somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. জাফর ইকবালের কারণে ২০১৫ সালে এস. এস. সি. পরীক্ষায় ফেল করবে অসংখ্য শিক্ষার্থী?

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অতি প্রতিভাবানদের একটা সমস্যা হলো তারা সবাইকে নিজেদের পাল্লায় মাপে। নিজেদের কাছে যা সহজ মনে হয় তারা ধারণা করে অন্যদের কাছে তা সহজই হবে। অতি প্রতিভাবানদের এই সীমাবদ্ধতার বাইরে ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। তিনি তাঁর আপেক্ষিক তত্ত্বটি সেই শ্রোতাকে সেভাবেই বোঝাতেন যেভাবে বললে শ্রোতাটি সহজে বুঝবে।

কিন্তু ড. জাফর ইকবাল তো আর আলবার্ট আইনস্টাইন না। তাঁর কাছে যেটা সহজ মনে হয়, তাঁর ধারণা অন্যদের কাছেও সেটা সমান সহজ।

নগরীর একাধিক বিখ্যাত স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জেনেছি তারা এই মুহূর্তে জাফর ইকবালের ওপর বেজায় বিরক্ত।

কারণটা কি?
- 'তিনি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেবকে দিয়ে এ বছর গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করেছেন।' - শিক্ষার্থীদের জবাব।

আমি বললাম, ভালোই তো। তোমরা একেকজন গণিতের গ্র্যান্ডমাস্টার হবে। গণিত অলিম্পিয়াডে পদক জিতবে। জাফর আঙ্কল এটাই তো চান।

ছাত্র-ছাত্রীদের জবাবগুলো আমার ভাষায় গুছিয়ে বলি।

'আমাদেরকে যারা গণিতের মাস্টার বানাবে সেই গণিতের মাস্টারাই তো সৃজনশীল অংক পারে না। কিভাবে পারবে? সেই ট্রেনিং তো তাদেরকে দেয়া হয় নাই। সবচেয়ে বড় কথা, গণিতের যে টেক্সট বুকটা আছে সেটা এখনও 'সৃজনশীল' করা হয় নাই- আগের ধাঁচেই আছে।'



বটে! ঢাল-তলোয়ার-ওস্তাদ রেডি না করেই দেখি জাফর-নাহিদ আঙ্কলদ্বয় যোদ্ধা তৈরি করতে চান! ইমার্জেন্সিটা কোথায় বাপুস?

এ বছর নবম শ্রেণীর অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষায় স্কুলগুলোতে ডজন ডজন ছাত্র-ছাত্রী গণিতে ফেল করেছে। বাকিরা পাস করেছে টেনেটুনে। কারণটা হলো গণিতের সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি। টিচাররা ক্লাসে সৃজনশীল পদ্ধতিতে অংক করাচ্ছেন না। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বাধ্যতায় প্রশ্ন করছেন সৃজনশীল পদ্ধতিতে। এটা কিভাবে করছেন তারা? গাইড বইয়ের সহায়তায়। সৃজনশীল পদ্ধতির গণিত টেক্সট বুক বের না হলেও গাইড বই বেরিয়ে গেছে! সেলুকাস! গাইড বইগুলো কারা লিখছে-বের করছে জানতে মন চায়। জানতে ইচ্ছা করে, যেখানে নোট বই-গাইড বই এই সব বন্ধ করতে সরকার নাকি তৎপর সেখানে নাহিদ আঙ্কলের নাকের নিচ দিয়ে গাইড বইগুলো পয়দা হচ্ছে কিভাবে?

গণিতে ফেল থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হচ্ছে এই সব গাইড কিনতে। কোচিং সেন্টারগুলোতেও ফলো করা হচ্ছে গাইডগুলো। তার মানে এই দাঁড়ায়, সৃজনশীল গণিত নিয়ে চলছে কোটি টাকার বাণিজ্য। আমাদের জাফর আঙ্কল কি এটাই চেয়েছিলেন? প্রশ্নটা অবান্তর নয় মোটেও।

সিরিয়াসলি, এ কেমন আহাম্মকি? গণিতের বইটি সম্পূর্ণ সৃজনশীল করা হয় নাই, টিচারদেরকে ট্রেনিং দেয়া হয় নাই, ক্লাসে পাঠদান চলছে আগের পদ্ধতিতে, শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল গণিতে অসহায় বোধ করছে, অথচ পরীক্ষার প্রশ্ন হচ্ছে সৃজনশীল প্রক্রিয়ায়! ফাজলামো নাকি?



ইতোমধ্যে ছাত্র-শিক্ষকরা মিলিত হয়ে গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতি বাদ দেয়ার দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে, মিছিল করেছে, সভা করেছে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর কানের অবস্থান বহুদূর। আর 'সরকারের উপদেষ্টা' জাফর আঙ্কল উপদেশ দিয়েই খালাস। তার প্রেসক্রিপশন প্র্যাকটিকালি কেমন হচ্ছে সেই খবর কি তিনি রাখেন? নকলের ভূত তাড়িয়েছেন নাহিদ আঙ্কল, কিন্তু অপ্রস্তুতভাবে আমদানি করা সৃজনশীল গণিতের ভূত যে শিক্ষার্থীদের ঘাড় মটকে দিচ্ছে, তারা যে অকৃতকার্য হচ্ছে এই খবরটুকু কি এখনও মন্ত্রীর দরবারে পৌঁছায়নি? তথাকথিত 'মূল মিডিয়া' কেন এই ইস্যুতে সরব না?

গণিতে নিয়মিত ভালো করে যে শিক্ষার্থীরা, তারাও যদি এখন গণিতে ফেল করে জাফর আঙ্কলকে, নাহিদ আঙ্কলকে গালমন্দ করে সেটা যে এই নীতিনির্ধারকদের জন্য লজ্জার বিষয় তা বোঝার জন্য কি অংক কষা লাগবে?

এ বছরের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা ২০১৫ সালে এস. এস. সি পরীক্ষা দিবে। ধারণা করা হচ্ছে সেই পরীক্ষায় অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী সৃজনশীল গণিতে অকৃতকার্য হবে, তার মানে এস. এস. সি-তেই ফেল করবে। তাছাড়া অনেকে অন্য বিষয়গুলোতে ভালো করলেও গণিতে কম নাম্বার পাওয়ার কারণে তাদের সামগ্রিক গ্রেডিং কমে যাবে। এমন অবস্থায় সৃজনশীল গণিত নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আর ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অভিভাবকরা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।

শিক্ষার্থীদের ফলাফল খারাপ হলে তার দায়ভার কি সৃজনশীল গণিতের 'রূপকার' ড. জাফর ইকবাল ও 'বাস্তবায়ক' জবাব নুরুল ইসলাম নাহিদ অস্বীকার করতে পারবেন? তখন হয়তো নাহিদ সাহেবের সরকার থাকবে না, সেই সূত্রে জাফর সাহেবের অ্যাডভোকেসিও থাকবে না। যদিও প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় ভাইয়া বলেছেন তার কাছে গায়েবী 'তথ্য আছে' যে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। সে যা-ই হোক, এই সব রাজনৈতিক আলাপে আমরা যাব না- কিন্তু এটুকু বলতে পারি- জনাব নাহিদ ও জনাব জাফর সেসময় ক্ষমতার বলয়ে থাকুক বা না থাকুক তাদের নামগুলো কিন্তু শিক্ষার্থীরা ঠিকই মনে রাখবে। ফলাফল বিপর্যয় হলে ধুয়ো ধ্বনি তাদের নামেই আসবে।

অতএব, নাহিদ আঙ্কল ও জাফর আঙ্কলের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা কি দূরদর্শী হয়ে বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবেন নাকি দুই বছর পর নিজেদের নামে রাস্তাঘাটে নিন্দাবাদ ধ্বনি শোনার জন্য অপেক্ষা করবেন? এই বিষয়ে দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নিতে আইনস্টাইন হতে হয় না।

http://www.saifsamir.com
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:২৬
২৩টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×