককে ডিসট্র্যাকট করতে পারছেন), সেখানেই রহস্য গল্পের আর্ট। এখানে লেখকের সাথে জাদুকরের মিল দেখা যায়। ম্যাজিক ট্রিকের দুইটা অংশ- মূল ট্রিক আর ডিসট্র্যাকশন। মূল ট্রিকটা দিয়ে ম্যাজিকটা হয়ে যায়। ম্যাজিশিয়ানের লক্ষ্য থাকে দর্শকদের থিয়েট্রিকস এবং বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে দর্শকদের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দেয়া, তাদের পার্সেপশনটাকেই বদলে দেয়া।

কয়েন ভ্যানিশিংয়ের ছোট্ট জাদুটার কথা বলা যায় উদাহরণস্বরূপ। ম্যাজিশিয়ান ডান হাতে সবাইকে কয়েন দেখিয়ে বাম হাতে নিলেন। তারপর বাম হাত মুঠো করলেন। মুঠো খোলার পর দেখা গেল সেখানে কয়েন নেই। সবাই হয়তবা ভাবছে বাম হাতের আঙুলের চিপায় কয়েনটা আছে বা কোন ভাবে লুকিয়েছে। কিন্তু আসল ঘটনা হল, কয়েনটা ডান হাতেই রয়ে গেছে। ম্যাজিশিয়ান কতটা দক্ষভাবে কয়েন বাম হাতে নেয়ার অভিনয় করছে এবং দর্শকদের সেটাই বিশ্বাস করাচ্ছে, সেখানেই ম্যাজিশিয়ানের ট্যালেন্ট।

ডিসট্র্যাকশন অনেকভাবেই করা যায়- অনেকগুলো সাসপেক্ট বা সূত্র উপস্থাপন, ভুল সাসপেক্টদের চরিত্রগুলোকে ভালোভাবে স্কেচ করা যাতে পাঠকদের মনোযোগ তাদের উপরই আবদ্ধ থাকে, ঘটনাপ্রবাহের ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে মনোযোগ ঘুরিয়ে দেয়া ইত্যাদি অনেক রকমের কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যায় লেখকদের।

রেড হেরিং কিংবা আসল ক্লু কীভাবে সাজাচ্ছেন তার উপর সাসপেন্সের কোয়ালিটি নির্ভর করতে পারে। থ্রি অ্যাক্ট স্ট্রাকচার অনুসরণ করে গল্প লিখতে হলে পর পর অনেকগুলো রেড হেরিং সাজিয়ে মিডল অ্যাক্টের ফলস উইনের দিকে গল্পকে পরিচালিত করা যায়। তারপর মিডল অ্যাক্টের শেষে আসল ক্লু উপস্থাপন করে প্রোটাগনিস্ট তথা গোয়েন্দার জন্য নতুন সংকট সৃষ্টি করে গল্প ফাইনাল অ্যাক্টের দিকে ধাবিত করা যায়।

আমার মতে গোয়েন্দা গল্পও এক ধরণের থ্রিলার গল্প, যেখানে গল্পের শেষ বা টুইস্টের অনেকগুলো ক্লু গল্পের বিভিন্ন জায়গায় দেয়া থাকে। হয়তবা গোয়েন্দা গল্পের ভবিষ্যৎ হচ্ছে থ্রিলার গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আনুষঙ্গিক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া। অনেক অ্যামেচার লেখককেই দেখা যায়, ভালো প্লট একবার মাথায় আসলে আর ধৈর্য্য ধরতে পারেন না, তাড়াহুড়ায় লিখতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলেন। আমার মতে, ভালো গোয়েন্দা গল্পের প্লট মাথায় আসলে সেটাকে থ্রিলারের আদলে সাজালেই সবচেয়ে সুন্দর দেখায়।

আশা করি, সবাই ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৮
৬টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×