somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক

২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রত্যেক মানুষই অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কামনা করে। প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব এবং সহচরদের সাথে কেউ তিক্ত এবং অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করতে চায় না। সকলেই অপরের প্রিয় পাত্র হতে ইচ্ছুক। তবে এটা কেউ কি ভেবেছে কোন দিন,মানুষের মধ্যে এ ভাবটি কেন বিরাজমান? অপরের কাছে ভাল বিবেচিত হবার জন্যে মানুষের মনে কেন এ প্রবণতা? গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, এর একাধিক কারণ রয়েছে। প্রতিটি মানুষেরই সহজাত আকাংখা হলো অন্যের কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করা, তার সম্পর্কে সবার মনে উচ্চ ধারণা থাকা। অপরের দৃষ্টিকটু হওয়া সকলের নিকটই পীড়াদায়ক। কাজেই মানুষের এ প্রবণতা দীনহীন ভিক্ষুক থেকে নিয়ে শাহানশাহ্‌ রাজাধিরাজ সকলের মধ্যে দেখা যায়। দোকানদার মনে করে মানুষের সাথে তার সম্পর্ক ভালো এবং ব্যাপকতর হোক। সবাই তাকে সৎ বলে বিবেচনা করুক। এতে তার ব্যবসার উন্নতি এবং প্রসারের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিভাবে উকিল-মোক্তার, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, কারখানার মালিক এক কথায় মানব সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিই চায়- সমাজের মানুষের সাথে তার সম্পর্কের সীমা ব্যাপক হতে ব্যাপকতর হোক, সকলেই তার সম্বন্ধে ভালো ধারণা পোষণ করুক। বিশেষ করে যেদিন থেকে গণতান্ত্রিক অধিকার বলে এটা স্বীকৃত হয়েছে যে, দেশ এবং সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব এমন ব্যক্তিবর্গের হাতেই অর্পিত হতে হবে যাদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের আস্থা রয়েছে সেদিন থেকেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভের প্রয়াস একটি স্বতন্ত্র আর্টে পরিণত হয়েছে। এমন অসংখ্য কৃত্রিম পন্থার উদ্ভব হয়েছে যার সাহায্যে একজন লোক সমাজে অনায়াসেই তার জনপ্রিয়তা এবং সমর্থকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষের মধ্যে তার সম্পর্কের পরিধি ব্যাপকতর করতে সক্ষম হয়। মোটকথা, কোন সময় প্রেম-প্রীতি, অর্থসম্পদের মোহ, আবার কোন সময় মান সম্মান এবং উচ্চ মর্যাদার লালসা মানুষকে এজন্যে বাধ্য করে, যেন মানব-সমাজে তার সম্পর্ক ভালো এবং ব্যাপকতর হয় সকলেই তার সম্বন্ধে ভালো ধারণা পোষণ করে তাকে সুনজরে দেখে।

যুগ যুগ ধরে এ আকাংখা পূরণের জন্যে মানুষ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। দাওয়াত করে অপরকে খাওয়াচ্ছে, দরিদ্রের সাহায্যের জন্য উপদেশ দিচ্ছে। নিঃসহায় নিঃসম্বলদের সমবেদনায় গদগদ কণ্ঠে বক্তৃতা দিচ্ছে। কেউ অন্নহারা বস্ত্রহারাদের ডাল-ভাতের দাবী নিয়ে কৃত্রিম মানব প্রেমের পরাকাষ্ঠা দেখাচ্ছে। চাষী-মজুর,সর্বহারাদের কাতারে দাঁড়িয়ে তাদের অধিকার নিয়ে সংগ্রামের অভিনয় করছে। অতঃপর গণ-সমর্থন আদায় করে গদি দখলের পথ করে নিচ্ছে। কখনো বা আদর্শ চরিত্রের অবতার সেজে মানুষের সামনে ধরা দিয়েছে,আবার কখনো বা ক্ষমতা বহির্ভূত ব্যাপারে হাত বাড়াচ্ছে। এমনিভাবে অসংখ্য উপায়ে মানব-সমাজে জনপ্রিয়তার পথ করে নিচ্ছে। মানুষের সাথে সম্পর্কের উন্নতি এবং প্রসারের ক্ষেত্রে অনেকের উদ্দেশ্য দিবালোকের ন্যায় সকলের সামনে ধরা পড়ে; স্পষ্ট বুঝা যায় সে কি উদ্দেশ্যে এ সম্পর্কের উন্নতি এবং প্রসার কামনা করছে। আবার অনেকের ব্যাপারে ধরা না পড়লেও একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই দেখা যাবে এ সম্পর্ক স্থাপনের পিছনে তার কি মুখ্য উদ্দেশ্য রয়েছে।

এতো গেলো সম্পর্ক স্থাপন, এর উন্নতি এবং সম্প্রসারণের ইচ্ছা ও কামনার একটা দিক। আসুন, এখন একজন সত্যিকার মুমিনের জীবনে এর রূপ এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। এ ভূপৃষ্ঠে আল্লাহ্‌র কর্তৃত্ব এবং রাসূলের নিরঙ্কুশ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী এমন একজন মানুষের ভূমিকা এক্ষেত্রে কি রূপ পরিগ্রহ করে এবং করা উচিত। এমন এক ব্যক্তি, যে তার জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সঠিকরূপে অনুধাবন করতে পেরেছে, পার্থিব জগতের উন্নতি, মানমর্যাদা, অর্থসম্পদ অপেক্ষা আখিরাতের উন্নতির চরম কামনা যার অন্তরে শিকড় গেড়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ও তার প্রদত্ত জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে এবং তার ওপর অটল থাকতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র অপর বান্দার কাছে তার এ জীবন বিধানের দাওয়াত পৌঁছাতে ইচ্ছুক, যে ব্যক্তি উপলব্ধি করতে পেরেছে যে,তার স্রষ্টা ও মালিক তার ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করছেন যে, মানুষকে আল্লাহ্‌র এবং রাসূলের সত্যিকার আনুগত্যের দাওয়াত দিতে হবে। এ দুনিয়ায় এমন এক পরিবেশ, এমন এক সমাজ গঠন করতে হবে যার বুনিয়াদ হবে খোদা-প্রদত্ত জীবন বিধান তথা কুরআন ও সুন্নাহ, এমন ব্যক্তির জন্যে মানুষের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা অন্যান্য সকল কাজ থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই যে ব্যক্তি সিদ্ধান্ত করেছে যে, তাঁকে মানুষের মন-মগজ পরিবর্তন করতে হবে, তাদের চিন্তাধারাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে, তাদের চিন্তা কল্পনার ক্ষেত্রে ভাল-মন্দের মাপকাঠি নির্ধারণ করতে হবে। এক কথায় যে ব্যক্তি ইসলামী আদর্শে বিশ্বাস করে এবং চায় যে, মানব জীবনের প্রতিটি বিভাগেই আল্লাহ্‌র অবতীর্ণ বিধানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হোক তার জন্যে প্রথম পদক্ষেপেই মানুষের সঙ্গে নিবিড় ও ঘনিষ্ঠতর সম্পর্ক স্থাপন এবং একে ব্যাপকতর করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অনুরূপভাবে মানুষের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে প্রতিবন্ধক এমন যাবতীয় বিষয় থেকেও দূরে থাকা কর্তব্য। অর্থাৎ এমন সব ব্যাপার থেকে দূরে অবস্থান করা আবশ্যক, যা মানুষের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পরিবর্তে তিক্ততার সৃষ্টি করে।

মানুষের মধ্যে আল্লাহর দিনের দাওয়াত পৌঁছানো, আল্লাহ্‌র দ্বীনের ওপর যে কোন প্রতিকুল অবস্থা বা সংঘাতময় মুহূর্তে অটল-অবিচল থাকা, মানব জীবনের সকল পর্যায়ে আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধানকে প্রতিষ্ঠিত করা, এটা শক্তি প্রয়োগ বা ভীত প্রদর্শনের কাজ নয়; অথবা কোনরূপ জাদু মন্ত্রের দ্বারাও এ কাজ সম্পন্ন হতে পারে না। দুনিয়ায় অন্যান্য কাজের সংগে এখানেই এর পার্থক্য। গায়ের জোরে গুরু হওয়া এবং কাউকে পদানত করা অনেকটা সহজ হলেও কারো অন্তঃকরণ জয় করা মস্তবড় কঠিন কাজ। কোন রাজ্যে জোরপূর্বক রাজত্ব করা এবং ধনভাণ্ডার বল প্রয়োগে হস্তগত করা এক কথা কিন্তু কারো মনের রাজ্যে রাজত্ব করা বা চিন্তাধারার আমূল পরিবর্তন সাধন করা, থেকে সম্পূর্ণ পৃথক ব্যাপার।

একি বস্তু ব্যবহার-পদ্ধতির বিভিন্নতার দরুণ ভালোমন্দ উভয় কাজে ব্যবহৃত হয়। ধরুন, একটা তলোয়ার ডাকাতের হাতে পড়লে মানব সমাজ সস্ত্রস্ত হয়ে ওঠে, আবার আল্লাহ্‌র পথে সংগ্রামী মুঝাহিদের হাতে পরলে শান্তির প্রতীকের রূপ ধারণ করে। তেমনিভাবে মানুষের সংগে পারস্পরিক বন্ধুত্ব এবং সম্প্রীতির সম্পর্ক স্থাপনের বেলাও একই কথা প্রযোজ্য। একজন নিছক অর্থলোভী ও মর্যাদাকাংখী ব্যক্তির মানুষের সংগে সম্পর্ক বাড়ানোর এক উদ্দেশ্য হয়ে থাকে এবং সত্যের পথে আহ্বানকারী ও আল্লাহ্‌র দ্বীনের প্রচারকারীর সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্দেশ্য হয় এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। উদ্দেশ্যের এ ভিন্নতার ফলেই আজ আমাদের কাছে একটার গুরুত্ব অন্যটার তুলনায় অনেক বেশী। সত্যের পথে আহ্বানকারীর জন্য মানুষের সংগে সম্পর্ক বৃদ্ধি গুরুত্ব বর্ণনার পড়ে এই বলে বিষয়টি শেষ করা উচিত ছিল যে দ্বীনের প্রচারকদের জন্যে মানুষের সংগে সম্পর্ক ব্যাপক এবং উন্নত করার জন্য সচেষ্ট থাকা কর্তব্য। কিন্তু কথাটি সবাই জানে সবাই বুঝে। তবু এ ব্যাপারে আরও বিশদ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আমার মতে এ সম্পর্ক বৃদ্ধির এবং উন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগতভাবে কে কি ভাবে অগ্রসর হতে পারে এর একটা বাস্তব পন্থা উদ্ভাবন নিশ্চয় দ্বীনি কর্মীদের যথেষ্ট সহায়ক হবে। এর ফলে সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে বহু নতুন নতুন পথ তাদের সামনে খুলে যাবে। এ উদ্দেশ্যেই আমি আলোচ্য বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করতে চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:২৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×