somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি লেখক কাহিনী । (গল্প)

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।

লোকটার চোখে মুখে তীক্ষ্ণ অবয়ব । হাতের মুঠিতে গাছের চিকন ডালের চোখা কঞ্চি । পানি স্থির হয়ে আছে, স্বচ্ছতার কারণে পানির নিচের মাটিও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে । লোকটা পানির মধ্যে ধারালো কঞ্চিটা স্থির করে ধরে আছে । তার মধ্যে কোন নড়াচড়া নেই । শুধু চোখের রাজা দুটো এদিক ওদিক নড়ছে মাছটার সাথে । মাছটা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে, আবার মাঝে মাঝে থামছে । দেখে একদমই মনে হচ্ছে না সে ফাঁদ টের পেয়েছে । মাছটা একটু থেমেছে অমনি লোকটা তার ধারালো কঞ্চিটা ছুড়ে মারলো । তার মুখের বাঁকা হাসি বলছে উদ্দেশ্য সফল । কিন্তু কঞ্চিটা উঠানোর পর দেখা গেল একটা সাপ গেঁথে আছে । মাছের নিচ দিয়ে হয়তো সাপটা যাচ্ছিলো । সাপটার পেট ফুটো করে কঞ্চির ধারালো অংশ অন্য পাশে বেরিয়ে গেছে । সাপটা শরীরকে শুধু বাঁকাচ্ছে কঞ্চি থেকে ছোটার জন্য । কিন্তু লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে আশ্চর্য হয়েছে বরং মনে হচ্ছে সে সাপটাকেই শিকার করার জন্য ফাঁদ পেতেছিলো । সে হাস্যজ্জল মুখে সাপসহ কঞ্চিটা নিয়ে পানি থেকে উঠে আসলো । সাপের লেজটা ধরে একটানে কঞ্চি থেকে খুলে গাছের সাথে কয়েকটা বাড়ি মারলো । সাপের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত করে মাথাটা দাঁত দিয়ে কামড়ে ফেলে দিলো । যেখানে ফেলেছে সেখানে সাপের আরো শুকনো মাথা পড়ে আছে । মাথাবিহীন সাপটাকে লম্বালম্বিভাবে গাছের কঞ্চির সাথে গেঁথে কাবাবের মত ঝুলিয়ে দিলো । এবার সে পাথর ঘষে আগুন ধরিয়ে দিলো সাপের নিচে জমানো খড়কুটোয় ।

লোকটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসলো । সাপটা আগুনের তাপে সেদ্ধ হচ্ছে । লোকটা সাপ থেকে চোখ সরিয়ে আরো সামনে তাকালো । সেখানে তিনটা কবর আছে । সে কবরগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে । কবরগুলোর মাথার পাশে কঞ্চি গাঁথা এবং সেগুলোর মাথায় বাঁধা গাছের ছোট ছাল । ছালগুলোতে আঁচড় দিয়ে লেখা তাদের পরিচয়। এ সুদীর্ঘ বনের গহীনে এই তিনটি কবর নিয়ে লোকটা বসবাস করছে । তার থাকার জায়গাটা একটা বড় চওড়া টিলার মত । তার চারপাশে বিলে ঘেরা । শুধু একপাশে সরু একটা রাস্তা মত আছে পারাপারের জন্য । টিলার কিছুটা মাঝখানে একটা বিশাল মোটা গাছ । তার শাখা-প্রশাখা গুলোও একেকটা হৃষ্টপুষ্ট গাছের মত । গাছটাকে দেখে ঠিক আন্দাজ করা যাচ্ছে না কী গাছ তবে বোঝা যায় বেশ পুরনো- বহুকালের সাক্ষী । লোকটা গাছটির তৃ-ঢালের মাঝখানে থাকে । জায়গাটা চওড়ায় বেশ বড়সড়ই । লোকটা পাতা লতা দিয়ে সেখানে খুপরি বানিয়েছে । তবে সে শুধু রাতের বেলায়ই সেখানে ওঠে আর সারাদিন গাছের নিচে হেলান দিয়ে কাটায় ।

সাপটাকে দেখে মনে হচ্ছে খাওয়ার জন্য যথেষ্ট সেদ্ধ হয়েছে । লোকটা হাত দিয়ে টিপে টিপে দেখছে । সে কাঠিটা হাতে নিয়ে অল্প অল্প করে মাংস ছাড়িয়ে খাচ্ছে । লোকটার খাওয়া দেখে মনে হচ্ছে সাপসেদ্ধ খুব সুস্বাদু হয়েছে । নারিকেলের মালায় রাখা পানিতে চুমুক দিচ্ছে একটু পর পর । সন্ধ্যার সময় না হলেও সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে । কারণ এখান থেকে সূর্য ডুবতে দেখা যায় না । খাওয়া শেষে লোকটা ঢেকুর তুলছে । সে আয়েশিভাবে গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসেছে । চিকন শলা দিয়ে দাঁত খোঁচাচ্ছে যদিও দাঁত বেশকটিই নেই । সে কবরগুলোর দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । এ সময়টায় তাকে খুব বিষণ্ণ দেখায়, গভীরভাবে কী যেন চিন্তা করে । চারপাশের গাছপালাগুলো বাতাসে নড়ছে । হঠাৎ কোথা থেকে যেন একদল দমকা হাওয়া বয়ে গেল কবরগুলোর উপর দিয়ে । লোকটা একটা পাতা গোল করে নিয়ে অদ্ভুত সুরে বাঁশি বাজানো শুরু করলো । সে বাঁশির সুর যেন বাতাস বয়ে নিয়ে যাচ্ছে বহুদূর পর্যন্ত । কবরের সাথে থাকা নাম পরিচয়ের ছালগুলো মৃদু নড়ছে । হঠাৎ কবর থেকে যেন ধোঁয়া অবয়বের তিনটি শরীর উঠে এলো । লোকটা খুব দ্রুত আগুনে আধেক পোড়া গাছের ডালটা নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় । শরীরগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে তারা লোকটাকে আক্রমণ করতে আসছে । লোকটা পাগলের মত ডালটা চারপাশে ঘোরানো শুরু করে । তাই শরীরগুলো তার আশেপাশে লম্বালম্বি হয়ে ঘিরে আছে । সেগুলো লোকটাকে স্পর্শ করতে পারছে না । কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর লোকটা থেমে যায় । ধোঁয়ার শরীরগুলো মিলিয়ে যায় । চারপাশ নীরব হয়ে যায়, খুব নীরব, যেন এক ফোঁটা জলও নড়ছে না । প্রতিদিন ঠিক এ সময়টায় এরকম ঘটে আর লোকটাও মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকে ।

চাঁদের আলোয় এই গহীন বনকে যেন আরও গহীন লাগছে। মনে হচ্ছে এটা পৃথিবীর কোন বন নয় । কিন্তু কোথায় তার অবস্থান, তাও বলা দূরহ । এখানে চাঁদ ফোটে দু’টো, একটা আকাশে, একটা স্বচ্ছ পানির বিলে । পানিতে ভেজা চাঁদটা যেন আরও উজ্জ্বল এবং আরও বড়ো । আরও স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে, রাতের পরিচয়হীন মেঘগুলো কীভাবে চাঁদের বুক বিদ্ধ করছে, যেন চাঁদটা মেঘের আড়ালে দিশেহারা দৌঁড়াচ্ছে । দু’টি চাঁদের সম্মিলিত জ্যোৎস্নায় অরণ্য মেখেছে ঝিকিমিকি, জলগুলোয় ধরেছে আগুন, বৃক্ষের পাতার ছোট ছোট ফাঁকাগুলো দিয়ে আসমান থেকে মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে হাজারো তারা, যেন অরণ্য জুড়ে চাষ হয়েছে তারার । চারপাশে জোনাকের উন্মাদ ছড়াছড়ি, কিছু এদিক- কিছু ওদিক, আর কিছু ডালে ডালে বসে আছে যেন বৃক্ষ ফলের বদলে তারা দিয়েছে । এই তারা বনের সাথে সুর মিলিয়ে পরিচয়হীন পোকামাকড়্গুলো গান-বাজনা করে যাচ্ছে । এই অজানা পোকামাকড়গুলো শুধু রাতে জেগে ওঠে, আর এমন নিয়ম কোরে নরম মৌহনীয় সুর তোলে যেন এ তাদের চাকরি । মাঝে মাঝে কিছু শীতল বাতাস গাছের পাতাগুলোয় ঝনঝন ঝঙ্কার তুলছে ।

লোকটার হাতে চিকন কাঠি আর একটা পাতা । কাঠিটা দিয়ে সে খুব মনোযোগে কী যেন লিখছে পাতার মধ্যে । আবার রেখার মত টেনে টেনে অগোছালো আঁকিবুঁকিও করছে ।লেখা এবং আঁকাআঁকির পাতাগুলোর কিছু জলে ভাসিয়ে দিচ্ছে আর কিছু নিয়ে গাছের সাথে কাঠি দিয়ে গেঁথে দিচ্ছে । গাছের সাথে গাঁথানো পাতা আরও অনেক আছে- কিছু তাজা, কিছু আধা শুকনো আবার কিছু শুকনো মরমর । হঠাৎ কোথা থেকে একপাল শেয়ালের ডাক ভেসে আসলো । এ গহীন অরণ্যে শেয়াল থাকার কথা নয় । এখানে প্রাণী বাস করে না, বাস করে পোকামাকড়, সাপ, বিচ্ছু, ব্যাঙ, কাঁকড়া এসব । হয়তো জঙ্গলের কিনার থেকে আসছে, লোকালয়ের কাছাকাছি থেকে । রাতে বহুদূরের আওয়াজও প্রাণ পায় কোন গহীনে । লোকটা শেয়ালের আওয়াজে কান পেতে আছে, আর ঠোঁটের কোণে খুব সুখী একটা বিরহী হাসি ভেসে উঠেছে । সে হাতের পাতাটাকে গোল করে সেই বিরহী সুর বাজানো শুরু করে । চাঁদটা পশ্চিম কোণে হেলতে হেলতে গাছের আড়ালে লুকিয়ে যাচ্ছে । বিরহী বাঁশির সুরে তাল মিলিয়ে চাঁদ আড়াল হতে হতে রাত ক্রমশ কালো হতে শুরু করেছে, জোনাকেরা যেন পাচ্ছে জ্যোৎস্না স্বাদ । লোকটার বাঁশির আওয়াজ আস্তে আস্তে থেমে যাচ্ছে , তার চোখ ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসছে । কবরগুলোর পরিচয়ের ছালগুলো মৃদু বাতাসে আলতো দোল খাচ্ছে । রাত ঘুমিয়ে পড়লো সকল আধাঁরকে বুকে নিয়ে ।

গভীর রাতে একদল ঘোড়া সওয়ারী এসে টিলার চারপাশ ঘিরে ফেললো । সওয়ারীগুলো অদ্ভুত আকৃতির মানুষ । দেখতে কিছুটা মানুষের আবার কিছুটা অন্যকিছুর মনে হয় । পুরোটা মানুষের অবয়বে আসে না, আবার মানুষের মতই। তারা সবাই মশাল হাতে এসেছে । মশালগুলো যেন জ্বলছে না, আগুন আলতোভাবে লেগে আছে লাঠির গায়ে । সবার সারিবদ্ধের ভেতর থেকে একজনকে ঘোড়া নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে । তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে দলনেতা । তার শরীরীয় গঠনটাও অন্যদের থেকে আলাদা, বেশ সুউচ্চ । সে কিছুক্ষণ পরপর হুংকার ছাড়ছে । যার আওয়াজ পুরো জঙ্গল কাঁপিয়ে দিচ্ছে । অন্যরাও তার হুংকারের সাথে সুর মেলাচ্ছে । সুরে সুরে কিছু আঁকাবাঁকা তাল হচ্ছে । গাছের তৃ-ঢালে শুয়ে থাকা লোকটা হুড়মুড়িয়ে ওঠে । সে ভয়ে খুব কাঁপছে । তার খুব শীত করছে আবার ঘামছেও । সে কাঁপা শরীরে গাছ থেকে নেমে দলপতির সামনে হাতজোড় করতে থাকে কবরগুলোকে ধ্বংস না করার জন্য । কিন্তু দলপতি তাতে সামান্য কর্ণপাতও করছে না। তার অনুসারীরা চারপাশে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে । কবরগুলোর দিকেও আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে । লোকটা কবরগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে পাগলের মত লাফালাফি করতে থাকে । সে আগুন নেবানোর চেষ্টা করছে । কিন্তু আগুন নিভছে না । আগুন তাকেও যেন পুড়িয়ে দিচ্ছে । লোকটার ঘুম ভেঙ্গে যায়, সে লাফিয়ে ওঠে । সে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে সব ঠিক আছে । গোমট অন্ধকার । সে খুব ঘেমে গেছে । সে স্বপ্ন দেখছিল । এ রকম স্বপ্ন লোকটা আগেও অনেক দেখেছে । ঘোড়ায় সাওয়ার অদ্ভুত লোকগুলো হয়তো এ বনের অদৃশ্য ধারক । তারা হয়তো চায় না তাদের রাজ্যে কোন কবর থাকুক, কিংবা লোকটার বসবাস । তাই তারা স্বপ্নে তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ।

প্রায় ভোর হয়ে এসেছে । লোকটা ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে গাছ থেকে নামলো । সোজা সে বিলের স্বচ্ছ পানিতে নেমে গেলো । কিছুক্ষণ ডুব দিয়ে থাকলো । এরপর আরও কিছু ডুব দিলো । আবার বিল থেকে সোজা উঠে এলো । লোকটার শরীরে ছেঁড়াফাটা কিছু কাপড় লজ্জাস্থান জড়িয়ে আছে । সেগুলো খুলে সে উলঙ্গ হয়ে গেলো । কাপড়গুলো চিবিয়ে শুকাতে দিল । তার শরীর মুটিয়ে গেছে, মাংসে মাংসে ভাঁজ পড়েছে , মুখের দুপাশ ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গেছে, হাত পায়ের বেশিরভাগ নখ মরে কালো হয়ে আছে, মুখের মোচড়ানো চামড়ার মধ্যে চোখ দুটো লুকিয়ে আছে, মাথার পেঁছনে শুধু কিছু চুল বড় বড় হয়ে আছে, সামনে কোন চুল নেই, মুখের কোন দাড়ি গোঁফ অবশিষ্ট নেই । তবে লোকটাকে দেখে বোঝা যায় কোন লোকালয় থেকে এসেছে । কারণ ছেঁড়াফাটা কাপড়গুলো- একটি জিন্স প্যান্ট আর ফতুয়ার কিছু অংশ । এসব কাপড় এমন গহীনে আসার কথা নয় ।

২।

- এই চলো না, শাহেদকে একটু দেখে আসি, বেচারা কেমন আছে কে জানে ।

আসফাককে বলছে তার স্ত্রী সোহানা । কিছুদিন হলো আসফাকের বন্ধু শাহেদের প্রথম বাচ্চাটা মায়ের পেটেই মারা গেছে । তার স্ত্রী খুব ভেঙ্গে পড়ে । তাই শাহেদ তাকে কিছুদিন হলো বাপের বাড়ি রেখে এসেছে । সে এখন বাসায় একা । আসফাক আর সোহানা বাসায় ফিরছে আসফাকের নতুন একটা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে । আসার পথেই পড়ে শাহেদের বাসা । যদিও অনেক রাত হয়েছে তারপরও বেচারা শাহেদকে একটু দেখে যাওয়ার জন্য বলছে সোহানা ।

- আসফাক কিছুক্ষণ নয় ছয় করে বলল, ঠিক আছে চলো ।

আসফাক আর শাহেদ ছোটকালের বন্ধু । একসময় তারা খুব কাছের বন্ধু ছিল । কিন্তু এখন শুধু কাছের বন্ধুর ভান করে থাকে । তার যথেষ্ট কারণও আছে । সেই স্কুল লাইফ থেকেই আসফাক আর শাহেদের লেখলেখির ব্যাপক নেশা ছিল । তারা বিভিন্ন প্রতিযোগমূলক আয়োজনে অংশগ্রহণ করে অনেক পুরষ্কারও জিতেছে । কিন্তু আসফাক একটু বেশি এগিয়ে ছিল । সে সবসময় বিপুল প্রশংসার সাথে প্রথম প্রাইজ পেত । আর শাহেদ পেত সান্তনা পুরষ্কার । আসফাকের লেখার হাত খুব ভাল । শাহেদের অবশ্য এতে তেমন মন খারাপ হতো না । সে সবসময় বন্ধুর সঙ্গ দিয়ে যেত । দু’জনই এভাবেই শখের বশে লেখালেখি করতে করতে স্কুল, কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে গেল । তখন শাহেদ ইচ্ছাপোষণ করলো সে বই বের করতে চায় । তার ছোটকাল থেকেই মনের গহীনের স্বপ্ন ছিল সে লেখক হবে । তাকে দেশবাসী বাহ বাহ দিবে । সে আসফাককেও বললো, চল দু”জনে একসাথে বই বের করি । কিন্তু আসফাক রাজি হয় না । আসফাক বলে, তোর ইচ্ছে যেহেতো তুই বই বের কর, আমিও তোকে সাহায্য করবো । তার নেশা লেখালেখি হলেও সে লেখক হতে চায় না । সে শুধু নিজের মনের আনন্দের জন্য লেখে । তার বিশাল একটা পাণ্ডলিপি আছে । সেখানে অনেক গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, গবেষণা লিপিবদ্ধ । সে দিনদিন লিখছে আর পাণ্ডলিপিটাও দিনদিন ফুলেফেঁপে বড় হচ্ছে । সে তার এই পাণ্ডলিপিটা কাউকে পড়তে দেয় না এমন কী শাহেদকেও । সেখানে সম্পূর্ণ তার নিজস্ব জগত । শাহেদের শত চাপাচাপিতেও তাই আসফাক রাজি হয়নি তার নিজস্ব জগতকে বিলিয়ে দিতে ।

একদিন হঠাৎ আসফাক তার পাণ্ডলিপিটা খুঁজে পায় না । সে পাগলের মত খুঁজতে থাকে । কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না । বাসার সবাইকে জিজ্ঞেস করলো, তারা বলল দেখেনি । কিন্তু এই পাণ্ডলিপিটা তো সে বাসা থেকেও বের করে না । তাহলে বাসা ছাড়া আর কোথায় যাবে ? আসফাক তার বোনকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলে, আম্মা গতকাল পুরনো কাগজপত্র বিক্রি করেছে তার সাথে ছিল কিনা কে জানে । আসফাক মাকে জিজ্ঞেস করে পাণ্ডলিপিটা ছিল কিনা । মা বলে, জানি না ছিল কিনা, এখান থেকে যা তো এখন, বিরক্ত করিস না, কী সব ছাতার পাণ্ডলিপি, এসব নিয়ে মাথা খেয়ে ফেলল । আসফাক মায়ের উত্তর পেয়ে রান্নাঘর থেকে চলে আসে । সে পেপারওয়ালার খোঁজ নিয়ে তার দোকানে যায় । সেখানও পেল না । সে শাহেদকেও জিজ্ঞেস করে, সেও বলল সে জানে না । আসফাক এতো খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে সে খুব বিষণ্ণ হয়ে পড়ে । শাহেদ বন্ধুর পাশে দাঁড়ায় । সে সকাল বিকাল আসফাকের পাশে থাকে, তাকে সান্তনা দেয়, তাকে আরেকটা লেখার কথা বলে, এতে তোর হয়তো কষ্ট কমবে। কিন্তু আসফাক তার প্রথম প্রেম হারিয়ে খুব ভেঙ্গে পড়ে । এভাবে কয়েকমাস কেটে যায় । বইমেলাও খুব কাছাকাছি । শাহেদ তার বই বের করার পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে । যদিও সে জানে তার বইয়ের পাণ্ডলিপিটা আসফাক পড়বে না তবুও সে অনুরোধ করে তার পাণ্ডলিপিটা একটু পড়ে দেয়ার জন্য । কিন্তু তার মনের অবস্তা এতো খারাপ যে সে শাহেদের পাণ্ডলিপিটা ধরেও দেখতে চাইলো না ।

শাহেদ যথাসময়ে তার বই বের করে ফেললো । তার বইতে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা বেশি পরিমানে থাকে তাই সাধারণ মানুষের মনে তার লেখা তেমন একটা ভাল লাগে না । কিন্তু এবারের বইমেলার বই সকল স্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেল । সর্বোমোট ১০টা গল্প ছিলো । প্রতিটিই মানুষের মন ছুঁয়ে গেল । নবীন লেখক হিসেবে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি আয় করলো তার বই । শাহেদ পেল ‘রাইটার্স অফ দ্যা ইয়ার’ পুরষ্কার । এভাবে আরও কয়েক মাস চলে গেল । শাহেদ এখন আর আসফাকের বাসায় আসে না । তার সাথে দেখাও করে না । সে এখন বড় লেখক । তার সময় হয় না । আসফাক অবশ্য এতে আফসুস করে না । সে আরও খুশি হয় শাহেদ বড় একজন লেখক হয়েছে । তার মন আস্তে আস্তে ভাল হতে থাকে । সে তখন ভাবে শাহেদের বইটা একটু পড়ে দেখা দরকার । বেচারার সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়েও তার বইটা পড়ে তাকে একটু স্বাগতমও জানায় নি । বেচারা নিশ্চয় মনে খুব কষ্ট পেয়েছে । তাই হয়তো তার সাথে যোগাযোগ করছে না ।আসফাক তাই ভেবে নিজেকে খুব অপরাধী মনে করছে । আসফাক ফোন দেয় শাহেদকে । কিন্তু ফোন বন্ধ । সে তার মেসে যায় কিন্তু সেখানেও পেল না । সে নাকি মেস ছেড়ে দিয়েছে । আসফাক বাসায় ফেরার সময় একটা লাইব্রেরীতে ঢোকে । সে শাহেদের বইটা কিনে বাসায় ফিরে । সে বইটা রেখে দেয় রাতে পড়ার জন্য ।

- ভাইয়া ভাইয়া !! শাহেদ ভাইয়াকে টিভিতে দেখাচ্ছে । আসফাকের ছোট বোন নিশু চিৎকার করতে করতে বলে ।

আসফাক টিভির কাছে আসে । সে দেখে শাহেদের ভাব-গাম্ভীর্যে ব্যাপক পরিবর্তন । সম্পূর্ণ নতুন লাগছে তাকে এবং দেখতে বড় মাপের লেখকই মনে হচ্ছে । আসফাকের চোখে পানি চলে আসে শাহেদের সাফল্য দেখে । সে খুবই খুশি হয় । টিভিতে অনুষ্ঠানটা লাইভ দেখাচ্ছে । দর্শকরা ফোন করে প্রিয় লেখকের সাথে কথা বলতে পারবে । অনেক ফোন আসছে । ভক্তরা তাদের হৃদয়ের উচ্ছাস প্রকাশ করছে তাদের প্রিয় লেখকের সাথে । আসফাক বললো নিশুকে নাম্বারটায় ফোন দিতে । নিশু বার বার ট্রাই করেও রিচ করতে পারছে না । আসফাক এবার নিজে ট্রাই করলো । কয়েকবার ট্রাই করে রিচ করলো । ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে টিভিতে আসফাকের ভাঙ্গা গলা শোনা গেল । সে আবেগে কথাও বলতে পারছে না । সে শাহেদের কাছে ক্ষমা চাইতে চাচ্ছে । আর জানাতে চাচ্ছে সে আজ তার বইটা নিয়েছে । আসফাকের গলা শুনে শাহেদের চেহারা কেমন যেন হয়ে গেল । সে অপরিচিতদের মত আচরণ করতে লাগলো । পরে উপস্থাপক কলটা কেটে দিলো । আসফাক মনে খুব কষ্ট পেল । কিন্তু তারপরও ভাবছে এ তার প্রাপ্য ।

শাহেদের বইটা আসফাক পড়তে বসে । সে প্রতি পাতা উল্টায় আর তার মাথা ঘুরতে থাকে । সব গল্প তার পাণ্ডলিপির । শাহেদই তার পাণ্ডলিপিটা চুরি করে নিয়ে যায় । আসফাক কিছুক্ষণের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে । তার মাথা এলোমেলো হয়ে যায় । সে বইটা কয়েকবার আছাড় মারে । তারপর হাত দিয়ে, মুখ দিয়ে বইটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে । সে টুকরো করেও শান্ত হলো না । টুকরোগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় । আসফাক সে রাতে ঘুমাতে পারে নি । তাকে কিছু দুঃস্বপ্ন ঘুমাতে দেয়নি ।

এরপর দৃশ্যপট পাল্টে যায় । আসফাক অনিশ্চা স্বত্বেও লেখকের খাতায় নাম লেখায় ।কিন্তু প্রথম বছর আসফাক ফ্লপ খায় । কারণ শাহেদ তারই পাণ্ডলিপির লেখাগুলো ছাড়তে থাকে । আর আসফাক হয় তার নিজের লেখারই প্রতিদ্বন্দ্বী । আসফাক খুব আশ্চর্য হয় শাহেদের মুখে একটুও অপরাধবোধের চাপ দেখে না সে । শাহেদ অবলীলায় তার লেখা নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, পেপার কিংবা অনলাইনে, সব জায়গায় ।

আসফাকের সেই পাণ্ডলিপি চুরি হয়ে গেলেও তার মনে পাণ্ডলিপির অনেক লেখাই এখনো গচ্ছিত আছে। একটু মনে করার চেষ্টা করলেই সে আবার লিখতে পারবে । প্রথম প্রেম কেউ ভুলে না ঠিক তেমনি আসফাকও ভুলেনি । সেই বছরই সে তার হারানো পাণ্ডলিপির বাকি সব লেখার থিমগুলো দিয়ে নতুন করে লেখা শুরু করে এবং সে বছর বইমেলার আগেই নিজস্ব টাকায় মার্কেটে হার্ডকপি ছেড়ে দেয় । তার উদ্দেশ্য বইয়ের বিক্রি নয়, তার উদ্দেশ্য চুরি হওয়া পাণ্ডলিপিটা চিরতরে ধ্বংস করে দেয়া । শাহেদ স্বপ্নেও ভাবেনি আসফাক এমন একটা কাজ করবে । পরের বছর বইমেলায় আসফাক আবারও বই বের করে । শাহেদও তার নিজের লেখা দিয়ে বই বের করে লেখক মূর্তি ধরে রাখার জন্য । কিন্তু শাহেদ ব্যাপকভাবে ফ্লপ খায় । তার ভক্তরা খুব হতাশ হয় তার এই বস্তাপঁচা বই পেয়ে । এদিকে নিয়মিত পত্রিকা, অনলাইনে লেখালেখি করে, বইমেলায় বই বের করে অল্প কয়েক বছরেই আসফাক হয়ে যায় বিখ্যাত লেখক । আর শাহেদ আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে । সে এরপরে আর কোন বই বের করেনি । সে আস্তে আস্তে করে মানুষের আলোচনা থেকে আড়ালে চলে যায় ।

হঠাৎ একদিন শাহেদ আসে আসফাকের বাসায় । আসফাকের কাছে সে ক্ষমা চায় । সে বলে, আমি তোর পাণ্ডলিপিটা চুরি করতে চাইনি । তোকে যখন বই বের করতে রাজি করাতে পারিনি তখন ভেবেছিলাম তোর পাণ্ডলিপিটা নিয়ে গিয়ে আমি তোকে হুমকি দেবো বই বের করার জন্য । কিন্তু তোর পাণ্ডলিপিটা পড়ে আমি এতোই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে আমার মনে খুব লোভ তৈরি হলো । আমার ইচ্ছে হলো তোর লেখা দিয়ে বই বের করতে । আমি লোভ থেকে নিজেকে অনেক সামলানোর চেষ্টা করেছি এমন কী বইয়ের লেখাটা ছাপানোর আগে তোকে পড়ে দিতেও বলেছি শুধু নিজেকে সংবরণের জন্য । কিন্তু তুই তো পড়িস নি । এরপরের সব তো তুই জানিস । সেই লোভ আমাকে জনপ্রিয়তার নেশায় ডুবিয়ে সব ভুলিয়ে দিল । শাহেদ এও বলে তুই চাইলে আমি জনসম্মুখে মাপ চাইবো আমার ভুলের জন্য । আসফাক এতক্ষণ কিছু বললো না । শহেদ যখন হতাশ হয়ে চলে যাচ্ছে আসফাক তাকে ডাকলো । সে বললো, ঠিক আছে তোকে ক্ষমা করে দিলাম । তোর শাস্তি তুই পেয়ে গিয়েছিস ।এরপর থেকে দুইজন আগের মত বন্ধু হতে না পারলেও কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করতে লাগলো ।

সোহানা কলিং বেল চাপ দিল । আরও কয়েকবার দিল । শাহেদ এসে দরজা খুললো,

- কিরে আসফাক, ভাবি, হঠাৎ আমার বাসায় !!

- তোমাকে দেখতে আসলাম । সোহানা বললো ।

- কিরে আসফাক কেমন আছিস ? শাহেদ জিজ্ঞেস করে

- এইতো আছি । তুই কেমন আছিস ?

- আরে বাসায় ঢুক । আমি তো ভুলেই গেছি তোরা দাঁড়িয়ে আছিস । আমার মাথা পুরাই গেছেরে ।

আসফাক, সোহানা ভেতরে বসলো । শাহেদ তড়িগড়ি করে রান্নাঘরে গেলো । তার একটা বদ অভ্যাস আছে । তার বাসায় যেই আসুক তাকে এককাপ চা পান করাবেই । সে পান করতে চাক কিংবা না চাক । সে চা দিয়েই তারপর কথা শুরু করবে ।

- শাহেদ তোর নতুন বানানো লাইব্রেরীটা কোন দিকে ? আসফাক বললো ।
- ড্রইং রুমের কর্ণারে যে পর্দাটা টানানো আছে সেটা দিয়ে গেলেই আমার লাইব্রেরী । শাহেদ রান্নাঘর থেকে জবাব দেয় ।

আসফাক ভেতরে গেলো । সে দেখলো বিশাল অবস্তা । তাকে তাকে অনেক বই খুব সুন্দর করে সাজানো । হঠাৎ আয়নার একটা শেলফে তার চোখ গেলো । সেখানে গিয়ে দেখে শাহেদের প্রথম দুই বইয়ের সেরা লেখকের পুরষ্কার সাজানো । আসফাক আয়নায় হাত দিয়ে দেখে । তার চোখ ঝলঝল করে ওঠে । সে লাইব্রেরীতে কিছুক্ষণ হাঁটাহুটা করে বেরিয়ে যায় । সে রান্নঘরের দিকে যায় শাহেদের চা বানানো দেখতে । সে দেখছে শাহেদ খুব মনোযোগে চা বানাচ্ছে । শাহেদের বানান চা খুব টেস্ট হয় । তার চায়ের মত স্বাদ আসফাক আর কোথাও পায়নি । আসফাক জিজ্ঞেস করে ,

- আচ্ছা শাহেদ, তুই এতো ভাল চা কীভাবে বানাস ? আমাকে একটু শিখিয়ে দেয় ।
- হা হা, এতে শেখানোর কিছু নেই । তুই যখন চা বানাবি তখন মনে মনে শুধু ভাববি চা টা খুব টেস্ট হচ্ছে । তাহলেই দেখবি চা ভাল হয়ে গেছে ।

আসফাক আস্তে আস্তে রেক থেকে সালাদ কাটা ছুরিটা হাতে নিয়েই শাহেদের পিঠে বসিয়ে দেয় । এবং অনবরত আঘাত করতে করতে খুব চিৎকার করে বলে, বল কার থেকে এই চা বানানো কপি করছস ,বল শালা, বল... আসফাকের চোখ সম্পূর্ণ লাল হয়ে যায় । তার চেপে রাখা সকল ক্ষোভ যেন এখনি চোখ দিয়ে বেয়ে পড়ছে । শাহেদ ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে । চিৎকারের শব্দ শুনে সোহানা দৌঁড়ে আসে । সে দেখে শাহেদ ফ্লোরে লেপ্টে আছে আর আসফাক ছুরি দিয়ে এখনো শাহেদের পিঠে ক্রমাগত আঘাত করছে আর কাঁদছে । সোহানা চিৎকার দিয়ে ওঠে । আসফাক সোহানার দিকে তাকায় । সে ছুরি নিয়ে সোহানার দিকে এগিয়ে যায়, সোহানা দৌঁড়ানোর আগেই আসফাক ছুরি কষিয়ে দেয় তার গলায় । গলা দিয়ে চিত চিত রক্ত বের হতে থাকে । আসফাক তার মাথাটাকে শাহেদের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বলে, দেখ তোর প্রেমিককে, ভালো করে দেখ, আমি তাকে মেরে ফেলেছি, আরে দেখ দেখ ভালো করে দেখ ...

আসফাক ছুরিটা ফেলে দিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে । তার চোখ নিষ্ফলক তাকিয়ে আছে সোহানা আর শাহেদের দিকে । তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট দু’জনকে সে নিজ হাতে খুন করেছে । প্রায় দুই ঘন্টা এভাবে কেটে যায় । তারপর আসফাকের হুঁশ ফেরে । সে ভেবে পাচ্ছে না এই লাশ দু’টো কী করবে । তার মাথায় এখন কোন কিছুই কাজ করছে না । তবুও সে দু’টো বস্তা বের করে ।সেগুলোতে লাশগুলো ভরে । বস্তা দু’টো টেনে টেনে তার গাড়ির পেঁছনের বাক্সে ঢুকায় । সে গাড়ি নিয়ে চলে যায় রেল লাইনের ধারে । রাত এখন প্রায় তিনটা বাজে । সে লাশের বস্তাগুলো বের করে টেনে হিঁছড়ে নিয়ে যাচ্ছে রেললাইনে শুইয়ে দিতে । যেন সবাই ভাবে রেলে কাটা পড়েছে । তার বোকা বিকৃত মস্তিষ্ক তাই চিন্তা করে । সে বস্তা থেকে লাশগুলো বের করে রেল লাইনে শোয়াচ্ছে । এমন সময় কিছুদূর থেকে বাঁশির আওয়াজ শোনা যায় । আসফাক আঁতকে ওঠে । সে দেখে রেললাইনের একজন নাইটগার্ড এদিকে আসছে। নাইটগার্ড কাছে এসে যখন দেখে লাশগুলো তখন লুকিয়ে থাকা আসফাক পেঁছন থেকে নাইটগার্ডের মাথায় সজোরে বাড়ি দেয় । নাইটগার্ড ততক্ষনাৎ লুটিয়ে পড়ে । আসফাক পাথরটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নিজের মাথার চুল মোচড়াতে থাকে । তার মাথা আরও বিকৃত হতে শুরু করে । সে যেন এ জগতে নেই । সে লাশগুলোকে টেনে নিয়ে রেললাইনের পাশের গহীন জঙ্গলে ঢুকে যায় । সে এভাবে লাশগুলোকে টেনে নিতে নিতে এমন গহীনে চলে যায় যে সেখান থেকে সে আর ফিরে আসতে পারেনি ।

৩।

- তো মিঃ প্রকাশক , গল্পটা কেমন লাগলো ? ভাবছি আগামী বইমেলার বইয়ে এই গল্পটা প্রথমে থাকবে ।

- আপনার লেখা বিচার করার ক্ষমতা কী আমার আছে !! আপনার লেখা মানেই তো অসাধারণ ।

- কী যে বলেন, আমি তেমন ভালো লিখি না আপনারা একটু বাড়িয়েই বলেন ।

- হা হা, জুয়েল সাহেব, আমরা কেন পুরো দেশই তো বলছে ! আপনি এই অল্প সময়ে যেভাবে মানুষের মন জয় করেছেন আজ যদি প্রখ্যাত লেখক শেখর সাহেব এভাবে হঠাৎ করে হারিয়ে না যেতেন তাহলে আপনি উনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতেন ।

- এবার একটু বেশি বললেন ।

- বেশি বললে বলেছি, কিন্তু পাণ্ডলিপিটা আমার তাড়াতাড়ি চাই ।

- তাড়াহুড়ো করে তো লেখালেখি হয় না ভাই ।

- আচ্ছা ঠিক আছে যখন শেষ হবে তখনই আমাকে দিয়েন ।

- ওকে ঠিক আছে । আপনি তাহলে এখন উঠছেন ? সন্ধ্যা তো প্রায় হয়ে আসলো ।

- কী যে বলেন, আমি তো ভাবছি এখন দুই কাপ চা বানাবো !! আর এখনই তো সুন্দর সময় চা খাওয়ার । তা ছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলাপ আছে । চা খেতে খেতেই বলবো । কী বলেন ? হা হা...

- সরি প্রকাশক সাহেব, বাসায় চা পাতা, চিনি কিছুই নেই ।

- ওকে, সমস্যা নেই । তাহলে গুরুত্বপূর্ণ আলাপটাই সারী ।

- না, এখন না, আগামীকাল সারবো । আপনি এখন আসেন । আমার ভাল লাগছে না । জুয়েল সাহেব প্রকাশককে প্রায় জোর করেই যেন বের করে দিল ।

জুয়েল সাহেবের হঠাৎ কী হলো ? তিনি এমন করলেন কেন ? প্রকাশক ভাবতে ভাবতে চলে যায় ।

জুয়েল সাহেব দরজা বন্ধ করেই দৌঁড়ে রান্না ঘরে যান । চুলোয় থাকা আধা পোড়ানো কাঠটা হাতে নিয়ে তিনি বের হয়ে আসেন । তিনি বারান্দায় যান । সেখানে পাগলের মত কাঠটা চারপাশে ঘোরাতে থাকেন । ধোঁয়াগুলো তার চারপাশে টেনে টেনে ঘুরছে কিন্তু তাকে স্পর্শ করতে পারছে না.......
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:১২
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঘরে ফেরার টান

লিখেছেন স্প্যানকড, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ ভোর ৬:৩১

ছবি নেট।

তুমি মানে
সমস্ত দিনের ক্লান্তি শেষে
নতুন করে বেঁচে থাকার নাম।

তুমি মানে
আড্ডা,কবিতা,গান
তুমি মানে দুঃখ মুছে
হেসে ওঠে প্রাণ।

তুমি মানে
বুক ভরা ভালোবাসা
পূর্ণ সমস্ত শূন্যস্থান।

তুমি মানে ভেঙ্গে ফেলা
রাতের নিস্তব্ধতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×