somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেসবুক ভরিয়া গেছে ডিজিটাল পীরে!

২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক বছর আগেও ফেসবুকে 'জনপ্রিয়তার মোহ' ব্যাপারটা ছিল না। স্ট্যাটাসগুলোতে একটা পার্সোনাল টাচ থাকতো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরে এটা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কেউ কেউ ফেসবুকটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। এখানে একটা অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য অনেকে খুব সচেতন। বলা যায়, রীতিমত উঠে-পড়ে লেগেছেন। অলিখিত একটা প্রতিযোগিতা দেখা যায় অনেকের মাঝে। কার চেয়ে কে বেশি 'সুন্দর/জ্বালাময়ী/অসাম' 'স্ট্যাটাস' দিয়ে বেশি 'লাইক' কামাতে পারে তেমন একটা প্রতিযোগিতা যে চলছে এটা কিন্তু অস্বীকার করা যাবে না। এই কাজটা করতে গিয়ে রাষ্ট্রনীতি থেকে শুরু করে ধর্মনীতি পর্যন্ত যে কোন বিষয়ে ঢালাও কমেন্টারি করা হয়- বুঝে হোক কিংবা না বুঝে।

ওপিনিয়ন এক্সপ্রেশন খারাপ কিছু না, কিন্তু মন্দ ইফেক্টটা হয় তখন- যা বলা হল তা যদি ভেবে-চিন্তে না বলে চটজলদি বলা হয়। সূক্ষ্ম চাতুর্যের আশ্রয় নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মন্তব্য করা হয়। এক্ষেত্রে বড় সমস্যাটা সৃষ্টি করে একটা 'এলিট গ্রুপ' [একাংশ], ফেসবুকে যাদের 'বন্ধু' বা 'অনুসারীর' সংখ্যাটা বেশি। দেখুন, এটা সেই দেশ যেখানে পীরচর্চা হয় যুগযুগান্তর ধরে, সবচেয়ে বেশি। এখানে ফেসবুকে এই এলিট গ্রুপের মেম্বাররা একেকজন 'ডিজিটাল পীর'। পীর যেমন আপনাকে মন্দ কাজ থেকে দূরে রেখে ভালো কাজে নিয়োগ করতে পারে তেমনি মন্দ বা ভণ্ড পীরের কবলে পড়লে আপনার সর্বনাশের সাথে সাথে আরও দশ জনের এমনকি দেশটারও সর্বনাশ হতে পারে। ধর্ম পীরের মুরিদরা যেমন অনেক সময় ভণ্ড পীর চিহ্নিত করতে পারে না তেমনি একই সমস্যায় আক্রান্ত ডিজিটাল পীরের মুরিদরা। তারা মেলাতেই পারে না, যে পীরের এতো অনুসারী তিনি ভুল হয় ক্যামনে? নিশ্চয় তিনি সঠিক, এবং তিনি সঠিক, এবং তিনিই সঠিক। বাকিরা সব ভুল, বিপথগামী, মূর্খের দল।

ডিজিটাল পীরের সবচেয়ে বড় সবক হল পরচর্চা। একজন ডিজিটাল পীরের মুরিদের কাছে যিনি পীরের বায়্যাত হননি তিনি পরিণত হন নগণ্য ব্যক্তিতে। অথচ এই 'নগণ্য' ব্যক্তিদের ট্যালেন্ট নিরীক্ষা করলে দেখা যাবে এদের মাঝে অনেকেই সেই ডিজি পীরের চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী, যোগ্য, অনুসরণীয়। তিনি হয়তো অতটা প্রচারপ্রিয় না, নিভৃতের কোন সন্ন্যাসী, কোন প্রকৃত সাধক, ধ্যানী, জ্ঞানী। সাদা মনের মানুষের মতো এই মানুষগুলোকে খুঁজে বের না করা অবধি তাদের সংস্পর্শ পাওয়া যায় না। অথচ এই লোকগুলোই হওয়া উচিত আমাদের প্রকৃত পীর। কিন্তু প্রকৃত পীররা প্রকৃতপক্ষে ডিজিটাল পীরের রমরমা ব্যবসার সময় আরও যেন গুটিয়ে যান। তাদেরকে খুঁজে পাওয়া আরও বেশি মুশকিল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় ডিজিটাল পীরদের বাণিজ্য ততদিন থামবে না যতদিন না তাদের ভক্ত-আশেকান-মুরিদরা সচেতন হবেন, আরোপিত অন্ধত্ব ত্যাগ করে আলোর দিকে মুখ তুলবেন, তাদের প্রতিটি কথাকে বেদবাক্য মনে করে আমল করবেন না।

সচেতন দুই ভাবে হওয়া যায়- ভেতর থেকে আপন চেতন কিংবা বাইরে থেকে ধাক্কায় পতন। এছাড়া সচেতন হওয়ার অন্য কোন উপায় আমার জানা নেই। কে কোনটা অবলম্বন করবেন সেটা যার যার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার। তবে আপন বোধের শিখা প্রজ্বলিত করাটাই নিঃসন্দেহে সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। কারণ ধাক্কায় যে পতন হয় সে থেকে আপনি পুরো দমে উঠে নাও দাঁড়াতে পারেন।

ফেসবুক পীরের মুরিদানদের একাংশ জনপ্রিয়তার মোহে আটকে গেছেন। তারাও যে করেই হোক পীরের রেপ্লিকা হওয়ার চেষ্টা করছেন। এই বেপরোয়া চেষ্টায় কেউ কেউ সৎ থাকতে পারছেন না। জীবনের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেলছেন। ফেসবুক খেলাফত পরিণত হচ্ছে একক ধ্যান-জ্ঞানে। এই মায়াজাল কোনভাবেই কাটতে পারছেন না। পেশাজীবী ডিজিটাল পীররাই এই অবস্থার জন্য দায়ী।

তাই সময় থাকতেই সঠিক পীরের সন্ধান করুন, ভণ্ড পীর থেকে দূরে থাকুন। বাস্তবে হোক কিংবা ডিজিটালে। ভণ্ড পীররা খুব ভয়ঙ্কর। ওরা নাম বেচে খাবে গুড়, আর আপনাকে পঁচা মাছটিও ভেজে খাওয়াতে পারে।

_______
★ফেসবুক অ্যাডিকশনের লক্ষণ ও উত্তরণের উপায়, ফেসবুকে কি করা উচিত ও কি করা উচিত না★ (ফেসবুক ইউজারদের জন্য অবশ্যপাঠ্য)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ২:১৮
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×