somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মসূত্রে জাহান্নামী...

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্মসূত্রে জাহান্নামী

রাত ন'টা।
না শীত না গরম।
রাস্তা বোঝাই মিহি ধুলো পাক খাচ্ছে বাতাসে। বিকট শব্দে একটা মাইক বাজছে- খুব কাছেই। বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে মাদ্রাসায়। শংকর মাহফিল শুনতে যাচ্ছে। প্রতিবারই যায়। চুপচাপ এক অন্ধকার কোনে দাঁড়িয়ে বয়ান শোনে একমনে। মাঝে মাঝে একটু বাইরে বেরিয়ে সারি দেয়া ঝুড়ো দোকানগুলো থেকে টোট্কা কিছু কিনে খায়। এই যে এত আলো- এত শব্দ আর এত মানুষের সমাগম-গমগম; তার কাছে ভালই লাগে। উৎসবের উষ্ণতা রয়েছে জায়গাটার।
‌‌'ভাইয়েরা আমার। আসুন শপথ নেই- একজন খাঁটি মুসলমান হয়ে মরবো। নাইলে বেহেশত ??? কপালে নাইরে নাইইই....' আঞ্চলিক ভঙ্গীতে কৌতুককর মূদ্রা করেন বয়ানরত হুজুর। লোকজন হেসে ওঠে। আজকাল হুজুরগণও যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে(!) যাচ্ছেন দোর্দন্ড প্রতাপে। মাহফিলের গুরুগম্ভীর আলোচনার মাঝে মাঝে যদি চাটনি টাইপের একটু কানরোচক কথাবার্তা, হয়তো একটু কান গরম !!!! না না, ভালই লাগে...ভালই লাগে শংকরের।

মাহফিল শেষ হয় বেশ রাতে।
ফিরতে ফিরতে শংকরের মাথায় কেবল একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খায়। মুসলমানদের অত সুন্দর বেহেশতে শুধু মুসলমানরাই যেতে পারবে? আনমনেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে শংকরের বুক চিরে। কেন যে মুসলমান হয়ে জন্মালো না....ইশশশশ....রুটিটা ছোট ছোট টুকরো করে রাস্তায় ফেলতে ফেলতে এগিয়ে চলল সড়ক ও জনপদের মহাসড়কের বামপাশ ঘেঁষে। বহুদিনের পথচলার সাথি নেড়ি কুকুরটাও রুটি খেতে খেতে অনুসরণ করে শংকরকে।

নিস্তব্ধ রাত।
বহুদূরে রাত্রির কালচে নীল দিগন্ত মুচড়ে বিলাপ করে উঠলো একটা কুকুর। শংকরের পাশ দিয়ে নিঃশব্দে হুঁশ্ করে চলে গেল হুজুরের কালো দামী গাড়িটা- রাত্রির কালো অন্ধকারে মিশে থাকা কুঁচকুচে কালো চিতার মতো।
ঘটেই গেল ঘটনাটা। চেষ্টা করেও পার পেল না রুটি খেতে মগ্ন ছাল ওঠা কংকালসার কুকুরটা। দড়াম্ করে বাড়ি খেল গাড়ির ফ্রন্ট বাম্পারে। লাট্টুর মতো ছিটকে চলে গেল রাস্তার একপাশে। মাথা তুলে দু'একবার হাঁক ছাড়লো বিবশ্ কন্ঠে। কোনদিকে না তাকিয়ে দ্রুত এগিয়ে কুকুরের মাথাটা কোলে তুলে নিল পরম মমতায়- স্কুল দপ্তরী শংকর। দু'চোখ ভাসিয়ে অশ্রু নামছে তার। দুরে মোড় ঘুরে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে হুজুরের দামী গাড়ির লাল দু'টো জ্বলন্ত চোখের মতো টেললাইট। ঠিক তেমনি দৃষ্টিতেই সেদিকে তাকিয়ে রইল শংকর- অনেকক্ষণ...অনেকক্ষণ....।
কুকুরটা শেষ হয়ে যাচ্ছে শংকরের দু'হাতের মধ্যেই। অথচ কিছুই করার নেই তার। প্রচন্ড ক্ষোভে-আক্রোশে মুখ তুললো আকাশে- 'স্বর্গ-নরকে আমার সাধ ঘুঁচে গেছে প্রভু। হুজুরের বেহেশতে যাবার কোন লোভই আমার নেই। তুমি শুধু এই অবোধ জীবটাকে দয়া করো...মুক্তি দাও।'

নিস্তব্ধ রাত।
রাস্তায় পাক খাচ্ছে মিহি ধুলো। আর মিহি ধুলোর সাথে মিশে থাকা অজস্র মিহি প্রশ্নরাজি।
চারিদিক সুনসান।
কেউ কোত্থাও নেই।
না না...কেউ আছেন.....একজন আছেন।
যিনি সর্বত্র। যিনি কোন নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠির নন। নিজ সৃষ্ট সৃষ্টির প্রতিটি স্পন্দনে...রন্ধ্রে রন্ধ্রে যিনি মিশে থাকেন।
শংকরদের অনুভূতীর এ পুরস্কার যিনি নিজ হাতেই দেবেন বলে জানেন। অনুভূতীর এ অমূল্য উপহার, শ্রেষ্ঠত্বের উপহার। হুজুর যা'র নাম'ই জানে শুধু-
-বেহেশত।!

[দেখা একটি ঘটনার সাথে নিজের মনের কিছু জিজ্ঞাসা-উত্তর মাখানো লেখাটি ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বরিশাল-এর একটি আঞ্চলিক দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। নিশ্চই কিছু বোঝাতে পারিনি বলেই কাছের মানুষদের কাছ থেকেও পাইনি কোন প্রতিক্রিয়া। আমার বক্তব্য কিন্তু এখানে খুবই ছোট- 'শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ধর্ম কোনদিন মানুষের মনে অর্থবহ উৎকর্ষতা নিয়ে পূর্ণতা পেতে পারে না।' তাইতো ধর্মকে মন্ত্রজ্ঞানে পূঁজো করে আসছে মানুষ। বস্তুজগত আর মনোজগৎ এর কম্বিনেটেড উৎকর্ষতায় পৌঁছতে পারছে না কোনমতেই। লেখা দেখে ঐ পত্রিকার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী দাঁড়িওয়ালা কম্পিউটার অপারেটর আফসার ভাই দু'দিকে মাথা নাড়তে নাড়তে আফশোস করে বলেছিলেন- আস্তাগফিরুল্লাহ্...নাউজুবিল্লাহ্.....। আর আমি তা'র জবাবে বোধহয় একটু জোরেই হেসে ফেলেছিলাম...হাঃ হাঃ হাঃ...দুঃখিত।]

*সংযুক্তি: লেখাটি ব্লগে ঢোকার কিছুদিন পরেই পোষ্ট করেছিলাম। কিন্তু তখন আমি 'ওয়াচ' জোনে ছিলাম বিধায় প্রথম পাতায় যায়নি।
ধন্যবাদ মডারেটরকে...সেই সাথে নিজেকেও....
মডারেটর আমাকে সবুজ সংকেত দিল।
আর, আমিও চান্স পেয়ে রি-পোস্ট মেরে দিলাম...হাঃ হাঃ হাঃ...
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×