somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"আঙ্কেল টম'স কেবিন".....(যে বই তরোয়ালের চেয়ে শক্তিশালী)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আঙ্কেল টম'স কেবিন (Uncle Tom's Cabin)-

দাস প্রথার বিরুদ্ধে লেখা এমন একটি বই যা, পাল্টে দিয়েছিলো আমেরিকার ইতিহাস। প্রকাশিত হয় ১৮৫২ সালে, যা তৎকালীন গৃহযুদ্ধের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিলো। এই উপন্যাসটিতে মুক্তির গান গাওয়া 'আঙ্কেল টম' নামক এক কষ্টসহিষ্ণু নিগ্রো ক্রীতদাসের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও Harriet, এই সংবেদনশীল উপন্যাসটির মাধ্যমে ক্রীতদাস প্রথার বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরেছেন এবং বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষের প্রতি মানুষের প্রকৃত ভালবাসায় রয়েছে এমন এক শক্তি যা, দাসত্বের মতো ধ্বংসাত্মক যেকোনো শক্তিকে পরাস্ত করতে পারে।
Uncle Tom's Cabin- ছিলো ১৯-শতকের সেরা বেষ্ট-সেলিং উপন্যাস। যেটা সে সময় বাইবেলের পরে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। প্রথম বছর বইটির ৩০০,০০০ কপি যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হয় এবং এক মিলিয়ন কপি বিক্রি হয় গ্রেট ব্রিটেনে। ১৮৫৫ সালে তিন বছর পর উপন্যাসটি আবার প্রকাশিত হবার পর এটাকে "সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস" ঘোষণা করা হয়েছিলো।
গৃহযুদ্ধের শুরুর সময় 'আব্রাহাম লিঙ্কন' একবার Harriet এর সাথে দেখা করেন এবং বলেন- "So this is the little lady who started this great war." (ইনিই সেই অল্পবয়স্ক ভদ্রমহিলা যিনি এই যুদ্ধের সুত্রপাত করেছেন)।

সমকালিন অনেক বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পারেন, একজন লেখক- শুধুমাত্র একজন লেখকই নন, সামাজিক পরিবর্তনের সে একজন বিশেষ প্রতিনিধি।
কালো মানুষদেরকে তাদের ন্যায্য অধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে এই বইটি অনুপ্রানিত করেছিলো বহু মানুষকে। বইটির মূল চরিত্র- 'আঙ্কেল টম' একজন নিগ্রো ক্রীতদাস, যিনি ছিলেন অত্যান্ত দয়ালু এবং কর্তব্যনিষ্ঠ এক ব্যাক্তি যিনি তার সাদা মালিকের খুব বিশ্বস্তও ছিলেন।

উপন্যাসটি যেভাবে রচিত হলো-
Harriet মূলত এই উপন্যাসটি লিখতে আগ্রহী হন- Josiah Henson এর The Life of Josiah Henson- নামক আরেক নিগ্রো ক্রীতদাসের নিজের লেখা একটি 'অটোবায়োগ্রাফি' থেকে, ১৮৪৯ সালে।
Josiah Henson- একজন নিগ্রো ক্রীতদাস যিনি Isaac Riley নামক এক ব্যাক্তির ৩,৭০০ একর (১৫ কি.মি) জমিতে তামাক চাষের কাজ করতেন মেরিল্যান্ডে। এই অসহ্য শ্রম সইতে না পেরে তিনি পালিয়ে যান ১৯৩০ সালে, কানাডার (বর্তমান- অন্টারিও)-এর দিকে। সেখানে যেয়ে তিনি আরও কিছু নিগ্রো ক্রীতদাসের সাথে পরিচিত হন যারা সবাই পালাতে চাইছিলো। Henson তাদেরকে সেখান থেকে পালাতে সাহায্য করেন। পরবর্তীতে, তিনি তার ক্রীতদাস জীবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে লিখে ফেলেন এই বইটি। এই বইটিই Harriet- কে অনুপ্রানিত করে 'আঙ্কেল টমস কেবিন' নামক অসাধারন একটি উপন্যাস তৈরিতে। Harriet আরও বলেন, এই বইটি লেখার আগে তিনি অসংখ্য নিগ্রো ক্রীতদাসদের সাথে কথা বলেন তাদের পালানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে।

সংক্ষেপে 'আঙ্কেল টমস কেবিন'-
কেন্টাকির এক ফার্মের মালিক Arthur Shelby, যিনি অর্থাভাবে তার ফার্মটি বন্ধ করে দিতে উদ্যত হন। পরবর্তীতে তিনি এবং তার স্ত্রী Emily Shelby ঠিক করেন, ফার্মের জন্য অর্থের যোগান দিতে তাদের ক্রীতদাস টম, এবং তাদের আরেকটি মহিলা ক্রীতদাস এলিজার ছেলে হ্যারি কে বিক্রি করে দেয়া যেতে পারে। তাদেরকে বিক্রির টাকা দিয়ে তারা তাদের ফার্মকে পুনরায় দাড়া করাতে পারবে। Emily Shelby- এর ছেলে জর্জ ব্যাপারটা মোটেও সহ্য করতে পারছিলো না। কারন, আঙ্কেল টমকে সে প্রচণ্ডরকম ভালোবাসতো এবং শিক্ষকের মতো মানতো। অন্যদিকে, এলিজা বুঝতে পারছিলো তার ছোট্ট ছেলে হ্যারিকে বিক্রি করে দেয়া হবে তাই সে রাতের আধারে তার ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যায়। আঙ্কেল টম, তাদেরকে পালাতে সাহায্য করে।
আঙ্কেল টমকে বিক্রি করে দেয়া হয় ক্রীতদাস ব্যাবসায়িদের কাছে। মিসিসিপির স্রোত বেয়ে বহু দূরে নিয়ে যাওয়া হয় আঙ্কেল টমকে। সেখানে St. Clare নামক এক ব্যাক্তি তাকে কিনে নেন। তার ছোট্ট মেয়ে ইভার সাথে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় আঙ্কেল টমের।

২ বছরে তাদের বন্ধুত্ব অনেক গভীরে চলে যায়। একসময়, ইভা অনেক অসুস্থ হয়ে পরে এবং অল্প বয়সেই মারা যায়। মারা যাওয়ার আগে সে আঙ্কেল টমকে বলে, সে এক আজব স্বপ্ন দেখেছে। সে স্বপ্ন দেখেছে এমন এক পৃথিবীর, যেখানে মানুষের সাথে মানুষের কোন ভেদাভেদ নেই, কোন পার্থক্য নেই, সবাই সমান।
এই ঘটনার কিছুদিন পর ইভার বাবা St. Clare- ও ঘটনাক্রমে মারা যান। তার স্ত্রী 'আঙ্কেল টমকে' পুনরায় বিক্রি করে দেন Simon Legree নামক পাষণ্ড এক ব্যাক্তির কাছে। Simon তাকে নিয়ে যান লুসিয়ানায় যেখানে আঙ্কেল টম Simon- এর আরও ক্রীতদাসদের দেখা পান। Simon, আঙ্কেল টমকে দিয়ে অন্যান্য ক্রীতদাসদের উপর অত্যাচার করাতে চাইতো। আঙ্কেল টম তাতে সায় না দিলে Simon তাকে ঘেন্না করা শুরু করে।

আঙ্কেল টম ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন, এই জিনিসটা Simon কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। এজন্য সে তাকে প্রচণ্ডরকম মারধর করতো, সাথে অন্যদেরকেও। অন্যান্য ক্রীতদাসদেরকে মারের হাত থেকে বাঁচাতে আঙ্কেল টম, বাইবেল পড়া বন্ধ করে দেন। এর মধ্যে, ক্যাসি এবং ইমেলিন নামক দুজন ক্রীতদাসকে তিনি পালাতে সাহায্য করেন। Simon ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনা এবং সে বুঝতে পারে এর পিছনে কার হাত আছে। সে আঙ্কেল টমকে প্রচণ্ড মারধর করে এবং তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেয়। মৃত্যুর আগে, আঙ্কেল টম দুটি স্বপ্ন দেখে। একটি স্বপ্ন যীশুকে নিয়ে, অন্যটি ইভাকে নিয়ে। যেই ইভা স্বপ্ন দেখেছিলো ভেদাভেদহীন সুন্দর একটি স্থানের।
ওদিকে, আঙ্কেল টমের প্রথম মালিকের ছেলে, ছোট্ট বন্ধু জর্জ; খুশি মনে আসে তার প্রিয় আঙ্কেল টমের মুক্তির জন্য। কিন্তু, ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মারা গেছে আঙ্কেল টম।
তার মৃত্যুতে শোকাহত জর্জ পরিবার সাথে সাথে মুক্ত করে দেয় তাদের সকল ক্রীতদাসদের। ছোট্ট জর্জ, তার বাবা মা'কে মনে রাখতে বলে- আঙ্কেল টমের আত্ম-উৎসর্গতার কথা। মানুষের প্রতি মানুষের সত্যিকার ভালোবাসার কথা, ভালোবাসার অকল্পনীয় শক্তির কথা।

কিছু কথা:
স্বার্থবাদী মানুষ সব যুগেই ছিলো, আছে, থাকবে। ক্রীতদাস প্রথাকে সমর্থনকারী অনেক সাহিত্যিক এবং সমাজের প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা 'আঙ্কেল টমস কেবিন' নামক বইটিকে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করে। ব্যাঙ্গাত্বক বই ও বের করে। তবে, এভাবে এর কোন কিছুই করা যায়নি। বন্ধ করা যায়নি এর প্রচার। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে বইটি কালো মানুষ তথা, সকল মানুষের ন্যায্য অধিকার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস যুগিয়ে গেছে। উপন্যাসটি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে অনেক নাটক, সিনেমা।

শিক্ষা:
মানুষের মতো মানুষ হিসেবে বাঁচতে হলে ন্যায্য অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। মনের গহিনে জাগ্রত করতে হবে 'সত্যিকারের ভালবাসা'।
মানুষের সাথে মানুষের ভেদাভেদ বা পার্থক্য এখনও রয়ে গেছে এবং আমরা নিজেরাই তা করছি। এভাবে শুধু আমরা নিজেদের মনুষ্যত্বকেই গালি দিচ্ছি, চরম অপমান করছি আমাদের 'মানুষ' নামক পরিচয়কে। ইচ্ছা করলে কি আমরা এগুলো থামাতে পারিনা? হয়তো পারবো, যখন আমরা সত্যিই চাইবো- 'মানুষের মতো মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকতে'।

আঙ্কেল টমস কেবিন- বইটির ডাউনলোড লিংক-
Uncle tom's cabin
................................................... :) ............................................
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×