somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান
চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

প্রিয়ন্তী-০১ (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙ্গা তরুণী )

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয়ন্তীর সঙ্গে সুশান্তর বিয়ে হয়েছে তিনবার। একই বর-কনে তিনবার বিয়ের বিষয়টি অনেকের মনে কৌতুহলের সৃষ্টি করল, কারো অবিশ্বাস্য মনে হলো, কারো কারো মনে হাস্য রসের সৃষ্টি করল, কারো কারো হৃদয়কে আহত করল। কিন্তু একই বর-কনের মধ্যে তিনবার বিয়ে হবে কেন? এই কেন-এর উত্তর দিতে গেলে সমাজের যে অসঙ্গতি ফুটে উঠবে তা অনেকের বিবেককে দংশন করবে আর পরের ঘটনাগুলো মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে।
প্রিয়ন্তী, প্রিয়ন্তী চক্রবর্তী তখন রাজশাহী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। এ-প্লাস পেয়ে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পাস করেছে। ক্লাসের লেখাপড়ার বাইরে সে প্রচুর বই পড়ে। ইংরেজি সাহিত্য, বাংলা উপন্যাস, কবিতা, ছোটগল্প এমনকি যে কোন একটা বই হাতের কাছে পেলেই সে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে। বলা যায় প্রিয়ন্তী একজন জ্ঞান পিপাসু মেয়ে। ক্লাসের মাঝে একটু অবসর পেলে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা যখন কলেজের মাঠে গোল হয়ে বসে চিনাবাদাম খায়, কেউ কেউ তাদের ভালোবাসার মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলে, প্রিয়ন্তী তখন লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ে। তার চালচলন সবকিছুই একেবারে ব্যতিক্রম।
প্রথম বর্ষে প্রিয়ন্তী ভালো রেজাল্ট করেছে। প্রিয়ন্তীএত ভালো রেজাল্ট করবে আশা করেনি, তাই তার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে, সে আরো ভালো রেজাল্ট করার জন্য আরো বেশি করে লেখাপড়া শুরু করেছে। আজকাল সে কলেজের ক্লাস শেষ করেই মেসে ফিরে না, লাইব্রেরীতেই সময় কাটায়। কলেজ চালু থাকলে তার দু’টো ঠিকানা, ক্লাস আর লাইব্রেরী, কলেজ বন্ধ থাকলে মেস।
একদিন প্রিয়ন্তী ক্লাসের ফাঁকে লাইব্রেরীতে বসে একটা বই পড়ছিল। বই পড়া তো নয় যেন ধ্যানে মগ্ন থাকা। প্রিয়ন্তীর ক্লাসফ্রেণ্ড সুশান্ত, সেও ভালো ছাত্র তবে প্রিয়ন্তীর মতো নয়। প্রথম কয়েকদিন ক্লাস করার পর একদিন প্রিয়ন্তীর সঙ্গে সুশান্তর দৃষ্টি বিনিময় হলো। প্রিয়ন্তী লক্ষ্য করেছে সুশান্ত তার সঙ্গে কথা বলার অজুহাত খুঁজে। প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে যেন কিছু বলতে চায় কিন্তু বলতে গিয়েও যেন থেমে যায়। প্রিয়ন্তীরও প্রায় মনে হয় সুশান্ত যেন তার চেনা, কোথায় যেন দেখেছে কিন্তু মনে পড়ে না।
সেদিন প্রিয়ন্তী ক্লাসের ফাঁকে লাইব্রেরীতে একটা বই পড়ছিল। সুশান্ত একটা বই খোঁজার অজুহাতে প্রিয়ন্তী যেখানে বসে বই পড়ছিল ঠিক তার কাছের একটা বই ইচ্ছা করে র্যাক থেকে ফেলে দিল।
প্রিয়ন্তী বই থেকে মুখ তুলে তাকাল। সুশান্তর গায়ের রং শ্যামলা, লম্বা, নামের সঙ্গে আচরণের একটা অদ্ভুত মিল আছে। তার চেহারায় সরলতার ছাপ আছে যা সহজে কারো মধ্যে পাওয়া যা না। কখনো সুযোগ পেলে প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে থাকে, কখনো প্রিয়ন্তীর চোখে চোখ পড়লে সুশান্ত আগে চোখ নামায়।
প্রিয়ন্তীর চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল কিন্তু সে কিছু বলল না।
সুশান্ত সরি প্রিয়ন্তী বলে বইটা তুলে রাখল। তার ধারণা ছিল প্রিয়ন্তী হয়ত কিছু বলবে আর সে অজুহাতে সুশান্ত তার সঙ্গে কথা বলবে কিন্তু প্রিয়ন্তী কিছু না বলায় সুশান্ত কিছুটা নিরাশ হলো।
আজ সুশান্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে করেই হোক আজ সে প্রিয়ন্তীর সঙ্গে কথা বলবেই। সে বইটা তুলে রেখে প্রিয়ন্তীর মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসল, প্রিয়ন্তী।
প্রিয়ন্তী কিছু বলল না।
সুশান্ত মনে মনে বলল, কী আনকালচার্ড মেয়ে রে বাবা, আমি কথা বললাম আর সে কোন কথাই বলল না। সে যেমন ছিল তেমন করেই বইয়ে মনোযোগ দিল।
সুশান্ত একটু নড়েচড়ে বসল।
না, প্রিয়ন্তীর কোন কথা নেই।
সুশান্ত প্রিয়ন্তী, প্রিয়ন্তী বলে দু’বার ডাক দিল।
তারপরও কোন কথা নেই।
সুশান্ত আপন মনে আস্তে আস্তে বলল, প্রিয়ন্তী কি কানে শোনে না নাকি? ক্লাসে তো কোনদিন এমন মনে হয়নি?
প্রিয়ন্তী বইটা বন্ধ করে রেখে বলল, একটা বই পড়ছিলাম, খুব ইন্টারেস্টিং তো।
আমি তিনবার ডাক দিয়েছি।
শুনেছি।
কথা বললি না যে! খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলি বুঝি?
হ্যাঁ, আমি কোন কাজ করলে খুব মনোযোগ দিয়ে করি আর কোন কাজ না করলে তার ধারের কাছেও যাই না।
সুশান্ত কিছু বলল না।
সুশান্ত কেমন আছিস?
ভালো, তুই?
ভালো আছি।
প্রিয়ন্তী একটা খবর শুনেছিস?
কী খবর?
আজ আর ক্লাস হবে না।
কেন?
স্যার অসুস্থ।
ও আমি পরের ক্লাসটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তাহলে তো আজ আর থেকে লাভ নেই, বলে প্রিয়ন্তী চেয়ার থেকে উঠল।
সুশান্ত মিষ্টি হাসি হেসে বলল, আমি বুঝি তোকে বলে ভুল করলাম।
কেন?
এই যে তুই উঠছিস, আমি যদি কিছু না বলতাম তবে তুই আরো কিছুক্ষণ লাইব্রেরীতে বসতিস।
হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক, প্রিয়ন্তী একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার বসল।
প্রিয়ন্তী সুশান্তর দিকে তাকাতেই সুশান্ত হাসল।
সুশান্তর হাসিটা অদ্ভুত। একেবারে সহজ-সরল, নিষ্পাপ একটা হাসি। আজ প্রিয়ন্তীর মনের মধ্যে যেন সুশান্তর ছবিটা গেঁথে গেল, সুশান্ত তুই কি হোস্টেলে থাকিস?
না একটা মেসে।
হোস্টেলে সিট পাসনি?
না, অবশ্য কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে পেতাম।
দিলে ভালো করতিস।
রাজনীতিতে যোগ দিলে মিছিলে যেতে হবে।
যাবি।
তুই যেতে বলছিস?
বাঃ আমি যেতে বললে তুই যাবি?
সুশান্ত খুব সরলভাবে বলল, হ্যাঁ।
সুশান্ত এটা কিন্তু ঠিক না, আমি যেতে বললেই তুই যাবি?
সুশান্ত কিছু বলতে গিয়ে যেন আটকে গেল। হয়ত বলতে চেয়েছিল, তোকে আমার ভালো লাগে তাই কিন্তু প্রিয়ন্তীর গম্ভীর শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না।
চলবে...
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×