somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: দৈত্য ও জেলে

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্ন: জালা দেখে জেলে কী ভাবল?
উত্তর: ‘দৈত্য ও জেলে’ গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো এক জেলে। সে ছিল খুব গরিব। বাস করত এক নদীর ধারে। প্রতিদিন নদীতে পাঁচবার করে জাল ফেলা তার নীতি ছিল। এতে যে মাছ পেত তা বিক্রি করেই সে সংসারের খরচ চালাত। কায়ক্লেশে দিন গুজরান করা এই জেলে একদিন সকালে এসে নদীতে জাল ফেলল। কিন্তু পর পর চারবার জাল ফেলেও সে কোনো মাছ পেল না। দুঃখ ও হতাশায় আকাশের দিকে মুখ করে আল্লাহর সাহায্য ও রহমত কামনা করে সে। শেষবারের মতো জালটা পানিতে ছুড়ে মারল। এবার সে দেখল, ঢাকনা দিয়ে আটকানো একটা তামার জালা জালে আটকে আছে। জালার ঢাকনার ওপর দাউদের পুত্র সুলেমানের নাম খোদাই করা। অপূর্ব এই বাদশাহি জালা দেখে জেলের বুকে কিছুটা আশা ফিরে এল। সে ভাবল, নিশ্চয় এর ভেতর মণিরত্ন রয়েছে। খোদার দয়ায় এবারে বুঝি তার নসিব ফিরল।
প্রশ্ন: জালা থেকে কী বের হয়ে এল?
উত্তর: নদীর ধারে বাস করা জেলে প্রতিদিন নদীতে পাঁচবার করে জাল ফেলত। এতে যে মাছ পেত, তা বেচে তার সংসারের খরচ চালাত। একদিন সকালে চার-চারবার নদীতে জাল ফেলেও কোনো মাছ পেল না। পঞ্চম ও শেষবার জাল ফেলে সে পেল একটা তামার জালা। জালাটার মুখ ঢাকনা দিয়ে আটকানো ছিল। জেলে নদীর পাড়ে পড়ে থাকা একখণ্ড পাথর দিয়ে ঠুকে ঠুকে সাবধানে জালার মুখটা সরিয়ে ফেলল। ঢাকনা সরে গেলে জালা থেকে গলগল করে রাশি রাশি ধোঁয়া বের হয়ে আসতে লাগল। দেখতে দেখতে সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলী একটা অতিকায় দৈত্যে পরিণত হলো।
প্রশ্ন: দৈত্যটি দেখতে কেমন ছিল?
উত্তর: দৈত্যটি দেখতে খুবই ভয়ংকর ছিল। তার মাথাটা একটা বিশাল ঝুড়ির মতো। একগাছি চুলও ছিল না মাথায়। আগুনের গোলার মতো ভয়ংকর দুটি চোখ আর দাঁত ছিল শ্বেতপাথরের টুকরো বসানোর মতো। দৈত্যের এই ভয়ংকর চেহারা দেখে জেলে খুব ভয় পেয়েছিল।
প্রশ্ন: বাদশাহ কেন দৈত্যকে বন্দী করেছিলেন?
উত্তর: দৈত্যটির নাম সক-হর-অল জিন। সে বাদশাহ সুলেমানের গোলাম ছিল। তার এমনই ক্ষমতা ছিল, দুনিয়ার কাউকে সে পরোয়া করত না। একদিন সে বাদশাহের হুকুম তামিল করতে অস্বীকার করে। এতে বাদশাহ রেগে যান এবং তাকে শায়েস্তা করার জন্য একটি তামার জালায় বন্দী করেন। তারপর বাদশাহর নাম খোদাই করে মুখ বন্ধ জালাটি নদীতে ফেলে দেন। প্রকৃত অর্থে অবাধ্য হওয়ার কারণে বাদশাহ দৈত্যকে বন্দী করেছিলেন।
প্রশ্ন: দৈত্য কেন জেলেকে মারতে চেয়েছিল?
উত্তর: অবাধ্যতার কারণে বাদশাহ সুলেমান দৈত্যকে তামার জালায় বন্দী করে নদীতে ফেলে দিয়েছিলেন। নদীর তলায় দীর্ঘ সময় দৈত্যের বন্দিজীবন কাটে। একদিন সে শপথ করে, যদি ৪০০ বছরের মধ্যে তাকে কেউ এ বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেয়, তবে সে তার মুক্তিদাতাকে অগাধ ধনরত্ন দিয়ে খুশি কবে। কিন্তু কেউ তাকে মুক্তি দিল না। ৪০০ বছর পর দৈত্য আবার শপথ করে, এবার যে তাকে উদ্ধার করবে, তাকে তিনটি বর দেবে। উদ্ধারকারী যা চাইবে তা-ই সে পাবে। কিন্তু এবারও কেউ তাকে উদ্ধার করতে এল না। এবার তার মেজাজ বিগড়ে যায়। রাগে-দুঃখে-অপমানে শপথ করে, এবার যদি কেউ তাঁকে উদ্ধার করে, তবে সেই হতচ্ছাড়াকে সে কোতল করবে। ভাগ্যের ফেরে গরিব জেলে দৈত্যের শেষ প্রতিজ্ঞার কবলে পড়ে। জেলে দৈত্যকে মুক্ত করলে দৈত্য প্রতিজ্ঞা অনুসারে জেলেকে মারতে চেয়েছিল।
প্রশ্ন: জেলে কেমন করে দৈত্যের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করল?
উত্তর: দৈত্যের কাহিনি শুনে জেলে বুঝতে পারল, আজ আর তার রক্ষা নেই। মরার ভয়ে ভীত হলেও জেলে বুদ্ধি হারাল না। সাহসের সঙ্গে বুদ্ধি খাটিয়ে সে বলল, দৈত্য তার এত বড় শরীরটা নিয়ে জালার মধ্যে ছিল এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। দৈত্যকে দেখে এ কথা কেউ বিশ্বাস করবে না যে এত বড় শরীর নিয়ে এই ছোট্ট জালার মধ্যে সে থাকতে পারে। নিশ্চয় দৈত্য মিথ্যা কথা বলছে। জেলের কথা দৈত্যের অহমিকায় আঘাত করে। সে দাঁত কড়মড় করে মেঘের গর্জন তুলে বলল, দৈত্য যে কখনো মিথ্যা কথা বলে না, জেলে মরার আগেই তা জেনে যাবে। তারপর অহংকারী দৈত্য চোখের পলকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে জালার ভেতর ঢুকে গেল। সঙ্গে সঙ্গে জেলে জালার মুখে ঢাকনা লাগিয়ে আবার জলে ফেলে দিল। এ ভাবেই বুদ্ধি খাটিয়ে কৌশলে জেলে দৈত্যের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করল।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্রপতি হিসাবে ড. ইউনুসের বিকল্প বাংলাদেশে নেই !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৪


রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাহেবের মন ভালো নেই। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে তিনি রীতিমতো কোণঠাসা! শেখ হাসিনা ভারতে প্রস্থানের পূর্বে তাকে জানিয়ে যান নি। শেখ হাসিনা চুপ্পু সাহেবকে উনার দুরবস্থার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×