না দেখে কি বিশ্বাস করা যায়?
বিশ্বাস কখনো না দেখে হয় না-হোক সে দেখা বাহ্যিক চোখ দ্বারা বা অন্ত:চক্ষু দ্বারা। প্রত্যেক মানুষের ৪ টি চক্ষু আছে-দুটি বাহ্যিক চক্ষু অপর দুটি অন্ত:চক্ষু।আমকে আম, কাঠালকে কাঠাল বলে আমরা বিশ্বাস করি বাহ্যিক চোখ দ্বারা দেখে। আবার বাহ্যিক চোখ দ্বারা না দেখে বিশ্বাস করি এমন কিছু বিশ্বাস আছে। যেমন-বাতাস, অক্সিজেন ইত্যাদি।এগুলোকে বাহ্যিক চোখ দ্বারা দেখা যায় না ঠিকই তবে অন্ত:চক্ষু দ্বারা দেখা যায়।
কে আমার পিতা তা না দেখে বিশ্বাস করলে ধর্মে না দেখে বিশ্বাস করতে সমস্যা কেন?
ধর্মে বিশ্বাস আর জন্মদাতায় বিশ্বাস এর মধ্যে বিস্তর পার্থক্ষ আছে।
প্রথমত: জন্মের পর থেকে যাকে পিতা হিসাবে জানি, তিনিই যে আমার সত্যিই পিতা তার পক্ষে প্রমান হল:
১. মিথ্যা পিতার মনে সন্তানের প্রতি অগাধ ভালবাসা থাকে না
২. মিথ্যা পিতা হলে, তা যতই গোপন করা হোক না কেন সে বিষয়ে কম-বেশি কানাঘুষা হয় যা পিতা সম্পর্কে সন্দেহের সুযোগ করে দেয়। যখন সন্দেহের অবকাশ থাকে তখন যাচাই-বাছাইয়ের প্রশ্ন আসে। আপনি যাকে পিতা হিসাবে তার সম্পর্কে কানাঘুষা হলে আপনি নিশ্চয়ই মনে মনে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের ব্যপারে উদ্যেগি হতেন।
সাধারণত: সত্য পিতার ব্যপারে এরুপ কানা-ঘুষা হয় না তাই যাচাই ছাড়াই বিশ্বাস করা হয়।
৩. পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্ম আছে। সবাই নিজেদের সঠিক আর অপরকে বেঠিক বলে। কিন্তু পিতার ক্ষেত্রে হাজার হাজার মানুষ এসে দাবি করে না যে আমি তোমার পিতা।তাই অনুসন্ধানের প্রয়োজন পড়ে না। তাছাড়া যদি এমন ঘটেই যায় যে আমি যাকে আমার পিতা বলে বিশ্বাস করি সত্যিকার অর্থে তিনি আমার পিতা নন, তাহলে এতে আমার কিইবা ক্ষতি আছে?
৪. যে বিষয়টি যতবড় গুরুতর তা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ততবড় প্রমানের প্রয়োজন পড়ে।যেমন ধরুন-একজন হাতে একটি বই নিয়ে বলল যে এ বইটি আমি লিখেছি, আপনি সামান্য কিছু পর্যালোচনা বা চিন্তা করে হয়ত বিশ্বাস করবেন বা অবিশ্বাস করবেন। আপনার এ বিশ্বাস/অবিশ্বাস কারো কিছু যায় আসে না। আপনি এ ধরনের কিছু বিশ্বাস করতে খুব বেশি যাচাই-বাছাইয়ে যাবেন না, কারন আপনি জানেন যে উক্ত লোক উক্ত বইয়ের লেখক হিসাবে আপনি বিশ্বাস করলেই আপনার কোন লাভ/ক্ষতি নেই বা অবিশ্বাস করলেও কোন লাভ/ক্ষতি নেই।
কিন্তু বিষয়টি যদি এমন গুরুতর হয় যে উক্ত বই আপনার জীবন নিয়ে কথা বলার দাবি রাখে, উক্ত বইয়ে বিশ্বাস না করলে আপনার জীবনের বারোটা বাজার সম্ভাবনা আছে, তাহলে কি আপনি বিষয়টিকে এত সাধারণভাবে নিবেন? নিশ্চয়ই তা গভীরভাবে যাচাই-বাছাইয়ের দাবি রাখে, নয় কি?
ধর্ম মানুষের জীবন নিয়ে কথা বলার দাবি করে। ধর্ম না মানলে পরজগতে কঠিন শাস্তির দাবি করে। বিষয়টি গুরুতর, তাই তা সম্মকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের দাবি রাখে। ধর্মের কারনে লক্ষ লক্ষ অর্থ ব্যয় হয়, এমনকি জিহাদের জন্য নিজ জীবন উৎসর্গের দাবি রাখে। সুতরাং ধর্মটা যদি মানবরচিত হয় তাহলে সব মিথ্যা আশায় জীবনটা ব্যয় করা পাগলামি ও বোকামি বৈ কিছু নয়। তাই আগে ধর্ম মানব রচিত নাকি স্রষ্টা প্রদত্ত তা যাচাই বাছাই করে মানাই বুদ্ধিমত্তার কাজ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:২৮