somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

★কাব্য গল্প★ চিরকুট

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সে অনেকদিন আগের কথা। অনন্য ও অনন্যা ছিল প্রিয় দুই বন্ধু। বন্ধুত্ব বেশিদিন আর 'বন্ধুত্বে' থাকেনি অনন্যের কাছে। অনন্যার প্রেমে পড়ে যায় সে।

অতঃপর একদিন ক্লাসে চিরকুট চালাচালি:

অনন্য:

তুই আমার প্রেয়সী হবি
রাত-দুপুরের সঙ্গী?
কথায় কথায় খুনসুটি আর
যেমন-তেমন ভঙ্গি?


যদিও অনন্যা হকচকিয়ে যায়। আমরা তবুও বুঝতে পারি না তার মনের অবস্থা। মেয়ে বলে কথা, মন বোঝা এতো সহজ? পাল্টা চিরকুট:

অনন্যা:

প্রেমের কথা চটুল করে
যতোই গাঁথ শব্দমালায়
বিশ্বাস কর দেখলে তোকে
ভালবাসা অমনি পালায়!


অনন্যের মুখ পোড়া বেগুণের মতো চুপসে গেলেও মনে বড় বল! ছেলে বলে কথা, এতো সহজে হার মানা কি সাজে? ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধে:

অনন্য:

ঠিক আছে সই
আর হবে না প্রেম নিয়ে ছন্দ
পরপুরুষে আলাপ যদি
আগে করিস বন্ধ!


যাহ! অনন্যাটা বুঝি এবার রেগেই গেল!

অনন্যা:

তুই কে রে হনু বিড়াল
তুই-ই তো পরপুরুষ!
বলছি তোর লেজটাই বাঁকা
যতোই লাগা তৈল-বুরুশ!


এবার অনন্যের পালা:

ছেরির কথার ছিরি দেখ
আজগুবি সব ননসেন্স!


পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে:

তাই যদি হয় ভাগ তবে
ওরে আমার প্রেমিক মেন্স!


অবশেষে নায়কের গান:

আচ্ছা আমি যাচ্ছি চলে
জল ফেলিস না চোখ গলে!


নায়িকার টিজ:

আমার খুব বয়ে গেছে
গোঁফে তেল কাঁঠাল গাছে!


ইনিয়ে বিনিয়ে নায়ক:


এই আমি গেলুম তবে
ডাক দিস না পেছন থেকে!


ঐ নায়িকা আসছে তেড়ে:

কথা শুনে কাকও হাসে
আসব নাকি বাঁশটি হেঁকে?


ছুটির ঘণ্টা বেজে গেলে আমরা সবাই তেড়েমেড়ে বাইরে দৌড়। সেদিন বিকেলে মাঠে অনন্য আসেনি। পরদিন সকালে অনন্যাকে প্রাইভেটে দেখলাম না।

অনন্য ও অনন্যা পরপর তিন দিন স্কুল, বিকেলের মাঠ আর স্যারের বাসা কামায় করেছিল। গোটা ক্লাস জুড়ে অনন্য ও অনন্যা আলোচনার বিষয়।

অতঃপর চতুর্থ দিন অনন্য এল। নিজের সিটে বসলো। একটু পর অনন্যা এল। নিজের সিটে বসলো।

আমাদের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। কি হয়। কি হবে।

একটা ঘণ্টা গেল, দুটা ঘণ্টা গেল, কিছুই হলো না। দুজনেই অসুস্থতার দরখাস্ত দিয়েছে। স্যার দুটোই নিলেন। কিচ্ছু বললেন না।
দুজনকেই ভয়ানক অসুস্থ লাগছিল। টিফিন পিরিয়ড এলো, গেল। কিচ্ছু হয় না কেন?

শেষ ক্লাসটা এমন এক স্যারের যার ক্লাসে সবাই কথা বলে আর স্যার ঘুমায়! এবার বোধহয় কিছু একটা হবে!

অনন্য প্যাড বের করে কলম ঘষল কাগজে। তারপর আমার হাত ছুঁয়ে অনন্যার হাতে সে এক আশ্চর্য চিরকুট:


প্রিয় অনন্যা,

তোমার শূন্য হাতে তুলে দিলাম
লাল গোলাপ
পাপড়ি ছিঁড়ে কলির দেখা
পাবে না!
হৃদয় দিয়েছি ওখানে
পাপড়ির আড়ালে সাজিয়ে!
বুঝতে পার যদি গোপন কথা
আমার ছায়া ছেড়ে
কখনও যাবে না!

প্রতিদিন নতুন করে
ভালবাসা শেখাব তোমাকে
দুঃখের পরিচয়
বিলক্ষণ জানবে না!

ইতি,
তোমার অনন্য


আশ্চর্যের বাপ অপেক্ষা করছিল পরের চিরকুটটাতে:


প্রিয় অনন্য,

তোমার ভালবাসার কাছে
আমি পরাজিত!

আমাকে অমর কর
তোমার চুমুতে
আমাকে মহান কর
তোমার বাহুতে
আমাকে ধারণ কর
তোমার পাঁজরে
আমাকে হরণ কর
তোমার নিঃশ্বাসে

তোমার প্রেমের কাছে
আজ আমার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ!

ইতি,
তোমারই অনন্যা


আমি তখন মূর্ছা যায় যায়! তাই পরের চিরকুটে কি ছিল জানতে পারি অনেক পরে!


প্রিয় অনন্যা,

তোমাতেই আমার উৎসর্গ...

আমার নৈঃশব্দ্যের পরী
জোছনার জলসা, ঝড়ের জোনাকি
শীতের উষ্ণতা, স্বপ্নের সহচারিণী
যাকে তুফানের মতো ভালবাসি
আমার কবিতার ধাত্রী!

তোমাতেই আমার উৎসর্গ! তোমাতেই আমার স্বর্গ!


ছুটির ঘণ্টার শব্দে স্যারের ঘুম ভাঙ্গার পর বাকি ক্লাস হাওয়া! একটু পর অনন্য ও অনন্যা হাত ধরাধরি করে চলে গেল! আমি ঠায় বসে রইলাম কতক্ষণ জানি না!

_______
গল্প: ভালোবাসা এমন কেন
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×