আমাদের জাতির সর্বশ্রেষ্ট সন্তান বলা হয় অথচ আমার ঘরে চাল নেই - গতকাল প্রথম আলো পত্রিকায় একজন মুক্তিযোদ্ধার এই উদ্ধৃতি ট্যাগ করা হয়।
গত কয়েক বছর আগে প্রথম আলো পত্রিকাতেই একটা নিউজ চোখে পড়েছিলো। ১৬ই ডিসেম্বরে উত্তরবঙ্গে একজন মুক্তিযুদ্ধাকে বলা হয়েছিলো - আজকে ষোলই ডিসেম্বর। বাংলাদেশের বিজয় দিবস। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনের প্রতিক্রিয়া কি? উত্তরে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেছিলো - খালি ক্ষিধা আহে বাহে।
কয়েকদিন আগে এই ব্লগে একটা পোস্ট এসেছিলো বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমানের মা ছিড়ে জুতো পড়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বসে আছে। কেউ তার দিকে একবার ফিরেও তাকায়নি।
আমরা প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখি অমুক মুক্তিযোদ্ধাকে ভিটে-বাড়ি থেকে উচ্ছেদ। অমুক মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে সন্ত্রাসীদের স্কুল বা কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিসে।
আরেকটা প্রবণতা আমাদের মাঝে চরম বিপক্ষের দলের মুক্তিযোদ্ধাকে মূল্যায়িত না করা। এমনও হতে দেখেছি যে তাদের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে বা বলা হয়েছে আদৌও মুক্তিযোদ্ধা ছিলো কিনা সেটা নিয়েই সন্দেহ আছে।
আসলে জাতি হিসাবে আমরা চরম অভাগা। কখনই আমরা এক বিন্দুতে মিলতে পারিনি। রেশারেষি- দলাদলি আমাদের মাঝেই এতোই চরম আকার ধারণ করেছে যে বিপক্ষের কাউকে আমরা সঠিক মূল্যায়নই করতে চাইনা বা পারিনা।
আমরা সোনার বাংলা চাই অথচ
- আমরা সোনার সন্তানদের দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে পারিনা
- আমরা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা দিতে পারিনা
- আমরা তাদের আর দশটা মানুষের চেয়ে আলাদা করতে পারিনা।
কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য, সেই সব সোনার সন্তানদের পুঁজি করে বছরের কয়েকটা নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের ভোটে মনোনীত নেতারা বড় দেশ প্রেমিক হয়ে উঠে। মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, বস্ত্র বিতরণ, হেন-তেন কতকিছু। দেশপ্রেম পা থেকে যেনো কপালের ভাজেঁ ভাজেঁ চলে যায়। টিভিতে সেই সকল নেতাদের দেখলে আমার কাছে তাই মনে হয়।
আসলে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে একটা ব্যবসা শুরু হয়েছে সেই ৭১ এর যুদ্ধের পর থেকেই। ক্ষমতালোভীরা কোটি কোটি টাকা লুন্ঠন করছে। প্রায়ই পত্রিকায় দেখি অতো কোটি টাকার টাকা এতো কোটি টাকায় রফাদফা। ভাগ্য দেবী নিশ্চিত তাচ্ছল্যের সুরে হেসে উঠে।
সুকান্তের একটা কবিতার লাইন বারবার মনে হয় -
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমার চাদঁ যেনো জলসানো রুটি।
ক্ষুধার্থ সেই সব জাতির শ্রেষ্ট সন্তানরা যদি আজকে স্বাধীনতা বিরোধীদের পতাকাতলে চলে আসে সেই দায় কার?
অবহেলিত, অবজ্ঞিত সেই সব জাতির শ্রেষ্ট সন্তানরা যদি আজকে স্বাধীনতা বিরোধীদের পতাকাতলে চলে আসে সেই দায় কার?
সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় কেউ যদি নিরাপত্তার আশায় আজকে স্বাধীনতা বিরোধীদের পতাকাতলে চলে আসে সেই দায় কার?
কেউ কেউ হয়তো বলবেন বা বলতে চাইবেন- যারা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দেশ স্বাধীন করেছে তারা কেন ঘৃণ্য রাজাকার, আলবদরদের পতাকাতলে এসে হাজির হবে? এই প্রশ্নটা করাই সমুচিত হবেনা বলে আমি মনে করছি কারন সেই সকল জাতির শ্রেষ্ট সন্তানরা একবার নিজের জীবন উৎসর্গ করেই স্বাধীনতার পতাটাকে এনে দিয়েছে। অথচ আজকে তারা অবহেলিত, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে। আর বোর্জোয়া শ্রেণীর নেতারা দেশপ্রেম নিয়া খই ফোটায়। লেখকরা লিখতে লিখতে কলম ভেঙ্গে ফেলে। কিন্তু কেউই জাতির সেই সকল শ্রেষ্ট সন্তানদের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কিছু লিখেনা বা বলেনা। কিন্তু ঠিকই স্বাধীনতার বিশেষ বিশেষ দিনগুলাতে তাদের নিয়ে টিভিতে মুখ দেখায়। জীর্ণ-শীর্ণ মুক্তিযুদ্ধাদের দেখে ভিনগ্রহের কোন প্রাণী মনে হয় আর নেতাদের কপালের ভাঁজ দেখে আমরা চোখ ভিজিয়ে ফেলি।
পত্রিকাগুলো বড়লোক মুক্তিযোদ্ধাদের কলামের ভারে দেড় কেজি ওজন হয়ে যায়। সেখানে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্দশার কথা খুবই কম আসে।
তাই এ প্রশ্ন করে আর কতো কষ্ট দিতে চান জাতির শ্রেষ্ট সন্তানদের?
[আমার হলো এই সমস্যা গুছিয়ে কিছু লিখে শেষ করতে পারিনা। ক্ষমা করবেন সবাই।]

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




