somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তর্কে যাওয়ার আগে যা জেনে নেওয়া জরুরী!

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাকে একজন ঠাণ্ডা রক্তের মানুষ বলতে পারেন। লোকজনের সঙ্গে স্রেফ ইগোর বশবর্তী হয়ে অর্থহীন তর্কে-বিতর্কে জড়ানো, চিৎকার-চেঁচামেচি করা আমার স্বভাব না। এক সময় আমি যথেষ্ট রাগী ছিলাম, রাগ ছিল আমার একটি দুর্বলতা- কিন্তু এখন রাগকে আমি হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেলেছি, রাগকে পরিণত করেছি শক্তিতে। হ্যাঁ, রাগকে শক্তিতে পরিণত করা যায়- আগুনকে কাজে লাগানোর মতোই।

কিন্তু আফসোস, কেউ কেউ ঘুরে-ফিরে আমার সাথেই 'লাগতে' আসে! আমি তো ভাই ঝগড়া-ঝাটিতে আগ্রহী না। তবু কেন পায়ের সাথে পা লাগাতে আসা?

ভাবছেন আমি বুঝি ঝগড়া ভয় পাই? না, সেটা না। আমিও '... গাইল দিতে জানি'। কিন্তু আনপ্রোডাক্টিভ কাজে সময় ব্যয় করতে আমি একেবারেই কৌতূহলী না।

তাই বলে বুদ্ধিবৃত্তিক তর্কে জড়াতে আমার একদমই আপত্তি নেই। আপনি বুদ্ধিবৃত্তিক কোন আলোচনা করতে চান? শুরু করুন- কোন সমস্যা নেই। আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনার পাশে বসে শুনবো, প্রশ্নও করবো, কথাও বলবো।

অনেকে মনে করেন তর্কে আধিপত্য বিস্তার করতে হলে উচ্চস্বরে কথা বলতে হবে। যার গলার স্বর যতো উঁচু সে যেন তর্কে ততো বেশি এগিয়ে আছে। এটা আয়োডিনের অভাবজনিত অসংস্কার। একজন তার্কিক হিসেবে উচ্চস্বরে কথা বলাটা আমি একদমই পছন্দ করি না। আপনি উচ্চস্বরে যা বলবেন তা আমি কিছুই শুনতে পাব না। আমার কানের পাশ দিয়ে বাতাসের মতো বেরিয়ে যাবে।

আপনি যদি কোন কথা আমার কাছে প্রমাণ করতে চান- আপনার চিৎকার করার দরকার নেই। আমি তো কানে কম শুনি না! তাছাড়া আপনি তো জোর করে কোন কিছু প্রমাণ করতে পারবেন না! আপনি স্বাভাবিক স্বরেই আমার সাথে কথা বলুন। আপনার অহেতুক চিৎকার-চেঁচামেচি আমার স্ট্যান্ডার্ডের সাথে যায় না। কিন্তু আপনার স্বাভাবিক স্বরে বলা কথাগুলো যদি যথেষ্ট যৌক্তিক হয়, আপনি যদি আপনার বিদ্যা-বুদ্ধি দিয়ে আমাকে ভুল প্রমাণ করতে পারেন, নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে পারেন- তবে আপনার কথা আমি অবশ্যই মেনে নিব- হাসিমুখেই মেনে নিব! তেমন মানসিকতা আপনার না থাকলেও আমার আছে। এর জন্য আপনাকে গলার ভলিউম হাই করতে হবে না। তর্কে প্রতিপক্ষ যখন চিৎকার করে সেটা আমার কাছে তার যুক্তি-বুদ্ধির দুর্বলতা ঢাকার চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছুই মনে হয় না। এই টাইপের তর্ক আপনি কলতলায় করতে পারেন- আমার সাথে করতে আসবেন না। বিচার-বুদ্ধি-বোধহীন চিৎকার-ম্যাৎকার সুস্থ তর্কের স্ট্যান্ডার্ড না।

তাই আপনি যদি আপনার উচ্চস্বরে কুতর্ক করার বিপরীতে আমাকে স্বাভাবিক স্বরেই কথা বলতে দেখেন- দয়া করে ভেবে বসবেন না- এটা আপনার গলাবাজির কাছে আমার দুর্বলতা। আপনার যুক্তি-বিদ্যা-বুদ্ধির কাছে আমি হাসিমুখেই পরাস্ত হতে রাজি আছি- কিন্তু আপনার গলাবাজির সাথে পাল্লা দিয়ে পাল্টা গলাবাজি করা আমার রুচির সাথে যায় না। গলাবাজরা আদতে যুক্তি-তথ্যে দুর্বল ও সৎ-সত্য প্রকাশে অনিচ্ছুক।



তর্ক করতে আসার আগে কিছু বিষয় ঝেড়ে ফেলে আসুন- যথা: আপনার বহুদিনের লালিত-পালিত ইগো সমস্যা, হিংসা-বিদ্বেষ-ঈর্ষা, বংশ পরিচয়ের অহমিকা, বিত্তশালী হওয়ার দম্ভ, ক্ষমতার বাহাদুরি, ডিগ্রীর ঝুলি, সবজান্তার তকমা, গোঁয়ার্তুমির মনোভাব, প্রতিপক্ষ সত্য ও সঠিক হলেও মেনে না নেওয়ার স্বভাব, প্রতিপক্ষের হাসি সহ্য করতে না পারার অক্ষমতা, প্রতিপক্ষের প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ- ইত্যাদি ইত্যাদি নেগেটিভ ফোর্স যা মোটেও তর্কের উপাদান নয়। তর্ক হবে টপিক নির্ভর- শুধু যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে প্রতিপক্ষকে হারানোর এবং নিজের হার মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকাটাই জরুরী।

তর্ক এমনভাবে করুন যেন সেটা ঝগড়া মনে না হয়। প্রতিপক্ষের কাছে আপনার কথাকে গ্রহণযোগ্য করতে যথেষ্ট যুক্তি-তথ্য-সূত্র দিন। তা না করে স্রেফ রাগ-দম্ভ-ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে উত্তেজিত বুলি আওড়ালে হবে না, লম্বা লম্বা কথা বলে হম্বিতম্বি লম্ফঝম্ফ করলে হবে না। এসব করলে সবার কাছে হাসির পাত্রে পরিণত হবেন। একজন রিজনেবল মানুষ হিসেবে নিজেকে কখনও প্রমাণ করতে পারবেন না। সারা জীবন একটা আত্মগ্লানিতে ভুগবেন। তাই নিজেকে ফ্ল্যাক্সিবল করুন, নিজেকে লৌহমানব প্রমাণ করার দরকার নেই। আপনি মাটির মানুষ, তাই নিজেকে মাটির কাছাকাছিই রাখুন। আপনার কিছু নেগেটিভ ইমোশনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে লোকজনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। যদি এভাবে করতেই থাকেন একসময় বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিতে পরিণত হবেন।

আমার কাছে তর্ক হচ্ছে দাবা খেলার মতো। আমি প্রতিপক্ষকে একজন সম্মানিত খেলোয়াড় মনে করি। আমার সাথে খেলার যোগ্যতা আছে বলেই তিনি আমার প্রতিপক্ষ হয়েছেন- একইভাবে আমিও তাঁর প্রতিপক্ষ হয়েছি। আমরা দুজনেই খুব শান্ত মনে খেলতে বসি। ধীরে ধীরে আমাদের খেলা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে যায়। তাই বলে নিজের হার টের পেয়ে আমরা কেউ বোর্ডের গুটি সব উল্টেপাল্টে দিয়ে 'আর খেলব না' বলে উঠে পালায় না। অথবা আসন্ন হার এড়াতে 'চোরাই চালের' মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে পরস্পরের কলার ধরে টানাটানি করি না। আমরা দুজনেই নিজেদের সবগুলো পয়েন্ট বুঝতে পারি, নিজেদের ভুলগুলো মেনে নিই, একে অপরের বুদ্ধিদীপ্ত চালের জন্য পরস্পরকে সমীহের দৃষ্টিতে দেখি। যখন 'চেকমেট' হয়ে যায় তখন দুপক্ষই জয়/পরাজয়/ড্র যা-ই হয় হাসিমুখে মেনে নিই। খেলা শেষে আমরা পরস্পরকে শত্রু ঘোষণা করি না, বরঞ্চ হাতে হাত মিলিয়ে শুভ কামনা করি।

কি অসাধারণ অভিজ্ঞতা, তাই না? আপনিও তর্ককে দাবা খেলা বানিয়ে ফেলুন। প্রতিপক্ষের কাছে নিজেকে যোগ্য করে উপস্থাপন করুন।

এই লেখার শুরুতেই বলেছিলাম, আমি রাগকে শক্তিতে পরিণত করেছি। কেউ হয়তো উদাহরণ চাইতে পারেন, এই লেখাটিই হচ্ছে উদাহরণ।

প্রথম প্রকাশ: SAIFSAMIR.COM
_______

সাইকোলজি & ফিলোসফি থেকে আরও: কিভাবে খুব সহজে যে কোন তর্কে জিতবেন? আমার রহস্য বলে দেয়া হলো!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১২
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×