somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগীয় অভিধান কাটাছিঁড়া: 'ছাগু' ও 'কেপি টেস্ট'

০৯ ই মে, ২০০৮ দুপুর ১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সামহোয়্যারইন ব্লগে নতুন ঢুকেই যে শব্দগুলো শুনে আপনি টাসকি খেয়ে যান, তার ২টা হলো, 'ছাগু' ও 'কেপি টেস্ট'। আপনি ভাবেন, শান্তিতে ব্লগিং করবেন, বাংলাদেশী ভাইদের সাথে বাংলায় আলাপচারিতা চালাবেন; এর মধ্যে আবার ছাগল ঢুকে কোথা থেকে? আপনি সারাজীবনে অনেক টেস্টের নাম শুনেছেন - ক্লাস টেস্ট, ইউরিন টেস্ট, পারমাণবিক বোমা টেস্ট; কিন্তু কেপি টেস্ট আবার কি? টাসকির পরে টাসকি। এই ব্লগীয় শব্দগুলো এতই শক্তিশালী যে, এগুলোর ব্যবহার এবং পরিচিতি সামহোয়্যারইন ব্লগ ছাড়িয়ে বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা এই শব্দ সমূহের পোস্ট মর্টেমে হাত দেই।

[সাইমুম থাকলে তিনিই কাজটি করতেন। কিন্তু নারী নির্যাতন মামলায় ফেঁসে যাওয়ায় সামহোয়্যারইন থেকে তিনি ব্যান হওয়ায় আমাকেই কাজটি করতে হচ্ছে। তবে তাকে স্মরণ করি। তিনি বাংলা ব্লগের প্রবাদ পুরুষ ছিলেন। চাঁটগায়ের লোক।]

ছাগু:

ছাগু শব্দের জনক মুখফোড় নামে এক বদ ব্লগার। তিনি আদমচরিত নামে এক নাফরমানী রম্য সিরিজ বের করেন, যেখানে ঈশ্বরের একটি স্বর্গপালিত ছাগল ছিল। ছাগলটি চরম নির্বুদ্ধিতা এবং অলওয়েজ ম্যাৎকারের জন্য কিলগুঁতা খাইলেও ঈশ্বর তার নির্বোধ ছাগুটিকে কখনো কখনো পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন।

কিছু বদ লোক এই সুযোগটা নিল। তখন ত্রিভুজ নামে এক শক্তিমান ব্লগারের ব্যাপক হাঁকডাক ছিলো। এই বদ লোকগুলা এই শক্তিমান হাঁকডাকে ঈর্ষান্বিত হয়ে ত্রিভুজকেই ছাগু নামে অভিহিত করে। তার শক্তিমান লেখনীকে ছাগলের ম্যাৎকার বলে বিদ্রুপ চালাতে থাকে। তখন থেকে 'ছাগু' এবং ব্লগার ত্রিভুজ সমার্থক হয়ে যায়।

ছাগু শব্দের বিস্তৃতি এবং বিবর্তন সেখানেই থেমে থাকে নি। এরপরে ওই বদ লোকগুলা যথারীতি যাকেই জামাতি বলে সন্দেহ হয়, কার্যকলাপে প্রমাণিত হয়, তাকেই ছাগু বলে ট্যাগ লাগাতে থাকে। একে একে আশরাফ রহমান, মাইনুল, আওরঙ্গজেব, মাহমুদ রহমান, চতু্রভূজ, ফারজানা মাহবুবা, উম্মু আব্দুল্লাহ, আস্তমেয়ের মত শক্তিমান ব্লগারদেরকে ছাগু নামে বিদ্রুপ করতে থাকে। এদের মধ্যে মেয়ে ব্লগারদেরকে ছাগু না ছাগি বলা হবে, তা নিয়ে প্রথমে মতভেদ থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত হয়, ছাগুর কোন লিঙ্গভেদ নেই। সব জামাতি ব্লগারই ছাগু।

ব্লগার ত্রিভুজকে অবশ্য আর ছাগু বলা হয় না। নিজগুণেই তিনি অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে যান। তাকে 'ছাগুরাম' বলে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয়।

কেপি টেস্ট:

ব্লগে কেপি টেস্টের উদ্ভাবক এ-টীমের হোসেইন বা শমসের। 'কেপি'র আভিধানিক এবং প্রচলিত অর্থ খানকির পোলা। কিন্তু সামহোয়্যারইন ব্লগ গালাগালিকে প্রমোট করে না। আমরা নিরপেক্ষ ব্লগাররা সবাই শান্তিকামী, গালাগালির বিপক্ষে। এ-টীমও আমাদের মত নিরপেক্ষ ব্লগারদেরকে সমীহ করে চলে। তাই তারা খানকির পোলা টেস্ট না বলে কেপি টেস্ট অর্থ 'কাঁঠাল পাতা টেস্ট' মেনে নেয়।

কাঁঠাল পাতা নামকরণের পিছনে আবার সেই ছাগু প্রসঙ্গ এসে যায়। ছাগল যতোই ছদ্মবেশ ধরুক, কাঁঠাল পাতার লোভ সে কখনোই সামলাতে পারে না। এমনিভাবে যারা ছদ্মবেশী জামাতি ব্লগার, তারা যতই স্বাধীনটা মুক্তিযুদ্ধ নিয়া চিল্লাক, ঠিকমত পরিবেশ পেলে তাদের জামাতি চেহারা বেরিয়ে আসে। সুতরাং কাঁঠাল পাতা টেস্ট মূলত এসব ছদ্মবেশী জামাতিদেরকে ধরার জন্য এ-টীমে ব্যবহার করা শুরু করে।

কেপি টেস্টকে ঠিকঠাক বুঝতে কিছু উদাহরণ দেই। ব্লগে আমার কয়েকজন প্রিয় ব্লগার হলেন ফারহাদ দাউদ, মেহরাব শাহরিয়ার, সিহাব চৌধুরী প্রমুখ। তারা সবসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, গালাগালিকে আমার মতই ঘৃণা করেন, আস্তমেয়েকে জামাতি মনে করেন না, তার ধর্মীয় লেখনী প্রতিভায় আমার মতই তারাও মুগ্ধ। সমস্যা হল, এ-টীম মনে করে, আস্তমেয়ে, ফারজানা মাহবুবা, উম্মু আব্দুল্লাহরা জামাতি পেইড ব্লগার। অতএব, তাদেরকে সমর্থন করা মানে - মুখে যতই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলুক - রাজাকারি।

সুতরাং, সিহাব চৌধুরী যখন বলেন,

"ফারজানার ব্যান অনুচিত বলে মনে করিনা (উনার চাতুর্যপূর্ণ লেখনি দ্বারা যেভাবে চিনহিত রাজাকারদেরকে নিস্কলংক করছিলেন তাতে সামহোয়ার ইনের প্রকৃত স্বাধীণতার চেতনার অটুটত্ব বজায় রাখার জন্য ফারজানার ব্যান অপরিহার্য ছিল ), তবে উনার সাথে যা হয়েছে , যেভাবে ব্যান হয়েছেন তা জঘন্য হয়েছে। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি ব্যান প্রক্রিয়ার, সাথে ফারজানার প্রতি সমবেদনা । "

তখন তিনি কেপি টেস্টে পজিটিভ প্রমাণিত হবেন। কারণ, এ-টীমের যুক্তি মতে, এই মন্তব্যে একজন রাজাকারকে আইডেন্টিফাই করার পরেও সিহাব তার পক্ষে কথা বলছেন।

মেহরাব শাহরিয়ার যখন আস্তমেয়ের বিদায়ে দুঃখ ভারক্রান্ত হৃদয়ে ইংরেজীতে বলেন, "the deliberate guile of the authority , ignoring the gravity ", তখনও তিনি কেপি টেস্টে পজিটিভ প্রমাণিত হবেন।

ফারহান দাউদ যখন তার স্বপ্নকন্যা আস্তমেয়ের বিদায়ে তার সাথে পৃথিবী ভ্রমণ না করতে পারার দুঃখে কাহিল হয়ে পড়েন, তখন ফারহান দাউদও কেপি টেস্টে পজিটিভ প্রমাণিত হবেন।

আমার মতে, এভাবে কেপি টেস্টের ফলাফলে ভুল থাকারই সম্ভাবনা বেশি। রাজাকাররা কি মানুষ নয়? আর ধর্মের কথা লিখলেই তাকে রাজাকার বলতে হবে? মানুষের প্রতি মানুষের সমবেদনা থাকতেই পারে। তবে আমার মত প্রকাশের জন্য এ পোস্ট নয়, এ পোস্ট শুধু অভিধানের পোস্টমর্টেম করে।
৬৬টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×