শৈশব থেকেই জামাল অত্যন্ত চঞ্চল, চটপটে আর ডানপিটে ছিল। প্রতিদিন স্কুলে কোন বন্ধুর কান টেনে ধরা, গালে চড় দেয়া বা কারো বই ছিঁড়ে দেওয়া এসব ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস। স্কুলে দেরিতে যাওয়া, টিফিন পিরিয়ডে স্কুল থেকে পালিয়ে বাসায় ফেরা, স্কুলের নাম করে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা, এসব শুরু হয়েছে সেই ক্লাস সিক্সে ভর্তির পর থেকে। পর পর দু’বার ফেল করার পর তৃতীয় বার এস.এস.সি পাস করল। কলেজে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে তার উশৃঙ্খলতা আরো অনেকগুণ বেড়ে গেল। সেই সঙ্গে যোগ হলো তারুণ্যের উচ্ছ্বলতা। একদিন জামাল, তার বন্ধু শরীফ ও আরিফ কলেজের মাঠে বসে চিনাবাদাম খাচ্ছিল। তখন পাশ দিয়ে দল বেঁধে যাচ্ছিল তাদের ক্লাশেরই মেয়েরা।
জামাল শরীফকে জিজ্ঞেস করল, শরীফ ঐ মেয়েটা কে রে?
কেন, পছন্দ হয়েছে না কি?
চেহারাটা সুন্দর, তাই না? জামাল জিজ্ঞেস করল।
আরিফ তিরস্কারের সুরে বলল, কথায় আছে না বেল পাকলে কাকের কী?
জামাল রাগের সুরে বলল, তুই কী বলতে চাচ্ছিস?
শরীফ বলল, আরিফ ঠিকই বলেছে, কোটিপতি ফয়সাল সাহেবের মেয়ে ব্রিলিয়াণ্ট, সুন্দরী এবং বাবার একমাত্র সন্তান। ঐশীকে তোর মতো হেট্রিক করে এস.এস.সি পাস করা জামাইর গলায় ঝুলাবেন না।
জামাল বলল, দেখ দোস্ত আমার পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে তামাশা করিস্ না, আমার বাবাও কোটিপতি এবং আমিও বাবার একমাত্র সন্তান। আসলে ভালোবাসা কখনো পরীক্ষার রেজাল্ট আর ব্যাংক ব্যালেন্স দিয়ে হয় না।
শরীফ বলল, তা অবশ্য ঠিক, তোর কথায় যুক্তি আছে, দেখবি নাকি একবার চেষ্টা করে?
আরিফ বলল, ওকে পাত্তা দিলে তো?
জামালের জিদ চেপে গেল, তোরা আমাকে ভাবিস্ কি? আমি পাত্তা পাবো না?
আরিফ বলল, চ্যালেঞ্জ থাকল, তুই যদি ঐশীকে বলতে পারিস্ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর সে যদি তোর প্রস্তাবে রাজি হয় তবে আমি তোকে-।
জামাল কথার মাঝে বলল, তবে কী বল্? বিরিয়ানি খাওয়াবি?
হ্যাঁ বিরিয়ানি খাওয়াব কিন্তু যদি না পারিস্ তবে?
জামাল সঙ্গে সঙ্গে বলল, তবে আমি খাওয়াব।
এসময় ঐশীসহ একদল ছাত্রী হাঁটতে হাঁটতে তাদের অতিক্রম করতেই জামাল উঠে ঐশীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, তুমি নিশ্চয়ই ঐশী?
ঐশী বলল, হ্যাঁ।
আমি জামাল ফার্স্ট ইয়ার আর্টস্।
ঐশী রাগান্বতিচোখে তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে উদ্যত হলে জামাল বলল, চলে যাচ্ছ যে?
তোমাকে তো কোনদিন ক্লাসে দেখলাম না, এমনিভাবে ক্লাসের সময় আড্ডা দাও বুঝি, আমার ক্লাস আছে আমাকে যেতে দাও।
ঐশী আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ঐশী রাগান্বিতচোখে তাকিয়ে বলল, ননসেন্স, তোমার মা-বোন নেই, কাউকে দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করে? আবার যদি কোনদিন আমার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করো তো ভালো হবে না বলছি, বলে ঐশী চলে গেল।
আরিফ তিরস্কারের সুরে বলল, বলছিলাম না বেল পাকলে কাকের কি এবার বুঝলি?
আমারো নাম জামাল আমি ওর কথার এমন জবাব দিবো যে ওর জীবনে মনে থাকবে। সাহস কত মেয়েটার বলে আরেকদিন একথা বললে ভালো হবে না। আমার ভালোমন্দ আমি বুঝব।
কয়েকদিনের মধ্যে জামাল বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দলের ছাত্র সংগঠনে যোগ দিল। আর সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর থেকে যেন বই পুস্তক এক রকম ছেড়েই দিল। কলেজে গিয়েই পার্টির জন্য ছাত্রদের সঙ্গে আড্ডা, আজ এক প্রোগ্রাম, কাল আরেক প্রোগ্রাম, সন্ধ্যাবেলা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দলের জেলা শাখার অফিসে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতা এসবের মধ্য দিয়ে দিন চলতে থাকল।
কয়েকদিন পর কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন। দলের প্রয়োজনে জামালকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক পার্টির জেনারেল সেক্রেটারী পদে মনোনয়ন দেয়া হলো। ফলে জামালের ব্যস্ততা আরো হাজারগুণ বেড়ে গেল। দেয়াললিখন, ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যানভাস করা এসবের মধ্যে সে যেন মহাব্যস্ত। তার সঙ্গে রয়েছে দলের জেলা শাখার সভাপতি, সেক্রেটারী তাঁরা সবসময় কলেজ সংসদের নির্বাচনকে মনিটিরিং করছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পার্টির অফিসে সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক দলের জেলা শাখার সভাপতি মোস্তফা সাহেব সেদিন জামালকে বললেন, জামাল তোমার সর্বশেষ অগ্রগতি কেমন? জিততে পারবে তো?
বড়ভাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আপনাদের সহযোগিতা পেলে ইনশাআল্লাহ আমি জিতবোই।
আমার অবশ্যই তোমাকেসহযোগিতা করবো, বলো কোন সমস্যা আছে?
বড়ভাই আমার প্রতিদ্বন্দ্বি সাইদ, ইদানিং খুব বাড়াবাড়ি করছে ওর টাকার জোরও বেশি, বড় লোকের ছেলে টাকা তো থাকবেই। আপনি তো জানেন আজকাল টাকা-পয়সা ছাড়া--।
তুমি বলো কি জামাল? টাকার অভাবে তুমি হেরে যাবে? তবে দল আছে কী জন্য? আমরা আছি কী জন্য?
দলের সেক্রেটারী বেলায়েত সাহেব বললেন, অবশ্যই, তুমি অ্যারেঞ্জ করো, ইলেকশনে জিতার জন্য তোমার কত টাকা লাগবে?
জামাল কিছু বলল না।
বেলায়েত সাহেব আবার বলতে শুরু করলেন, হ্যাঁ ইলেকশনের সাত দিন আগে থেকেই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাবার জন্য পাঁচটা মোটর সাইকেল থাকবে, প্রয়োজনবোধে মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে ক্যানভাস করবে, এটা শুধু তোমার ইলেকশন না, দলের ইলেকশন, এই ইলেকশনের সঙ্গে আমাদের দলের মান-সম্মান জড়িত। তোমাকে অবশ্যই জিততে হবে।
মোস্তফা সাহেব বললেন, জামাল তুমি আর বসে থেকো না, হাবিব কোথায়?
হাবিব বলল, জি ভাই বলুন।
তুমি একটু কথা বলতে শেখো, জামাল আর তুমি দু’জনে স্ট্যাডি করো, ইলেকশনের দু’দিন আগে আমরা আবার বসব, সেদিন তোমরা আমাদের ইলেকশনের সম্ভাব্য রেজাল্ট জানাবে, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে এলো কলেজে উত্তেজনা ও নির্বাচনী প্রচারণা ততই বেড়ে চলল। প্রায় দিনই মিছিল, মিটিং এর মধ্য দিয়েই দিন চলতে থাকল। হাবিব আর জামাল নির্বাচনের দু’দিন আগে যে পরিসংখ্যান বের কবল এবং তাতে যে চিত্র ফুটে উঠল তা শুনে সভাপতি মোস্তফা সাহেব ক্ষোভের সঙ্গে দু’জনকেই বললেন, তোমাদের উপর আমার বিশ্বাস ছিল। কিন্তু তোমরা নিজেরাই যে রেজাল্ট জানালে তাতে আমি আর তোমাদের উপর ভরসা রাখতে পারছিনা। হাই কমাণ্ডের নির্দেশ, কর্মীদের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা, সবকিছুই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে দাঁড়াবে, জবাব দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে যাব। উঃ আমি আর ভাবতে পারছি না, হায়দার।
হায়দার সাহেব মৃদু কণ্ঠে সাড়া দিলেন, জি বড়ভাই।
তোমাকে যে আমি কী বলব বুঝতে পারছি না, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছ, শহরের উপর কলেজে ইলেকশন অথচ তুমি পিছিয়ে আছ, অনেক সময় পেরিয়ে গেছে আর বসে থাকার সময় নেই। তুমি এখনি যাও হিটলারকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তুমি ফিরে না আসা পর্যন্ত আমি অফিসেই আছি।
জি বড়ভাই, আমি আসছি বলে হায়দার সাহেব চলে গেলেন।
মোস্তফা সাহেব রাগান্বতিস্বরেজিজ্ঞেস করলেন, জামাল-হাবিব তোমরা প্রতিদিন মিছিল বের করো তো, তাই না?
জি ভাই।
কাল সাড়ে দশটায় তোমরা মিছিল বের করবে। তোমাদের সঙ্গে হিটলারের কয়েকজন ছেলে যোগ দিবে, অপরিচিত কাউকে দেখলেও কিছু জিজ্ঞেস করবে না।
হাবিব জিজ্ঞেস করল, তারপর?
মোস্তফা সাহেব রাগান্বিত স্বরেবললেন, তারপর কী হবে তা এখন তোমাদের কারো জানার প্রয়োজন নেই। যা ঘটবে তা তোমরা শুধু দেখে যাবে কিছু বলবে না। যা করার আমিই করবো।
হাবিব এবং জামাল বিণয়ের সঙ্গে বলল, জি ভাই।
তোমরা এখন যাও, মনে রাখবে কাল সকাল সাড়ে দশটায় তোমরা মিছিল বের করছ।
চলবে...
আলোচিত ব্লগ
আমাদের দাদার দাদা।
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?
আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।
পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন