somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

**মুভি রিভিউ** দেবদাস থেকে দেব. ডি

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শরৎবাবুকে যদি কোন জাদুমন্ত্রে পরলোক থেকে এই ইহলোকে ফিরিয়ে আনা যেত, বসিয়ে দেয়া হতো দেব. ডি চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনীতে -- নির্ঘাৎ তিনি ভ্যাবাচেকা খেয়ে যেতেন! এমা, একি দেখছি! এ কোথায় এলুম! এ জাতীয় শব্দ বেরিয়ে আসতো বিংশ শতা‍‌ব্দীর বিখ্যাত এই লেখকের মুখ থেকে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস 'দেবদাস' অবলম্বনে ইতোপূর্বে অনেক চলচ্চিত্র হয়েছে। বরাবরই শরৎচন্দ্র দেবদাসে চরিত্রগুলো যেভাবে দেখিয়েছিলেন অনেকটা সেভাবেই পর্দায় উঠে এসেছে। মুভির প্রয়োজনে কখনও হয়তো সামান্য পরিবর্তন হয়েছে চরিত্রে কিংবা গল্পে। অসামান্য পরিবর্তন আমার দেখলাম অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত অভয় দেওল, মাহি গিল, কল্কি কচলি অভিনীত ২০০৯ সালের হিন্দি মুভি দেব. ডিতে।

সে এক দিন বদল বটে! ভালবাসা তার মেদ-চর্বি বা আবরণ-বোরখা ছাড়িয়ে (বা হারিয়ে) দৈহিক কামনা বা 'আসল ফল' লাভের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এখানে ভালবাসা মানে শুধু 'লাভমেকিং'! মুভির ট্যাগ লাইনেই তো বলা হয়েছে, 'কাম ফল ইন লাস্ট'! বেচারা শরৎবাবু! ইন্ডিয়ার হালের প্রেম-পীরিতের এই চিত্রায়ন দেখে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আবার যে পরলোকগামী হতেন সে কথা আর বলতে!

দেব. ডিতে দেব (অভয়) আছে, পারু (মাহি) আছে, চন্দ্রাও (কল্কি) আছে। নেই শুধু নিখাদ প্রেম, বদলে যৌনতা। পটভূমি বড়ই আধুনিক। দেব থাকতো ইউকেতে। পারুর সঙ্গে চ্যাটিং হতো অনলাইনে। কথা হতো ফোনে। পারুকে দেব তার নগ্ন ছবি পাঠাতে বলে। পারু শুনে 'তুমি কি পাগল হয়েছ?' বললেও পরে ঠিকই মেইল করে দেবের কাঙ্খিত ছবি। ওদিকে ছবি পেয়ে তো দেব বাবু ফিদা! পারুকে তৎক্ষণাৎ ফোন, 'পারু, আমি আসছি!!'! পারু তো খুশিতে আটখানা। দেবকে কাছে পাবে। কষ্ট করে আর ছবি তুলে মেইল করতে হবে না! দেব দেশে ফেরে। মুভির মূল কাহিনী শুরু এখান থেকে।

কাহিনী বলতে দেব-পারুর মিলিত (দৈহিক) হবার হরেক প্রচেষ্টা। দেবের মতি বিভ্রম, দেব-পারুর বিভেদ, পারুর অবজ্ঞা, চন্দ্রার 'চন্দ্রা' হয়ে ওঠা, দেবের মাদকাসক্তি, দেব-চন্দ্রা সম্পর্ক ইত্যাদি। দেবদাসের গল্প আমাদের জানাশোনা হলেও অনুরাগের গল্প বলায় একটা বিশেষ ঢঙ আছে। চিত্রনাট্যের বৈশিষ্ট্য হলো একাধিক ছোট গল্পকে সমান্তরাল গতিতে এগিয়ে নিয়ে একই বিন্দুতে মিলিয়ে দেয়া। কুশীলবদের অভিনয়ও উপভোগ্য। চিত্রগ্রাহক রাজিব রাভি ও শিল্পনির্দেশকরা তাদের সেরা কাজটাই করেছেন। আর অমিত ত্রিবেদীর মিউজিক তো রীতিমতো 'ইমোশনাল অত্যচার'! উহুঁ, নিন্দে নয়, প্রশংসাই করা হলো! অমিতের অসাধারণ মিউজিক মুভিটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আর তার সাফল্যে জুটেছে দ্বিতীয় অ্যালবামেই জাতীয় পুরষ্কার।

অভয় দেওল যথারীতি ভালো অভিনয় করেছেন। কিন্তু চরম মাদকাসক্ত দেবকে যতোটা বিপর্যন্ত দেখানো উচিত ছিল অভয়ের চেহারায় বা এক্সপ্রেশনে ততোটা ফুটে ওঠেনি। অন্যদিকে, দুই নবাগতা মাহি গিল ও কল্কি কচলিনের অভিনয় রীতিমতো প্রশংসনীয়।

নতুন আঙ্গিকের দেবদাস কিছু সত্য তুলে এনেছে, অনেকটা কড়া ভাবেই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, দেব. ডিয়ের দেবের জন্য চোখ একটুও ছলছল করলো না, যেমনটা হৃদয় কেঁদেছিল উপন্যাসের দেবদাস বা পর্দার অন্য দেবদাসদের জন্য। কেন তেমনটা হয়নি? কারণ পরিচালক চাননি। দেবকে ট্র্যাজিক হিরো বানানো তার উদ্দেশ্য ছিল না।

চর্বিত গল্পের এই জাতীয় প্রজেক্টে আমার নজর থাকে গল্প বলার স্টাইল আর সমাপ্তির ধরণের দিকে। দুই দিক থেকেই দেব. ডি উতরে গেছে দারুণভাবে। দেবের শেষ পরণিতি তো একেবারে মনের মতো। পুরো মুভি দেখার একটা তৃপ্তি এনে দেয়। শেষটা সত্যিই আকর্ষণীয়। পরিচালক তার বার্তা পৌঁছাতে পেরেছেন। বিপর্যস্ত দেবকে দিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন যুবসমাজকে। যা মুভিটি দেখলে বুঝতে পারবেন।

রেটিং: ৪/৫
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×