প্রাক-কথা:
বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ধর্মের একটি ধর্মের নাম ‘ইসলাম’। কুরআনকে বলা হয় ইসলাম ধর্মের মুল কিতাব।এর সাথে রয়েছে আরো তিনটি যা ইসলামের আইনের উৎস বলে বিবেচিত হয়। সে তিনটি হল-
১. হাদিস ২. ইজমা ৩. কিয়াস
যদি বলা হয় অমুক কাজ ইসলামে অনুমোদন দেয় না,তখন এ কথার অর্থ হয় যে উপরোক্ত ৪ টিতে বা ৪ টির যে কোন একটিতে উক্ত কাজের অনুমোদন পাওয়া যায়নি।সুতারাং ইসলাম ধর্ম বলতে উক্ত ৪ টির সমন্বিত বিধানকে বুঝায়। সরল অর্থে কথাগুলো সুন্দরই শোনায়।
সত্য কথা বলতে একমাত্র আল কুরআনকে অবিকৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।আর হাদিস শাস্ত্র। সকল ইসলামি বিশেষজ্ঞ স্বীকার করেন যে দু’চারশ নয় বরং লক্ষ লক্ষ হাদিস নবীর নামে রচিত হয়েছে।এসব জাল হাদিস থেকে সঠিক হাদিস বাছাইয়ের জন্য কিছু পদ্ধতি বের করা হয়েছে। সত্যে বলতে কি এর কোনটিই দ্বারা কোন হাদিস জাল না সঠিক সে ব্যপারে ১০০% নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
ইজমা মানে ঐক্যমত । প্রকৃত পক্ষে ১০০% ঐক্যমত বলে কোন বিধান নেই বললেই চলে । আর কিয়াস । যে বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে কোন সমাধান পাওয়া যায় না সে বিষয়ে কুরআন-হাদিস বিশেষজ্ঞগন যে সিদ্ধান্ত বা সমাধান দেন সেটিই কিয়াস বলে পরিচিত। অতএব কুরআন ছাড়া বাকি ৩ টির নির্ভরযোগ্যতা নেই।
ইসলাম ধর্মের অনুসন্ধান:
ইসলামী আইনের মাত্র ১০% আসে কুরআন থেকে সরাসরি। উক্ত ১০% আইনও বিভিন্ন ব্যখ্যা করা সম্ভব। এ ১০% আইন ব্যখ্যা করা হয় হাদিস,ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে যার কোনটিই নির্ভরযোগ্য নয় যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে। যিনি যে মত বা আদর্শে বিশ্বাসী তিনি উক্ত ১০% আইনকে সেভাবে ব্যখ্যা করেন। হাদিসের সংখ্যা যেহেতু লক্ষ লক্ষ, যিনি যে মতের তিনি তার মতের সাথে মিলিয়ে হাদিস পেয়েই যান। আর যে বিষয়ে হাদিস পান না সে বিষয়ে নিজ মতাদর্শের আলোকে কিয়াস করেন। এখন আপনি ইসলাম নামে একক কোন ধর্মের অনুসন্ধান পাবেন না। ইসলাম নামীয় হাজার মতাদর্শ রয়েছে। যেমন-
১. মতাদর্শগত:
যেমন-জামায়াত ইসলামী, খেলাফতে মজলিস, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (চরমোনাই), তালেবান, আইএসএস,হিযবুত তাহরীর, তাবলীগ,দেওবন্দী,সালাফি,জাহিরি ইত্যাদি ।
২. খুটিনাটি মাসয়ালাগত:
মাযহাবী,লা-মাযহাবী, আহলে হাদিস, রফয়াদিন পন্থী, মিলাদুন্নবী পন্থী,সিরাতুন্নবী পন্থী,জোরে আমিন পন্থী, দোয়াল্লি ও জোয়াল্লিন পন্থী,শবে বরাত পন্থী,লম্বা টুপি-গোলটুপি পন্থী, দাড়ি পন্থী, পোষাকি-অপোষাকি ঈমানদার পন্থী, বিদাতী-অবিদাতি,ফরযপন্থী, সুন্নত পন্থী(সুন্নি), আওলাদে রাসুল, তরিকতে রসুল ইত্যাদি।
৩. বিশ্বাসক গত:
মুতাজিলা,কাদরিয়া, জাবরিয়া, মুরজিয়া, মুশাব্বিয়া, জাহমিয়া, জারারিয়াহ, নাজ্জারিয়া, কালবিয়াহ, মারেফাতী, পীরপন্থী,আশেকে রসুল,কুরানিষ্ট,ইশনা আশারিয়া বা জাফরিয়া ,শিয়া,সুন্নি,জাইদিয়া,ইসমাইলিয়া,আলাভি বা নুসাইরি বা আনসারি,আহমদিয়া আঞ্জুমান ইশাত ই ইসলাম,সুফিজম ইত্যাদি।
এছাড়া আলেভি, বেকতাশি, বোরহানিয়া, মেভলেভি, বা’লাভিয়া, চিশতিয়া, রিফাঈ, খালবাতি, নকশাবন্দি, নি’মাতুল্লাহি, কাদেরিয়া, বোস্তামিয়া, সাধিলিল্লা, মাইজভান্ডারি, মোজাদ্দেদিয়া, কালান্ধারিয়া সহ হাজারও নাম জানা না জানা দলে বিভক্ত । সবাই নিজ নিজ দাবিতে সঠিক ইসলামের পতাকাবাহী।
আপনি যদি ইসলামের অনুসরন করেন তবে আপনাকে আগে বলতে হবে কোন মতাদর্শের ইসলাম।
আপনি হয়ত দৃষ্টান্ত দিয়ে বলবেন যে আম একটি কমন নাম, আমের মধ্যে বিভিন্ন জাত আছে যেমন – আম রুপালি, ফজলি, হিমসাগর—ইত্যাদি। সবগুলো জাতের একটি কমন নাম আম। তেমনিভাবে ইসলামের সবগুলো মতাদর্শের কমন নাম ইসলাম। ধর্মের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য নয়। যিনি যে ধরনের ইসলামে বিশ্বাসী তিনি নিজ মতাদর্শকেই একমাত্র সঠিক ইসলাম বলেন আর বাকিদের বলেন পথভ্রষ্ট।