প্রশ্ন: মানুষ ছাড়া আর কোন কোন প্রাণী গাছপালার ওপর নির্ভরশীল?
উত্তর: গাছপালা শুধু মানুষেরই পরম বন্ধু নয়, অন্যান্য প্রাণীও গাছপালার ওপর নির্ভরশীল। মানুষ ছাড়া আর যারা গাছপালার ওপর নির্ভরশীল তারা হলো গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ইত্যাদি। অর্থাৎ মাংস হিসেবে আমরা যেসব প্রাণিজ খাদ্য খাই, সেসব প্রাণীও খাদ্যের জন্য গাছপালার ওপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন: আসবাবপত্র তৈরিতে সাধারণত কী কী বৃক্ষের কাঠ ব্যবহূত হয়?
উত্তর: আমাদের জীবনে গাছপালার অনেক অবদান রয়েছে। সেই আদিম কাল থেকে ঘরবাড়ি তৈরির কাজে মানুষ গাছপালা ব্যবহার করে আসছে। শুধু তাই নয়, ঘরের আসবাবপত্র তৈরিতেও গাছপালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসবাবপত্র তৈরিতে সাধারণত যেসব বৃক্ষের কাঠ ব্যবহূত হয় সেগুলো হলো মেহগনি, সেগুন, শাল, গর্জন ইত্যাদি।
প্রশ্ন: কয়েকটি ভেষজ উদ্ভিদের নাম লেখো।
উত্তর: ‘ভেষজ’ কথাটির অর্থ হলো ওষুধের গুণসম্পন্ন গাছপালা। উদ্ভিদ জগতে কিছু গাছপালা আছে, যেগুলোকে আমরা ভেষজ উদ্ভিদ বলে থাকি। সেগুলোর লতাপাতা, ছাল কিংবা শেকড় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহূত হয়। যেমন সিঙ্কোনাগাছ ম্যালেরিয়ার ওষুধ কুইনাইন তৈরির কাজে লাগে। এ ছাড়া কালমেঘ, নয়নতারা, আসামলতা, শ্বেতচন্দন ইত্যাদি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ।
প্রশ্ন: কুইনাইন তৈরি হয় কোন গাছ থেকে?
উত্তর: কুইনাইন হলো ম্যালেরিয়া রোগের ওষুধ। এই ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ভেষজ উদ্ভিদ। যে ভেষজ উদ্ভিদ বা গাছ থেকে কুইনাইন তৈরি হয় তার নাম হচ্ছে সিঙ্কোনাগাছ।
প্রশ্ন: চন্দন বৃক্ষ কী জন্য বিখ্যাত?
উত্তর: মানবজীবনে বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। শুধু অক্সিজেন সরবরাহ, খাদ্যের জোগান কিংবা ওষুধ তৈরিতেই নয়; অঙ্গসৌন্দর্য ও সৌরভের জন্যও বৃক্ষ আমাদের কাজে লাগে। চন্দন সে রকমই একটি বৃক্ষ। অঙ্গসৌন্দর্য ও সৌরভের জন্য চন্দন বৃক্ষ বিখ্যাত।
প্রশ্ন: আজকের দিনে পরিবেশ রক্ষার স্লোগান কী?
উত্তর: মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে গাছের জুড়ি নেই। শুধু অক্সিজেন সরবরাহ, খাদ্যের জোগান, ওষুধ তৈরি কিংবা সৌন্দর্য বর্ধনই নয়, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ ও শীতল রাখতেও বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। গাছপালা না থাকলে পরিবেশ উষ্ণ হয়ে উঠত। পৃথিবী হয়ে উঠত মরুভূমি। মানুষের অস্তিত্ব হতো বিপন্ন। তাই আমাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য গাছপালার বিকল্প নেই। আমরা গাছ লাগাব এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়তা করব। এই আন্তরিক লক্ষ্যে আজকের দিনে পরিবেশ রক্ষার স্লোগান হচ্ছে ‘গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান’।
প্রশ্ন: তুলা ও পাট কোন ধরনের গাছ?
উত্তর: প্রকৃতি জগতে অনেক রকমের গাছ রয়েছে। একেক ধরনের গাছ আমাদের একেক কাজে লেগে থাকে। তুলা ও পাট এক বিশেষ ধরনের গাছ। তন্তু বা সুতা উৎপাদনকারী গাছ হিসেবে তুলা ও পাট বহুল পরিচিত
প্রশ্ন: মানুষ ও গাছপালা বাতাস থেকে কী গ্রহণ করে আর কী ত্যাগ করে?
উত্তর: বাতাসে শ্বাস নিতে না পারলে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। বাতাস থেকে মানুষ অক্সিজেন গ্রহণ করে আর নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানুষ কার্বন ডাইঅক্সাইড নামের বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ত্যাগ করে। অন্যদিকে গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে আর বাতাসে অক্সিজেন ছাড়ে বা ত্যাগ করে।
প্রশ্ন: গাছপালা থেকে আমরা কী কী ফল পাই? শরীর রক্ষায় এগুলো আমাদের কীভাবে সহায়তা করে?
উত্তর: গাছপালা নানাভাবে আমাদের কাজে লাগে। অনেকভাবে আমাদের সাহায্য করে। গাছপালা আমাদের নানা রকম খাদ্যের জোগানদার। এসব খাদ্যের মধ্যে খাদ্যশস্য, চিনি, বাদাম, তেল ও শাকসবজি ছাড়াও রয়েছে নানা রকম ফল। গাছপালা থেকে আমরা যেসব ফল পাই, তা হলো—আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, লিচু, আতা, বরই, জামরুল, পেঁপে, সফেদা, আপেল, নাসপাতি, আনারস, আমড়া ইত্যাদি। এসব ফল থেকে আমরা প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পেয়ে থাকি। এগুলো শরীর গঠনে এবং রোগবালাই থেকে শরীর রক্ষায় আমাদের সহায়তা করে।
প্রশ্ন: কোন কোন খাদ্যশস্য আমাদের শরীরের শক্তির প্রধান উৎস? সেগুলো আমরা কী কী খাবার হিসেবে খাই?
উত্তর: গাছপালা আমাদের নানা রকম খাদ্যের জোগানদার। এসব খাদ্যের মধ্যে রয়েছে নানা রকম ফল, শাকসবজি, চিনি, বাদাম, তেল ও খাদ্যশস্য। এর মধ্যে চাল, ডাল, গম, যব ইত্যাদি খাদ্যশস্য আমাদের শরীরে শক্তির প্রধান উৎস। এগুলো আমরা ভাত, রুটি, ছাতু, পাউরুটি, পরোটা, পিঠে, পায়েস ইত্যাদি খাবার হিসেবে খাই।
প্রশ্ন: ঘরবাড়ি তৈরিতে গাছপালা কীভাবে কাজে লাগে?
উত্তর: আমাদের জীবনে গাছপালা অনেক কাজে লাগে। সেই আদিম কাল থেকে ঘরবাড়ি তৈরির কাজে মানুষ গাছপালা ব্যবহার করে আসছে। ঘরের খুঁটি, বেড়া, চাল তৈরিতে একসময় গাছপালার ব্যবহার অপরিহার্য ছিল। বর্তমান সময়েও গৃহ নির্মাণসামগ্রী হিসেবে গাছ তথা গাছ থেকে প্রাপ্ত কাঠ ব্যবহূত হয়।
প্রশ্ন: বসতবাড়ির শোভাবর্ধন করে এবং উদ্যান রচনার কাজে ব্যবহূত হয় এমন কিছু গাছপালার নাম লেখো।
উত্তর: বসতবাড়ির শোভাবর্ধন ও উদ্যান রচনায়ও গাছের জুড়ি নেই। বসতবাড়ির শোভাবর্ধন করে এবং উদ্যান রচনার কাজে ব্যবহূত হয় এমন কিছু গাছ হলো—চন্দ্রমল্লিকা, জিনিয়া, গাঁদা, দোপাটি, করবী, চাঁপা, কাঁঠালি চাঁপা, জবা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জুঁই ইত্যাদি ফুল। এ ছাড়া নানা রকমের অর্কিড ও পাতাবাহারগাছ পরিবেশকে শোভন ও সুন্দর করে।
প্রশ্ন: প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালা কী ভূমিকা পালন করে?
উত্তর: প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বৃক্ষ ও বনভূমি বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ ও শীতল রাখতে সাহায্য করে। যেখানে গাছপালা ও বনভূমি বেশি, সেখানে বেশি বৃষ্টি হয়। এর ফলে ভূমিতে পানির পরিমাণ বাড়ে, চাষাবাদ ও ফসল ভালো হয়। তা ছাড়া গাছপালা মাটির উর্বরা শক্তি বাড়ায়, মাটির ক্ষয়রোধ করে, ঝড়, বৃষ্টি ও বন্যা প্রতিরোধে গাছপালা সহায়তা করে। গাছপালা না থাকলে পরিবেশ উষ্ণ হয়ে উঠত। পৃথিবীও হয়ে উঠত মরুভূমি। মানুষের অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়ত। গাছপালা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করছে বলেই আমরা পৃথিবীতে ভালোভাবে বসবাস করতে পারছি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




