somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খালেদারে জামাত-শিবির ছাড়ার লাইগা প্যানপ্যানানি না কইরা আপনি নিজেই জামাত-শিবিররে নিষিদ্ধ করতাছেন না ক্যান? এতে সাপও মরত ল্যাঠাও চুকত। ১৬ কোটি জনগণ আপনারে পেয়ার-মহব্বত-ইশক কইরা দুইন্নার ক্ষমতা আঁচলে চাবির মত কইরা বাইন্ধা দিছে- আপনি চাইলেই তো কাজটা ওয়ান-টুতে কইরা ফেলতে পারেন। কিন্তু আপনি করেন না ক্যান? আপনার সমস্যাটা কোথায়? একজন আমআদমি হিসাবে আমি জানবার চাই।

আইন-আদালত-পুলিশ আপনার হাতে, সংসদ-সংবিধান-জনমত আপনার জিম্মায়- এই অবস্থায় জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করা তো আপনার বাঁ হাতের কাজ।

আপনার ঘাটে বিস্তর চিকন বুদ্ধি আর সীমাহীন সুযোগ থাকার সত্ত্বেও এই কাজটা নিজে না কইরা ক্যান গৃহবন্দি খালেদা ও জেলবন্দি বিএনপিরে প্যানপ্যানাইতেছেন?

আপনার কি আসলেই ল্যাঠা চুকানোর ইচ্ছা আছে না আজীবন ত্যানা-ই প্যাচাইতে চান? (ত্যানা প্যাচানি শব্দটা না বুঝলে দলীয় দালাল ব্লগার/ফেসবুকারদের জিজ্ঞেস করতে পারেন।)

জামাত-শিবির নিষিদ্ধের ব্যাপারে আপনার/আ'লীগের/নৌকা সরকারের সদিচ্ছার বড়ই অভাব। আপনারা জাশির আগাটা কাটতে চান কিন্তু গোড়াটা রেখে দিতে চান। কারণ গোড়াটা পরে আপনাদের প্রয়োজন হতে পারে। যেমনটা প্রয়োজন হয়েছিল অতীতে। শুধু অতীতের কথা বলি কেন, এখনই তো আপনারা আওয়ামী নৌকায় জামাত নেতাদের ঠাঁই দেয়া শুরু করেছেন। ছি ছি ছি, আপনাদের নৌকায় উঠলে জামাত নেতাদের যেন দ্বিতীয়বার খতনা হয়ে যায়।

সমঝোতার অংশ হিসেবে আপনারা বিএনপিরে জামাত ছাড়ার শর্ত দেন, কিন্তু নিজেরা স্বৈরাচারী এরশাদরে জড়াইয়া ধইরা রাখতে চান- বলি এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের পেছনে কারণ কি কপালি? আপনাদের কপাল কিভাবে খুলে সেটা তো ৫ তারিখের কলঙ্কের নির্বাচনে স্বচক্ষে দেখলাম। একই কপাল ছাড়া ৫ বছরে সম্পদ শতগুণ বৃদ্ধি পাওয়া যে সম্ভব না সেটা তো আমরা জানি-ই। খান, কপাল ফুলে কলাগাছ হোক। দেশটা তো আ'লীগেরই পৈত্রিক সম্পদ।


বিএনপি যদি জামাত ছাড়ে আপনারা এরশাদ/জাতীয় পার্টি ছাড়বেন তো?

বিএনপি যদি জামাত ছাড়ে আপনারা 'র'/ভারত ছাড়বেন তো?

বিএনপি যদি জামাত ছাড়ে আপনারা তরিকত-খেলাফত এগুলো ছাড়বেন তো?

বিএনপি যদি জামাত ছাড়ে আপনারা জীবনেও জামাতের সাথে আঁতাত করবেন না এই মর্মে হলফ নামা দিবেন কি?



বিএনপি জামাত ছাড়ুক সেটা বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমল থেকেই চেয়ে আসছি। স্বল্প মেয়াদে কিছু সুবিধা পেলেও দীর্ঘ মেয়াদে জামাত বিএনপির জন্য ক্ষতিকর এই কথা বিএনপি নেতা-কর্মীদের কানে অসংখ্যবার উচ্চারণ করেছি। বিএনপির মাথায় জামাত যে কাঁঠাল ভেঙ্গে খাচ্ছে, জামাত যে বিএনপির ক্ষতি করছে তা অসংখ্যবার বলেছি। কিন্তু বিএনপি সমর্থকরা বরাবরই আমাকে জবাব দিয়েছেন এই বলে যে, আজ যদি বিএনপি জামাতকে ছাড়ে তবে আগামীকাল জামাতকে আওয়ামী লীগ কোলে নিয়ে দোলা খেলবে। আমি বলতাম, 'নিলে নিক, এতে তো আ'লীগেরই ক্ষতি হবে। লোকজন ছিঃ ছিঃ করবে। আমার মনে হয় না, আ'লীগ এই লজ্জাজনক কাজ আবার করবে'। কিন্তু ৫ তারিখের ভোটার শূন্য জাল ভোটের কলঙ্কের নির্বাচনের পর নির্লজ্জ আওয়ামী চেহারাগুলোর গলাবাজি দেখে মনে হলো যে, কোন লজ্জাহীন ভণ্ডামির কাজ করা আওয়ামী লীগের জন্য কিছুতেই অসম্ভব কিছু না।

আপনারা বিএনপিকে জামাত ত্যাগ করতে বলবেন কিন্তু নিজেরা নিষিদ্ধ করবেন না ব্যাপারটা আলোচনার খাতিরে আপাতত মেনে নিলাম। কিন্তু বিএনপিকে জামাত-শিবিরের সঙ্গ ছাড়তে বলার সাথে সাথে আপনাদেরকে এটাও বলতে হবে- বিএনপি যদি জামাতের সঙ্গ ছাড়ে আমরাও এরশাদের জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিব এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনই কোন অবস্থাতেই জামাতের সঙ্গে হাত মেলাবে না, জামাতকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিবে না, ইতোমধ্যেই যারা জামাত থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তাদেরকে বিতাড়িত করবে এবং আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার করা হবে। বিএনপিকে যদি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গ ছাড়তে হয়, আ'লীগ আর কখনও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আঁতাত করবে না বলে ঘোষণা দিতে হবে। তাছাড়া বিএনপিকে যখন ভাংচুর-জ্বালাও-পোড়াও-হরতাল-অবরোধ বন্ধ করতে বলবেন তখন আওয়ামী লীগ-ছাত্র লীগ-যুব লীগকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড-হত্যা-টেন্ডারবাজি, রিভার্স নাশকতা, জাল ভোট ও চোরা-গুপ্ত হিন্দু-বৌদ্ধ নির্যাতনও বন্ধ করতে বলবেন। সরকারী মদদের হরতাল-ধর্মঘট ও সরকার-প্রশাসনের অবরোধ অবরোধ নষ্টামি খেলাও বন্ধ করতে হবে। বিশেষত ছাত্র লীগকে লগি-বৈঠা, আগ্নেয়াস্ত্র, দা-চাপাতি, শিক্ষকের কলার এসব ধরার পরিবর্তে খাতা-কলম-বই ধরার ও শিক্ষকের পা ছুঁয়ে সালাম করার নির্দেশ দিবেন। (সবচেয়ে ভালো হয় যদি শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ সাহেবকে ছাত্র লীগকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। 'শিক্ষার্থীদের আদব-কায়দা ও স্বভাব-চরিত্র' নামে একটি বই লিখে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি ছাত্র লীগের মাঝে ফ্রি বিতরণ করলে খুব ভালো হবে।)

আপনি যদি শেখের বেটি হয়ে থাকেন, পারবেন এই কথাগুলো দ্ব্যর্থ হীন কণ্ঠে পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সাথে দেশবাসীর সামনে উচ্চারণ করতে?

আমি আশা করি, আপনি যদি তেমনটা করেন ও বলেন তাহলে খালেদা জিয়া/বিএনপি বাধ্য হবে জামাত-শিবিরকে ত্যাগ করতে। এরপরও যদি তারা জামাত-শিবিরকে না ছাড়ে তবে জনগণের ঘৃণা ও ধিক্কার নিশ্চিতভাবে বিএনপির ওপরই বর্ষিত হবে।

কিন্তু আপনি যদি শুধু শর্ত দিতেই পছন্দ করেন, নিজে কোন শর্ত মানতে না চান তবে আপনার উচিত হবে জামাতকে নিজেই নিষিদ্ধ করে দেওয়া। কিন্তু আপনি যদি এটাও করতে না চান তবে আপনার উচিত নিঃশর্ত সংলাপে/সমঝোতায় যাওয়া, অন্যসব ইস্যুকে সরিয়ে আলোচনার টেবিলে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ঠিক করা। কারণ আপনি খুব ভালো করেই জানেন, যে পরিস্থিতি আপনি সৃষ্টি করেছেন এ থেকে শান্তিপূর্ণ-সসম্মান পরিত্রাণের একটাই উপায়- শিগগির একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আপনার অধীনে তথা যে কোন দলীয় সরকার প্রধানের অধীনে বাংলাদেশে অচিরেই যে কোন নির্বাচন সফল হওয়া সম্ভব নয় তা গত ৫ই জানুয়ারিতেই আওয়ামী 'সিলেকশন কমিশনের' ভাই-ভাই ইলেকশনে প্রমাণ হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও যদি আপনি এই পাতানো নির্বাচনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে 'ডেমোক্রেটিক ডিক্টেটর' বা 'গণতান্ত্রিক স্বৈরাচার' হতে চান সে আপনার ইচ্ছা। বাংলাদেশ একজন মহিলা এরশাদ পাবে... এই আরকি।

আপনি বা আওয়ামী লীগ কেন জামাত-শিবিরকে ধ্বংস করতে চান কিন্তু নিষিদ্ধ করতে চান না সেটা আমি জানি। আপনি গাছটা রাখতে চান, কিন্তু গাছের পেকে পচে যাওয়া ফলগুলোকে পেড়ে ফেলতে চান যেন নতুন ফলগুলো প্রয়োজন হলে চেখে দেখতে পারেন। ঐ গাছের ছায়ায় থাকা মানুষগুলোকে একেবারে হারাতে চান না কারণ ঐ মানুষগুলোকে আগামীতে কোন এক ভোটের দিনে কাজে লাগাতে চান। আপনি যেখানে বিএনএফ সৃষ্টি করাতে পারেন সেখানে ড্রাই-ক্লিনিংয়ের পর জামাত-শিবিরকে স্বার্থে লাগাতে চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না।

আপনি বিএনপি জামাত-শিবির ছাড়ুক এটা চান কিন্তু জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে এই সেপারেশনের কাজটা কেন অটোমেটিক করে দিতে চান না সেটা আমি জানি। আপনারা যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতার ফাঁসি দিয়ে ইতোমধ্যে জামাতের শত্রু হয়ে গেছেন। এখন চাচ্ছেন বিএনপিও যেন জামাতের শত্রু হয়ে যায়। কারণ জামাতের রোষানল আপনারা একলা 'উপভোগ' করতে চান না। কিন্তু কৌতুকের ব্যাপার হলো লাভের গুঁড়টা শুধু একলা নিজেরাই খেতে চান। এ অবস্থায় বিএনপিকে জামাতের শত্রু বানানোর একটাই উপায়, বিএনপি কর্তৃক ১৮ দলীয় জোট থেকে জামাতকে বের করা। কিন্তু আপনারা খুব ভালো করেই জানেন যে আপনাদেরকে ক্ষমতা থেকে হটানোর আগ পর্যন্ত বিএনপি জামাতকে ছাড়বে না। বলা ভালো, জামাত বিএনপিকে ছাড়বে না। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধা হতো আপনারা যদি জামাত-শিবিরকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করতেন। কিন্তু আপনারা সেটা করবেন না, কারণ এতে বিএনপির লাভ হয়ে যাবে। বিএনপি জামাত সমস্যা থেকে সহজে নাজাত পেয়ে যাবে। আপনারা তো এতো সহজে এটা করবেন না, আপনারা চান বিএনপি জামাত সমস্যাতেই জর্জরিত থাকুক। কারণ এতেই আপনাদের লাভ। আবেগী বাঙালির আবেগ নিয়ে ব্যবসা করতে লাভ, চেতনা নিয়ে কারবার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে লাভ, বিএনপিকে গালি দিতে লাভ, খোঁচা দিতে লাভ, নন্দঘোষ বানাতে লাভ, আমাদের মতো তরুণদেরকে - যারা মনেপ্রাণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় - তাদেরকে নিয়ে খেলতে লাভ, দলে ভেড়াতে লাভ, কার্যসিদ্ধিতে লাভ, সাফায় গাওয়াতে লাভ, দালালি করাতে লাভ (৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে গণজাগরণ মঞ্চে যেমনটা দেখা গেছে), শুধু লাভ আর লাভ। এমন লাভের হাঁড়ি কি আপনারা সহজে ভাঙতে চাইবেন?

আপনারা চাইলেই আজকের সংকট অনেক আগেই সমাধান করে ফেলতে পারতেন। কিন্তু আপনারা ইচ্ছে করে সেটা করেননি, প্রতিদিন সংকটকে নতুন করে ঘনীভূত করছেন। কারণ আপনাদের দীর্ঘ এজেন্ডা আছে, নিজস্ব স্বার্থের এজেন্ডা বাস্তবায়ন আছে, র' এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন আছে। সাধে কি আর ভারত আপনাদেরকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় দেখতে ভালোবাসে? র' এর গোয়েন্দা সহায়তা কি এমনি এমনি পাচ্ছেন বলে বিশ্বাস করতে বলেন?

সবার উপর আছে আপনার/আপনাদের ক্ষমতা প্রেম। কারণ এমন এমন কিছু কাজ আপনারা করেছেন যে, ক্ষমতা ছাড়লে আপনাদের চড়া মাশুল দিতে হতে পারে। বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। তাই তো যতো বেশিদিন সম্ভব ক্ষমতা ধরে রাখতে চান। কেননা গদি বাঁচলেই পশ্চাৎদেশ বাঁচবে। হয়তো ক্ষমতায় থেকেই বৃদ্ধ হতে চান। গুরু পাপে লঘু দণ্ড দিয়ে গোলাম আজমের প্রতি যে 'মানবিকতা' দেখিয়েছেন তেমনি ধাঁচের ফিরতি 'মানবিকতা' হয়তো নিজেদের কপালেও দেখতে চাচ্ছেন। ভালো, আপনারা কপালি, আপনাদের কপাল ভালোই হবে। কপাল শুধু পোড়ে আমজনতার।

সব কথার শেষ কথা, নিজ উদ্যোগে জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করুন। যতক্ষণ না আপনাকে যেমনটা বলেছি তেমনটা করছেন, ততোক্ষণ খালেদা/বিএনপির কানে জামাত-শিবির ছাড়ার প্যানপ্যানানি করে লাভ নেই। প্রতিদিন এই সব প্যানপ্যানানি শুনতে শুনতে ঘেন্না ধরে গেছে। নিজ উদ্যোগ কাজ সারেন। এটা আপনাদের জন্য অপারেশন ডাউলভাত। দয়া করে বলবেন না, এটা আদালতের কাজ, আইন তো নিজের গতিতে চলে। দয়া করে আর লোক হাসাবেন না। বাংলাদেশে আইন-আদালত কিভাবে চলে সবাই জানে। ৫ তারিখের নির্বাচন দেখে যে পরিমাণ হেসেছি এখনও হাসি হজম করতে পারিনি। কি একখান নির্বাচনই না করলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জার নির্বাচন! বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোটের নির্বাচন! বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জাল ভোটের নির্বাচন! বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ নির্বাচন! তারপরে ভোটের পরদিন সংবাদ সম্মেলনে কী হাসি! দেশ থেকে লজ্জা-শরম সব যেন উঠে গেছে! আপনার জায়গায় আমি হলে আত্ম-লজ্জায় সুইসাইড না করলেও অনন্ত সুদীর্ঘ সময়ের জন্য লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যেতাম। কিন্তু আপনারা উলঙ্গকে নেংটি পরানোর মতো ভোটের দুদিন পর নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে বলালেন ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে! আসলে পড়েছে ৪ শতাংশ। আপনারা BAL (Bangladesh Awami League) হতে পারেন, আমরা সাধারণ জনগণ আবাল (মূর্খ) না।

এরপরও যদি আইন-আদালতের দোহাই দেন তো বলবো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য নিয়ে একদম টেনশন নিয়েন না। আপনারা আইন-আদালতকে যদি এতোটাই শক্ত কাঠামোতে দাঁড় করিয়ে থাকেন তাহলে রায়গুলো পর্যায়ক্রমে নিয়মমাফিক কার্যকর হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। কিন্তু এবার যদি আমতা আমতা করে বলেন- না, এটা করতে আমাদেরকেই লাগবে। তবে প্রশ্ন করব, পাঁচ বছর করেছেনটা কি? সম্পদ শত গুণ করতে ব্যস্ত ছিলেন? কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্যকে দীর্ঘায়ত করলেন? পাঁচ বছরে পুরো বিচারকার্য শেষ করাটা কি অসম্ভব ছিল? নাকি নির্বাচনকালে মুলা হিসেবে ঝুলিয়ে রাখার জন্য এটা ছিল একটা রাজনৈতিক ধান্দা। তিক্ত হলেও আমরা জানি শেষোক্তটাই সত্য। আপনারা কতোটা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জাতি সেটা হারে হারে টের পেয়ে গেছে। গত কয়েক মাসে দেশ রসাতলে গেছে তবুও আপনি আপনার জেদটা ধরে রেখেছেন। যেন দেশটা শুধু আপনার বাবারই। আপনার কারণেই এতো ক্ষতি, এতো অপমৃত্যু। সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হয়ে থাকলে, জননেত্রী হয়ে থাকলে আপনি অনেক আগেই জনগণের দুঃখ-দুর্ভোগ-দুর্দশা উপলব্ধি করে ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করতেন। জাতি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকতো। কিন্তু ইতিহাস জানে, ডিক্টেটররা এটা বুঝেও বোঝে না বলেই তারা ডিক্টেটর।

আজ আপনি করলেন কি? জনগণের সামনে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন হাজির করলেন: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান নাকি গণতন্ত্র?

দুটোকে দুহাতে রেখে একটা বেছে নিতে বললেন।

জনগণকে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করালেন। জনগণকে দুভাগ করে ফেললেন। অথচ কোন একক ভাগই সঠিক নয়। জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেমন চায় গণতন্ত্রও চায়। জনগণ গণতন্ত্র যেমন চায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও চায়। দুটোকে মুখোমুখি করানোর মানে কি?

আপনি কি বলতে চান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলে গণতন্ত্র না হলেও চলবে? আর মানুষ যদি গণতন্ত্র চায় তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে না?

আপনারা বলতে চাইলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর দেখতে চাইলে আ'লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। তার মানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আপনাদের ক্ষমতায় থাকার একটা ইস্যু মাত্র? আপনাদের কাছে এটা স্রেফ নির্বাচনী ইস্যু যদি না হতো বিষয়টাকে শুরু থেকেই আরও সিরিয়াসলি নিয়ে আরও আগেই সমাধান করে ফেলা যেত। আর আপনারা গণতন্ত্রের উপর আস্থা হারাচ্ছেন কেন? গণতন্ত্রের কারণেই তো আপনারা এলেন, গণতন্ত্রের কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলো। এখন গণতন্ত্রের প্রাণ জনগণ যদি মনে করে আপনাদের ইচ্ছাকৃতভাবে দীর্ঘায়ত করা/ঝুলিয়ে রাখা কাজটা শেষ করতে আপনাদেরকেই লাগবে তবে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতেই আপনাদেরকে আবার নির্বাচিত করে আনবে। কিন্তু কি কারণে জানি না জনগণের ওপর আপনাদের আস্থা নেই। আপনারা জোরজবরদস্তি করে স্বৈরাচারী কায়দায় থেকে গেলেন। দেশটাকে বানালেন আওয়ামী মুল্লুক। জনগণকে জনগণের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করলেন। জনগণ যদি অন্য কাওকে ক্ষমতায় আনতো, তারা যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা নিয়ে টালবাহানা করতো তবে জনগণকেই নিয়ে না হয় আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। এটাই হলো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কিন্তু আপনারা জোর যার মুল্লুক তার কারবার শুরু করলেন।

আচ্ছা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করাই যদি এই পাতানো নির্বাচন দিয়ে আপনাদের ক্ষমতা আঁকরে থাকার কারণ- তাহলে বলুন তো এই রায়গুলো কার্যকর করতে আপনারা আর কত দিন সময় নিবেন? তিন মাস? চার মাস? এর পর কি ক্ষমতা ছেড়ে সর্বদলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন নাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার টেনেটুনে আরও ৫ বছর নিয়ে যাবেন? ততদিন কি বাংলাদেশ আর 'বাংলাদেশ' থাকবে? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কিছু যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার কাজটি করতে গিয়ে আর কতো নাটক করবেন? অজস্র অপরাধের জন্ম দিবেন? আর কতো কলঙ্কের কালিতে লেপন করবেন বাংলাদেশের নাম? রায়গুলো দ্রুত কার্যকর করে জাতিকে দয়া করে আপনাদের নোংরা পলিটিক্স খেলা থেকে মুক্তি দিন।

আর হ্যাঁ, সবকিছুকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ইস্যু বানিয়ে ফেলবেন না। এটা আপনাদের মজ্জাগত খারাপ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সবই অবশ্য আপনাদের পূর্ব পরিকল্পনা। আপনারা এই বিচারকার্যকে অতি চাতুর্যের সাথে এমন টাইমিংয়ে ফেলেছেন যেন বিরোধীদের তত্ত্বাবধায়ক/নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলনকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের আন্দোলন বলে অপপ্রচার করতে পারেন। এই অপপ্রচারের মাধ্যমে জামাতিদের যুদ্ধাপরাধী নেতাদের জন্য মাতম-তাণ্ডব-নাশকতা আর বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের আন্দোলনের পার্থক্য একাকার করে দিয়েছেন। (তারা আওয়ামী বিরোধী জোট বটে কিন্তু সব বিষয়ে একজোট না- এটা আপনারা ভালো করেই জানেন) আপনাদের এমন রাজনৈতিক দুষ্ট বুদ্ধির নিন্দা করতেই হয়। কারণ আপনারা জাতির স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোকে তামাশা বানিয়ে ফেলেছেন। আওয়ামী লীগপ্রেমী কট্টর সমর্থকরা ছাড়া দেশপ্রেমিক সাধারণ সমর্থকরাও এ কথাগুলোতে একমত হবেন জানি।

পরিশেষে বলছি, জনগণকে শান্তিতে থাকতে দিন, বাংলাদেশকে শান্তিতে থাকতে দিন। জোরজবরদস্তি ক্ষমতা ধরে রাখা থেকে শিগগির আপনাদের বিদায়ই বর্তমানে শান্তির সবচেয়ে সহজ পথ। দয়া করে আর জ্বালাবেন না, পোড়াবেন না। অঙ্গার হয়েই আছি। আর হ্যাঁ, আপনার কাছে এই খোলা চিঠি লেখার 'অপরাধে' আমার পেছনে সারমেয় বা টিকটিকি লেলিয়ে দিবেন না প্লিজ। আমি আমজনতার লোক। এই চিঠি আমজনতার পক্ষ থেকে লেখা খোলা চিঠি।

_______
সাইফ সামির

এই চিঠির লিংক: w.saifsamir.com/open-letter-to-awami-league-prime-minister-sheikh-hasina
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৫১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×